সহীহুল বুখারীর নামের পূর্ন অর্থ
ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল বুখারীর (র) সংকলিত সহীহুল বুখারী হাদীস গ্রন্থের সম্পুর্ণ নাম এবং সেই নামের ব্যাখ্যা আমাদের জনা উচিত। কেননা আমরা যদি তা জানি তাহলে আমরা বুঝবো যে ইমাম বুখারী (র) তার সংকলিত হাদীসের গ্রন্থ দারা কি বুঝাতে চেয়েছেন।
গ্রন্থের পূর্ননাম:
আল-জামি’ আল মুসনাদ আস সহীহ আল মুখতাসার মিন উমূরি রাসুলিল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ওয়া সুনানিহী ওয়া আয়্যামিহী।
আল-জামি’:
হাদীসের প্রধান প্রধান বিষয়সমূহ সম্বলিত বলে একে ‘জামি’য়’ বা পূর্ণাঙ্গ বলা হয়। যে সকল হাদীস গ্রন্থে ১. আকিদা-বিশ্বাস ২. আহকাম ৩. আখলাক ও আদাব ৪. কুরআনের তাফসীর ৫. সীরত ও ইতিহাস ৬. ফিতনা ও আশরাত (বিশৃঙ্খলা ও আলামতে কিয়ামত) ৭. রিকাফ অর্থাৎ আত্বসুদ্ধি ৮. মানাকিব বা ফাজিলাত ইত্যাদি সকল প্রকারের হাদীস বিভিন্ন অধ্যায়ে সন্নিবেশিত হয় তাকে আল- জামি’ বলা হয়। ইমাম বুখারী (র) তার আল-জামে’ কে বিভিন্ন পর্ব হিসেবে সাজিয়েছেন যেমন: পর্ব (১): কিতাবুল ওয়াহী বা ওয়াহীর সূচনা, পর্ব (২): কিতাবুল ইমান বা ইমান (বিশ্বাস) ইত্যাদি। ইমাম বুখারী (র) এর আগে কেউ এরখম আল-জামি’ গ্রন্থ সংকলন করেন নাই। এবং ইমাম বুখারী (রা) এর মতো কেউ আল-জামি’ কে সাজাতেও পারেনাই। ইমাম বুখারী (র) তার এই জামে’ শব্দ দারা বুঝাতে চেয়েছেন যে তিনি এমন একটি কিতাব লিখতে চান যাতে ইসলামের সকল বিষয় সংযুক্ত থাকবে।
আল মুসনাদ:
আল মুসনাদ বলতে তিনি বুঝিয়েছেন যে তিনি এই গ্রন্থের প্রত্যেকটি হাদীসের সুত্র উল্লেখ করবেন যাতে করে যে কেউ সহযে বুঝতে পারে যে হাদীসটি রসুল (সা) থেকে কিভাবে তার পর্যন্ত এসেছে। আল মুসনাদ অর্থ ইসনাদ (সুত্র) সম্বলিত। যেমন: A,B থেকে শুনেছে B,C থেকে শুনেছে C,D থেকে শুনেছে D, রসুল (সা) থেকে শুনেছে। ইমাম বুখারী (র) বলতেছেন যে তিনি পুরো ইসনাদ দিবেন যাতে কোন সন্ধেহ না থাকে এবং যানা যায় হাদীসটি কোথা থেকে কিভাবে এসেছে। (বি:দ্র: হাদীসের গ্রন্থের ক্ষেত্রে মুসনাদ আলাদা বিষয় যেমন: মুসনাদে আহমাদ)
আস-সহীহ:
তিনি বলতেছেন যে তিনি এই গ্রন্থে উচ্চ স্থরের সহীহ হাদীস গুলোকেই শুধু মাত্র সংকলিত করবেন। কেননা হাদীসের মাঝে অনেক স্থর রয়েছে যেমন: ১. সহীহ ২. হাসান ৩. যইফ ৪. যইফ জিদ্দান ৫. মওযু’ । তিনি এই গ্রন্থে শুধু মাত্র সহীহ হাদীস নিয়ে আসবেন সেটা তিনি বলেছেন আস-সহীহ দ্বারা। ইমাম বুখারী (র) প্রথম যিনি সহীহ হাদীসের গ্রন্থ লিখেছেন। তিনি ২ টা জিনিস করেছেন যা তার আগে কেউ করেননি ১. জামে’ গ্রন্থ কেউ সংকলন করেননি ২. শুধু সহীহ হাদীস হাদীস দারা কেউ গ্রন্থ সংকলন করেননি।
আল-মুখতাসার:
মুখাতসার মানে হচ্ছে উপসংহার বা সামারী বা সংক্ষিপ্ত । তিনি জামে’ লিখেছেন আর তার অনুচ্ছেদ লিখে তাকে মুখতাসার করেছেন। আল জামে’ হচ্ছে টপিক্স (topics) আল মুখতাসার এর কনটেন্ট (content)। আল মুখতাসার বলে তিনি আরোও বুঝিয়েছেন যে, তিনি পৃথিবীর সকল সহীহ হাদীস এই গ্রন্থের মধ্যে নিয়ে আসবেন না অর্থাৎ তিনি বলছেন যে তার এই সহীহর বাহীরেও সহীহ হাদীস থাকতে পারে। এবং এটা খুব গুরুত্বপূর্ন বিষয় যে ইমাম বুখারী (র) কখনই বলেন নাই যে তিনি পৃথিবীর সকল সহীহ হাদীস সংকলন করছেন, তবে তার কিতাবের সকল হাদীস সহীহ তিনি সেটাই বলেছেন। তিনি মুখতাসার করেছেন ফেকার বর্ণনা ধারায়। ইমাম বুখারী (র) একজন উচ্চমানের ফকিহ্ ও ছিলেন। তিনি নিজেই মুজতাহীদ ছিলেন।
মিন উমূরি রাসুলিল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ওয়া সুনানিহী ওয়া আয়্যামিহী:
রসূল (সা) জীবনী সময়ের তার কথা,কাজ,অনুমোদনে এর বর্ণনা । তিনি বলছেন যে এটা শুধু রসুল (সা) কথা নয় এটা রসুল (সা) জীবনে কি ঘটেছিল, তিনি কি করেছিলেন, সে সময়ে কি হয়েছিল তার সকল কিছু সংকলিত করা হয়েছে।
============================================================================
আমরা সংক্ষিপ্ত ভাবে এই গ্রন্থকে ”সহীহুল বুখারী” বলে থাকি কিন্তু তিনি এই গ্রন্থকে ”আল-জামি’ আলমুসনাদ আসসহীহ আলমুখতাসার মিন উমূরি রাসুলিল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ওয়া সুনানিহী ওয়া আয়্যামিহী” নামকরণ করার মাধ্যমে অনেক কিছুই বুঝাতে চেয়েছেন।
ইনশাআল্লাহ এই নামকরন জানার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারবো যে ইমাম বুখারী তার গ্রন্থকে কিভাবে সাজিয়েছেন মুসলিম উম্মার জন্য এবং সত্যি এই গ্রন্থ আমাদের কাছে এমন যেন আমরা রসুল (সা) বানী গুলো শুনতে পাই গ্রন্থ পড়ার মাধ্যমে। আল্লাহ সুবহানাহুতাআলা ইমাম বুখারীকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন সাথে আমাদেরকেও তার সহীহ থেকে উপকৃত হওয়ার তাওফিক দিন।আমিন।
তথ্যসুত্র: