ঈদ উদযাপন: পথ ও পদ্ধতি

*ঈদ উদযাপন: পথ ও পদ্ধতি* লেখক: আবদুল্লাহ বিন আব্দুর রাজ্জাক

*উপস্থাপনা: ঈদ শব্দের শাব্দিক অর্থ ফিরে আসা। এই দিন গুলি বার বার ফিরে আসে তাই তার নাম ঈদ রাখা হয়েছে।মুসলমানের আনন্দ উৎসবের দিনকে ঈদ বলা হয় যা মাত্র দুই দিন। একটি আসে দীর্ঘ ১ মাস রমযানের সিয়াম রাখার পরে যাকে ঈদুল ফিতর বলা হয়। অন্যটি আসে হজ্জের পবিত্র মাসে পিতা ইবরাহিম আঃ ও ছেলে ইসমাইল আঃ এর ঐতিহাসিক ত্যাগ ও ধৈর্যের কাহিনীর স্মরণে যাকে বলা হয় ঈদুল আযহা, যা এখন আমাদের দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করেছে। বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের বিভিন্ন উৎসবের দিন রয়েছে। যেমন হিন্দুদের দুর্গা পূজা, খ্রিষ্টানদের বড় দিন,বাঙ্গালীদের পহেলা বৈশাখ। প্রত্যেক জাতি তাদের উৎসবের দিনকে নিজ নিজ সংস্কৃতি অনুযায়ী পালন করার চেষ্টা করে। তেমনি ভাবে আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত মুসলমানদের আনন্দের দিনও ইসলামী আদর্শ অনুযায়ী পালিত হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি মুসলমানরা এই দিনগুলিকে বিধর্মীদের আদর্শ অনুযায়ী ও তাদের কৃষ্টি কালচার মোতাবেক পালন করছে। যা খুবই দুঃখজনক ও আফসোসের। তাই আসুন আমরা দেখি পবিত্র কুরআন এবং হাদীস অনুযায়ী কিভাবে ঈদ উদযাপন করা যায়।

*ঈদের ইতিহাস: ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা, এই মহান পুণ্য ময় দিবস দুটির যাত্রা শুরু হয় আজ থেকে প্রায় ১৪ শত সৌর বছর পূর্বে, রাসুল ছা: এর হিজরতের কিছু দিন পরেই।যেমন আনাস রা: হতে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুল ছা: মদীনাতে আগমন করলেন, আর মদীনাবাসীর দুটি দিন ছিল যাতে তারা বিনোদন বা খেলা ধুলা করত। রাসুল ছা: তাদের জিজ্ঞেস করলেন। এই দিন দুটি কি? তারা বলল, আমরা এই দিনে জাহিলি যুগে খেলা ধুলা করতাম। তখন রাসুল ছা: বললেন আল্লাহ তোমাদেরকে এই দিন দুটির পরিবর্তে উত্তম দুটি দিন দান করেছেন। আর তাহলো ঈদুল ফিতরের দিন ও ঈদুল আযহার দিন।[মিশকাত,১৪৩৯, সহিহাহ, 2o21]

*হাদীস থেকে অনুধাবন:

১, ঈদ আল্লাহ প্রদত্ত মুসলিম উম্মাহর আনন্দের দিন। তাই অবশ্যই আমাদেরকে এই দিন উদযাপনের ধরন সম্পর্কে গভীরভাবে ভাবতে হবে। আমরা আল্লাহর প্রদত্ত এই দিনকে তারই প্রদর্শিত রাস্তা অনুযায়ী উদযাপন করব? না তিনি যেগুলো হারাম করেছেন সেই কাজ গুলো করার মাধ্যমে?

২, আল্লাহ মদিনা-বাসীকে তাদের উৎসবের দুটি দিনকে বাদ দিয়ে এই দুটি দিন দিয়েছেন। তাদের দুই দিনকে রেখে তার সাথে এই দুই দিনকে যোগ করেন নি। এর দ্বারা তিনি কিয়ামত পর্যন্ত সকল দিবস যা এই দুই ঈদের দিন বাদ দিয়ে পালন করা হবে তা হারাম ঘোষণা করেছেন।

৩, সাহাবিরা আল্লাহর পক্ষ থেকে হুকুম পাওয়ার সাথে সাথে তাদের পূর্বের রেওয়াজ পরিত্যাগ করেছেন। আমাদের ও তাই আল্লাহ প্রদত্ত হুকুমের সামনে মাথা নত করতে হবে।

