সহীহ হাদীসের আলোকে দাজ্জালের বর্ণনা (শেষ পর্ব)
৩১। দাজ্জাল বের হলে একজন (বিশিষ্ট) ঈমানদার ব্যক্তি তার দিকে রওয়ানা হবে। সংবাদ পেয়ে দাজ্জালের পক্ষ থেকে তার অস্ত্রধারী ব্যক্তিরা গিয়ে তাঁর সাথে মিলিত হবে। তারা তাকে জিজ্ঞেস করবে, তুমি কোথায় যাওয়ার ইচ্ছা করছো? তিনি বলবেন, ঐ ব্যক্তির কাছে যে আবির্ভূ তহয়েছে। তখন তারা বলবে, তুমি কি প্রভূর প্রতি ঈমান আনবেনা? তিনি বলবেন, আমাদের প্রভূর ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। এরপর তারা পরস্পরে বলবে, একে হত্যা কর। তারপর একে অপরকে বলবে, তোমাদের প্রভূ নিষেধ করেছেন যে, তোমরা তাকে না দেখিয়ে কাউকে হত্যা করবেনা। অতঃপর তারা তাঁকে দাজ্জালের নিকট নিয়ে যাবে। যখন ঈমানদার ব্যক্তি দাজ্জালকে দেখতে পাবেন তখন বলবেন, হে জনগন! (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি) এইতো সেই দাজ্জাল যার কথা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) উল্লেখ করেছেন (অন্য বর্ণনায় রয়েছেঃ আলোচনা করেছেন)। এরপর দাজ্জালের নির্দেশে তাঁর চেহারা ক্ষতবিক্ষত করা হবে। বলা হবে, একে ধরে চেহারা ক্ষত বিক্ষত করে দাও। অতঃপর তাঁর পেট ও পিঠকে পিটিয়ে বিছিয়ে ফেলা হবে। তারপর দাজ্জাল জিজ্ঞেস করবে, আমার প্রতি ঈমান আনবেনা? তিনি বলবেন, তুই তো মিথ্যাবাদী মাসীহ (দাজ্জাল বলবে, তোমাদের কি ধারণা, আমি যদি একে হত্যাকরার পর জীবিত করি তাহলে কি তোমরা আমার কাজের ব্যাপারে সন্দিহান হবে? তখন তারা বলবে না)। তখন তাঁকে কুড়াল দিয়ে খণ্ড বিখণ্ড করে ফেলার জন্য আদেশ করা হবে। তার আদেশে প্রথমে তাকে দুই পা আলগা করে খণ্ড করা হবে (তাকে হত্যা করা হবে)। (নাওয়াস বর্ণিত হাদীসে রয়েছেঃ তাকে তলোয়ার দিয়ে জোরে আঘাত করবে এবং তাকে দুই টুকরো করে ফেলবে। প্রত্যেকটি টুকরো দুই ধনুকের ব্যবধানে চলে যাবে)। তিনি বলেন, অতঃপর দাজ্জাল খণ্ডিত টুকরা দ্বয়ের মাঝখানে এসে তা কে লক্ষ্য করে বলবে, উঠো! তৎক্ষনাৎ তিনি উঠে দাঁড়াবেন। তিনি বলেনঃ (অতঃপর তা কে ডাকবে। ডাকা মাত্র সে জীবিত হয়ে তার কাছে আসবে। তখন তার চেহারা হবে উজ্জ্বল, চমকপ্রদ ও হাস্যময়) অতঃপর দাজ্জাল তাকে আবার জিজ্ঞেস করবে, এবার আমার প্রতি ঈমান আনবে কি? তখন তিনি বলবেন, (আল্লাহর শপথ!) আমি তো তোমার সম্পর্কে আরো অধিক অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। অতঃপর তিনি উপস্থিত জনতা কে লক্ষ্য করে বলবেন, হে লোক সকল! মনে রেখ, দাজ্জাল আমার পরে আর কোন মানুষের উপর কর্তৃত্ব চালাতে পারবেনা। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর দাজ্জাল তাঁকে জবাই করার জন্য ধরবে এবং গলাও ঘারে তামা জড়িয়ে দিতে চেষ্টা করবে। কিন্তু এ পর্যায়ে পৌঁছতে সক্ষম হবেনা। অতঃপর তাঁর হাত পা ধরে তাঁকে নিক্ষেপ করবে। মানুষ ধারণা করবে বুঝি আগুনে ফেলে দিয়েছে। প্রকৃত পক্ষে তাঁকে জান্নাতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ রব্বুল’ আলামীনের নিকটি এই ব্যক্তি বড় শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করবেন।”
৩২। অতঃপর ফিরিশতারা দাজ্জালের মূখ কে সিরিয়ার দিকে ঘুরিয়ে দিবেন। (অতঃপর সে ‘ইলিয়া’ পাহাড়ে আসবে। সেখানে এসে সে একদল মুসলিম কে অবরোধ করে রাখবে)। মুসলিমরা তখন কঠিন অবস্থায় সম্মুখিন হবে। (মানুষ দাজ্জাল থেকে পলায়ন করে পাহাড়ে আশ্রয় নিবে। উম্মু শুরাইক বিনতু আবুল ‘আকর বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তখন আরবগণ (মাক্কাহ্ ও মাদীনাহবাসী) কোথায় থাকবে? তিনি বললেনঃ তাদের সংখ্যা খুবই কম হবে।
৩৩। তাদের ইমাম হবেন একজন সৎ ব্যক্তি। [রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ মাহদী আমাদের আহলে বাইতের মধ্য থেকে হবেন (ফাত্বিমাহর) বংশধর থেকে]। আল্লাহ তাকে একরাতে খিলাফতের যোগ্য করে দিবেন। তার নাম হবে আমার নামের মত এবং তার পিতার নাম হবে আমার পিতার নামের মতো। তার ললাট প্রশস্ত ও নাক উঁচু হবে। তিনি পৃথিবীকে ন্যায়-ইনসাফ দ্বারা এরূপ পরিপূর্ণ করবেন, যেরূপতা যুলুম ও পাপাচারে পরিপূর্ণ ছিল। তিনি সাত বছর রাজত্ব করবেন। নাবী(সাঃ) বলেছেনঃ আমার উম্মতের দুটি দলকে আল্লাহ জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দিবেনঃ এক দল যারা হিন্দুস্থানের জিহাদে অংশগ্রহণ করবে এবং অপর দলটি হলো যারা ঈসা ইবনু মারইয়ামের সঙ্গী হয়ে দাজ্জালের বিরুদ্ধে লড়বে এবং তিনি (সাঃ) বলেনঃ তোমাদের কেউ এদের দেখা পেলে তাকে আমার পক্ষ থেকে সালাম জানাবে।
৩৪। তাদের ইমাম যখন এগিয়ে গিয়ে তাদেরকে নিয়ে ফজরের সলাত আদায় করতে থাকবেন এমন সময় ঈসা ইবনু মারইয়াম (আকাশ থেকে) ভোর বেলায় অবতরণ করবেন। তিনি দামিস্কের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত সানা মিনারায় অবতরণ করবেন। এসময় তিনি ওয়াস ও জাফরান রংয়ের দুটি বস্ত্র পরিহিত অবস্থায় থাকবেন। দু’জন ফিরিশতার পাখায় দু’হাত রেখে অবতরণ করবেন। যখন তিনি মাথা নীচু করবেন হালকা বৃষ্টি হবে আর যখন উঁচু করবেন, তখন দেহ থেকে মুক্তার বিন্দুর ন্যায় ফোটা গড়িয়ে পড়বে। তাঁর নিশ্বাসের বাতাস পেলে একটি কাফির ও বাঁচতে পারবেনা, সব মরে যাবে। এবং তাঁর শ্বাস তাঁর শেষ দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।
৩৫। আমার এবং তার (ঈসার) মাঝে কোন নাবী আসবেনা। অবশ্য তিনি (আকাশথেকে) অবতরণ করবেন। তোমরা যখন তাঁকে দেখবে, তখন তাঁকে এভাবে চিনবে যে, ‘তিনি হবেন মধ্যম আকৃতির, তার দেহের রং হবে লাল-সাদা মিশ্রিত, তার পরিধানের কাপড় হবে হালকা হলুদরং বিশিষ্ট দু’খানি চাঁদর এবং তার মাথার চুল ভিজেনা থাকা সত্ত্বও সেখান থেকে ফোটায় ফোটায় পানি ঝরতে থাকবে। তিনি ইসলামের জন্য লোকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবেন, ক্রশ ভেঙ্গে ফেলবেন, শুকর নিধন করবেন এবং জিযিয়া করর হিত করবেন। মহান আল্লাহ তাঁর সময়ে ইসলাম ছাড়া অন্য সব মতবাদকে ধ্বংস করে দিবেন)। এবং তিনি বলেন: (তখন কেমন হবে যখন ঈসা ইবনু মারইয়াম (আকাশ থেকে) তোমাদের মাঝে অবতরণ করবেন, আর ইমাম হবেন তোমাদের থেকে। (আরেক বর্ণনায় রয়েছেঃ তোমাদের থেকেই তোমাদের ইমাম হবে?)। ইবনু আবূযি’ব (এক বর্ণনায়) বলেনঃ”তোমাদের থেকেই তোমাদের ইমাম হবে।”-এর অর্থ সম্পর্কে তুমি জানো কি? আমি বললামঃ আমাকে অবহিত করুন। তিনি বললেনঃ তোমাদের মহান পরাক্রমশালী বরকতময় আল্লাহর কিতাব ও তোমাদের নাবী (সাঃ)- এর সুন্নাতের অনুসারী হয়েই তিনি তোমাদের ইমাম হবেন।
৩৬। ঈসা (আ)-কে দেখে উক্ত ইমাম পিছনে সরে যাবেন যেন ঈসা ইবনু মারইয়াম (আঃ) সামনে গিয়ে লোকদের সলাতে ইমামতি করতে পারেন। (ইমাম বলবেন, আপনি এগিয়ে এসে আমাদের সলাতে ইমামতি করুন) তখন ঈসা(আ) তাঁর হাতে উক্ত ইমামের দুই কাঁধের উপর রেখে বলবেনঃ (না, আপনারা একে অন্যের আমীর। আল্লাহর পক্ষ থেকে এটা উম্মতের মর্যাদা। আপনি সামনে যান এবং সলাতের ইমামতি করুন। ফলে তাদের ইমাম তাদের নিয়ে সলাত আদায় করবেন।
৩৭। অতঃপর দাজ্জাল (ইলিয়া) পাহাড়ে আসবে এবং মুসলিমদের একটি দলকে ঘেরাও করবে। তখন এক ব্যক্তি অবরুদ্ধ মুসলিমের বলবে, তোমরা এইতা গুতের অপেক্ষায় না থেকে তার বিরূদ্ধে যুদ্ধ করো যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহর সাথে মিলিত হও (শাহাদাত বরণ করো) অথবা আল্লাহ তোমাদেরকে বিজয়ী করেন? অতঃপর তারা তার আদেশ মোতাবেক সকাল বেলায় দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।
