দল, ইমারত ও বায়আত সম্পর্কে উলামাগণের বক্তব্য (পর্ব ৫)

দল, সংগঠন, ইমারত ও বায়‘আত সম্পর্কে বিশিষ্ট উলামায়ে কেরামের বক্তব্য (পঞ্চম পর্ব)

           আল্লামা মুহাম্মাদ ইবনে ছালেহ আল-উছায়মীন (রহঃ)

প্রশ্ন: সূদানে অনেকগুলি দল আছে, যেগুলির কোনো কোনো দল একজন করে দলীয় ‘আমীর’ নির্ধারণ করে এবং তাঁর অনুসরণ অপরিহার্য গণ্য করে। এই ইমারতের হুকুম কি? উল্লেখ্য যে, তারা এই ইমারতকে সফর অবস্থার ইমারতের উপর কিয়াস করে।

উত্তর: সফরের ইমারতের দলীল পাওয়া যায়। কিন্তু মুক্বীম অবস্থায় নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যক মানুষের আমীর নির্বাচনের প্রমাণে কোনো দলীল পাওয়া যায় না; বরং এই ইমারত মুসলিমদের দলাদলি ও বিভক্তি অবধারিত করে দেয়। মুসলিমদের উচিৎ, সবাই এক হয়ে যাওয়া। প্রত্যেক দলের ভিন্ন ভিন্ন আমীর নিম্নোক্ত আয়াতটির পরিপন্থী:

﴿ وَٱعۡتَصِمُواْ بِحَبۡلِ ٱللَّهِ جَمِيعٗا وَلَا تَفَرَّقُواْۚ ﴾ [ال عمران: ١٠٣] 

‘আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে ধারণ কর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (আলে ইমরান ১০৩)([1])

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার আমীরের পক্ষ থেকে অপছন্দনীয় কিছু পাবে, সে ধৈর্য্য ধারণ করবে। কেননা যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে সামান্য পরিমাণ বিচ্ছিন্ন হয়ে মৃত্যু বরণ করবে, তার মৃত্যু হবে জাহেলী মৃত্যু’। উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, হাদীছে রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকতে বলা হয়েছে। নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে মিলেঝুলে থাকলে গোটা জাতি একক জাতিতে পরিণত হতে পারবে। পক্ষান্তরে জাতি যদি রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে বিরোধ করে প্রত্যেকটি দল পৃথক পৃথক অনুসরণীয় নেতা বানিয়ে নেয়, তাহলে জাতি বিভক্ত হয়ে যাবে। সুতরাং যারা একজনকে আমীর বানিয়ে তার হাতে বায়‘আত করে তার অনুসরণ করে চলে, তাদের একাজ মারাত্মক ভুল প্রমাণিত হয়। শুধু তাই নয়; বরং তাদের একাজ এক দিক বিবেচনায় যেমন বিদ‘আত, তেমনি অন্যদিক বিবেচনায় তা সরকারের বিরোধিতার শামিল।

তবে সফর অবস্থায় আমীর নির্বাচনের বিষয়টি ভিন্ন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যখন তিনজন সফরে বের হবে, তখন তারা তাদের একজনকে আমীর বানাবে’। হাদীছটিতে ইমারত বলতে বিশেষ ইমারতের কথা বলা হয়েছে।…

আমি আবারও বলছি, মুক্বীম অবস্থায় আমীর হিসাবে কারো বায়‘আত গ্রহণ করে মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানের মত তার অনুসরণ করা বিদ‘আত।([2])

প্রশ্ন: ইসলামে জামা‘আতের গুরুত্ব কতটুকু? কোনো মুসলিমের নির্দিষ্ট কোনো জামা‘আতে যোগদান করা কি শর্ত?

উত্তর: ইসলামে জামা‘আত হচ্ছে দ্বীনের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ জামা‘আত সম্পর্কে বলেন, ‘আমার উম্মতের একটি দল কিয়ামত পর্যন্ত বিজয়ী থাকবে। তাদের বিরোধীরা তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। এমনকি কিয়ামত এসে যাবে, তবুও তারা ঐরূপই থাকবে’। হাদীছটিতে উল্লেখিত এই জামা‘আতের সাথেই সবার থাকা উচিৎ।

তবে দলাদলির জামা‘আত, যে হক বা বাতিলের তোয়াক্কা না করে যে কোনো মূল্যে নিজের মতামতের বিজয় কামনা করে, সেই জামা‘আতে যোগদান করা জায়েয নয়। কেননা এই ধরনের দলে যোগ দেওয়া মুসলিম জামা‘আত থেকে বের হয়ে দলাদলিতে যোগ দেওয়ার শামিল। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ فَرَّقُواْ دِينَهُمۡ وَكَانُواْ شِيَعٗا لَّسۡتَ مِنۡهُمۡ فِي شَيۡءٍۚ إِنَّمَآ أَمۡرُهُمۡ إِلَى ٱللَّهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُم بِمَا كَانُواْ يَفۡعَلُونَ ١٥٩ ﴾ [الانعام: ١٥٩] 

‘নিশ্চয় যারা স্বীয় ধর্মকে খণ্ড-বিখণ্ড করেছে এবং অনেক দলে বিভক্ত হয়ে গেছে, তাদের সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই। তাদের বিষয় আল্লাহ তা‘আয়ালার নিকট সমর্পিত’ (আলআন‘আম ১৫৯) তিনি অন্যত্র বলেন,

﴿ ۞شَرَعَ لَكُم مِّنَ ٱلدِّينِ مَا وَصَّىٰ بِهِۦ نُوحٗا وَٱلَّذِيٓ أَوۡحَيۡنَآ إِلَيۡكَ وَمَا وَصَّيۡنَا بِهِۦٓ إِبۡرَٰهِيمَ وَمُوسَىٰ وَعِيسَىٰٓۖ أَنۡ أَقِيمُواْ ٱلدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُواْ فِيهِۚ كَبُرَ عَلَى ٱلۡمُشۡرِكِينَ مَا تَدۡعُوهُمۡ إِلَيۡهِۚ ٱللَّهُ يَجۡتَبِيٓ إِلَيۡهِ مَن يَشَآءُ وَيَهۡدِيٓ إِلَيۡهِ مَن يُنِيبُ ١٣ ﴾ [الشورا: ١٣] 

‘তিনি তোমাদের জন্য দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথই নির্ধারণ করেছেন, যার আদেশ দিয়েছিলেন নূহকে, যা আমি আপনার প্রতি প্রত্যাদেশ করেছি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহীম, মূসা ও ঈসাকে এই মর্মে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না’ (আশশূরা ১৩) তিনি অন্যত্র আরো বলেন,

﴿ وَلَا تَكُونُواْ كَٱلَّذِينَ تَفَرَّقُواْ وَٱخۡتَلَفُواْ مِنۢ بَعۡدِ مَا جَآءَهُمُ ٱلۡبَيِّنَٰتُۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ لَهُمۡ عَذَابٌ عَظِيمٞ ١٠٥ ﴾ [ال عمران: ١٠٥] 

‘আর তাদের মত হয়ো না, যারা তাদের নিকট স্পষ্ট প্রমাণাদি আসার পরও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং বিরোধ করেছে। আর তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি’ (আলে ইমরান ১০৫)

একটি কথা বলা ভাল, ইসলামী দলগুলি যদি সত্যিকার অর্থে ইসলামের বিজয় চায়, তাহলে পরস্পরে বিচ্ছিন্ন না হয়ে তাদের শুধুমাত্র একটি দলে সীমাবদ্ধ থাকা উচিৎ, যে দল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর ছাহাবায়ে কেরামের পথের দল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘এই উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হয়ে যাবে এবং একটি ছাড়া সবগুলিই জাহান্নামে যাবে। তাঁরা বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! জান্নাতী সেই দল কোন্‌টি? তিনি বললেন, যে আমার এবং আমার ছাহাবার পথে থাকবে’।

