
ইসলামের দৃষ্টিতে নারী নেতৃত্ত্ব
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। ইসলামে পুরুষদেরকে নারীদের উপর কতৃত্বশীল বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তাই ইসলামে নারী নেতৃত্ব জায়েজ নেই। অথচ আমাদের দেশে নেতৃত্বের দিক দিয়ে নারীরা অগ্রগামী। আল-কুরআনে সুরা আন-নিসায় বলা হয়েছে,
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ وَبِمَا أَنفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ ۚ فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِّلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللَّهُ ۚ وَاللَّاتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ ۖ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سَبِيلًا ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا [٤:٣٤]
পুরুষেরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সে মতে নেককার স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাযতযোগ্য করে দিয়েছেন লোক চক্ষুর অন্তরালেও তার হেফাযত করে। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ। (সূরা আন-নিসা, আয়াত নং-৩৪)
এছাড়া বুখারী শরীফে নারীদের ক্ষমতা গ্রহণ সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে,
ইবনে আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত, পারস্যবাসীরা যখন তাদের সম্রাটের মৃত্যুর পর তার কন্যাকে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করেছিল। রাসুলুল্লাহ (সা) এ সংবাদ জানার পর মন্তব্য করেছিলেন, ” যে জাতি তাদের শাসনক্ষমতা একজন নারীর হাতে সমর্পণ করেছে, তারা কখনও সফলকাম হতে পারবে না”।
একারণে আলেমগণ এ বিষয়ে একমত যে, কোন নারীকে শাসনকর্তৃত্ব, খেলাফত অথবা রাজত্ব সমর্পণ করা ইসলাম সম্মত নয়।
আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ” যখন তোমাদের নেতারা হবেন তোমাদের সমাজের দুষ্ট ও নিম্ব প্রকৃতির লোক আর যখন তোমাদের শাসন কর্তৃত্ব তোমাদের নারীদের হাতে সমর্পিত হবে, তখন ভূগর্ভ তোমাদের জন্য ভূপৃষ্ঠের চাইতে উত্তম হবে”। (তিরমিযী )
এছাড়া নারীদের সবসময় পর্দার সহিত চলাফেরা করতে বলা হয়েছে। নারীদের মুখমন্ডল ঢেকে রাকার প্রতিও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে ,
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلَابِيبِهِنَّ ۚ ذَٰلِكَ أَدْنَىٰ أَن يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ
অর্থ: ” হে নবী! আপনার স্ত্রীদের, কন্যাদের এবং মুমিন লোকদের মহিলাদেরকে বলে দিন, তারা যেন নিজেদের চাদর ঝুলিয়ে দেয়। এটা অধিক উত্তম রীতি। যেন তাদেরকে চিনতে পারা যায় এবং তাদেরকে উত্যক্ত করা না হয়। ( সূরা আহযাব, আয়াত নং-৫৯)।
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে,
وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ
“তারা (নারীরা) যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তবে যা স্বভাবতই প্রকাশ হয়ে পড়ে তার কথা ভিন্ন। (সূরা আন-নূর-৩১)।
বিনা প্রয়োজনে মহিলাগণকে বাড়ির বাইরে বের হতে ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে।
মহানবী (সা) ইরশাদ করেছেন,
” নারীরা গোপনীয় বস্তু। যখন যে বাইরে বের হয তখন শয়তান তার গোপনীয়তা প্রকাশ করতে লেগে যায়।”
মহিলাদেরকে জাকজমকর্পূ পোষাক পরিধান করে বের হতেও নিষেধ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, “যদি কোন মহিলা সুগন্ধি দ্রব্য ব্যবহার করে কোন সমাবেশের নিকট দিয়ে যাতায়াত করে যেন তারা এর ঘ্রাণ পায, তাহলে সে ব্যভিচারিণী মহিলা হিসেবে বিবেচিত হবে”। ( আহমাদ, নাসায়ী )
আমাদের দেশের কথা চিন্তা করুন। আমাদের সমাবেশের প্রধান অতিথিগণ, বক্তাগণই নারী হয়ে থাকে। যারা বক্তব্যও দিয়ে থাকে। তাদের ঘিরে থাকে একদল বেগানা পুরুষ।
অথচ কুরআন কারিমে পুরুষ ও নারীগণ ১৪ শ্রেণীর সাথে দেখা-সাক্ষ্যাত করতে পারবে তা উল্লেখ করা হয়েছে।
গায়ের মাহরামের সাথে কথা একান্ত প্রয়োজনীয় হলে পর্দার আড়াল থেকে বলতে হবে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে.