৩৮। যখন মুসলিমরা তার মুকাবিলার উদ্দেশে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিবে এবং সমান ভাবে সারিবদ্ধ হবে। এমন সময় সলাতের আযান হবে। ফাজর সলাতের তারা সকাল করবেন এমন অবস্থায় যে, তখন ঈসা (আ) তাদের সাথেই আছেন। অতঃপর তিনি লোকদের ইমামতি করবেন। তিনি যখন রুকু’ থেকে মাথা উঠাবেন তখন বলবেনঃ সামিআল্লাহুলিমান হামীদাহ, আল্লাহ মাসীহ দাজ্জালকে ধ্বংস করেছেন এবং মুসলিমদের বিজয়ী করেছেন। অতঃপর সলাত শেষে ঈসা ইবনু মারইয়াম বলবেনঃ দরজা খুলে দাও। তখন দরজা খুলে দেয়া হবে। আর দরজার পিছনে থাকবে দাজ্জাল। তার সঙ্গে থাকবে সত্তর হাজার ইয়াহুদী। তাদের প্রত্যেকের সাথে চাঁদরে আবৃত কারু কার্য খচিত তলোয়ার থাকবে। ঈসা (আ) যমীনে অবতরণ করে দাজ্জালকে অনুসন্ধান করবেন।
৩৯। [অতঃপর ঈসা (আঃ) তাঁর অস্ত্র নিয়ে দাজ্জালের দিকে রওয়ানা হবেন]। যখন দাজ্জাল তাঁকে দেখবে, তখন সে এরূপ বিগলিত হয়ে যাবে যেমন পানিতে লবণ গলে যায়। [যদি তাকে এমনি ছেড়ে দেয় তবুও সে বিগলিত হয়ে হালকা হয়ে যাবে বরং আল্লাহর নাবী (ঈসা) তাকে নিজ হাতে হত্যা করবেন, এবং তিনি ঈমানদার সাথীদেরকে তাঁর বল্লমে ওর রক্ত দেখিয়ে দিবেন]। তিনি তাকে পূর্ব দিকের বাবে লুদে পাবেন এবং তাকে হত্যা করবেন। [অতঃপর আল্লাহ তাকে ‘আক্বাবায়ে আফীক্বের নিকটে ধ্বংস করবেন]।
৪০। আল্লাহ ইয়াহুদীদের পরাজিত করবেন। [এবং মুসলিমদেরকে তাদের উপর কর্তৃত্ব দান করবেন]। [এবং মুসলিমরা তাদেরকে হত্যা করবে]। তখন ইয়াহুদীরা আল্লাহর সৃষ্ট যেকোন বস্তুর আড়ালে লুকিয়ে থাকুক না কেন, সে বস্তুকে আল্লাহ বাকশক্তি দান করবেন, চাই তা পাথর, গাছপালা, দেয়াল অথবা কোন জন্তু হোক না। তবে একটি গাছ হবে ব্যতিক্রম, যার নাম গারক্বাদাহ। একে ইয়াহুদীদের গাছ বলা হয়। সে কথা বলবে না। তবে সে বলবে : হে আল্লাহর মুসলিম বান্দা! এই তো ইয়াহুদী [আমার পিছনেই আছে] তুমি এসো এবং তাকে হত্যা করো।
৪১। এর পরে মানুষ দীর্ঘ সাত বছর যাবৎ এমন শান্তিপূর্ণভাবে জীবন যাপন করবে যে, দুই ব্যক্তির মধ্যে কোন দুশমনি থাকবে না।
৪২। ঈসা ইবনু মারইয়াম (আ) আমার উম্মাতের একজন হবেন। [মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে সত্যায়ন করে এবং তার উম্মাতের একজন হয়ে আসবেন] তিনি হবেন ন্যায়পরায়ণ শাসক ও ইন্সাফকারী [হিদায়াতপ্রাপ্ত] ইমাম। [তিনি ইসলামের জন্য লোকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবেন] ক্রশ ভেঙ্গে ফেলবেন, শুকর নিধন করবেন এবং সদাক্বাহ উসূল বন্দ করবেন। বকরী ও উটের উপর যাকাত ধার্য বন্ধ হবে এবং লোকদের মাঝে পারষ্পরিক হিংসা বিদ্বেষ ও ক্রোধের অবসান ঘটবে। [তখন মাল-সম্পদ গ্রহণ করার মত লোক পাওয়া যাবে না]। [এমনকি তখন একটিমাত্র সাজদাহ্ দুনিয়া ও এর মধ্যকার সমগ্র বস্তু থেকে উত্তম হবে]। [তখন দা’ওয়াত হবে একমাত্র রাব্বুল ‘আলামীনের জন্য (অর্থাৎ সবাই একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করবে)]। – [ঐ সত্ত্বার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! ইবনু মারইয়াম অবশ্যই রাওহার গিরিপথে তালবিয়া পাঠ করবেন এবং সেখান থেকে হাজ্জ বা ‘উমরাহ করবেন অথবা দুটোই একত্রে করবেন]।