এই দলগুলি মুসলিম উম্মাহ্‌র মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করেছে এবং তাদের মধ্যে সৃষ্টি করেছে শত্রুতা। এমনকি একজন আরেক জনকে যম শত্রু মনে করে; অথচ তারা সবাই মুসলিম এবং সবাই তার নিজের দ্বারা ইসলামের বিজয় কামনা করে। কিন্তু এত বিরোধ আর বিভক্তি নিয়ে ইসলামের বিজয় কি করে সম্ভব?! যাহোক, আমি আমার ভাইদের প্রতি হকের উপর এক হয়ে যাওয়ার এবং কুরআন ও আল্লাহ্‌র দিকে ফিরে যেয়ে বিরোধের সমস্ত দিক পরিহার করার আহ্বান জানাই।

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মুসলিম যুবকেরা আজ এই বিভক্তির শিকারে পরিণত হয়েছে। কারণ তারা একেক জন একেক দলে যোগ দিয়ে পরস্পর পরস্পরকে গালাগালি ও নিন্দা করে, যা মুসলিম যুবকদের জাগরণে চরম বাধা। যাহোক, আমি আবারও মুসলিমদেরকে দলাদলি পরিহার করার নছীহত করছি। আমি মনে করি, গোটা মুসলিম উম্মাহকে পরস্পরে বিচ্ছিন্ন না হয়ে এক হয়ে যাওয়া উচিৎ। প্রত্যেকটি দল অন্যান্য দলের বিপরীতে নতুন নাম দিয়ে আরেকটি দল গঠন করা উচিৎ নয়।([3])

তিনি ‘হিল্‌ইয়াতু ত্বলিবিল ইল্‌ম’ পুস্তিকার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ‘দলীয় ভিত্তির উপর কোনো প্রকার মিত্রতা ও শত্রুতা চলবে না’ শিরোনামের মধ্যে বলেন, এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, দ্বীনী শিক্ষার প্রত্যেকটি শিক্ষানবিশকে সর্বপ্রকার দলাদলিমুক্ত থাকতে হবে। নির্দিষ্ট কোনো দলের উপর ভিত্তি করে মিত্রতা বা বৈরীতা গড়ে তোলা যাবে না। মনে রাখতে হবে, নিঃসন্দেহে এটি সালাফে ছালেহীনের মূলনীতি বিরোধী। সালাফে ছালেহীনের নিকট কোনো প্রকার দলাদলি ছিল না, তাঁরা সবাই একটিমাত্র দলের অন্তুর্ভুক্ত ছিলেন, তাঁরা সবাই নিম্নোক্ত আয়াতের ভাষ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন,

﴿هُوَ سَمَّىٰكُمُ ٱلۡمُسۡلِمِينَ ﴾ [الحج: ٧٨] 

‘তিনিই তোমাদের নাম মুসলিম রেখেছেন’ (আলহজ্জ ৭৮) অতএব, কুরআন ও সুন্নাহ্‌র বক্তব্যের বাইরে অন্য কোনো কিছুর উপর ভিত্তি করে দলাদলি, মিত্রতা ও বৈরীতা চলবে না। দেখা যায়, কোনো ব্যক্তি নির্দিষ্ট একটি দলের সাথে জড়িত, ফলে সে ঐ দলের মূলনীতি সমর্থন করে চলে এবং তার সমর্থনের পক্ষে এমন কিছু দলীল পেশ করে, যা কখনই তার পক্ষে নয়; বরং তার বিপক্ষের দলীল হতে পারে। দলীয় কর্মপদ্ধতি ও মূলনীতি সমর্থন না করার কারণে এমনকি তার নিকটতম মানুষটিকেও পথভ্রষ্ট গণ্য করতে সে ইতস্তত বোধ করে না। সে বলে, তুমি আমার পথে না চললে তুমি আমার বিরোধী।…অতএব, ইসলামে কোনো প্রকার দলাদলি চলবে না। মুসলিমদের দলাদলির কারণে আজ বিভিন্ন পথের জন্ম হয়েছে এবং মুসলিম উম্মাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আজ তারা পরস্পরকে পথভ্রষ্ট গণ্য করছে এবং তার মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করছে।([4])

