প্রশ্নোত্তরে রাসূল (সা)-এর জীবনী (পর্ব-৪)

প্রশ্নোত্তরে রাসূল (সা)-এর জীবনী (পর্ব-৪)

রাসূল (সা)-এর উপর ওয়াহী নাযিল

 

প্রশ্ন: ওয়াহীর সূচনালগ্নে রাসূল (সা) কোথায় যেতেন ?

উত্তর: তিনি হেরা গুহায় নির্জন স্থানে গিয়ে ইবাদাতের মধ্যে সময় কাটাতেন।

 

প্রশ্ন: ‘হেরা গুহা’ কোথায় অবস্থিত ?

উত্তর : এটি মক্কা থেকে দুই মাল দূরে হেরা পর্বতে অবস্থিত। এ হেরা পর্বতকে নূরের পাহাড়ও বলা হয়।

 

প্রশ্ন: হেরা গুহার আয়তন কত ?

উত্তর : এটি দৈর্ঘ্য ৪ গজ এবং প্রস্থ ১.৭৫ গজ।

 

প্রশ্ন : তিনি কেনো সেখানে গমন করতেন ?

উত্তর : সৃষ্টি জগতের ওপর ধ্যান করতে যেতেন। অর্থ্যাত সেখান গিয়ে আল্লাহর ইবাদাতে মশগুল থাকতেন।

 

প্রশ্ন: তিনি সেখানে কতদিন ছিলেন ?

উত্তর : কয়েক রাত তিনি সেখানে অতিবাহিত করেন।

 

প্রশ্ন: ওহীর সূচনা হয় কিসের মাধ্যমে ?

উত্তর : সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে। তিনি যে স্বপ্নই দেখতেন, দিনের বেলা তা সত্য হয়ে দেখা দিত।

 

প্রশ্ন: এ অবস্থা কতদিন চলছিল ?

উত্তর : প্রায় ছয় মাস যাবত এভাব চলছিল।

 

প্রশ্ন: কখন সর্বপ্রথম রাসূল (সা)-এর ওপর ওয়াহী নাযিল হয় ?

উত্তর : ৬১০ খ্রিষ্টাব্দের ১০ আগষ্ট, ২১ রমযান সোমবার রাতে সর্বপ্রথম ওয়াহী নাযিল হয়। তখন রাসূল (সা)-এর বয়স ছিল ৪০ বছর।

 

প্রশ্ন: কে ওয়াহী নিয়ে এসেছিলেন ?

উত্তর : জিবরাঈল (আ)

 

প্রশ্ন: জিবরাঈল (আ) কে ?

উত্তর : তিনি হচ্ছেন প্রধান ফেরেশতা, তিনি নবীদের কাছে আল্লাহর বাণী পৌছে দিতেন। তাকে রুহুল কুদ্দুস এবং রুহুল আমীনও বলা হয়।

 

প্রশ্ন: জিবরাঈল (আ) রাসূল (সা)-কে কি বললেন এবং রাসূল (সা) কি উত্তর দিলেন ?

উত্তর : তিনি বললেন, “পড়” । তারপর মুহাম্মাদ (সা) বললেন, “আমি তো পড়তে জানি না”।

 

প্রশ্ন: অত:পর জিবরাঈল (আ) কি করলেন ?

উত্তর : জিবরাঈল (আ)  মুহাম্মাদ (সা)কে ধরে বুকের সাথে খুব জোরে চেপে ধরলেন। এমনকি মুহাম্মাদ (সা) ঐ চাপ সহ্য করার শক্তি প্রায় হারিয়ে ফেলেছিলেন। এরপর তিনি তাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, “পড়”। এভাবে তিনি তিনবার মুহাম্মাদ (সা)-কে ধরলেন এবং বললেন, “পড়”।

 

প্রশ্ন: এরপর মুহাম্মাদ (সা) কি পড়তে পেড়েছিলেন ?

উত্তর : হ্যাঁ, তিনি পড়তে লাগলেন-

اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَخَلَقَ الْإِنسَانَ مِنْ عَلَقٍ

 

অর্থ: ১. পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। ২. যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন রক্তপিন্ড থেকে। ৩. পড় এবং তোমার প্রভু অত্যন্ত মেহেরবান। (সূরা আল-আলাক্ব, আয়াত নং-১-৩)।

 

প্রশ্ন: অত:পর রাসূল (সা)-এর অবস্থা কি হয়েছিলো ?

উত্তর : তিনি ভয়ে কাঁপতে লাগলেন।

 

প্রশ্ন: সেখান থেকে তিনি ফিরে এসে খাদিজা (রা)-কে কী বললেন ?

