সহীহ হাদীসের আলোকে দাজ্জালের বর্ণনা (পর্ব ২)

(প্রথম পর্বের লিংক)

হাদীসটির তাখরীজ শেষে শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহ) যে পরিশিষ্ট এনেছেন যা সহীহ হাদীসে পাওয়া গেছে। এবং যেসব বর্ণনার শাহেদ হাদীস পাননি তা ছাড়াই বর্ণনা করেছেন। তা নিম্নরুপ :

১. হে লোক সকল! আল্লাহ যেদিন থেকে আদম সন্তানাদি সৃষ্টি করেছেন তখন থেকে যমীনের উপর দাজ্জালের ফিতনার চেয়ে ভয়ংকর ফিতনা আর নেই [এবং কিয়ামাত পর্যন্ত হবেও না]। যে ব্যক্তি পূর্ববর্তী ফিতনাসমূহ থেকে নাজাত পাবে সে দাজ্জালের ফিতনা থেকেও নাজাত পাবে। [ আর সে মুসলিমদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না]।

২. নিশ্চয়ই আল্লাহ যত নাবী পাঠিয়েছেন তাঁরা প্রত্যেকেই স্বীয় উম্মাতকে [কানা] দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। আমিও তোমাদের তার ব্যাপারে সাবধান করছি।

৩. আমি নাবীদের মধ্যে সর্বশেষ নাবী এবং তোমরা উম্মাতসমূহের মধ্যে সর্বশেষ উম্মাত।

 

৪. সে (দাজ্জাল) অবশ্যই তোমাদের মাঝে প্রকাশ পাবে। এটা অবশ্যই সত্য, এবং তা অতি নিকটেই, আর যা কিছু ঘটবে তা অতি নিকটে। [ দাজ্জাল সর্বপ্রথম ক্রোধের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করবে]। [সে বের হবে না যতক্ষণ না অবস্থা এরূপ হয় যে, মীরাস বন্টন করা হবে না এবং গণীমত পেয়ে কোন আনন্দ প্রকাশ করা হবে না]।details description of dajjal

৫. আমি তোমাদের মাঝে বর্তমান থাকা বস্থায় যদি সে বের হয়, তাহলে আমি প্রত্যেক মুসলিমের পক্ষে যুক্তি উত্থাপন করবো (তাকে দোষারোপ করবো)। আর যদি সে আমার পরে বের হয়, তাহলে প্রত্যেককে নিজের পক্ষে দলীল পেশ করতে হবে। তখন মহান আল্লাহ প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আমার খলীফাহ স্বরুপ হবেন (অর্থ্যাত তিনি মুসলিমদের দাজ্জাল থেকে রক্ষা করবেন। (উম্মু সালামাহর হাদীসে রয়েছে : সে যদি আমার মৃত্যুর পরে বের হয় তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে নেককার লোকদের দ্বারা রক্ষা করবেন।

৬. নিশ্চয়ই দাজ্জাল বের হবে [পূর্ব দেশ থেকে] যাকে “খুরাসান” বলা হয়। [আসবাহানের ইয়াহুদীদের মাঝে] তাদের চেহারা হবে ভাঁজযুক্ত। (দাজ্জাল আত্মপ্রকাশ করবে) সিরিয়া ও ইরাকের ‘খাল্লা’ নামক স্থান হতে। আর সে তার ডান ও বামে সর্বত্র বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা ঈমানের উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকবে (তিনবার)।

৭. কেননা, আমি তোমাদের কাছে তার এমন অবস্থা বর্ণনা করবো, যা আমার পূর্বে কোন নাবী স্বীয় উম্মাতের কাছে বর্ণনা করেননি। (‘উবাদাহর হাদীসে রয়েছে : আমি তোমাদের কাছে দাজ্জাল সম্পর্কে অনেক হাদীস বর্ণনা করেছি। এতদসত্ত্বেও আমার ভয় হয়, তোমরা তাকে চিনতে পারবে না)।

৮. প্রথমে সে বলবে, আমি নাবী এবং আমার পরে কোন নাবী নেই।

৯. অত:পর যে দাবী করে বলবে, আমি তোমাদের রব্ব! অতছ তোমরা তোমাদের রব্বকে মৃত্যুর পূর্বে দেখবে না।

১০. আর সে হবে কানা। [তার বাম চোখ হবে মিশানো] [যার উপর মোটা চামড়ায় ঢাকা হবে]। [ তা যেন উজ্জল নক্ষত্র] [তার ডান চোখ যেন জ্যোতিহীন, আঙ্গুর সদৃশ গোল]। যা উপরে উঠে থাকবে না এবং নিচে থাকবে না। [ সে কোকড়ানো চুল বিশিষ্ট হবে]। [সাবধান! দাজ্জালের বিষয় তোমাদের কাছে গোপন নয়। আর তোমাদের কাছে গোপন নয় যে, তোমাদের রব্ব কানা নন। দাজ্জালের বিষয় তোমাদের কাছে গোপন নয়। আর তোমাদের কাছে গোপন নয় যে, তোমাদের রব কানা নন। (তিনবার)। [ তোমরা মৃত্যুর আগে তোমাদের রবকে দেখবে না]

১১. সে পৃথিবীতে বিচরণ করবে। আর আকাশ ও যমীন তো আল্লাহরই।

১২. সে হবে বেঁটে, তার পদক্ষেপ হবে দীর্ঘ, মাথারচুল হবে কুঞ্চিত, সে হবে খুঁতযুক্ত।

১৩. সে হবে কোঁকড়ানো চুলবিশিষ্ট লোক (কুঞ্চিতচুল)।

১৪.তার দুই চোখের মাঝে (কপালে) লেখা থাকবে ‘কাফির’. এই লেখা পড়তে পারবে যারা তার কার্যকলাপ অপছন্দ করবে অথবা প্রতেক মু’মিন ব্যক্তিই পড়তে পারবে, চাই সে অক্ষর হোক বা নিরক্ষর.

১৫। তার অন্যতম ফিতনা হলো, তার সাথে থাকবে- জান্নাত ও জাহান্নাম [নদী ও পানি] [এবং রুটির পাহাড়]। [সে আত্মপ্রকাশ করবে সাথে জান্নাত ও জাহান্নাম সদৃশ বস্তু নিয়ে]। ‘তার জাহান্নাম হলো জান্নাত আর জান্নাত হল জাহান্নাম’ [মুগীরাহ ইবনু শু’বাহকে দাজ্জাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আমি বললাম, লোকেরা বলাবলি করছে যে, তার সাথে নাকি রুটি ও গোশতের পাহাড় এবং পানির নহর থাকবে? তিনি বলেনঃ আল্লাহর পক্ষে তো তা এর চাইতে অধিক সহজ] (আরেক হাদিসে এসেছেঃ [দাজ্জালের সাথে থাকবে দুটি প্রবাহিত নহর। তার একটি বাহ্যিক চোখে দেখা যাবে সাদা পানি আর দ্বিতীয়টি বাহ্যিক চোখে দেখা যাবে জ্বলন্ত আগুন]। [তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ঐ যুগ পাবে, তার উচিত হবে সে যেন সেটা থেকেই পান করে যেটাকে আগুন মনে করবে]। এবং চক্ষু বন্ধ করবে অতঃপর মাথা নত করে পান করবে। কেননা তা হবে প্রকৃতপক্ষে পানি [শীতল মিঠা পানি] [উত্তম পানি] [কাজেই সাবধান! তোমরা (ধোঁকায় পড়ে) নিজেদের ধ্বংস করো না]) (অন্য বর্ণনায় রয়েছেঃ যে ব্যক্তি তার নহরে (জান্নাতে) প্রবেশ করবে তার সওয়াব বিনষ্ট হবে এবং পাপ সাব্যস্ত হবে। আর যে ব্যক্তি তার জাহান্নামে প্রবেশ করবে তার জন্য সওয়াব সাব্যস্ত হবে এবং পাপ মোচন হবে)।

১৬। যে ব্যক্তি তার আগুনের দ্বারা পরিক্ষিত হবে, সে যেন আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে এবং সূরা কাহ্‌ফের প্রথমাংশ তিলাওয়াত করে। [কেননা তা পাঠ করলে তোমরা তার ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে]।

১৭। দাজ্জালের অন্যতম ফিতনা হচ্ছে এই, সে জনৈক বেদুইনকে বলবেঃ আমি তোমার জন্য তোমার পিতা-মাতাকে জীবিত করে দিতে পারলে তুমি কি সাক্ষ্য দিবে যে, নিশ্চয় আমি তোমার রব্ব! তখন সে বলবেঃ হ্যাঁ, তখন তার জন্য দু’টি শয়তান তার পিতা ও মাতার আকৃতি ধারন করবে। তারা বলবেঃ হে বৎস! তার আনুগত্য কর। নিশ্চয় সে তোমার প্রতিপালক।

১৮। দাজ্জালের আরেকটি ফিতনা হল, সে এক ব্যক্তিকে পরাভূত করে তাকে হত্যা করবে। এমনকি তাকে করাত দিয়ে দুই টুকরা করে নিক্ষেপ করবে।

১৯। দাজ্জালের আরেকটি ফিতনা হলো, সে একটি গোত্রের পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে, [তাদেরকে সে আহবান করবে] কিন্তু তারা তাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করবে [সে তাদের থেকে সরে যাবে] ফলে তাদের গৃহপালিত পশু ধ্বংস হয়ে যাবে।

২০। দাজ্জালের আরেকটি ফিতনা হলো, সে অন্য আরেকটি গোত্রের পাশ দিয়ে যাবে। [সে তাদেরকে আহবান করবে] তখন তারা তাকে সত্য বলে মেনে নিবে [তার ডাকে সাড়া দিবে]। ফলে সে আকাশকে বৃষ্টি বর্ষণের নির্দেশ দিবে এবং আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ করবে। অতঃপর সে যমীনকে শস্য উৎপাদনের নির্দেশ দিলে যমীন শস্য উৎপাদন করবে। যমীন ফসলাদি এমনভাবে উৎপন্ন করবে যে, তাদের পশুগুলো সেদিন সন্ধ্যায় খুব মোটাতাজা এবং পেট ভর্তি করে স্তন ফুলিয়ে প্রত্যাবর্তন করবে।

২১। দাজ্জাল একটি বিরান (পুরাতন) স্থানে গিয়ে তাকে আদেশ করবে, তোমার গুপ্ত ধনরাশি বের করে দাও। তখন এর ধনরাশি এভাবে তার কাছে এসে পুঞ্জীভূত হবে যেরূপ মৌমাছির ঝাঁক দলে দলে এসে এক জায়গায় একত্রিত হয়।

২২। সে বের হবে [মানুষের মতভেদ ও দলে দলে বিভক্ত হওয়ার যুগে]। [তখন মানুষ পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে, ধর্মকে কিছুই মনে করবে না, এবং আপোষে খারাপ আচরণ করবে। অতঃপর (দাজ্জাল) সকল নদীর ঘাটে আগমন করবে। যমীন তার জন্য এমনভাবে সংকোচন করে দেওয়া হবে তা যেন মেষের একটি চামড়া]।