অর্থ্যাত, “তোমরা তাঁর (নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) পত্নীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়ালে থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ । ( সূরা আহযাব, আয়াত নং-৫৩)।
নারী নেতৃত্বের পক্ষে দলীল দেখাতে গিয়ে সম্রাজ্ঞী বিলকীসের ঘটনা অনেকে নিয়ে আসেন। অথচ সেটা ছিল সুলায়মান (আ)-এর শরীয়ত । এছাড়া যেখানে সম্রাজ্ঞী বিলকিসকে সুলায়মান (আ) বলেছিলেন,
” তুমি আমার মোকাবেলায় শক্তি প্রদর্শন করো না এবং বশ্যতা স্বীকার করে আমার কাছে উপস্থিত হয়।”
এ শব্দগুলো পরিষ্কার বলে দিচ্ছে যে, সুলায়মান (আ) তাকে শুধু রাজ্য সমর্পণ করতেই বলেননি, বরং তাকেও অনুগত হয়ে আসতে নির্দেশ দিয়েছেন। আর এতেই শেষ নয়। তিনি তার প্রেরিত উপঢৌকনও ফেরত পাঠিয়েছিলেন।
পরবর্তীতে বিলকীস আল্লাহ তাআলার কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। সেই সাথে সুলায়মান (আ)কে রাজত্ব ফিরিয়ে দেন এবং সুলায়মান (আ)-এর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন।
অন্যান্য যেসব বর্ণনা পাওয়া যায় সেগুলো ইসরাঈলী বর্ণনা। সুলায়মান আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বিস্তারিত সঠিক বিষয় জানতে এখানে ক্লিক করুন।
মহিলা নেতৃত্বের মাসআলা সম্পর্কে আল্লামা ইবনে হাযম (রহ) ‘মারাতিবুল ইজমা”-নামক একটি কিতাব লিখছেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেছেন,
“উলামাগণ সকলেই ঐক্যমত্য পোষণ করেছেন যে, নেতৃত্ব মহিলাদের জন্য জায়েজ নয়”।
যারা নারী নেতৃত্বের দাবীর সমর্থনে আয়িশাহ সিদ্দীকা (রা) ও জামাল যুদ্ধকে টেনে আনেন তাদের জন্য এটুকুই যথেস্ট যে, তিনি খিলাফত বা রাস্ট্রীয় নেতৃত্বের দাবী করেন নি। বরং সেটা ছিল ইয়াহুদীদের চক্রান্তে একটি ভুল-বুঝাবুঝি। যার জন্য তিনি অনুতপ্ত ছিলেন।
বেগানা মহিলার সাথে হাসিমুখে কথাবার্তা বলা ঈমানী দুর্বলতার লক্ষণ। হাদীসে লজ্জা-শরমকে ঈমানে অঙ্গ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “হায়া (লজ্জা-শরম) ঈমানের একটি শাখা, আর ঈমানে স্থান জান্নাত। লজ্জাহীনতা পাপ তথা গুনাহের কাজের অন্তর্ভূক্ত, আর পাপ জাহান্নামে নিয়ে যাবে”।
অথচ আমাদের দেশের প্রচলিত ইসলামী দলগুলোর প্রধান গণ একই সাথে বৈঠক করছেন, সমাবেশ করছেন এমনকি কানেমুখেও কথা বলছেন যা সুষ্পষ্টতই পর্দার লঙ্ঘন। তারা কিভাবে ইসলামের খিদমাত করবেন ?
আল্লাহ আমাদের হিদায়াত দিন। সেই সাথে আমাদের দেশ হতে নারী নেতৃত্বকে তুলে নিন। আমাদের যোগ্য শাসক দিন যিনি ইসলাম অনুযায়ী দেশ চালাবেন ।
আল্লাহ আমাদের কবুল করুন।
পরিশেষে এ বিষয়ে একটি বই উপহার দিচ্ছি, যেই বইটিতে সুন্দরভাবে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে,
ইসলামের দৃষ্টিতে নারী নেতৃত্ব
লেখক: মাওলানা সাদেক আহমদ সিদ্দিকী
প্রকাশনায়: হারামাইন প্রকাশনী

ডাউনলোড