শামায়েলে মুহাম্মাদী (সাঃ) ( পর্ব-২)
শামায়েলে মুহাম্মাদী (সাঃ)
রচনায় :- মুহাম্মাদ হারুন আযীযী নদভী*
রাসুলুল্লাহ (ছা)-এর সৌন্দর্যের বর্ণনাঃ
রাসুলুল্লাহ (ছা)-এর সৌন্দর্যের বর্ণনা শেষ হবে না। কথা, কাজ, চলাফেরা ও আচার-ব্যবহার ইত্যাদি সবদিক দিয়ে তিনি ছিলেন সবার চেয়ে সুন্দর। তাঁর শারীরিক সৌন্দর্যও ছিল অতুলনীয় এবং অদ্বিতীয়।
১. আনাস (রা) বলেন, আল্লাহর রাসূল (ছা) ছিলেন সবার চেয়ে বেশী সুন্দর।২৯
২. বারা ইবনে আযেব (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছা)-এর চেয়ে বেশী সুন্দর কোন বস্তু কোন দিন দেখিনি।৩০
৩. জাবের ইবনে সামুরা (রা) বলেন, এক চাঁদনী রাতে আমি নবী করীম (ছা) কে তাকিয়ে দেখলাম, তাঁর পরনে ছিল একজোড়া লাল রং-এর পোষাক। আমি রাসূলুল্লাহ (ছা) এর দিকে এবং চাঁদের দিকে তাকাতে লাগলাম। রাসূলুল্লাহ (ছা) কেই আমার কাছে চাঁদের চেয়েও অনেক বেশী সুন্দর মনে হল।৩১
৪. আলী (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছা)-এর পূর্বে ও পরে তাঁর মত কোন ব্যক্তি দেখিনি।৩২
৫. আবু হুরায়রাহ (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছা) এর চেয়ে বেশী সুন্দর কিছু দেখিনি। তার কাপালে যেন সূর্য প্রবাহিত ছিল।৩৩
৬. আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা) ছিলেন লোকজনের মধ্যে সবচেয়ে বেশী সুন্দর।৩৪
৭. আনাস (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা)-এর শারীরিক গঠন অত্যন্ত সুন্দর ছিল।৩৫
৮. আবু হুরায়রাহ (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা) এর পরে তাঁর মতো কাউকে দেখিনি।৩৬
৯. আনাস (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছা) এর পূর্বে ও পরে তার মত কাউকে দেখিনি।৩৭
১০. জাবের ইবনু আব্দিল্লাহ (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছা)-এর পর তার সদৃশ কাউকে দেখিনি।৩৮
.
রাসুলুল্লাহ (ছা)-এর চেহারা মুবারকের বর্ণনাঃ
.
রাসূলুল্লাহ (ছা) এর মুখমন্ডল ও চেহারা অতি সুন্দর চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল ও গোলাকার ছিল।
১. বারা ইবনে আযেব (রা) বলেন, লোকদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ (ছা) এর মুখমন্ডল ছিল সর্বাধিক সুন্দর।৩৯
২. বারা (রা) কে জিজ্ঞেস করা হল, নবী (ছা) এর চেহারা কি তরবারীর ন্যায় চকচকে ও লম্বা ছিল? তিনি বললেন , না; বরং চাঁদের ন্যায় (স্নিগ্ধ ও) উজ্জ্বল ছিল ।৪০