২৩। সে বের হবে না যতক্ষণ এ নিদর্শন প্রকাশ না পাবে যে, রোমকরা (সিরিয়ার) আ’মাক্ব ও দায়িক্ব নামক নহরের কাছে অবতীর্ণ হবে। [ একদল দুশমন ইসলামপন্থীদের উদ্দেশ্যে একত্রিত হবে এবং একদল ইসলামপন্থীও তাদের উদ্দেশ্যে একত্রিত হবে] অত:পর মাদীনাহ থেকে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনী তাদের মোকাবেলার উদ্দেশে রওয়ানা হবে। সেখানে পৌঁছে যখন তাঁরা সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবে, তখন রোমকরা বলবে : আমাদেরকে এবং আমাদের মধ্যকার যারা বন্দী হয়েছে উভয়কে মিলিত হওয়ার সুযোগ দাও আমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো । তখন মুসলিমরা বলবে : মনে রেখ, আল্লাহর শপথ! আমরা তোমাদের বন্দীদেরকে ছাড়ব না বা যারা তাদেরকে বন্দী করেছে তাদের সাথে তোমাদের মিলিত হতে দিব না। অত:পর মুসলিমদের সাথে তাদের তুমুল লড়াই হবে। [ ঐ যুদ্ধে (উভয় পক্ষের) প্রতিরোধ ব্যবস্থা খুবই প্রবল হবে। মুসলিম বাহিনী একদল মুজাহিদকে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত রাখবে, যারা বিজয়ী না হওয়ার পূর্বে কিছুতেই ফিরবে না। অত:পর তারা সারাদিন যুদ্ধে লিপ্ত থাকবে যে পর্যন্ত  রাত তাদের মাঝে অন্তরায় সৃষ্টি না করে। রাত হলে এই দল ঐ দল সকলেই এভাবে ফিরে আসবে যে, কেউই বিজয়ী হতে পারেনি। এদিকে মৃত্যুর জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ দলটি শেষ হয়ে যাবে। অত:পর মুসলিমরা মৃত্যুর জন্য আরেকটি দল প্রস্তুত করবে যারা বিজয়ী না হয়ে ফিরবে না। এরাও রাত এসে অন্তরায় সৃষ্টি না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। অবশেষে রাত এসে গেলে এই দল ঐ দল সবাই অবিজয়ী হয়ে ফিরে আসবে। আর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ দলটিও শেষ হয়ে যাবে। অত:পর মুসলিমরা আরেকটি দলকে মৃত্যুরে জন্য প্রস্তুত করবে যারা বিজয়ী না হয়ে ফিরে আসবে না। এরাও রাত এসে অন্তরায় সৃষ্টি না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। অবশেষে রাত এসে গেলে এই দল ঐ দল সবাই অবিজয়ী হয়ে ফিরে আসবে। আর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ দলটিও শেষ হয়ে যাবে। যখন চতুর্থ দিন আসবে তখন অবশিষ্ট মুসলিশ বাহিনী শত্রুবাহিনীর দিকে অগ্রসর হবে]। যুদ্ধে মুজাহিদকের এক তৃতীয়াংশ পরাজয় বরণ করবে, যাদের তাওবাহ আল্লাহ কবুল করবেন না। আর এক তৃতীয়াংশ শাহাদাত বরণ করবে, [এরা] আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম শহীদ গণ্য হবে। আর এক তৃতীয়াংশ জয়ী হবে যারা কখনো পর্যদুস্ত হবে না। [অত:পর এদেরকেও আল্লাহ পরাজয়ের সম্মুখিন করবেন অথবা চরম অবস্থায় সম্মুখিন করবেন অথবা ধ্বংসের মুখোমুখি পৌঁছাবেন। যাতে এরাও এমন প্রাণপণে যুদ্ধ করবে যার দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যায় না বা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি পাখি যখন তাদের আশেপাশে উড়ে যাবে, তখন তাদেরকে অতিক্রম করতে সক্ষম হবে না। অতিক্রম করতে গেলে মরে মাটিতে পড়ে যাবে। যুদ্ধ শেষে কোন পিতার সন্তানদেরকে যাদের সংখ্যা একশো গণনা করা হবে কিন্তু মাত্র একজন ব্যতীত তাদের আর কাউকে জীবিত পাওয়া যাবে না। তাহলে কিসের গণীমাতে আনন্দ হবে ? বা কোন মীরাস বন্টন করা হবে ? কাদের মাঝে বন্টন করা হবে ?] অবশেষে এরাই কুসতুনতুনিয়া জয় করবে। বিজয় লাভের পর তারা তাদের তরবারিসমূহ যাইতূন গাছের সাথে ঝুলিয়ে রেখে গণীমাত বন্টন করতে থাকবে। এম সময় হঠাত্ তাদের মধ্যে শয়তান চিত্কার দিয়ে বলে উঠবে : “শুনো, মাসীহ (দাজ্জাল) তোমাদের পরিবার-পরিজনের মধ্যে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে।” এ সংবাদ শুনামাত্র সবাই [হয়রান পেরেশান হয়ে তাদের হাতে যা কিছু আছে, সব পরিত্যাগ করে] কুসতুনতুনিয়া থেকে বেরিয়ে আসবে। এসে দেখবে, কিছুই হয়নি, একটা গুজব মাত্র। [তাদের আগে আগে দশ জন অশ্বারোহী পাঠিয়ে দেয়া হবে। রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন : ঐসব অশ্বারোহীর নাম ও তাদের পিতার নাম, এমনকি তাদের ঘোড়ার রং পর্যন্ত আমার জানা আছে। তারা তত্কালীন পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে উত্তম অশ্বারোহী বা সেরা অশ্বারোহীদের অন্যতম হবে] । [অত:পর তারা সিরিয়ায পৌঁছলে শয়তান (দাজ্জালের) আত্মপ্রকাশ করবে]।