৪৩। অতঃপর এক সম্প্রদায় লোক ঈসা (আ)-এর সমীপে আসবে যাদেরকে মহান আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন। ঈসা (আ) তাদের চেহারায় হাত বুরিয়ে দিবেন এবং জান্নাতে তাদের জন্য নির্ধারিত স্থান সম্পর্কে তাদেরকে জানিয়ে দিবেন। তিনি এ আলোচনারত অবস্থায় থাকতেই মহান আল্লাহ তাঁর কাছে ওয়াহী নাযিল করবেন : “আমি আমার একদল বান্দাকে বের করে দিয়েছি যাদের সাথে যুদ্ধ করার কারোর ক্ষমতা নেই। সুতরাং আপনি আমার ঈমানদার বান্দাদেরকে তূর পাহাড়ের দিকে নিয়ে একত্র করুন।” এদিকে আল্লাহ তা’আলা ইয়াজুজ মাজুজকে ছেড়ে দিবেন। তারা ছাড়া পেয়ে পৃথিবীর সব প্রান্তে দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। তাদের প্রথম দলগুলো বুহাইরায়ে তাবারিয়া (ভূমধ্যসাগর) উপকূলে এসে পৌঁছবে এবং তাতে যত পানি আছে সব খেয়ে নিঃশেষ করবে। এরপর শেষ দল এসে বলবে, (পানি কোথায়?) এখানে তো কোন সময় পানি ছিল। [অতঃপর তারা (ইয়াজুজ মাজুজ) ঘুরতে ঘুরতে ‘জাবালে খামার’ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। সেটা বাইতুল মুক্বাদ্দাসে অবস্থিত একটি পাহাড়। সেখানে পৌঁছে তারা বলবে, আমরা তো যমীনের বাসিন্দাদের মেরে ফেলেছি, এবার চলো আসমানের বাসিন্দকে হত্যা করবো। এই বলে তারা আকাশের দিকে তীর ছুঁড়তে থাকবে। অবশেষে মহান আল্লাহ তাদের তীরকে রক্তাপ্লুত অবস্থায় তাদের কাছে ফিরিয়ে দিবেন]। এদিকে আল্লাহর নাবী ঈসা (আ) ও তাঁর সঙ্গীগণ অবরুদ্ধ অবস্থায় অতি কষ্টে কাল যাপন করবেন। এমনকি একটা গরুর মাথাও তাদের কাছে বর্তমানের একশো স্বর্ণমুদ্রার চেয়ে অধিক শ্রেয় মনে হবে। এরপর আল্লাহর নাবী ঈসা (আ) ও তাঁর সঙ্গীরা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাদের (ইয়াজুজ মাজুজের) গর্দানে এক প্রকার বিষাক্ত কীট সৃষ্টি করবেন, যার ফলে তারা এক নিমিষে সব মরে যাবে। তারপর আল্লাহর নাবী ঈসা (আ) ও তাঁর সঙ্গীগণ যমীনের বুকে নেমে আসবেন। এসে দেখবেন যমীনে এক বিঘত জায়গাও খালি নেই বরং ইয়াজুজ মাজুজের লাশের পঁচাগলা ও তীব্র দুর্গন্ধে যমীন ভরে গেছে। তখন আল্লাহর নাবী ঈসা (আ) ও তাঁর সঙ্গীরা আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করলে আল্লাহ একদল পাখি পাঠিয়ে দিবেন, যাদের গর্দান হবে উটের গর্দানের ন্যায়। তারা এগুলো বহন করে আল্লাহর যেখানে ইচ্ছা সেখানে ফেলে দিয়ে আসবে। অতঃপর মহান আল্লাহ প্রবল বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, যা পৃথিবীর আনাচে কানাচে কোন ঘর দুয়ারে না পৌঁছে থাকবে না। তা সমগ্র যমীনকে বিধৌত করে আয়নার মত পরিষ্কার করে দিবে। অতঃপর যমীনকে আদেশ করা হবে- “তোমার ফলমূল শস্যাদি উৎপন্ন করো এবং বরকত ফিরিয়ে দাও।” ঐ সময় বিরাট জনগোষ্ঠি একটিমাত্র আনার ফল খেয়ে পরিতৃপ্ত হবে এবং একটি আনারসের ছালের নীচে ছায়া গ্রহণ করবে। পশুর দুধে যথেষ্ট বরকত হবে। এমনকি একটি দুগ্ধবতী উষ্ট্রী এক বিরাট জনগোষ্ঠির জন্য যথেষ্ট হবে, একটি দুগ্ধবতী গাভী একটি গোত্রের জন্য যথেষ্ট হবে এবং একটি দুগ্ধবতী বকরী একটি ছোট গোত্রের জন্য যথেষ্ট হবে]। তখন বদল গরু হবে এই এই মুল্যের এবং ঘোড়া স্বল্প মূল্যে বিক্রি হবে। [তিনি (সাঃ) বলেন : (মাসীহ্ এর পরে যারা বেঁচে থাকবে তাদের জন্য সুসংবাদ, মাসীহ্ এর পরে যারা বেঁচে থাকবে তাদের জন্য সুসংবাদ। তখন আকাশকে আদেশ দেয়া হবে বৃষ্টি বর্ষণ করতে এবং যমীনকে আদেশ দেয়া হবে ফসলাদী উৎপন্ন করতে। তখন যদি তুমি সাফা (পাহাড়ের) উপরও তোমার বীজ বপন করো তাতে ফসল উৎপন্ন হবে। তখন পরস্পরের মাঝে কোন কৃপণতা, হিংসা ও ক্রোধ থাকবে না]।
৪৪। প্রতিটি বিষাক্ত জন্তুর বিষ দূরিভূত হবে। [পৃথিবীতে শান্তি-নিরাপত্তা আসবে, তখন সিংহ উটের সাথে চড়ে, চিতাবাঘ গরুর সাথে এবং বাঘ বকরীর সাথে চড়ে বেড়াবে, শিশুরা সাপ নিয়ে খেলা করবে কিন্তু এসব তাদের কোন ক্ষতি করবে না] এমনকি দুধের শিশু তার হাত সাপের মুখে ঢুকিয়ে দিবে কিন্তু সে তার কোন ক্ষতি করবে না। একজন ক্ষুদ্র মানব শিশু সিংহকে তাড়া করবে। সেও তার কোন ক্ষতি করবে না। নেকড়ে বকরীর পালে এমনভাবে থাকবে যে, যেন সে তার (রক্ষক) কুকুর। পৃথিবী শান্তিপূর্ণ হয়ে যাবে। যেমন পানিতে পাত্র পরিপূর্ণ হয়। তখন সকলের কালেমা এক হবে। আল্লাহ ছাড়া কারোর ইবাদাত করা হবে না। যুদ্ধ-বিগ্রহ তার সরঞ্জাম রেখে দিবে। কুরাইশদের রাজত্বের অবসান হবে। যমীন রূপার তৈরি তশতরীর মত হয়ে যাবে। সে এমন ফসল উৎপন্ন করবে যেমন আদম (আঃ) এর যুগে উৎপন্ন হতো।
৪৫। এরপর ঈসা (আ) পৃথিবীতে চল্লিশ বছর জীবিত থাকার পর ইন্তিকাল করবেন এবং মুসলিমরা তাঁর জানাযার সলাত আদায় করবেন।
