ঈমানের গুরুত্ব

ঈমানের গুরুত্ব
– মুহাম্মাদ নাসীল শাহরুখ
بسم الله الرحمن الرحيمঈমান একজন ব্যক্তির সবচাইতে অমূল্য সম্পদ৷ যে ঈমান হারাবে, সে দুনিয়াতে নিকৃষ্ট জীবন-যাপন করবে এবং মৃত্যুর পরের জীবনে জাহান্নাম হবে তার স্থায়ী ঠিকানা৷ঈমান ছাড়া মৃত্যুবরণকারীর জন্য জান্নাতকে হারাম করা হয়েছে৷ আল্লাহ তাআলা বলেন:

إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِٱللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيْهِ ٱلْجَنَّةَ وَمَأْوَىٰهُ ٱلنَّارُ ۖ وَمَا لِلظَّلِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ

নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার জন্য অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা জাহান্নাম৷ আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই৷

 

অর্থাৎ যে অন্য কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে আল্লাহর সমকক্ষ কিংবা অনুরূপ গুণের অধিকারী বলে মনে করা অথবা আল্লাহর পাশাপাশি অন্য কোন বস্তু বা ব্যক্তির ইবাদত করার মাধ্যমে শিরকে লিপ্ত হবে, এবং এই অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে – সে ঈমান হারানোর কারণে জান্নাতে প্রবেশ করা থেকে চিরতরে বঞ্চিত হবে৷ সে কস্মিনকালেও জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এবং তার স্থায়ী আবাস হবে জাহান্নাম৷

 

এ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে আমাদেরকে সর্বাগ্রে ঈমান আনতে হবে, ঈমানকে শিখতে হবে এবং সবকিছু দিয়ে হলেও – এমনকি জীবন দিয়ে হলেও ঈমানকে রক্ষা করতে হবে৷

 

ঈমান দুনিয়া ও আখিরাতে সমস্ত সাফল্যের চাবিকাঠি৷ যে ঈমান সহকারে নেক আমল করবে, তাকে আল কুরআনে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে:

مَنْ عَمِلَ صَلِحًۭا مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤْمِنٌۭ فَلَنُحْيِيَنَّهُۥ حَيَوٰةًۭ طَيِّبَةًۭ ۖ وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُم بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا۟ يَعْمَلُون

যে মুমিন অবস্থায় উত্তম আমল করবে – পুরুষ হোক বা নারী – আমি তাকে [দুনিয়ায়] উত্তম জীবন দান করব, আর [আখিরাতে] তাদেরকে প্রদান করব তাদের সর্বোত্তম আমলগুলোর প্রতিদান৷

 

এই আয়াতে নেককার মুমিনদের দুটি পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে:

• উত্তম জীবন৷
• সর্বোত্তম আমলের প্রতিদান৷

 

এই আয়াতে যে উত্তম জীবনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, তা মুমিনরা দুনিয়াতেই লাভ করবে৷ এখানে উত্তম জীবনের অর্থ: তুষ্টি, মনের শান্তি, হালাল রিযক এবং আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যে আনন্দ লাভ করা – এ সবকিছু মিলেই একজন মুমিনের জীবন এই পৃথিবীতেই সুন্দর হয়ে ওঠে৷ আর আখিরাতে তার পুরস্কার হিসেবে রয়েছে অনন্ত জান্নাত৷

 

যে ঈমানের ওপর মৃত্যুবরণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে৷ আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَمَن يَعْمَلْ مِنَ ٱلصَّلِحَتِ مِن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤْمِنٌۭ فَأُو۟لَٓئِكَ يَدْخُلُونَ ٱلْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُونَ نَقِيرًۭا

আর পুরুষ কিংবা নারীর মধ্য থেকে যারাই মুমিন অবস্থায় নেককাজ করবে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি নাকীর পরিমাণ যুল্মও করা হবে না৷

 

নাকীর বলা হয় খেজুরবিচির ওপরের পাতলা আবরণকে৷ অর্থাৎ ঈমান সহকারে নেক আমল করলে তবেই জান্নাতের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। আর যারা এ কাজ করবে, তাদের প্রতিশ্রুত প্রতিদান পুরোপুরি দেয়া হবে এবং তাদের প্রতি সামান্যতম যুল্‌মও করা হবে না৷

 

নেক আমল আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার শর্ত হল ঈমান থাকা৷ কেউ যদি শত-সহস্র ভাল কাজও করে, কিন্তু তার ঈমানই না থাকে, তবে এই সমস্ত নেক আমল আখিরাতে তার কোন কাজে আসবে না৷ ঈমান না থাকলে সালাত, সাওম, হাজ্জ, যাকাত-সাদকা-কুরবানী, সমাজসেবা জাতীয় বড় বড় ভাল কাজ কোনই কাজে আসবে না৷ এজন্য আল্লাহ তাআলা আল-কুরআনে নেক আমলের প্রতিদান পাওয়ার শর্ত হিসেবে বারবার ঈমানকে জুড়ে দিয়েছেন৷

আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَمَن يَعْمَلْ مِنَ ٱلصَّلِحَتِ وَهُوَ مُؤْمِنٌۭ فَلَا يَخَافُ ظُلْمًۭا وَلَا هَضْمًۭا

এবং যে মুমিন অবস্থায় ভাল কাজ করবে সে কোন যুল্ম বা ক্ষতির আশংকা করবে না৷

 

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন:

وَمَنْ أَرَادَ ٱلْءَاخِرَةَ وَسَعَىٰ لَهَا سَعْيَهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌۭ فَأُو۟لَٓئِكَ كَانَ سَعْيُهُم مَّشْكُورًۭا

আর যে আখিরাত চায় এবং মুমিন অবস্থায় এর জন্য যথাযথভাবে চেষ্টা করে – তাদের চেষ্টা হবে পুরস্কারযোগ্য৷

 

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন:

فَمَن يَعْمَلْ مِنَ ٱلصَّلِحَتِ وَهُوَ مُؤْمِنٌۭ فَلَا كُفْرَانَ لِسَعْيِهِۦ وَإِنَّا لَهُۥ كَتِبُونَ

সুতরাং যে মুমিন অবস্থায় সৎকাজ করে তার প্রচেষ্টাকে অস্বীকার করা হবে না৷ আর আমি তো তা লিখে রাখি৷

 

এই আয়াতগুলো পাঠে জানা যায় যে আমলে সালিহ বা নেক আমলের দ্বারা উপকৃত হওয়ার শর্ত হল ঈমান থাকা৷

 

ঈমান ছাড়া আমল আল্লাহ কবুল করেন না৷ হাদীসে বর্ণিত, একবার আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন এবং বললেন:

يَا رَسُولَ اللَّهِ ابْنُ جُدْعَانَ كَانَ فِى الْجَاهِلِيَّةِ يَصِلُ الرَّحِمَ وَيُطْعِمُ الْمِسْكِينَ فَهَلْ ذَاكَ نَافِعُهُ

হে আল্লাহর রাসূল, ইবনু জুদআন তো জাহিলিয়্যাতের যুগে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করত এবং মিসকীনদেরকে খাওয়াতো, তবে কি তা তার উপকারে আসবে?

 

জবাবে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন:

لاَ يَنْفَعُهُ إِنَّهُ لَمْ يَقُلْ يَوْمًا رَبِّ اغْفِرْ لِى خَطِيئَتِى يَوْمَ الدِّينِ

সেটা তার কোন কাজে আসবে না৷ কেননা সে একদিনের জন্যও বলেনি: হে আমার রব, প্রতিদান দিবসে আমার গুনাহ আপনি ক্ষমা করুন৷

 

অর্থাৎ এই ব্যক্তি আখিরাতে বিশ্বাসী ছিল না, আর তাই ঈমান না থাকায় তাঁর সামাজিক ভাল কাজের প্রতিদান সে আখিরাতে পাবে না৷

 

অবিশ্বাসী বা অমুসলিমদের মধ্যে অনেকেই সমাজসেবা, রোগাক্রান্তদের শুশ্রুষা, বিপদাপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানো, অভাবীদেরকে সাহায্য করা জাতীয় ভাল কাজ করে থাকেন। তারা কি কোনই প্রতিদান পাবেন না?