প্রশ্ন: কুরআন ও হাদীছের কোথাও কি দল সৃষ্টির প্রমাণ মিলে?

উত্তর: কুরআন ও হাদীছে দল তৈরীর প্রমাণ মিলা তো দূরের কথা; বরং এতদুভয়ে দলাদলির কঠোর নিন্দা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ فَرَّقُواْ دِينَهُمۡ وَكَانُواْ شِيَعٗا لَّسۡتَ مِنۡهُمۡ فِي شَيۡءٍۚ إِنَّمَآ أَمۡرُهُمۡ إِلَى ٱللَّهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُم بِمَا كَانُواْ يَفۡعَلُونَ ١٥٩ ﴾ [الانعام: ١٥٩] 

‘নিশ্চয় যারা স্বীয় ধর্মকে খণ্ড-বিখণ্ড করেছে এবং অনেক দলে বিভক্ত হয়ে গেছে, তাদের সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই। তাদের বিষয় আল্লাহ তা‘আলার নিকট সমর্পিত। অতঃপর তিনি তাদেরকে তাদের আমলের হিসাব দিয়ে দিবেন’ (আলআন‘আম ১৫৯) তিনি অন্যত্র বলেন,

﴿كُلُّ حِزۡبِۢ بِمَا لَدَيۡهِمۡ فَرِحُونَ ٥٣ ﴾ [المؤمنون: ٥٣] 

‘প্রত্যেক দল নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে আনন্দিত’ (আলমুমিনূন ৫৩) নিঃসন্দেহে এসব দলাদলি আল্লাহ্‌র নির্দেশের পরিপন্থী। তিনি এরশাদ করেন,

﴿ إِنَّ هَٰذِهِۦٓ أُمَّتُكُمۡ أُمَّةٗ وَٰحِدَةٗ وَأَنَا۠ رَبُّكُمۡ فَٱعۡبُدُونِ ٩٢ ﴾ [الانبياء: ٩٢] 

‘তারা সকলেই তোমাদের ধর্মের; এবং আমিই তোমাদের পালনকর্তা। অতএব, আমারই ইবাদত কর’ (আলআম্বিয়া ৯২)

এসব দলাদলির ফলাফলও কল্যাণকর নয়। কেননা প্রত্যেকটি দল অপর পক্ষকে নানাভাবে গালাগালি করে থাকে।

প্রশ্ন: কেউ কেউ বলে, কোনো দল বা সংগঠনের অধীনে না থাকলে দা‘ওয়াতী কার্যক্রম শক্তিশালী হয় না। এক্ষেত্রে আপনার মতামত কি?

উত্তর: এ ধারণা সঠিক নয়: বরং কুরআন ও হাদীছের অধীনে থেকে এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর চার খলীফার নীতি অনুসরণ করে চললে দা‘ওয়াতী কার্যক্রম আরো বেশী বেগবান হবে।([5])

প্রশ্ন: বর্তমান ইসলামী বিশ্বে আমরা লক্ষ্য করছি যে, বহু দল ইসলামের পথে মানুষকে আহ্বান করছে এবং প্রত্যেকেই বলছে, আমি সালাফে ছালেহীনের মূলনীতি অনুসরণ করে চলছি এবং আমার সাথেই রয়েছে কুরআন ও সুন্নাহ। এক্ষণে, এসব দল সম্পর্কে আমাদের ভূমিকা কি হবে? এসব দলের আমীরগণের মধ্যে যে কোনো একজনের হাতে বায়‘আত করার বিধান কি?