৪৬। তারা যখন এ অবস্থায় থাকবে তখন আল্লাহ [সিরিয়ার দিক থেকে একটা শীতল] বাতাস ছেড়ে দিবেন। এ বাতাস তাদের বগলের নীচে প্রভাব ফেলবে (বুক স্পর্শ করবে) এবং তা প্রতিটি মু’মিন ও প্রতিটি মুসলিমের রুহ ক্ববয করবে। (আর ইবনু ‘উমারের হাদীসে আছে : শীতল বাতাসের স্পর্শ লেগে যমীনের বুকে এমন একটি লোকও জীবিত থাকবে না যার অন্তরে অণু পরিমাণও ঈমান আছে, বরং সবাই প্রাণ ত্যাগ করবে। এমনকি কেউ কোন পাহাড়ের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকলেও সেখানে বাতাস প্রবেশ করে তার জান ক্ববয করবে) এরপর পৃথিবীতে কেবল মন্দ পাপী লোকেরাই জীবিত থাকবে [যাদের ফিতনা পাখির ন্যায় তড়িৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়বে এবং যাদের স্বভাব পশুর স্বভাব তুল্য হবে। যারা কোন ভাল কাজ চিনবে না এবং মন্দ কাজকে মন্দ বলে জানবে না। অতঃপর শয়তান তাদের কাছে ছবি ধরে এসে বলবে, তোমরা কি আমার কথা শুনবে না? তখন তারা বলবে, আমাদেরকে কি আদেশ করবেন করুন। এরপর সে মানুষকে মূর্তিপূজার আদেশ করবে। এ সময় তাদের কাছে প্রচুর খাদ্য সম্ভার মজুদ থাকবে, তাদের জীবন সুখ সাচ্ছন্দে কাটবে]। [নারী-পুরুষ গাধার মত প্রকাশে সংগমে লিপ্ত হবে। আর তাদেরই উপরই ক্বিয়ামাত ক্বায়িম হবে]।
৪৭। তারপর এক সময় সিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। এর বিকট শব্দ যে শুনবে সে একবার ঘাড় নোয়াবে একবার উপরে উঠাবে। সর্বপ্রথম ঐ শব্দ এমন ব্যক্তি শুনবে, যে তার উটকে পুকুরে গোসল করাতে পানি ঘোলাটে করছে। সিঙ্গার আওয়ায শুনে সে বেহুঁশ হয়ে যাবে। এরপর সব মানুষ বেহুঁশ হয়ে যাবে। এরপর মহান আল্লাহ বৃষ্টি ছেড়ে দিবেন অথবা বলেছেন বারিধারা বর্ষণ করবেন যেন তা কুয়াশা বা ছায়া- এ দুইয়ের মধ্যে বর্ণনাকারী সন্দিহান। এ বৃষ্টির ফলে যমীন থেকে মানুষের দেহসমূহ উত্থিত হতে থাকবে। “অতঃপর দ্বিতীয়বার সিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। এ ফুঁকের পর সকল মানুষ দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকবে”- (সূরাহ আয-যুমার : ৬৮)। অতঃপর বলা হবে, হে সমবেত মানবগোষ্ঠী! আস তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের সামনে। আর ফিরিশতাদের বলা হবে, “এদেরকে দাঁড় করাও এদের হিসাব নেয়া হবে” – (সূরাহ আস-সাফফাত : ২৪) আবার বলা হবে, জাহান্নামের দলকে বের কর। জিজ্ঞেস করা হবে, কত সংখ্যা থেকে কত? বলা হবে, প্রতি হাজার থেকে নয়শো নিরানব্বই। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : “এটাই সেই দিন যে দিন তরুণ বালকদের বুড়ো করে দিবে।” (সূরাহ আল-মুয্যাম্মিল : ১৭) “এটাই সেই দিন, যে দিন পায়ের নালাকে অনাবৃত করে ফেলবে।” (সূরাহ আল-ক্বলাম : ৪২)
আল্লাহ আমাদের দাজ্জালের ফিতনা থেকে দূরে রাখুন।