 

এর জবাব হচ্ছেঃ আল্লাহ তাআলা তাদেরকে তাদের আমলের প্রতিদান দুনিয়াতেই দিয়ে দেবেন৷ কেননা তারা আল্লাহর জন্য এই কাজগুলো করেনি, জান্নাতের আশায় এগুলো করেনি৷ তারা এগুলো করেছে লোক দেখানোর জন্য, কিংবা নির্বাচনে জেতার জন্য, অথবা বিখ্যাত হওয়ার জন্য নয়তো আত্মতৃপ্তির জন্য৷ ফলে তারা যা আশা করেছে, আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতেই তা তাদেরকে দিয়ে দেবেন, তাই আখিরাতে তাদের জন্য কোন প্রতিদান বরাদ্দ নেই৷

 

অবিশ্বাসীর আমল সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন:

وَقَدِمْنَآ إِلَىٰ مَا عَمِلُوا۟ مِنْ عَمَلٍۢ فَجَعَلْنَهُ هَبَآءًۭ مَّنثُورًا

আর তারা যে কাজ করেছে আমি সেদিকে অগ্রসর হব, অতঃপর তাকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করে দেব৷

 

অর্থাৎ অমুসলিমদের আমলগুলো আখিরাতে হবে মূল্যহীন, ওজনহীন৷ ভোরবেলায় ঘরের পর্দা সরিয়ে দিলে যে সূর্যের আলো প্রবেশ করে, তাতে ঘুরপাক খায় বিক্ষিপ্ত ওজনহীন ধূলিকণা, একজন চাইলেও এগুলোকে জড় করতে পারে না। আখিরাতে অমুসলিমের আমলগুলো এই বিক্ষিপ্ত ধূলিকণার মত ওজনহীন, মূল্যহীন হবে৷

 

কেউ যদি ঈমান থাকা সত্ত্বেও পাপাচারী হয়, তবে পাপের কারণে একটা নির্দিষ্ট সময় জাহান্নামে সে শাস্তি ভোগ করলেও, একদিন সে জান্নাতে প্রবেশ করবেই৷ হাদীসে বর্ণিত:

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَدْخُلُ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ وَأَهْلُ النَّارِ النَّارَ ثُمَّ يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى أَخْرِجُوا مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّةٍ مِنْ خَرْدَلٍ مِنْ إِيمَانٍ فَيُخْرَجُونَ مِنْهَا

আবু সাঈদ আল খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: জান্নাতীরা জান্নাতে ও জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অত:পর আল্লাহ তাআলা বলবেন: যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান রয়েছে, তাকে [জাহান্নাম থেকে] বের কর, ফলে তাদেরকে সেখান থেকে বের করা হবে…

 

কিন্তু যে ঈমান ছাড়া মৃত্যুবরণ করবে, সে অনেক নেক আমল করলেও, ঈমান না থাকার কারণে জাহান্নামে চিরস্থায়ী হবে৷

আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَمَن يَرْتَدِدْ مِنكُمْ عَن دِينِهِۦ فَيَمُتْ وَهُوَ كَافِرٌۭ فَأُو۟لَٓئِكَ حَبِطَتْ أَعْمَلُهُمْ فِى ٱلدُّنْيَا وَٱلْءَاخِرَةِ ۖ وَأُو۟لَٓئِكَ أَصْحَبُ ٱلنَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَلِدُونَ

আর যে তোমাদের মধ্য থেকে তার দ্বীন থেকে ফিরে যাবে, অতঃপর কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, বস্তুত এদের আমলসমূহ দুনিয়া ও আখিরাতে বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং তারাই আগুনের অধিবাসী৷ তারা সেখানে স্থায়ী হবে৷১০

 

সুতরাং সবার আগে ঈমান৷ ঈমান না থাকলে দুনিয়া ও আখিরাত ব্যর্থ৷ এই ঈমান আমাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ৷ মৃত্যু পর্যন্ত ঈমানের ওপর অটল থেকে ঈমানের হেফাযত করতে পারাই প্রকৃত সাফল্য৷

 

 

সূরা আল মায়েদা, ৫ : ৭২৷

সূরা আন নাহল, ১৬ : ৯৭৷

সূরা আন নিসা, ৪ : ১২৪৷

সূরা তাহা, ২০ : ১১২৷

সূরা আল ইসরা, ১৭ : ১৯৷

সূরা আল আম্বিয়া, ২১ : ৯৪৷

সহীহ মুসলিম৷

সূরা আল ফুরকান, ২৫ : ২৩।

বুখারী, মুসলিম।

১০সূরা আল বাকারা, ২ : ২১৭৷

সূত্র

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
slot online skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 rtp slot slot bonus new member skybet88 mix parlay slot gacor slot shopeepay mix parlay skybet88 slot bonus new member