*নতুন চাঁদ দেখার দোয়া :-বর্তমান প্রযুক্তির যুগে নিজে চোখে চাঁদ দেখার রীতি শেষ হয়ে গেছে, অথচ এই চাঁদ দেখার সাথে সম্পর্কিত রয়েছে রাসুল ছাঃ এর একটু অন্যতম সুন্নাত।আর তাহলো চাঁদ দেখার দুয়া। আসুন আমরা থেকেই সংকল্প করি রাসুল ছাঃ এর এই সুন্নাতকে জীবিত করার। اللهم أهله علينا بالأمن و الإيمان و السلامة و الإسلام ربى و ربك الله “আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিলআমনি ওয়াল ঈমানি ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলামি রাব্বী ওয়া রাব্বুকাল্লাহ” অর্থ-হে আল্লাহ ঐ চাঁদকে আমাদের উপর উদিত কর নিরাপত্তা, ঈমান ও ইসলামের শান্তির স্বার্থে(হে চাঁদ) আমার ও তোমার প্রতিপালক আল্লাহ। [সহিহ ইবনে হিব্বান হা/ ৮৮৮, হাদীস সহিহ]

*…… ঈদের মাঠে পায়ে হেঁটে যাওয়া ……* আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা: হতে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুল ছা: ঈদের ছালাতে পায়ে হেঁটে যেতেন এবং পায়ে হেঁটে ফিরতেন। [ইবনে মাজাহ, ঈদের মাঠে পায়ে হেঁটে যাওয়া অধ্যায়, মুল ভলিউম পৃ ২৩৹]

*…………রাস্তা পরিবর্তন…………* আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুল ছা: ঈদের মাঠ থেকে যখন ফিরতেন তখন যেই রাস্তায় গমন করেছিলেন সেটার পরিবর্তে অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরতেন। [ ইবনে মাজাহ ঈদের দিনে এক রাস্তায় যাওয়া ও অন্য রাস্তায় আসা অধ্যায়, হাদীস সহিহ]

*অন্তর্নিহিত হিকমাতঃ শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী রাহঃ তাঁর হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাতে এ বিষয়ে লিখতে গিয়ে বলেন। ঈদের মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য,পারস্পারিক ভালবাসা, ভ্রাতৃত্ব ও শান শক্তির বহিঃপ্রকাশ। সুতরাং পায়ে হেঁটে যাওয়া এবং দুই রাস্তা ব্যাবহার করলে বেশী মানুষের সামনে এটা ফুটে উঠবে। উদাহরণ স্বরূপ যখন কোন দল মিছিল করে তখন তারা যে উদ্দেশ্য নিয়ে পায়ে হেঁটে মিছিল করে এবং এক রাস্তা দুই বার ব্যাবহার করেনা। ঠিক ঈদের ক্ষেত্রেও সেরকম। পার্থক্য এত টুকু যে সেখানে স্লোগান লাগানো হয় দলীয় আর এখানে স্লোগান হয় আল্লাহর। সেখানে বড়ত্ব ফুটে উঠে দলের আর এখানে মহান আল্লাহর ও মুসলিম উম্মাহর। এখন আপনিই ভাবেন আপনি কি আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করতে চান? দলের জন্য তো অনেক কিছু করলেন আসুন অন্তত একদিন আল্লাহর জন্য পায়ে হেঁটে যাই এবং দুই রাস্তা ব্যাবহার করি।

*………আগে সালাত পরে খুতবা…………* আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের সালাত আদায় করতেন। আর সালাত শেষে খুতবা দিতেন। [বুখারী,ঈদের ছালাতের পর খুতবা অধ্যায়]

ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর, উমর এবং উসমান রা.-এর সঙ্গে সালাতে হাজির ছিলাম। তাঁরা সবাই খুতবার আগে সালাত আদায় করতেন।[ঐ]

*হাদীস থেকে অনুধাবন: এটাও রাসুল ছা: এর অন্যতম সুন্নাত। কিন্তু এই সুন্নাত ও আজ হারিয়ে যাওয়ার পথে। ঈদের ছালাতের পূর্বে কোথাও ইমাম সাহেব বাংলাতে খুতবা দেন কোথাও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ভোট ভিক্ষা করেন। অথচ আবু সাঈদ খুদরী রা: ছালাতের আগে খুতবা দিতে দেখে ঐ মাঠ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। এই হল সাহাবীদের আদর্শ নিজের জীবন দিবে কিন্তু রাসুলের সুন্নাতের অবমাননা সহ্য করবেনা। আর আমরা নিজের স্বার্থের জন্য রাসুলের সুন্নাতকে বলি দেই। শত ধিক! আমাদের মত মুসলিমদের।