৩. আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, একদা রসূলুল্লাহ (ছা) অত্যন্ত উৎফুল্ল চিত্তে তার নিকট প্রবেশ করলেন। (খুশির আমেজে) তার কপালের রেখাগুলিও যেন চমকাচ্ছিল ।৪১
৪. কাব ইবনে মালেক (রা) বলেন, একদিন আমি রাসূলুল্লাহ (ছা) কে যখন সালাম করলাম, তখন তাঁর মুখমন্ডল খুশীর আমেজে চমকাচ্ছিল। আর রাসূলুল্লাহ (ছা) এর অবস্থা ছিল এই যে, যখন তিনি (কোন কারণে) উৎফুল্লা হতেন, তখন তাঁর মুখমন্ডল ঔজ্জ্বল্যের কারণে চমকাতে থাকত। মনে হত, যেন চাঁদের একটি টুকরো। আর আমার এটা তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য দেখেই আঁচ করতে পারতাম।৪২
৫. জাবের ইবনে সামুরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা) এর মুখমন্ডল ছিল চাঁদ-সূর্যের ন্যায় উজ্জ্বল এবং গোলাকার ।৪৩
৬. আলী (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা) এর ঘামের ফোটা তাঁর চেহারায় মুক্তার মত দেখাত ।৪৪
৭. আবু তুফাইল (রা) কে জিজ্ঞাসা করা হল, আপনি কি রাসূলুল্লাহ (ছা) কে দেখেছেন? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ, তিনি ছিলেন সাদা বর্ণের সুন্দর সুশ্রী চেহারা বিশিষ্ট ।৪৫
৮. জাবের ইবনে সামুরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা) ছিলেন বড় মুখ-গহ্বর বিশিষ্ট ।৪৬
৯. ওমর (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা) এর দাঁতগুলি ছিল অত্যন্ত সুন্দর ।৪৭
১০. আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা) এর গন্ডদ্বয় ছিল কোমল, মসৃণ ও লাবণ্যময়ী ।৪৮
.
কপালের বর্ণনাঃ
.
রাসুলুল্লাহ (ছা) এর কপাল ছিল প্রশস্ত। যখন ‘অহি’ নাযিল হ’ত তখন ঘাম পড়ত এবং ঘামের ফোঁটাগুলি তাঁর কপালে মণি-মুক্তার মত দেখাত।
১. আয়েশা (রা) বলেন, আমি প্রচন্ড শীতের দিনেও রাসূলুল্লাহ (ছা) এর উপর ‘অহি’ নাজিল হওয়ার পর তার কপাল থেকে ঘাম ঝড়ে পড়তে দেখেছি ।৪৯
২. যায়েদ ইবনে ছাবেত (রা) বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ (ছা) এর উপর ‘অহি’ নাজিল হত, তখন তিনি গম্ভীর হয়ে যেতেন এবং তার কপাল থেকে ঘাম ঝরে পড়ত মুক্তার ন্যায়। অথচ তা ছিল শীতকাল ।৫০
৩. আবু হুরায়রাহ (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছা) এর চেয়ে বেশী সু্ন্দর আর কিছু দেখিনি। তার কপালে যেন সূর্য চলাচল করত ।৫১
চক্ষুদ্বয়ের বর্ণনাঃ
রসূলুল্লাহ (ছা) এর চক্ষুদ্বয় ছিল লম্বা ভ্রু যুক্ত কালো। চোখের তারকা ছিল ঘোর কৃষ্ঞবর্ণের এবং চোখের পাতার চুল ছিল কোমল ও দীর্ঘ ।
১. আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা) এর চক্ষুদ্বয় ছিল সুরমা রঙের এবং চোখের পাতা ছিল দীর্ঘ কোমল ।৫২
২. জাবের ইবনে সামুরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা) এর চক্ষুদ্বয় ছিল লাল ডোরাযুক্ত। অর্থাৎ চক্ষুদ্বয়ের সাদা অংশে লাল আভা মিশ্রিত ছিল ।৫৩
৩. হযরত আলী (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ (ছা) এর চক্ষুদ্বয়ের তারকা ছিল কালো, উভয় চোখের পাতা ছিল লোম বিশিষ্ট ।৫৪
মস্তকের বর্ণনাঃ
১. আনাস (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ (ছা) এর মস্তক ছিল আকারে বড় ।৫৫
২. আলী (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা) এর মস্তকের আকৃতি ছিল বড় ।৫৬
হতদ্বয়ের বর্ণনাঃ
১. আনাস (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা) এর উভয় হাত ছিল মাংসল ও আকারে বড় ।৫৭
২. আবু হুরায়রাহ (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা) এর উভয় হাত গোস্তে পূর্ণ ছিল ।৫৮
৩. আলী (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা) এর হাতের তালু গোশতে পুরু ছিল ।৫৯
হাতের কোমলতাঃ
১. আনাস (রা) বলেন, কোন রেশম কিংবা কোন গরদকেও আমি নবী (ছা) এর হাতের তালু অপেক্ষা অধিকতর কোমল পাইনি ।৬০
হাতের শীতলতা ও সুগন্ধিঃ
১. আবু জুহাইফা (রা) বলেন, আমি একবার রাসূলুল্লাহ (ছা) এর হাত টেনে আমার মুখের উপর রাখলাম, আমার মনে হল যেন তার হাত বরফের চেয়েও অধিকতর শীতল এবং মেশক এর চেয়েও অধিকতর সুগন্ধিযুক্ত ।৬১
২. জাবের ইবনে সামুরা (রা) বলেন, নবী করীম (ছা) আমার গন্ডদ্বয়ে হাত মুছে দিলেন, আমি তার হাতের শীতলতা অনুভব করলাম আর এমন সুগন্ধি পেলাম, মনে হল যেন তা আতর বিক্রেতার ভান্ড থেকে এক্ষণি বের করলেন ।৬২
বগল দ্বয়ের বর্ণনাঃ
১. আব্দুল্লাহ ইবনে মালেক (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা) যখন সিজদা করতেন তখন হাতকে পার্শ্ব থেকে দূরে করতেন এমনকি উভয় বগলের শুভ্রতা দেখা দিত ।৬৩
২. আনাস (রা) বলেন, ইস্তেসক্কার সময় রাসূলুল্লাহ (ছা) উভয় হাত এতটা উত্তোলন করতেন যে, তার বগলদ্বয়ের শুভ্রতা পরিদৃষ্ট হত ।৬৪
উভয় কাঁধের বর্ণনাঃ
১. রাসুলুল্লাহ (ছা) এর উভয় কাঁধের মধ্যবর্তী স্থান প্রশস্ত ছিল ।৬৫
পিঠের বর্ণনাঃ
১. মুহাব্বিশ (রা) বলেন, রাসূলুল্লহ (ছা) এর পিঠের দিকে একদা আমি দেখলাম। মনে হল যেন রুপা দিয়ে তৈরী করা হয়েছে ।৬৬
২. আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা) যখন উভয় কাঁধ থেকে চাদর সরাতেন তখন (পিঠকে) মনে হত যেন চাঁদি দ্বারা তৈরী করা ।৬৭
……………………….
