হে চক্ষুষ্মান ব্যক্তিরা শিক্ষা গ্রহণ কর (২য় পর্ব)
হে চক্ষুষ্মান ব্যক্তিরা শিক্ষা গ্রহণ কর
(কবরের আযাব ও সাওয়াব সংক্রান্ত কতিপয় শিক্ষামূলক ঘটনা)
দ্বিতীয় পর্বঃ
২- কবরের বিচ্ছুঃ
বিশ্ব যুদ্ধের সময় পরাশক্তিধরদের হিন্দুস্তানে আক্রমণ করার সময় ইংরেজ বাহিনীকে সিঙ্গাপুর ও বার্মায় অস্র রাখতে হয়েছিল, অস্র রাখার সময় ইংরেজ জেনারেল সৈন্যদেরকে অনুমতি দিল যে, যে সৈন্য পলায়ন করে জান বাঁচাতে পারবে সে যেন তাঁর জান বাঁচায়, সৈন্যদের এক মেজর তোফায়েল তাঁর এক সাথী মেজর নেহাল সিং এর সাথে ভেগে গেল। মেজর তোফায়েল বর্ণনা করেন যে, আমরা উভয়ে এক অন্ধকার রাতে ঘোড়ায় চরে বের হলাম এবং বার্মার রণাঙ্গনে ধরে ঘোড়া হাকালাম, বার্মা ঘন, জনবহুল, অন্ধকার, ভয়ানক জঙ্গলবিশিষ্ট এলাকা, যা অতিক্রম করা অত্যন্ত দুরূহ কাজ ছিল। যাই হোক, আমরা অনুমানের ভিত্তিতে হিন্দুস্তানের জেলা আসাম মুখি হলাম, যেখানে জাপানীদের আক্রমণ থাকা সত্ত্বেও ইংরেজরা প্রাধান্য বিস্তার করছিল।
পরামর্শের ভিত্তিতে রাস্তা অতিক্রম করতে থাকলাম, এর মধ্যে কত রাত অতিক্রান্ত হয়েছে তাঁর কোন হিসেব আমাদের কাছে ছিলনা, পানাহার সামগ্রী শেষ হয়ে আসছিল। জঙ্গল ও নদ-নদীর উপর দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, কোন কোন সময় ভয়ংকর সাপ-বিচ্ছুর মুখামুখিও হতে হয়েছে, অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পথ চলছি। একদিন সামনে এক খালি জায়গায় একটি কবরস্থান চোখে পড়ল, প্রায় ২৫-৩০ টি কবর হবে সেখানে, এক কবরে মৃতের প্রায় অর্ধেক দেহ কবরের বাহিরে পড়েছিল। পচা গলা অবস্থায় ছিল, লাশের উপর ছোট একটি বিচ্ছু তাকে বারবার দংশন করছিল, আর লাশ খুব ভয়ংকর ভাবে চিল্লাচ্ছিল, কোন জীবিত মানুষকে যেমন কোন বিচ্ছু দংশন করলে তাঁর বিষাক্ততাঁর ফলে সে কাঁদত তা এমন মনে হচ্ছিল, যা জীবিত অন্যান্য মানুষ ও প্রাণীকে বেহুঁশ করে দিতে যথেষ্ট ছিল। সত্যিই এ এক ভয়ানক দৃশ্য ছিল। মেজর নেহাল সিং আমার বাধা সত্ত্বেও বিচ্ছুটিকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ল, এতে একটি অগ্নিশিখা বিচ্ছুরিত হল বটে, কিন্তু বিচ্ছুর কিছুই হয় না। নেহাল সিং আবারো গুলি করার প্রস্তুতি নিল, আমি তাকে কঠোরভাবে বাধা দিলাম এবং তাঁর পথে তাকে চলতে বললাম, কিন্তু সে আমার কথাইয় কর্ণপাত না করে কবরস্থানের এক মৃতকে বাঁচাতে গিয়ে বিচ্ছুকে আবার গুলি করল। আবারো একটি অগ্নিশিখা বিচ্ছুরিত হল বটে কিন্তু বিচ্ছুর কিছুই হল না। বরং বিচ্ছু তখন লাশকে ছেড়ে