*ঈদের দিন মুখরিত হবে তাকবীর ধ্বনিতে না গান বাজনায়? ঈদ আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণার দিন। নায়ক নায়িকার নয়। ঈদের দিন মুখরিত হবে তাকবীর ধ্বনিতে গান বাজনায় নয়। ঈদের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় আনন্দ হচ্ছে আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করা। যেমন রাসুল নিম্নে উল্লেখিত তাকবীর পাঠ করতেনاللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ , আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর ও লিল্লাহিল হামদ। [দারাকুতনী, হা/১৭৫৬, সহি হ, ইরোয়াউল গালীল,হা/ ৬৫৪] উল্লেখ্য আল্লাহু আকবর কাবিরা…… থেকে শেষ পর্যন্ত বলার প্রমাণে কোন গ্রহণযোগ্য সহিহ সনদ নাই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, ঈদকে সামনে রেখে বিনোদনের নামে আমাদের দেশ সহ অন্যান্য নাম ধারী মুসলিম দেশে এক রকম স্বেচ্ছাচারিতা চলে উলংগপনা, বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার নীল ছায়-লাবে দেশ হাবু ডুবু খায় । ইসলামী আদর্শকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পাশ্চাত্য থেকে আমদানি কৃত সংস্কৃতি নিয়ে মুসলমান ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ঈদের মার্কেটে আসা নতুন নতুন পণ্যকে মানুষের কাছে পরিচিত করে তুলার জন্য অ্যাড ও মডেলিঙয়ের নাম যে অশ্লীলতা চলে তা দেখে হয়তো ঈদের চাঁদ লজ্জায় মুখ লুকাতে চায়। এ যেন আরাফা দিবস ও হজ্জের মাসের পবিত্রতার মুখে চপেটাঘাত। অন্যদিকে নামধারী মুসলমানদের ঈদ মার্কেটে পছন্দের শীর্ষ তালিকায় থাকে বলিউড ও হলিউডের নায়ক নায়িকাদের পোশাক। সব মিলে বুঝা দায় হয়ে যায় যে ঈদ মুসলমানদের আনন্দের দিন।আসুন ঈদের নামে প্রচলিত এই নগ্নতা ও বেহায়াপনা থেকে বেঁচে থাকি এবং অন্যকে বাচাই সর্বোপরি এর প্রতিবাদে জনমত গড়ে তুলি এবং ঈদের পবিত্রতাকে রক্ষা করি।

*ঈদের দিন খাওয়া: ইবনে বুরায়দা রা: তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন রাসুল ছা: ঈদুল ফিতরের দিন কিছু খেয়ে মাঠে যেতেন এবং ঈদুল আযহার দিন মাঠ থেকে ফিরে কিছু খেতেন [ইবনে মাজাহ,হা/ ১৮২৮,সহিহ]

আনাস ইবনে মালিক (রা:) খেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা:) ঈদুল ফিতরের দিন কিছু খেজুর না খেয়ে বের হতেন না। অপর এক রিওয়াতে আনাস (রা:) নাবী (সা:) (সা:) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি তা বেজোড় সংখ্যক খেতেন।[বুখারী,ঈদুল ফিতরের দিন বের হওয়ার পূর্বে খাওয়া অধ্যায়]

*অন্তর্নিহিত হিকমাতঃ এ বিষয়ে শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহ লভী রাহঃ তাঁর হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাতে লিখেছেন। ঈদ মূলত আনন্দের দিন। এবং এই জন্যই ঈদের দিন সিয়াম রাখা হারাম। এক মাস না খেয়ে থাকার পর আসল আনন্দ তো খাওয়ার মধ্যেই লুকিয়ে আছে। তাই রাসুল ছা: রমযানের সিয়ামের সাথে বৈপরীত্য তৈরির জন্য ঈদুল ফিতরে খেয়ে যেতেন। অন্য দিকে আল্লাহর রাস্তায় আপনি একটা পশু কুরবানি করছেন আল্লাহ আপনার প্রতি দয়া করে সেই পশুর গোশত খাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। এখন ঐ পশুর গোশত খাওয়ার মাধ্যমে দিন শুরু করার মধ্যে ঈদুল আযহার মুল আনন্দ লুকিয়ে আছে।

*…………ঈদে বিনোদন:…………* বিনোদন হচ্ছে মানুষের মনকে আনন্দ দেয়ার অন্যতম মাধ্যম। যেহেতু ঈদ আল্লাহ প্রদত্ত মুসলমানদের আনন্দ আহ্লাদে পুলকিত হওয়ার দিন সেহেতু এই দিনের আনন্দ উৎসব অবশ্যই সেই আল্লাহর দেখানো পথ অনুযায়ী করতে হবে। নিচে আমরা ঈদের সুস্থ বিনোদন সম্পর্কে একটি হাদীস পেশ করছি আয়েশা রা: হতে বর্ণিত তিনি বলেন ঈদের দিন রাসুল ছা: আমার নিকট আসলেন এমতাবস্থায় আমার নিকট দু জন আনসারী ছোট্ট বালিকা ছিল যারা বুয়াসের দিনের সম্পর্কে কবিতা আবৃত্তি করছিল। রাসুল ছা: এসে শুয়ে গেলেন এবং মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। অতঃপর আবু বকর (রা:) আসলেন আবু বকর (রা:) বললেন, রাসূল (ছ:) – এর ঘরে শয়তানী বাদ্যযন্ত্র! তখন রাসূল ছা: বললেন: হে আবু বকর! তাদের ছেড়ে দাও। প্রত্যেক জাতির জন্যই ঈদ আছে আর এ হল আমাদের ঈদ। [বুখারী, ঈদায়নের সালাত অধ্যায়]