(চলবে)
উৎসঃ
*খত্বীব, আলী মসজিদ, বাহরাইন
২৯. বুখারী হা/৬০৩৩; মুসলিম হা/২৩০৭; তিরমিযী হা/১৬৮৫ ।
৩০. বুখারী হা/৩৫৫১;মুসলিম হা/২৩৩৭;শামায়েল হা/৩ ।
৩১. তিরমিযী, কিতাবুল আদাব, হা/২৮১১;শামায়েল হা/৮; দারিমী ১/৩০; মুস্তাদরাক ৪/৩০৪ পৃ: হা/৭৪৬১।
৩২. তিরমিযী, কিতাবুল মানাক্বেব, হা/৩৬৪১; শামায়েল হা/৫; মুসনাদু আহমাদ ১/৯৬ পৃ:হা/৭৪৬; মুস্তাদরাক ২/৬০৬ পৃ: ।
৩৩. ইবনে সাদ ১/৩১৯ পৃ: ; ছহীহ ইবনে হিব্বান হা/৬৩১৮; মুসনাদু আহমাদ ২/৩৮০ পৃ: হা/৮৯৩০ ।
৩৪. বায়হাক্বী, ছহীহুল জামিউছ ছাগীর হা/৪৬৩৩ ।
৩৫. বুখারী, হা/৩৫৪৭; মুসলিম হা/২৩৪৭; শামায়েলে তিরমিযী, পৃ: ১৪ ।
৩৬. বুখারী, হা/৫৯০৯ ।
৩৭. বুখারী হা/৫৯০৭ ।
৩৮. বুখারী, কিতাবুল-লিবাস, হা/৫৯১২ ।
৩৯. বুখারী, হা/৩৫৪৯; মুসলিম হা/২৩৩৭ ।
৪০. বুখারী, হা/৩৫৫২; তিরমিযী মানাক্বেব অধ্যায়, হা/৩৬৪০; শামায়েল ৯; দারেমী ১/৩২; আহামাদ ৪/২৮১ পৃ: ।
৪১. বুখারী, হা/৩৫৫৫; মুসলিম হা/১৪৫৯ ।
৪২. বুখারী, হা/৩৫৫৬; মুসলিম হা/২৭৬৯ ।
৪৩. ছহীহুল জামিউছ ছাগীর হা/৪৮৩৭ ।
৪৪. ইবনে সাদ ১/৩১৬ পৃ: ; মুখতাছারূছ ছহীহ মিনাশ শামায়েল পৃ: ৯ ।
৪৫. মুসলিম হা/২৩৪০ ; ইবনে সাদ ১/৩২০ পৃ: ; আহমাদ ৫/৪৫৪ পৃ: ।
৪৬. মুসলিম হা/২৩৩৯; তিরমিযী মানাক্বেব্ অধ্যায় হা/৩৬৪৯; শামায়েল ৭ আহামাদ ৫/৮৮ পৃ: ।
৪৭. মুসলিম হা/১৪৭৯; আবু ইয়ালা ১৬৪ ।
৪৮. বায়হাক্বী, ছহীহুল জামিউছ ছাগীর হা/৬৩৩ ।
৪৯. বুখারী হা/২ ।
৫০. আবু নুআইম, ত্বাবারানী, শায়খ নাছিরুদ্দিন আলবানী, সিলসিলাহ ছহীহা হা/২০৮৮ ।
৫১. ছহীহ ইবনে হিব্বান হা/৬৩১৮ ।
৫২. বায়হাক্বী, ছহীহুল জামিউছ ছাগীর হা/৪৬৩৩ ।
৫৩. মুসলিম হা/২৩৩৯; তিরমিযী হা/৩৬৪৭; মুসনাদে আহমাদ ৫/৮৬ ।
৫৪. বায়হাক্বী, ছহীহুল জামিউছ ছাগীর হা/৪৬২১ ।
৫৫. সহীহুল জামে: হা/৪৮১৯ ।
৫৬. বায়হাক্বী, ছহীহুল জামিউছ ছাগীর হা/৪৮২০ ।
৫৭. ছহীহ বুখারী হা/৫৯০৭ ।
৫৮. বায়হাক্বী, আহমাদ, সিলসিলাহ ছহীহা হা/২০৯৫ ।
৫৯. ইবনে সাদ ১/৩১৬, মুখতাছারু ছহীহ শামায়েল ৯; মুখতাছারু সীরাতুন্নাবী পৃ: ৬৯ ।
৬০. বুখারী হা/৩৫৬১; মুসলিম হা/২৩৩০; আহমাদ ৩/১০৭ ।
৬১. বুখারী হা/৩৫৫৩; আহমাদ ৪/৩০৯ ।
৬২. মুসলিম হা/২৩২৯ ।
৬৩. বুখারী হা/৩০৯; মুসলিম হা/৪৯৫ ।
৬৪. বুখারী হা/৩৫৬৫ ।
৬৫. বুখারী হা/৩৫৪৯; আবু দাউদ হা/৪১৮৩; তিরমিযী হা/১৭২৪ ।
৬৬. আহমাদ ৪/৬৯ পৃ: হা/১৬৭৫৭; নাসায়ী ৫/১৯৯ ।
৬৭. বায়হাক্বী, ছহীহুল জামিউছ ছাগীর হা/৪৬৩৩ ।
আসসালামু আ’লাইকুম, ভাই শামায়েলে তিরমিজী বইটা স্ক্যানিং করুন, তাহলে খুব উপকার হত
শীঘ্রই পাবেন।