২৪। সমগ্র পৃথিবী তার জন্য সংকোচন করে দেওয়া হবে এবং সে তার উপর বিজয়ী হবে। তবে [চারটি মসজিদ ব্যতিতঃ মাসজিদুল হারাম, মাদীনাহ্‌র মসজিদ, তূর এবং মাসজিদে আকসা]।

২৫। দাজ্জালের সময়কাল হবে চল্লিশ দিন। তবে প্রথম দিন হবে এক বছরের সমান, দ্বিতীয় দিন হবে এক মাসের সমান, তৃতীয় দিন হবে এক সপ্তাহের সমান এবং বাকী দিনগুলো তোমাদের এই দিনগুলোর সমান হবে। সাহাবীগন বললেন, যে দিনটি এক বছরের সমান হবে তাতে কি বর্তমান এক দিনের সালাত আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে? তিনি বললেনঃ না, তোমরা অনুমান করে সময় নির্ধারণ করবে। সাহাবীগন জিজ্ঞেস করলেন, যমীনে তার গতি কেমন হবে? তিনি বললেনঃ মেঘের গতি যাকে প্রবল বাতাস পিছন থেকে হাঁকিয়ে নিয়ে যায়।

২৬। দাজ্জালের আবির্ভাবের তিন বছর পূর্বে দুর্ভিক্ষ দেখা দিবে। তখন মানুষ চরমভাবে ক্ষুধায় কষ্ট পাবে। প্রথম বছর মহান আল্লাহ্‌ আকাশকে তিন ভাগের একভাগ বৃষ্টি আটকে রাখার নির্দেশ দিবেন। আর যমীনকে নির্দেশ দিবেন, ফলে সে তিন ভাগের একভাগ ফসল উৎপন্ন করবে। অতঃপর তিনি আসমানকে দ্বিতীয় বছর একই নির্দেশ দিবেন। তখন তা দুই তৃতীয়াংশ বৃষ্টি বন্ধ রাখবে এবং যমীনকে নির্দেশ দিবেন, ফলে যমীন দুই তৃতীয়াংশ ফসল কম উৎপন্ন করবে। অতঃপর মহান আল্লাহ্‌ তৃতীয় বছর একই নির্দেশ দিবেন, তখন সে সম্পূর্ণরূপে বৃষ্টিপাত বন্ধ করে দিবে। ফলে যমীনে কোন ঘাস জন্মাবে না, কোন সবজি অবশিষ্ট থাকবে না। বরং তা ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে আল্লাহ্‌ যা চাইবেন।

২৭। সে মাক্কাহ্‌ ও মাদীনাহ্‌য় আসা মাত্রই এর প্রত্যেক প্রবেশ পথে খোলা তরবারি হাতে ফিরিশতাদের দেখতে পাবে।

২৮। এমন কোন শহর বাদ থাকবে না যেখানে মাসীহ্‌ (দাজ্জালের) আতঙ্ক না ছড়াবে। তবে মাদীনাহ্‌ ব্যতীত। [সেদিন মাদীনাহ্‌র সাতটি দরজা থাকবে] এর প্রত্যেকটি প্রবেশ পথে দুইজন করে ফিরিশতা নিযুক্ত থাকবেন যারা মাসীহ্‌ দাজ্জালের ভয় থেকে একে নিরাপদ রাখবে।

২৯। এমনকি সে তৃণলতা শূন্য জায়গা [সাইহানাতুল জুরুফ] নামক স্থানে এসে পৌঁছবে। [যা উহুদ পাহাড়ের পিছনে অবস্থিত]। [সে সেখানে তার আসন গাঢ়বে]।

৩০। এরূপ অবস্থায় মদীনাহ্‌ তার অধীবাসীদের নিয়ে তিনবার প্রকম্পিত হবে। তখন প্রতিটি মুনাফিক পুরুষ ও নারী (মাদীনাহ্‌ থেকে) বেরিয়ে দাজ্জালের কাছে চলে যাবে। অতঃপর মাদীনাহ্‌ থেকে মন্দ (পাপী) লোকেরা) দূরীভূত হবে যেমন হাফর লোহার ময়লা দূর করে থাকে। আর এটা হলে নাজাত দিবস। যারা বেরিয়ে দাজ্জালের কাছে যাবে তাদের অধিকাংশ হবে মহিলা।

(চলবে)

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88