আমাদের দিকে ছুটে আসতে লাগল, আমি তখন নেহাল সিং-কে বললাম বিচ্ছু ও লাশ ছেড়ে এখান থেকে ভাগ, বিচ্ছু আমাদের দিকে এগিয়ে আসা আশঙ্কামুক্ত নয়। আমরা ঘোড়া চালাতে শুরু করলাম, কিছু দূর যাওয়ার পর পিছনে তাকিয়ে দেখছি যে ঐ বিচ্ছুটি আমাদের পিছনে পিছনে খুব দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। আমরা ঘোড়াকে আরো দ্রুর চালাতে শুরু করলাম। কয়েক মেইল চলার পর এক নদী সামনে পড়ল, যা খুবই গভীর মনে হচ্ছিল। আমরা একটু থেমে চিন্তা করতে লাগলাম যে, নদীতে ঘোড়া নিক্ষেপ করব, না নদীর তীর ধরে চলে চলে কোন রাস্তা খুঁজব, কিন্তু কোন ফাতসালা করার পূর্বেই ঐ বিচ্ছু আমাদের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল, আমরা লক্ষ্য করছিলাম যে আমরা সশস্র হওয়া সত্ত্বেও এ বিচ্ছুটি আমাদেরকে আতংকিত করে তুলেছিল এমনকি আমাদের ঘোড়াও লাফাচ্ছিল যেন সেও ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত ছিল। বিচ্ছু নিহাল সিং এর দিকে এগোচ্ছিল। নেহাল সিং ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ঘোড়া নিয়ে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ল। আর তাঁর পিছে পিছে বিচ্ছুও নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ল। আল্লাহ্ ভালো জানেন বিচ্ছুটি তাঁর শরীরের কোন অংশে কেটে ছিল যার ফলে ঘোড়াও এ অস্বাভাবিক আঘাতের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত ছিল। ঘোড়াটি কাঁপতে শুরু করল। নেহাল সিং ভয়ানকভাবে চিৎকার করে আমাকে ডাকতে লাগল যে তোফায়েল আমি ডুবে যাচ্ছি, জ্বলে যাচ্ছি, আমাকে বিচ্ছু থেকে বাঁচাও!!!! বাঁচাও!!!!!
আমিও তখন ঘোড়া নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লাম এবং বাম হাত তাঁর দিকে বাড়ালাম, সে তখন আমাকে খুব শক্ত করে ধরে নিল, আমার মনে হচ্ছিল যে এটা নদীর স্বাভাবিক পানি নয়, বরং কোন বিষাক্ত পানি, যা শুধু আমার হাতই নয় বরং সমস্ত শরীর জ্বালিয়ে দিবে। আমি তখন আমার অস্র বের করে আমার বাম হাত কেটে ফেলে নিজেকে রক্ষা করে দ্রুত নদীর তীর ধরে চলতে শুরু করলাম। মেজর নেহাল সিং আমাকে চিৎকার করে ডাকতে লাগল, আর পানিতে ডুবতে লাগল। নদীর বড় বড় ঢেউ তাকে গ্রাস করতে লাগল। এ হল আল্লাহর শাস্তি ………… বিচ্ছু নিজের কাজ করে চলে যাচ্ছিল, আমার সামনে আসে নাই। আল্লাহর সৈন্যদের মধ্যে সে একাই এক গাইবী সৈন্যের মত। সে আমার কোন ক্ষতি করে নি। যে দিক থেকে এসেছিল সে দিকেই চলে গেল।
সূত্রঃ কবর কা বিচ্ছু,উর্দূ ডাইজেস্ট এপ্রিল ১৯৯২।