
সলাতে মুবাশ্শির (পর্ব ৩৫)
রচনায় : আব্দুল হামীদ ফাইযী
সিজদাহ থেকে মাথা তোলা
অতঃপর (সিজদার পর) নবী মুবাশ্শির (সাঃ) ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তকবীর দিয়ে সিজদাহ থেকে মাথা তুলতেন। এ ব্যাপারে তিনি নামায ভুলকারী সাহাবীকে আদেশ করে বলেছেন, “কোন ব্যক্তির নামায ততক্ষণ পর্যন্ত সম্পূর্ণ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না — সিজদাহ করেছে ও তাতে তার সমস্তহাড়ের জোড় স্থির হয়েছে। অতঃপর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে মাথা তুলে সোজা বসে গেছে।” (আবূদাঊদ, সুনান ৮৫৭ নং,হাকেম, মুস্তাদরাক)
এই তকবীরের সাথেও তিনি কখনো কখনো ‘রফ্য়ে ইয়াদাইন’ করতেন। (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান ৭৪০নং, সহিহ,নাসাঈ, সুনান ১০৪১, ১০৯৫ নং) অর্থাৎ তিনি প্রত্যেক নামাযে বা সর্বদা এই সময়ে বা বসা অবস্থায় হাত তুলতেন না। কারণ, আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) বলেন, ‘নবী (সাঃ) সিজদার সময় বা বসা অবস্থায় হাত তুলতেন না।’ (বুখারী, মুসলিম, প্রমুখ, মিশকাত ৭৯৩নং) অনুরুপ বলেন হযরত আলী (রাঃ) ও। (আবূদাঊদ, সুনান ৭৬১নং)
মাথা তোলার পর তিনি তাঁর বাম পা-কে বিছিয়ে দিতেন ও তার উপর স্থির হয়ে বসে যেতেন। (বুখারী, মুসলিম, সহীহ ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৩১৬নং) পরন্তু তিনি নামায ভুলকারী সাহাবীকেও উক্ত আমল করার আদেশ দিয়ে বলেছিলেন, “যখন তুমি সিজদাহ থেকে মাথা তুলবে, তখন তোমার বাম ঊরুর উপর বসবে।” (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান ৮৫৯ নং)
এরপর ডান পায়ের পাতাকে তিনি খাড়া রাখতেন। (বুখারী, বায়হাকী, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ১৫১পৃ:)আর এই পায়ের আঙ্গুল গুলোকে কেবলামুখী করে রাখতেন। (সহিহ,নাসাঈ, সুনান ১১০৯ নং)
কখনো কখনো তিনি এই বৈঠকে দুই পায়ের পাতাকে খাড়া রেখে পায়ের দুই গোড়ালির উপর বসতেন। এই প্রকার বৈঠক প্রসঙ্গে ইবনে আব্বাস (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, ‘এরুপ বসা সুন্নত।’ ত্বাঊস বলেন, আমরা তাঁকে বললাম, ‘আমরা তো এটা নামাযীর জন্য কষ্টকর মনে করি।’ কিন্তু তিনি উত্তর দিলেন, ‘পরন্তু এটা তোমার নবী (সাঃ) এর সুন্নত (তরীকা)।’ (মুসলিম, সহীহ ৫৩৬নং, আআহমাদ, মুসনাদ, আবুশ শায়খ, আবূদাঊদ, সুনান ৮৪৫ নং, তিরমিযী, সুনান, বায়হাকী)
দুই সিজদার মাঝের বৈঠকে স্থিরতার গুরুত্ব
দুই সিজদার মাঝে এই বৈঠকে আল্লাহর নবী (সাঃ) স্থির হয়ে বসে যেতেন এবং এতে তাঁর প্রত্যেক হাড় নিজের জায়গায় ফিরে যেত। (আবূদাঊদ, সুনান ৭৩৪ নং, বায়হাকী) তিনি নামায ভুলকারী সাহাবীকেও উক্তরুপে বসার আদেশ দিয়ে বলেছিলেন, “এভাবে সোজা ও স্থির হয়ে না বসলে কারো নামায সম্পূর্ণ হবে না।” (আবূদাঊদ, সুনান ৮৫৭,হাকেম, মুস্তাদরাক)
এই বৈঠকে তিনি প্রায় ততটা সময় বসতেন, যতটা সময় ধরে তিনি সিজদাহ করতেন। (বুখারী ৭৯২, মুসলিম, সহীহ)কখনো কখনো এত লম্বা বসতেন যে, সাহাবীগণ মনে করতেন, হয়তো তিনি (দ্বিতীয় সিজদাহ করতে) ভুলেই গেছেন।(বুখারী ৮২১ নং, মুসলিম, সহীহ)
দুই সিজদার মাঝে বৈঠকের দুআ
اَللّهُمَّ اغْفِرْلِيْ وَارْحَمْنِيْ (وَاجْبُرْنِيْ وَارْفَعْنِيْ) وَاهْدِنِيْ وَعَافِنِيْ وَارْزُقْنِيْ।
উচ্চারণ:- আল্লা-হুম্মাগফিরলী অরহামনী (অজবুরনী অরফা’নী) অহ্দিনী অ আ-ফিনী অরযুক্বনী।
অর্থ- হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা কর, দয়া কর, (আমার প্রয়োজন মিটাও, আমাকে উঁচু কর), পথ দেখাও, নিরাপত্তা দাও এবং জীবিকা দান কর। (আবূদাঊদ, সুনান ৮৫০, তিরমিযী, সুনান ২৮৪, ইবনে মাজাহ্, সুনান ৮৯৮নং,হাকেম, মুস্তাদরাক)
কোন কোন বর্ণনায় উক্ত দুআর শুরুতে ‘আল্লাহুম্মা’র পরিবর্তে ‘রাব্বি ‘ ব্যবহার হয়েছে। (ইবনে মাজাহ্, সুনান ৮৯৮ নং)
رَبِّ اغْفِرْ لِيْ، رَبِّ اغْفِرْ لِيْ (রাব্বিগফিরলী, রাব্বিগফিরলী)
অর্থ- হে আমার প্রভু! আমাকে ক্ষমা কর, হে আমার প্রভু! আমাকে ক্ষমা কর। (আবূদাঊদ, সুনান ৮৭৪, ইবনে মাজাহ্, সুনান ৮৯৭নং)
উক্ত দুআ তিনি তাহাজ্জুদের নামাযে পড়তেন। অবশ্য ফরয নামাযেও পড়া চলে। কারণ, পার্থক্যের কোন দলীল নেই।(সিফাতু স্বালাতিন নাবী (সাঃ), আলবানী ১৫৩পৃ:)
প্রকাশ থাকে যে, এই বৈঠকে আঙ্গুল ইশারা করার হাদীস সহীহ নয়। (মুখালাফাত ফিত্বাহারাতি অসস্বালাহ্ ৮২পৃ:)
(চলবে)