*হাদীস থেকে অনুধাবন: *১, প্রত্যেক জাতির আনন্দের দিন রয়েছে। যেমন খ্রিস্টানদের বড়দিন। সেই রকম মুসলমানদের আনন্দের দিন হচ্ছে এই দুই ঈদের দিন। এর মধ্যে একটা সূক্ষ্ম ইশারা আছে আর তা হচ্ছে অন্যান্য জাতির আনন্দের দিনে যেন আমরা আনন্দ না করি তাই আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য আনন্দের দিন নির্ধারণ করেছেন। আশ্চর্য হতে হয় অন্যান্য জাতিরা আমাদের আনন্দের অনুষ্ঠানে বিন্দু মাত্র শরিক না হলেও আমরা তাদের পহেলা জানুয়ারি সহ সকল আনন্দের দিবস এমন ভাবে পালন করি যেন ওটা আমাদের আনন্দের দিন। আল্লাহ মনে হয় আমাদের আনন্দ করার জন্য কোন দিন দেননি। শত আফসোস! শত ধিক! এইরূপ নামধারী মুসলমানদের প্রতি।

*২, কোন অবৈধ পথ ও পন্থাকে নিষিদ্ধ করার জন্য তাঁর বিপরীতে ঐ চাহিদা পূরণ করার মত একটি বৈধ পথও থাকা চাই। আল্লাহ যিনাকে হারাম করার আগে যৌন চাহিদা পূরণ করার জন্য বিবাহের মত বৈধ পথ করে দিয়েছেন। তাই ঈদের মওসুমে অশ্লীল ও অসুস্থ সংস্কৃতিকে দমন করার জন্য এর বিপরীতে সুস্থ সংস্কৃতির ব্যবস্থা চাই। সেই হিসেবে ঈদকে সামনে রেখে যে সমস্ত খেলায় টাকার হারজিত নাই এবং শারীরিক ব্যায়াম আছে এক কথায় যা হারাম নয় তাঁর আয়োজন করা যেতে পারে। যেমন সাহাবীরা মসজিদে নাবাবিতে ঈদের দিন খেলেছিলেন বলে সহিহ হাদীসে প্রমাণ পাওয়া যায়। তেমনি ইসলামী গজল সহ সুস্থ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এবং সর্বোপরি ঈদকে সামনে রেখে সকল প্রকার অশ্লীলতা বন্ধের আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। আফসোস তাদের জন্য যারা আল্লাহ প্রদত্ত আনন্দের দিনে তাঁর বিধানকে অমান্য করার ধৃষ্টতা দেখায়।

*৩, শরীয়তে রাসুল ছা: ছাড়া অন্য কারো বিন্দু মাত্র দখল নাই। তাই আবু বকর রা: যেটাকে শয়তানের মনে করেছিলেন, রাসুল ছা: সেটার অনুমতি দিলেন।

*ঈদের সালাতে কয় তাকবীর: عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- كَانَ يُكَبِّرُ فِى الْفِرِ وَالأَضْحَى فِى الأُولَى سَبْعَ تَكْبِيرَاتٍ وَفِى الثَّانِيَةِ خَمْسًا আয়েশা রা: হতে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুল ছা: ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন প্রথম রাকআতে ৭ এবং দ্বিতীয় রাকআতে ৫ তাকবীর দিতেন। [ আবু দাউদ হা/ ১১৫১] এ মর্মে প্রায় ১৫৩ টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত দেখুন মুযাফফর বিন মুহসিন প্রণীত ছহীহ হাদীছের কষ্টি পাথরে ঈদের ছালাত। *আযান,ইকামাত ও আহ্বান নেই: জাবির বিন আবদুল্লাহ রা: হতে বর্ণিত তিনি বলেন ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার ছালাতে আযান দেয়া হতনা। [বুখারী, ঈদায়নে বিনা আযান ও বিনা ইকামাতে বের হওয়া অধ্যায়] আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রা: হতে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুল ছা: ঈদের সালাত আদায় করেছেন বিনা আযান ও বিনা ইকামাতে। [আবু দাউদ,হা/১১৪৯] জাবির বিন আবদুল্লাহ রা: হতে বর্ণিত তিনি বলেন

لاَ أَذَانَ لِلصَّلاَةِ يَوْمَ الْفِطْرِ حِينَ يَخْرُجُ الإِمَامُ وَلاَ بَعْدَ مَا يَخْرُجُ وَلاَ إِقَامَةَ وَلاَ نِدَاءَ وَلاَ شَىْءَ ঈদুল ফিতরের দিন যখন ইমাম বের হয় তখন কোন আযান নেই এবং তাঁর বের হওয়ার পরেও নেই। এবং কোন ইকামাত আহ্বান কিছুই নেই। [মুসলিম,হা/ ২o86,সালাতুল ঈদায়ন অধ্যায়]