উত্তর : তিনি খাদিজাকে বললেন, “আমাকে (কম্বল দিয়ে) জড়িয়ে দাও, আমাকে (কম্বল দিয়ে) জড়িয়ে দাও”।

 

প্রশ্ন: খাদিজা (রা) কী করলেন ?

উত্তর : কাঁপুনি বন্ধ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি কম্বল দিয়ে তাকে জড়িয়ে রাখলেন।

 

প্রশ্ন: মুহাম্মাদ (সা) কি খাদিজাকে ঘটনাটি বলেছিলেন ?

উত্তর : হ্যাঁ, তিনি খাদিজাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন এবং বললেন, খাদিজা! আমি এখন আমার জীবন নিয়ে শঙ্কিত।

 

প্রশ্ন: খাদিজা (রা) কী বলে রাসূল (সা)-তে সান্ত্বনা দিলেন ?

উত্তর : খাদিজা বললেন, “আল্লাহ আপনাকে কখনো অপমানিত করবেন না। কারণ আপনি একজন সত লোক, আপনি আত্মীয়-স্বজনদের হাক্ব আদায় করেন, অসহায়দের আশ্রয় দেন, গরিব, নি:স্ব ও অভাবীদের সাহায্য করেন। আপনি অতিথিপরায়ণ (বুখারী : প্রথম ওয়াহী অধ্যায় )।

 

প্রশ্ন: এরপর তিনি তাকে কোথায় নিয়ে গেলেন ?

উত্তর : এরপর তিনি রাসূল (সা)-কে নিয়ে তার চাচাতো ভাই ওয়ারাকা বিন নওফেলের কাছে গেলেন। অত্যন্ত বৃদ্ধ ও অন্ধ হয়ে পড়েছিলেন ওয়ারাকা। তিনি ছিলেন ধর্মশাস্ত্রে একজন পন্ডিত।

 

প্রশ্ন: ওয়ারাকা বিন নওফেল কী বললেন ?

উত্তর : ওয়ারাকা বিন নওফেল সবকিছু শুনে বললেন, এতো সেই ওহী বহনকারী ফেরেশতা যাকে আল্লাহ তাঁর পূর্ববর্তী নবীদের কাছেও পাঠিয়েছেন। হায় ! আমি যদি শক্তিশালী যুবক হতাম। হায় ! আমি যদি তখন জীবিত থাকতে পারতাম। যখন আপনার গোত্রের লোকেরা আপনাকে মক্কা থেকে তাড়িয়ে দিবে তখন আমি অবশ্যই সাহায্য করতাম।

 

প্রশ্ন: রাসূল (সা) তখন তাকে কী বললেন ?

উত্তর : মুহাম্মাদ (সা) অবাক হয়ে কী বললেন, “তারা আমাকে কেন বের করে দিবে” ?

 

প্রশ্ন: ওয়ারাকা কী উত্তর দিলেন ?

উত্তর: ওয়ারাকা বললেন, আপনি যা নিয়ে এসেছেন অনুরুপ আপনার পূর্বে যারা এমন কিছু নিয়ে এসেছিলেন তাদের  প্রত্যেকের সাথেই এমন শত্রুতাপূর্ণ আচরণ করা হয়েছৈ। আমি যদি সেদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকি, তাহলে আপনাকে সর্বশক্তি দিয়ে সাহায্য সহযোগীতা করব।

 

প্রশ্ন: ওয়ারাকা কখন ইন্তিকাল করেন ?

উত্তর : অল্প কয়েকদিন পর।

 

প্রশ্ন: কতদিন যাবত ওহী নাযিল বন্ধ ছিল ?

উত্তর : দীর্ঘ ছয়মাস যাবত ওহী নাযিল বন্ধ ছিল।

 

প্রশ্ন: হঠাত ওহীর সাময়িক বিরতিতে নাবী (সা) কি অনুভব করলেন ?

উত্তর: তিনি এতটাই কষ্ট অনুভব করলেন যে, অনেক সময় তিনি নিজে নিেজকে পাহাড়ের উপর থেকে নিক্ষেপ করার ইচ্ছা পোষণ করতেন। কিন্তু সবসময়ই জিবরাঈল এসে হাজির হত এবং বলত : “হে মুহাম্মাদ ! নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর সত্যিকার রাসূল । এর ফলে তার আত্মা প্রশান্ত হতো এবং তিনি শান্তিতে বাড়ি ফিরে যেতেন।

 

প্রশ্ন: দ্বিতীয়বার কি ওহী নাযিল হল ?