উত্তর: যেসব দল দাবী করছে যে, তারা হকের উপরে আছে, তাদের সম্পর্কে মন্তব্য করা খুবই সহজ। আমরা তাদেরকে জিজ্ঞেস করব, হক কাকে বলে? জবাব, পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ সমর্থিত বক্তব্যই হচ্ছে হক। যে ব্যক্তি সত্যিকার অর্থে মুমিন, কুরআন ও সুন্নাহ্‌র দিকে প্রত্যাবর্তন করলে তার যাবতীয় দ্বন্দ্ব নিরসন হওয়া সম্ভব। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, কোনো কিছুই তার উপকারে আসবে না। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ ﴾ [النساء: ٥٩] 

‘অতঃপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও, যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক’ (আন-নিসা ৫৯)

সুতরাং এসব জামা‘আতের লোকজনদের আমরা বলব, তোমরা একতাবদ্ধ হয়ে যাও; প্রত্যেকেই তার প্রবৃত্তির পূজা ছেড়ে দাও এবং কুরআন-সুন্নাহ্‌র বক্তব্যকে আঁকড়ে ধরার পাকাপোক্ত নিয়্যত কর।

…তবে রাষ্ট্রপ্রধান বা দেশের সরকার ছাড়া অন্য কারো হাতে বায়‘আত করা বৈধ নয়। কেননা আমরা যদি প্রত্যেকের পৃথক পৃথক বায়‘আতের কথা বলি, তাহলে মুসলিম উম্মাহ বিভক্ত হয়ে যাবে এবং প্রত্যেকটি দেশের বিভিন্ন এলাকায় শত শত আমীর সৃষ্টি হবে। মূলত: এটিই হচ্ছে বিভক্তি।

কোনো দেশে ইসলামী বিধান চালু থাকলে, সেখানে অন্য কারো হাতে বায়‘আত জায়েয নেই। তবে কোনো দেশের সরকার যদি আল্লাহ্‌র বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা না করে, তাহলে তার কয়েকটি অবস্থা হতে পারেঃ সরকারের কিছু কিছু কর্মকাণ্ড কখনো কুফরী হতে পারে, কখনো যুলম হতে পারে, আবার কখনো ফাসেক্বীও হতে পারে। কুরআন-হাদীছের আলোকে যখন স্পষ্ট প্রমাণিত হবে যে, কোনো দেশের সরকার স্পষ্ট কুফরীতে অনঢ় রয়েছে, তাহলে আমাদেরকে তাকে সরিয়ে দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। তবে তার মোকাবেলায় নামা যাবে না এবং শক্তি প্রয়োগ করে তার বিরুদ্ধাচরণ করা যাবে না। তার বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ করলে তা হবে শরী‘আত ও হিকমত পরিপন্থী। আর সে কারণে মক্কায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিহাদের নির্দেশ দেওয়া হয়নি। কেননা সে সময় তাঁর এমন কোনো শক্তি ছিল না, যার মাধ্যমে তিনি মক্কার মুশরিকদেরকে মক্কা থেকে বের দিতে পারবেন বা তাদেরকে হত্যা করতে পারবেন। সুতরাং সরকারের অস্ত্র-শস্ত্রের তুলনায় যাদের কোনো অস্ত্র নেই বললেই চলে এবং যাদের সংখ্যা নিতান্তই কম, তাদের জন্য সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যাওয়া হিকমত পরিপন্থী বৈ কিছুই নয়।

…সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামার জন্য হাদীছে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্তের কথা বলা হয়েছে; আর তা হচ্ছে, ব্যক্তিকে নিজেই সরকারের কুফরীর বিষয়টি স্বচক্ষে দেখতে হবে, অন্যের কাছ থেকে শুনলে চলবে না। কারণ অনেক সময় মিথ্যা প্রচার করা হয়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে, তার ভেতরে কুফরী অবশ্যই থাকতে হবে; ফাসেক্বী নয়। সে যদি বড় ধরনের ফাসেক্বীও করে বসে, তথাপিও তার বিরুদ্ধে মাঠে নামা যাবে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যদি সে যেনা করে বা মদ পান করে অথবা অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে মাঠে নামা যাবে না। তবে সে যদি কারো রক্ত হালাল মনে করে তাকে হত্যা করে, তাহলে সেক্ষেত্রে হুকুম আলাদা হবে। হাদীছে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্তের কথা বলা হয়েছে; তা হচ্ছে, সরকারের কুফরী স্পষ্ট হতে হবে, যেখানে কোনো প্রকার ব্যাখ্যার অবকাশ থাকবে না। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে, সরকারের কুফরীর ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহ্‌র স্পষ্ট দলীল থাকতে হবে, এখানে কিয়াসী দলীল চলবে না।

এই হচ্ছে চারটি শর্ত। সরকারের বিপক্ষে মাঠে নামার পঞ্চম শর্ত হচ্ছে, শক্তি ও সামর্থ্য থাকা। শেষোক্ত এই শর্তটি যে কোনো ওয়াজিবের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿ لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۚ ﴾ [البقرة: ٢٨٦] 

‘আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না’ (আল-বাক্বারাহ ২৮৬) তিনি অন্যত্র বলেন,

﴿ فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ مَا ٱسۡتَطَعۡتُمۡ ﴾ [التغابن: ١٦] 

‘অতএব, তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর’ (আত-তাগাবুন ১৬)

এক্ষণে, যেসব ভাই তাদের দৃষ্টিতে তাদের ইসলামী সরকার নেই মনে করে বিভিন্ন দল গঠন করে প্রত্যেকটি দলের একজন করে আমীর নির্ধারণ করতে চায়, আমি তাদেরকে বলব, এটি তোমাদের মারাত্মক ভুল, প্রত্যেকটি দলের আলাদা আলাদা আমীর বানিয়ে মুসলিম উম্মাহকে বিভক্ত করে দেওয়া তোমাদের জন্য আদৌ বৈধ নয়। বরং যে সরকারকে হটানোর সবগুলি শর্ত পাওয়া যায়, তাকে হটানোর জন্য তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা করতে হবে।([6])

তথ্যসূত্র :

([1]) ‘কতিপয় সূদানীদের সাথে শায়খ ইবনে বাযের সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎ’ ক্যাসেট থেকে সংগৃহীত।

([2]) শারহু ছহীহিল বুখারী, পৃ: ৪৮৮-৪৮৯ (আল-মাকতাবা আল-ইসলামিইয়া, প্রথম প্রিন্ট)।

([3]) শায়খের নিজস্ব ওয়েবসাইট http//www.ibnothaimeen.com–এর নিম্নোক্ত লিঙ্ক থেকে ১০/১২/২০১২ তারিখ দুপুর ১৩:২৮ টায় সংগৃহীত:

http://www.ibnothaimeen.com/all/noor/article_994.shtml

([4]) আত-তালীক্ব আছ-ছামীন আলা শারহে ইবনে উছায়মীন লিহিল্‌ইয়াতি ত্বলিবিল ইল্‌ম, পৃ: ৪০৬-৪০৮।

([5]) ‘আব্দুর রহমান আব্দুল খালেক্ব সম্পর্কে উলামায়ে কেরামের মন্তব্য’ ক্যাসেটের দ্বিতীয় পিঠ থেকে সংগৃহীত।

([6]) মুহাম্মাদ ইবনে ছালেহ আল-উছায়মীন, লিক্বাআতু বাবিল মাফতূহ, ২/১৪১-১৪৩, প্রশ্ন নং ৮৭৫ (দারুল বুছায়রাহ, মিশর)।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88