*অনুধাবন: ঈদের ছালাতের জন্য কোন আযান, ইকামাত এমনকি কোন প্রকারের আহ্বান নাই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে এই সুন্নাত এখন প্রায় বিদায় নিয়েছে। প্রত্যেক মাঠে আসুন আসুন,আর এত মিনিট বাকী বলে আহ্বান করা হয়, যা সরাসরি রাসুল ছা: এর সুন্নাতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের শামিল। তাই আসুন এই সুন্নাত বিরোধী কাজের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলি।

*অন্তর্নিহিত হিকমাতঃ কোন কাজের প্রতি মানুষের ভালবাসা তৈরি হলে, তাকে আর ঐ কাজের জন্য ডাকা লাগেনা। সে স্বেচ্ছায় অনেক আগ্রহের সাথে সেই কাজে অংশগ্রহণ করে। আল্লাহ চান তাঁর বান্দা তো সারা বছর আহ্বানের পরেই ছালাত পড়তে এসেছে। কিন্তু আজ ঈদের দিন তাঁর মহত্ত্ব ও বড়ত্ব ঘোষণা করার প্রতি বান্দা যেন এতই আগ্রহী হয় যে তাকে আর ডাকার প্রয়োজন পড়ে না। তাইতো সাহাবীদের ঈদের দিন ডাকার প্রয়োজন পড়েনি। আজও যারা প্রকৃত মুমিন তাদের ও ডাকার প্রয়োজন পড়ে না।

*ঈদের মাঠে মেয়েদের গমন: উম্মে আতিয়্যা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (ঈদের দিন) আমাদেরকে বের হওয়ার জন্য নির্দেশ হয়েছিল। তাই আমরা ঋতুবতী, যুবতী এবং তাঁবুতে অবস্থানকারী-নী মহিলাগণকে নিয়ে বের হলাম। অতঃপর ঋতুবতী মহিলাগণ মুসলমানদের জামায়াত এবং তাদের দু’আয় অংশগ্রহণ করল। তবে ঈদগাহে পৃথকভাবে অবস্থান করল।একজন মেয়ে বলল হে আল্লাহর রাসুল আমাদের মধ্যে একজনের ওড়না নাই। রাসুল ছা: বললেন তাঁর সঙ্গিনী বা প্রতিবেশী যেন তাকে ওড়না দেয়।[মুত্তাফাক আলাইহ,মিশকাত, হা/১৪৩১] হাদীস থেকে অনুধাবনঃ মেয়েদের ঈদের মাঠে যাওয়া এত জরুরী যে যদি কারো কাপড় না থাকে তাহলে অন্য কেউ তাকে কাপড় দিয়ে তাকে নিয়ে যাবে। এমনকি ঋতুবতী মহিলারাও ঈদের মাঠে যাবে।যদিও তারা ঈদগাহে পৃথক ভাবে অবস্থান করবে।

*ঈদের দিনের সম্ভাষণ: ঈদের দিনে সম্ভাষণ জানানোর জন্য একটি বহুল প্রচলিত শব্দ হচ্ছে ঈদ মোবারক। কোরআন হাদিস এবং সাহাবায়ে কেরামের ইতিহাসে শব্দটির কোন অস্তিত্ব আছে বলে আমাদের জানা নাই। শব্দটির প্রচলন কবে থেকে শুরু হয়েছে আল্লাহই ভাল জানেন। এটি বলা যাবে কি যাবেনা এ প্রসঙ্গে না এসে আমরা দেখব ঈদের সম্ভাষণের জন্য মুহাম্মদ ছা: ও তাঁর সাহাবীরা কি বলতেন? এ বিষয়ে ফিক হুস সুন্নাহ তে একটি হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে যাকে হাফেজুল হাদীস ও হাফিজুদ দুনিয়া ইবনে হাজার আস্কালানী রাহঃ হাসান বলেছেন এবং আলবানী রাহঃ সহীহ বলেছেন। রেওয়ায়েত টি হল রাসুল ছা: এর সাহাবীরা যখন ঈদের দিন পরস্পর মিলিত হতেন তখন تقبل الله منا ومنك তাকাব্বালা ল্লাহু মিন্না ও মিন কা বলতেন। তথা আল্লাহ আমাদের এবং তোমার পক্ষ থেকে আজকের আনন্দকে কবুল করুন! [তামামুল মিন্নাহ,আল বানী, ১/৩৫৪] রাসুলের পক্ষ থেকে সুন্নাত পাওয়ার পরেও ঈদ মোবারক বলা কতটা যুক্তিসঙ্গত? আল্লাহ আমাদের তাঁর রাসুলের সুন্নাতকে জীবিত করার তাওফিক দিন!

