সলাতে মুবাশ্শির (পর্ব ৩৬)
রচনায় : আব্দুল হামীদ ফাইযী
দ্বিতীয় সিজদাহ
অতঃপর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তকবীর দিয়ে তিনি দ্বিতীয় সিজদাহ করতেন। এ বিষয়ে তিনি নামায ভুলকারী সাহাবীকে আদেশ দিয়েও বলেছিলেন, “— অতঃপর তুমি ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে। অতঃপর এমন সিজদাহ করবে, যাতে তোমার সমস্ত হাড়ের জোড়গুলো (নিজের জায়গায়) স্থির হয়ে যায়।” (আবূদাঊদ, সুনান ৮৫৭ নং,হাকেম, মুস্তাদরাক)
এই তকবীরের সাথেও তিনি কখনো কখনোহাত তুলতেন। (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান ৭৩৯নং)
এই সিজদায় তিনি তাই করতেন, যা প্রথম সিজদায় করতেন। অতঃপর তিনি তকবীর দিয়ে সিজদাহ থেকে মাথা তুলতেন। এ ব্যাপারে তিনি নামায ভুলকারী সাহাবীকে আদেশ দিয়েও বলেছিলেন, “— অতঃপর তুমি এইরুপ প্রত্যেক রুকূ ও সিজদায় করবে। এইরুপ করলেই তোমার নামায সম্পূর্ণ হবে। অন্যথা যদি এ সবের কিছু তুমি কম কর, তাহলে সেই পরিমাণে তোমার নামাযও অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।” (আহমাদ, মুসনাদ, তিরমিযী, সুনান ৩০২, আবূদাঊদ, সুনান ৮৫৬নং)
এই তকবীরের সাথেও তিনি কখনো কখনো ‘রফ্য়ে ইয়াদাইন’ করতেন। (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান ৭৩৯নং)
জালসা-এ ইস্তিরাহাহ্
দ্বিতীয় সিজদাহ্ থেকে মাথা তুলে নবী মুবাশ্শির (সাঃ) পুনরায় বাম পায়ের উপর সোজা হয়ে বসে যেতেন। এতে তাঁর প্রত্যেক হাড় নিজ নিজ জায়গায় ফিরে যেত। (বুখারী ৬৭৭, ৮২৩, আবূদাঊদ, সুনান ৭৩০, ৮৪২-৮৪৪, আহমাদ, মুসনাদ, তিরমিযী, সুনান নাসাঈ, সুনান, মিশকাত ৭৯৬ নং)
এই বৈঠককে ‘জালসা-এ ইস্তিরাহাহ্’ আরামের বৈঠক বলা হয়। কারণ, এতে প্রথম ও তৃতীয় রাক্আত শেষ করে দ্বিতীয় ও চতুর্থ রাক্আত শুরু করার পূর্বে একটু আরাম নেওয়া হয় তাই।
মালেক বিন হুয়াইরিস (রাঃ) মহানবী (সাঃ) কে দেখেছেন, তিনি যখন তাঁর নামাযের বিজোড় রাকআতে থাকতেন, তখন সোজা বসে না যাওয়া পর্যন্ত (পরের রাকআতের জন্য) উঠে দাঁড়াতেন না। (ঐ) অনুরুপ দেখেছেন আবূ হুমাইদ ও আরো ১০ জন সাহাবা। (ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৩০৫নং, তামামুল মিন্নাহ্, আলবানী ২১১-২১২পৃ:)
অবশ্য সুন্নতের এই বৈঠকটি দুই সিজদার মাঝের বৈঠকের মত লম্বা হবে না। কেবল সোজা হওয়ার মত হাল্কা একটু বসতে হবে। তবে এতে পঠনীয় কোন যিক্র বা দুআ নেই।
দ্বিতীয় রাকআত
অতঃপর নবী মুবাশ্শির (সাঃ) মাটির উপর (দুই হাতের চেটোতে) ভর করে দ্বিতীয় রাকআতের জন্য উঠে খাড়া হতেন। (শাফেয়ী, বুখারী ৮২৪নং) এক্ষণে তিনি হাত দু’টিকে খমীর সানার মত মাটিতে রাখতেন। (আবূ ইসহাক হারবী, বায়হাকী, তামামুল মিন্নাহ্, আলবানী ১৯৬পৃ:) আরযাক বিন কইস বলেন, আমি দেখেছি, ইবনে উমার নামাযে যখন (পরবর্তী রাকআতের) জন্য উঠতেন, তখন মাটির উপর (হাতের) ভর দিয়ে উঠতেন। (ত্বাবারানী, মু’জাম আউসাত্ব, তামামুল মিন্নাহ্, আলবানী ২০১পৃ:)
ইমাম ইসহাক বিন রাহুয়াইহ্ বলেন, ‘নবী (সাঃ) হতে এই সুন্নাহ্ প্রচলিত হয়ে আসছে যে, বৃদ্ধ, যুবক প্রত্যেকেই নামাযের মধ্যে ওঠার সময় দুইহাতের উপর ভর করে উঠবে। (ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ২/৮২-৮৩, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ১৫৫পৃ:)
পক্ষান্তরে যাঁরা ওয়াইল বিন হুজরের হাতের পূর্বে হাঁটু রাখার হাদীসকেও হাসান মনে করেন তাঁরা বলেন, নামাযীর জন্য আসান হলে ঊরুর উপর হাত রেখে উঠে দাঁড়াবে। নচেৎ কষ্ট হলে মাটির উপর হাত রেখে উঠবে। (উদ্দাহ্ ৯৬পৃ:, ইবনে বায, মাজমূআতু রাসাইল ফিস স্বালাহ্ ১২৭পৃ:, ইবনে উসাইমীন, রিসালাতুন ফী সিফাতি স্বালাতিন্নাবী (সাঃ) ১১পৃ:, আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৩/১৯০-১৯১)
দ্বিতীয় রাকআতের জন্য উঠে মহানবী (সাঃ) চুপ না থেকে (বিসমিল্লাহির রাহ্মানির রাহীম বলে) সূরা ফাতিহা পাঠ করতেন। (মুসলিম, সহীহ ৫৯৯ নং, আহমাদ, মুসনাদ) শুরুতে ‘আঊযু বিল্লাহ্—’ও পড়া যায়। না পড়লেও ধর্তব্য নয়। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৩/১৯৬)
সূরা ফাতিহা প্রত্যেক রাকআতে পাঠ করা ওয়াজেব। কারণ, তিনি নামায ভুলকারী সাহাবীকে প্রথম রাকআতে সূরা ফাতিহা পড়তে আদেশ করার পর বলেছিলেন, “— অতঃপর এইরুপ তুমি প্রত্যেক রাকআতে বা তোমার পূর্ণ নামাযে কর।” (বুখারী, মুসলিম, আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান)
তাঁর অন্যান্য কর্মও প্রথম রাকআতের অনুরুপ হত। তবে প্রথম রাকআতের তুলনায় দ্বিতীয় রাকআতটি সংক্ষেপ ও ছোট হত। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৮২৮নং)
(চলবে)