উত্তর:  তা হলো :

يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ {1}
قُمْ فَأَنْذِرْ {2}
وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ {3}
وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ {4}
وَالرُّجْزَ فَاهْجُرْ {5}
وَلَا تَمْنُنْ تَسْتَكْثِرُ {6}
وَلِرَبِّكَ فَاصْبِرْ {7}

 অর্থ: ১. ( হে মুহাম্মদ সা) কম্বল আবৃতকারী! ২. উঠুন এবং সতর্ক করুন! ৩. আর আপনার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন! ৪. এবং আপনার পোশাক পবিত্র করুন! ৫. পৌত্তলিকতা পরিহার করে চল, ৬. অধিক পাওয়ার প্রত্যাশায় দান করিও না। ৭. এবং তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে  ধৈর্য ধারণ কর। (সূরা মুদ্দাছছির, আয়াত নং ১-৭)

 

প্রশ্ন: ওহীর প্রকারভেদ গুলো অথবা নিদর্শনগুলো কী ?

উত্তর : ওহীর সাতটি নিদর্শন রয়েছে, নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো :

  1. সত্য স্বপ্ন
  2. জিরাঈল (আ) রাসূল (সা)-এর হৃদয়মনে অদৃশ্যভাবে ওহী নিক্ষেপ করতেন।
  3. জিরাঈল (আ) অনেক সময় মানুষেরআকৃতিতে রাসুল (সা)-এর কাছে এসে সরাসরি কথা বলতেন।
  4. জিবরাঈল (আ) রাসূল (সা)-এর নিকট ক্রমাগত ঘন্টা বাজার ধ্বনির মতো আসতেন। আর এটা ছিল সবচেয়ে কঠিন আকৃত। কারণ জিবরাঈল এসে রাসূলকে এমন শক্তভাবে ধরতেন যে অত্যন্ত প্রচন্ড শীতের দিনেও তার কপাল থেকে ঘাম ঝরতো।
  5. রাসূল (সা) জিবরাঈলকে তার নিজস্ব আকৃতিতে দেখতেন। আর তিনি রাসূলের কাছে আল্লাহর বাণী নাযিল করতেন।
  6. রাসূল (সা) যখন মিরাজে গেলেন তখন আল্লাহ সরাসরি তার ওপর সালাতের নির্দেশ জারি করেন। অর্থ্যাত সালাত ফরয করেন।
  7. ফেরেশতার মধ্যস্থতা ছাড়াই সর্বপ্রথম আল্লাহর বাণী তাঁর রাসূলের কাছে পৌছানো হয়।

 

প্রশ্ন: দ্বিতীয়বার ওহী নাযিলের পর রাসূল (সা) কী করলেন ?

উত্তর : তিনি তার পরিবারবর্গ ও বন্ধুদের মাঝে ইসলাম প্রচার শুরু করলেন।

 

প্রশ্ন: সর্বপ্রথম কারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলো ?

উত্তর: চার জন ব্যক্তি সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন, তারা হলেন-

  1. রাসূল (সা)-এর স্ত্রী খাদিজা (রা)
  2. রাসূল (সা)-এর ক্রীতদাস যায়িদ বিন হারিছাহ
  3. রাসূল (সা)-এর চাচাতো ভাই আলী বিন আবু তালিব।
  4. রাসূল (সা)-এর সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু আবূ বকর (রা)

 

প্রশ্ন:  আবূ বকর (রা)-এর ইসলাম গ্রহণের সাথে সাথে আর কারা ইসলাম গ্রহণ করেন ?

উত্তর: তারা হলেন, উসমান বিন আফফন, যুবাইর বিন আওয়াম, আব্দুর রহমান বিন আওফ, সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস, তালহা বিন ওবায়দুল্লাহ এবং সাঈদ বিন যায়িদ (রা)।

 

প্রশ্ন: সর্বপ্রথম মহিলাদের মধ্যে কারা ইসলাম গ্রহণ করেন ?

উত্তর: তারা হলেন, আব্বাসের স্ত্রী উম্মুল ফজল, আবূ বকরের স্ত্রী আসমা বিনতে উমাইস এবং তার মেয়ে আসমা বিনতে আবূ বকর এবং ফাতিমা বিনতে খাত্তাব (উমারের বোন )।

 

প্রশ্ন: অন্যান্য আর যারা ইসলাম গ্রহণ করেন তাদের নাম কী ?

উত্তর : তারা হলেন, বিলাল বিন রাবাহ এবং খাব্বাব বিন আরাত (রা)।

(চলবে)

প্রবন্ধটি পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করতে চাইলে

এ সম্পর্কিত অন্যান্য পোস্টগুলো :

  1. প্রশ্নোত্তরে রাসূল (সা)-এর জীবনী (পর্ব-১)
  2. প্রশ্নোত্তরে রাসূল (সা)-এর জীবনী (পর্ব-২)
  3. প্রশ্নোত্তরে রাসূল (সা)-এর জীবনী (পর্ব-৩)

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
kiw kow kan