*জিলহজ্জ মাসের ১ম দশ দিনের ফজিলত:

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন, দিনসমূহের মধ্যে এমন কোন দিন নেই যা আল্লাহর ইবাদত করা তাঁর প্রিয়তর হতে পারে যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন অপেক্ষা। এর প্রত্যেক দিনের সিয়াম এক বছরের সিয়ামের সমান এবং প্রত্যেক রাত্রির সালাত ক্বদরের রাত্রির সালাতের সমান। হাদিসটি নিতান্তই জঈফ। (তিরমিযী হা/৭৫৮; ইবনে মাজাহ হা/১৭২৮; মিশকাত হা/১৪৭১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৩৮৭, সিলসিলা জঈফা, হা/ 5142)

এ বিষয়ে বর্ণিত সহিহ হাদীস হচ্ছে, ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, রাসুল ছা: ইরশাদ করেছেন,জিল-হজ্ব মাসের প্রথম দশ দিনের নেক আমল অন্য যে কোন দিনের নেক আমলের চেয়ে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়। সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, জিহাদ ও নয় কি ? রাসুলুল্লাহ বললেন জিহাদ ও নয়, তবে ঐ ব্যক্তি যে নিজের জান ও মাল নিয়ে বের হয়েছে আর ফিরে আসে নি। অর্থাৎ শহিদ হয়ে গেছে। [বোখারী,আইয়ামে তাশরীকে ইবাদাতের ফযিলত অধ্যায় তাই আসুন আমরা এই দশ দিনে বেশি বেশি ইবাদাতের চেষ্টা করি।

*আরাফা দিবস: এইদিন আল্লাহ অধিক হারে পাপ ক্ষমা করে থাকেন,যেমন আয়েশা (রা:) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (ছা:) বলেন, مَا مِنْ يَوْمٍ أَكْثَرَ مِنْ أَنْ يُعْتِقَ اللهُ فِيهِ عَبْدًا مِنَ النَّارِ مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ وَإِنَّهُ لَيَدْنُو ثُمَّ يُبَاهِى بِهِمُ الْمَلاَئِكَةَ فَيَقُوْلُ مَا أَرَادَ هَؤُلاَءِ ‘আরাফার দিন আল্লাহ রাববুল আলামীন তাঁর বান্দাদের এত অধিক সংখ্যক জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন, যা অন্য দিনে দেন না। তিনি এ দিনে বান্দাদের নিকটবর্তী হন ও তাদের নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করে বলেন, তোমরা কি বলতে পার আমার এ বান্দারা আমার কাছে কি চায়’[ মুসলিম হা/১৩৪৮। আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত রাসূলে কারীম (ছা:) বলেছেন, إِذَا كَانَ يَوْمُ عَرَفَةَ، إِنَّ اللهَ يَنْزِلُ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، فَيُبَاهِيْ بِهِمُ الْمَلائِكَةَ، فَيَقُوْلُ : انْظُرُوْا إِلَى عِبَادِيْ أَتَوْنِيْ شُعْثًا غُبْرًا- ‘যখন আরাফার দিন হয়, তখন আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন। অতঃপর তিনি আরাফায় অবস্থানকারীদের নিয়ে ফেরেশতাদের নিকটে গর্ব করেন। আল্লাহ বলেন, আমার এ সকল বান্দাদের দিকে চেয়ে দেখ। তারা এলোমেলো কেশ ও ধূলায় ধূসরিত হয়ে আমার কাছে এসেছে’। [আহমাদ, ইবনে মাজাহ হা/৮১; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬৬১; মিশকাত হা/২৬০১। এই দিনের দোয়া সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া যেমন নবী করীম (ছা:) বলেছেন, خَيْرُ الدُّعَاءِ دُعَاءُ يَوْمِ عَرَفَةَ ‘সবচেয়ে উত্তম দো‘আ হ’ল আরাফাহ দিবসের দো‘আ। [তিরমিযি,হা/২৮৩৭] এছাড়াও এইদিন সিয়াম রাখলে দুই বছরের সাগীরা গুনাহ ক্ষমা হয়ে যায়। যেমন আবু কাতাদাহ (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছা:)-কে আরাফাহ দিবসের ছিয়াম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ إِنِّى أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِى قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِى بَعْدَهُ-

‘আরাফার দিনের ছিয়াম, আমি মনে করি বিগত এক বছর ও আগত এক বছরের গুনাহের কাফফারা হিসাবে গ্রহণ করা হয়ে থাকে’। [মুসলিম হা/১১৬৩]

*হাদীস থেকে অনুধাবন:

১, এখানে রাসুল ছা: আরাফার দিন সিয়াম রাখার কথা বলেছেন, ৯ ই যিলহজ্জ বলেন নি। যদি ৯ ই যিল হজ্জ বলতেন তাহলে, যেই দিন যেখানে ৯ ই যিল হজ্জ হবে সেই দিন সেখানে তারা সিয়াম পালন করত। কিন্তু তিনি আরাফার দিন বলেছেন, তথা যেই দিন হজ্জব্রত পালন কারী ব্যক্তিরা আরাফার মাঠে অবস্থান করবেন সেই দিন সিয়াম রাখতে হবে। যদিও ঐ দিন অন্যান্য জায়গায় ৯ যিল হজ্জ নয়। এক কথায় এইদিনের সিয়াম তারিখের সাথে নয় স্থানের সাথে সম্পর্কিত আর তা হচ্ছে আরাফাতের মাঠে অবস্থান। সেই হিসেবে হাজীরা ১৪ তারিখে আরাফাতের মাঠে অবস্থান করবে, আমরাও ঐ দিনে সিয়াম রাখব যদিও ঐ দিন আমাদের ৮ ই যিল হজ্জ। সন্দেহের বশবর্তী হয়ে দুই দিন সিয়াম রাখার কোন প্রয়োজন নেই। ইসলাম সন্দেহ প্রবণ ধর্ম নয়। যারা দুই দিন সিয়াম রাখার কথা বলছেন তারা নিজস্ব অজ্ঞতার কারণে বলছেন। তবে হ্যাঁ যারা যিলহজ্জ মাসে ইবাদত হিসেবে শুরু থেকেই সিয়াম রাখছিলেন তাদের কোন সমস্যা নেই। শুধু খাস করে আরাফাতের জন্য দুই দিন সিয়াম রাখার কোন প্রয়োজন নেই।

২, দুই বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যাবে এর মানে এই নয় যে কাবীরা ও সাগীরা সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। কাবীরা গুনাহ তাওবা ছাড়া ক্ষমা হয়না। তবে হ্যাঁ আপনি আরাফাতের দিনকে তাওবা করার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন, কেননা এই দিনে আল্লাহ খুব দুয়া কবুল করেন। তাই আমাদের উচিৎ হবে সিয়াম রাখার পাশাপাশি আল্লাহর দরবারে তাওবা করা। তাহলে একদিকে যেমন সিয়ামের মাধ্যমে সগীরা গুনাহ ক্ষমা হয়ে গেল অন্য দিকে তাওবার মাধ্যমে কাবীরা গুনাহ ক্ষমা হওয়ার আশা করা যায়। আসুন আমরা আল্লাহর এই রহমতকে মূল্যায়ন করার চেষ্টা করি। শ্বাস বন্ধ হওয়ার পূর্বেই আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিই।

*কুরবানির ইতিহাস: মহান আল্লাহর ভাষায়

হে আমার পরওয়ারদেগার! আমাকে এক সৎপুত্র দান কর। সুতরাং আমি তাকে এক সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দান করলাম। অতঃপর সে যখন পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হল, তখন ইব্রাহীম তাকে বলল: বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে তোমাকে যবেহ করছি; এখন তোমার অভিমত কি। সে বলল: পিতা:! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে সবরকারী পাবেন। যখন পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইব্রাহীম তাকে যবেহ করার জন্যে শায়িত করল। তখন আমি তাকে ডেকে বললাম: হে ইব্রাহীম, তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে! আমি এভাবেই সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয় এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তার পরিবর্তে দিলাম যবেহ করার জন্যে এক মহান জন্তু। আমি তার জন্যে এ বিষয়টি পরবর্তীদের মধ্যে রেখে দিয়েছি। ইব্রাহীমের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক। এমনভাবে আমি সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। সে ছিল আমার বিশ্বাসী বান্দাদের একজন। [সূরা সাফফাত,১oo থেকে ১১১]

*কুরবানির গুরুত্ব: আবু হুরাইরা রা: হতে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (ছা:) ইরশাদ করেছেন مَنْ كَانَ لَه سَعَةٌ وَلَمْ يُضَحِّ فَلَا يَقْرُبَنَّ مُصَلَّانَا-“যে ব্যক্তি কুরবানি করার সার্মর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি করলনা, সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে কাছে ও না আসে”। (ইবনে মাজাহ,হা/৩২৪২, আলবানী হাসান বলেছেন)

*কুরবানি বিষয়ে বর্ণিত জঈফ হাদীসঃ ১, রাসুল ছা: বলেছেন, কুরবানির পশুর প্রতিটি পশমের পরিবর্তে একটি করে নেকী রয়েছে। সাহাবীগণ আবার জানতে চাইলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ভেড়া, দুম্বার পশমের ব্যপারে কি কথা? তিনি বললেন, এর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে ও একটি করে নেকী পাওয়া যাবে”। [ সিলসিলা জঈফা, হা/ ৫২৭]

২, হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন “মানুষের আমল সমূহ হতে কোন আমলই আল্লাহর নিকট কুরবানির দিন কুরবানি হতে অধিক পছন্দনীয় নয়, অবশ্যই কিয়ামতের দিন কুরবানির জানোয়ার শিং, লোম ও খুর নিয়ে উপস্থিত হবে। সিলসিলা জঈফা, হা/৫২৬। অথচ আল্লাহ বলছেন, لَنْ يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَكِنْ يَنَالُهُ التَّقْوَى مِنْكُمْ তথা: আল্লাহর নিকটে কুরবানির পশুর গোশত ও রক্ত পৌঁছে না বরং তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে। [ সূরা হজ্জ, ৩৭]

