
রমযানের উদ্দেশ্য
রমযানের উদ্দেশ্য
মুসলিমদের প্রত্যেক ইবাদতের কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকে। আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা আশা করেন তার বান্দারা সে সমস্ত ইবাদত সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করুক, তা উপলব্ধি করুক এবং তা সফলভাবে পালন করুক। অনেকগুলো ধমী্র্য় কাজের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রোজা রাখা অর্থাৎ আল্লাহর জন্য অভুক্ত থাকা যা পালন করা হয় আরবী মাস রমজানে। এই মাসের অনেক গুলো উদ্দেশ্য আছে যা পালন করার জন্য অবশ্যই মুসলিমদের তাদের হৃদয় দিয়ে এবং কাজের মাধমে সংগ্রাম করতে হবে। উদ্দেশ্য গুলো নিম্নে দেওয়া হলঃ
১। তাকওয়া অর্জন করা যা মানুষের মনে আল্লাহ ভীতি সৃষ্টি করে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যাতে তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার । (সুরা ২ আয়াতঃ ১৮৩)
রোযা রাখার অর্থ হছে তাকওয়া অর্জন করা। মূলত সকল ধমী্র্য় কাজ এবং তাওহীদ হছে তাকওয়া অর্জনের এর পদ্ধতি। আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার এবাদত কর, যিনি তোমাদিগকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন।তাতে আশা করা যায়, তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পারবে। (সুরা ২ আয়াতঃ ২১)
২। আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে পুরস্কারের আশায়। আল বোখারী এবং মুসলিম শরিফে হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) বলেছেনঃ
আল্লাহ সুবাহানাহু তা্যালা বলেছেনঃ আদম সন্তানের সকল ইবাদত তার নিজের জন্ন্য শুধুমাত্র রোযা ব্যতিত। রোযা আমার জন্ন্য আমি নিজেই এর প্রতিদান দিব।
৩। হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) আর বলেছেনঃ
‘ একটি রোযার কারনে মানুষ দুইটি খুশীর মুহুর্ত পায়, যখন সে রোযা শেষে ইফতার করে তখন এবং যখন সে তার প্রভুর সাথে মিলিত হয় শুধু মাত্র তার রোযার কারণে। (আল বখারি এবং মুস্লিম)’
এই হাদীসের প্রেক্ষিতে বুঝা যাই যে, ‘যখন রোযাদার রোযা শেষে ইফতার করে তখন সে অনেক খুশী হয়’ এবং ইমাম মুসলিম সংযোজন করেন ”রোজা শেষ হওয়ার কারনে”। ইমাম করতুবির মতে খুশীর কারন হচ্ছে তখন তার ক্ষুধা এবং তৃষ্ণার অবসান ঘটে এবং তখন তার ইফতারের জন্য কোন বাধা থাকে না। এই খুশী হচ্ছে প্রাকৃতিক। ইহা আবশই বলা যাই যে, রোযাদার খুশী হয় এই জন্য যে, সে তার রোযা কে পরিপূর্ন করতে পেরেছে এবং সে সর্বোচ্চ সীমায় ধমী্র্য় বিধান পালন করতে পেরেছে। যখন সে তার প্রভুর সাথে মিলিত হবে তখন সে খুশী হবে কারণ তার প্রভু থাকে তার রোযার কারণে অনেক পুরুষ্কৃত করবেন।
৪। রোযা আমাদের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে এবং আল্লাহ তায়ালার বাধ্য থাকার অভ্যাস অর্জনে করতে সাহায্য করে এবং আমাদের হৃদয়ের অনাকাংখিত ইচ্ছাকে চূর্ণ করে দেয়। রোযা আমাদেরকে শিখা দেয় কিভাবে নফসের অনাকাংখিত ইচ্ছাকে সংযত করা যায় এবং সাহায্য করে কিভাবে আল্লাহ তায়ালার বাধ্য থাকা যায়। শয়তান খুব শক্ত ভাবে আমাদের অন্তরকে আঁকডে ধরে রাখে তার ইচ্ছাকে পরিপুর্ণ করার জন্য এবং তার বাধ্য থাকার জন্য।
৫। জাহান্নামের আগুণ থেকে বাঁচার জন্য। হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) বলেছেনঃ
আল্লাহ অনেক পাপীষ্টকে দোযকের আগুন থেকে মুক্তি দেন এবং প্রতিরাতে এটি সম্পাদিত হয়।(অর্থাৎ রমযানের প্রতিরাতে) [আত-তিরমিযী এবং ইবনে মাজাহ ]
৬। হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) বলেছেনঃ
‘ রোযা এবং কুরআন বান্দাদের পক্ষে সুপারিশ করবে। রোযা বলবে, হে আমার প্রভু আমি তাকে দিনের খাবার থেকে বিরত রেখেছি এবং তোমার বাধ্য থাকার জন্য সাহায্য করেছি। তুমি আমার মতামত কে তার জন্য গ্রহন কর, এবং কুরআন বলবে আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি, তুমি আমার মতামত কে তার জন্য গ্রহন কর, এবং তারা উভয়ে আল্লাহ তায়ালার কাছে গ্রহন যোগ্য হবে। (আহমেদ আল হাকীম এবং বায়হাকি)
৭। এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই যে, রোযার মাধ্যমে পাপের ক্ষমা পাওয়া যায় এবং রোযা আমাদের পাপকে মুছে দেয়। হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) বলেছেনঃ
‘পাঁচ ওয়াক্ত নামায, এক জুমা থেকে আর এক জুমা এবং এক রমযান থেকে আর এক রমযান, এইগুলি দুইয়ের মাঝখানে যে পাপ হয় [অর্থাৎ দুই ইবাদতের মধ্যবর্তী পাপসমূহ] তা মুছে দেয় যদি কবীরা গুণাহ এড়িয়ে চলে। (মুসলিম)
হযরত মুহাম্মদ (সঃ) আরো বলেছেনঃ
যে কেউ রমযানের রোযা রাখে বিশ্বাসের সাথে তার পুর্ববতী গুণাহসমূহ আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দেন। (আল বুখারী ও মুসলিম)
ইমাম আহমদ এবং নাসীর মতে, যদি রমযানের পরে কোন পাপ হয় তা ও আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দিবেন। বিশ্বাসের সাথে রোযা রাখা ও আল্লাহ তায়ালার অনুগত থাকা এবং রমযানের রোযা রাখা অনিবার্য । রোযা রাখতে হবে পুরষ্কারের আশায়। অতএব শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য রোযা রাখতে হবে। কখনো অন্য মানুষকে অনুসরণ করে এবং অন্যদের দেখানোর জন্য রোযা রাখা উচিত নয়।