৩, হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন নবী করীম (সা.) হযরত ফাতেমা (রা.) কে বললেন,ফাতেমা! এসো তোমার কুরবানির পশুর কাছে দাঁড়িয়ে থাক। এ জন্য যে, তার যে রক্ত কণা মাটিতে পড়বে তার বদলায় আল্লাহ তোমার পূর্বের গুনাহগুলো মাফ করে দেবেন। হযরত ফাতেমা রা. বলেন, এ সুসংবাদ কি আহলে বায়তের জন্য নির্দিষ্ট, না সকল উম্মতের জন্যে? নবী বললেন, আমাদের আহলে বায়তের জন্যেও এবং সকল উম্মতের জন্যেও। [ হাদিসটি মুনকার, সিল সিলা জঈফা হা/ ৫২৮]

৪, রাসুল ছা: বলেছেন কুরবানির পশু পুলসিরাতের উপর তোমাদের বাহন হবে। তাই তোমরা মোটা তাজা পশু কোরবানি কর। এই হাদীসটি জাল, যারা এই হাদীস লিখেন বা বলেন তারাও এর কোন তথ্য সূত্র দেন না। আশ্চর্য হতে হয় যারা এই ধরণের মিথ্যা হাদীস লিখছেন বা বলছেন তারা নাকি আলেম? তারা কি জানেন না যে রাসুল ছা: বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার প্রতি মিথ্যারোপ করল সে তার স্থান জাহান্নাম বানিয়ে নিল? [বুখারী হা/1o7] আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন! আমীন!

৫, রাসুল ছা: বলেছেন, যে ব্যক্তি তার প্রিয় জিনিস নিজে হাতে কুরবানি করবে। ঐ কুরবানি তার জন্য জাহান্নাম থেকে পর্দা স্বরূপ হবে।[সিলসিলা জঈফা, হা/ ৫২৯]

৬, আয়েশা (রা.) বলেন, রসুল (ছা.) বলেছেন, কোরবানির দিনে বনী আদম এমন কোন কাজ করতে পারে না যা আল্লাহর নিকট রক্ত প্রবাহিত করা অপেক্ষা প্রিয়তর। কোরবানির পশুর শিং, পশম ও খুরসহ ক্বিয়ামতের দিন হাজির হবে এবং কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই আল্লাহর নিকট সম্মানের স্থানে পৌঁছে যায়। (তিরমিযী হা/১৪৯৩; মিশকাত হা/১৪৬৮; মিশকাত হা/১২৮৬, ৩/২২৬) হাদিসটি নিতান্তই জঈফ দেখুন সিলসিলা জঈফা, হা/৫২র

*ভাগা কুরবানীঃ এ বিষয়ে শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ এর মন্তব্যটি প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন রাসুল ছা: হজ্জ সফরে গিয়ে ১শ টা উট কুরবানি করেছিলেন। আপনি মনটা অত ছোট করছেন কেন? মনটা একটু বড় করুন! ৬/৭ ভাই মিলে একটা প্রাণী কুরবানি করার হিসাব আসল কেন? দশটা প্রাণী কুরবানি করেন! মানুষে খাবে, নেকী বেশী হবে। বছরে একদিন সময় এসেছে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য ১ টার জায়গায় ৫ টা কুরবানি করেন!অংশে কুরবানি করতে গেলেন কেন? বিশ্বাস করুন ১ টা গরুতে সাতটা পরিবার অংশগ্রহণ করবে এরকম কোন হাদিছ পৃথিবীতে নাই। যেটা আছে সেটা সাত জনের, সাত পরিবারের নয়। বহু দিন পূর্বে আব্দুল্লাহেল কাফি রাহঃ তার ফতওয়া মাসায়েল বইয়ে বলেছেন ১ টা গরুতে সাতটা পরিবার অংশগ্রহণ করবে মর্মে কোন হাদীস আমার জানা নাই। শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ, জুমার খুতবা, 2o/9/2o13

*কুরবানির শিক্ষাঃ যেই দিন প্রত্যেক পিতা ইবরাহিম আঃ এর মত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের প্রান প্রিয় বস্তু তার রাস্তায় কুরবান করতে বিন্দু মাত্র কুণ্ঠাবোধ করবেনা, অনুরুপী প্রত্যেক ছেলে ইসমাইল আঃ এর মত ধৈর্যশীল হবে এবং প্রত্যেক মা হাজেরার মত আল্লাহর উপর পূর্ণভরসা রাখতে পারবে। যেমন তিনি অল্প একটু খেজুর ও পানি নিয়ে নির্জন এলাকাতে থাকার সাহস করেছিলেন শুধু সেই আল্লাহর উপর অসীম ভরসা থাকার ফলে। সেই দিন আমাদের কুরবানী সার্থক হবে। এটাই কুরবানির অন্তর্নিহিত শিক্ষা।

উত্স

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
kiw kow kan