পর্দার জন্য বুরখা বা জিলবাব কি বাধ্যতামূলক…???

পর্দার জন্য বুরখা বা জিলবাব কি বাধ্যতামূলক…???

আসসালামু আলাইকুম ।।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
ইসলাম এ প্রত্যেক নর-নারীর জন্য পর্দা করা ফরজ ।আজকে এইখানে নারীর পর্দা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে ।

আজকাল পর্দা করা ফ্যাশনের অংশ হয়ে গিয়েছে। আমাদের একটি প্রচলিত ভুল ধারণা আছে যে,টাইট-ফিট কাপড় পড়ে সুধু মাথা ঢেকে ফেললেই বা বড় ওরনা পড়লেই পর্দা করা হয়ে যায় এবং অধিকাংশ মুসলিমদের মতেই ইসলামে বুরখা / Apron/ Cloak পড়ার কোন বাধ্যবাধকতা নেই।

ইসলামে যা বলা আছে তা হল একটা চাদর ভালোভাবে গায়ে জড়ালেই হল। যাতে শরীরের প্রদর্শন না হয়।
আমাদের সমাজে আরেকটি কপটতা পরিলক্ষিত যে, normally হয়ত কেউ পর্দা করেন কিন্তু কোনো অনুষ্ঠান হলে পর্দা ছেড়ে দেন. অথচ পর্দার বিধান ফরজ এবং সবসময়ই ফরজ ।

আল্লাহ্‌ বলেন, আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূল কোন আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করার কোন অধিকার নেই। যে আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের আদেশ অমান্য করবে, সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে। (সূরা আহযাব- ৩৬)

তাই আমাদেরও ভিন্ন মত প্রকাশ করার কোনো সুযোগ নেই ।এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণাদি উল্লেখ করছি যা আমাদের অজ্ঞতাকে দূর করতে সাহায্য করবে ইনশাল্লাহ।

সূরা আহযাব – আয়াত ৫৯
“হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের জালাবিব তাদের নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।”

আবু দাউদ হাদীস [৩২-৪০৯০] – উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালমা থেকে বর্ণিতঃ যখন “তারা যেন তাদের জালাবিব তাদের নিজেদের উপর টেনে নেয়।” এই আয়াতটি নাযিল হয়, তখন আনসারি মহিলারা এমন ভাবে তাদের শরীর এবং মাথায় কাপড় টেনে ঘর থেকে বের হওয়া শুরু করলো, যেন তাদের মাথার উপর কাক উড়ে বেড়াচ্ছে।

বুখারী [৮-৩৪৭] – উম্মে আতিইয়া থেকে বর্ণিত – এই আয়াত নাযিল হবার পর, অনেক মহিলাই ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিলেন তাদের কাছে জালাবিব না থাকার কারণে। পরবর্তীতে ঈদের সময় যখন তাদের বের হবার বিষয় এলো, তখন আল্লাহ্‌র রাসুলের কাছে জিজ্ঞাসা করা হল, “হে আল্লাহ্‌র নবী, যার জালাবিব নেই, তার কি হবে?” আল্লাহ্‌র রাসুল জবাব দিলেন, “সে যেন তার কোন সঙ্গীর কাছ থেকে ধার করে নেয়।”

উপরোক্ত আয়াত ও হাদীস থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার। তা হল মহিলাদের ঘর থেকে বের হতে হলে অবশ্যই জালাবিব নামক একটা বস্তু গায়ে জড়াতে হবে। যদি তা বাধ্যতামূলক না হত, তবে নবীজি তা অন্যের কাছ থেকে ধার করতে নির্দেশ দিতেন না।

জালাবিব কি?

জালাবিব শব্দটি হল আরবী জিলবাব শব্দের বহুবচন। ক্লাসিক আরবী ভাষার অভিধানে এই শব্দটির অর্থ হল

“The jilbab is the outergarment, mantle, or cloak. It is derived from the word tajalbaba, which means to clothe. Jilbab is the outer sheet or covering which a woman wraps around her ON TOP OF HER GARMENTS to cover herself from “head to toe”. It hides her body completely” (Lisan al-Arab, volume 7, page 273)

আবু তাহির আল ফায়রুজাবাদি এর The dictionary Al-Qamus al-Muhit এ লেখা আছেঃ
“The jilbab…is that which CONCEALS THE CLOTHES like a cover”

The dictionary Al-Sihah by Jawhari এর জিলবাব অংশে বলা আছেঃ
“The jilbab is the cover and some say it is a sheet. Jilbab has been mentioned in the hadiths with the meaning of sheet, which the woman WRAPPED OVER HER CLOTHES [normally worn clothes]”

উপরের আলোচনায় এটা পরিষ্কার যে জিলবাব কোন ওড়না নয়। এটা একটা Cloak বা Overcoat বা OUTER GARMENT যা সাধরণত যে কাপড় পড়া হয়, তার উপরে পড়তে হয়। Cloak বা Apron যেমন সাধারণ কাপড়ের উপরে পড়তে হয়, জিলবাবও ঠিক তেমন। আরো কথা হল Cloak বা Overcoat বা Apron কখনই একটা চাদরের ন্যায় নয়। এটা অবশ্যই একটা আলাদা লম্বা কাপড় যেটা পরিপূর্ণ সেলাই ছাড়া বুক থেকে পা অব্দি লম্বা চাদর হতে পারে, নতুবা সেলাই সহ (বোতামযুক্ত) লম্বা OUTER GARMENT হতে পারে যা পা অব্দি বিস্তৃত।

তাই ওড়না ঠিক মত গায়ে দিয়ে সেলোয়ার কামিজ ঠিক মত পড়লেই আল্লাহ্‌র আদেশ মানা হয়ে গেলো ভাবলে ভুল করবেন মহতরমা।

এখানে প্রাসঙ্গিক ভাবে সূরা আন নূরের ৬০ নাম্বার আয়াতটা উল্লেখ করতে চাই।

“বৃদ্ধা নারী, যারা বিবাহের আশা রাখে না, তাদের জন্যে দোষ নেই, যদি তারা তাদের কাপড়ের কিছু অংশ খুলে রাখে। তবে এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্যে উত্তম। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।”

এই আয়াত পড়লে আপাতভাবে মনে হবে কোন বৃদ্ধ মহিলাকে আল্লাহ Allow করছেন যাতে সে তাঁর কাপড় কিছুটা খুলে রাখে। নাউযুবিল্লাহ। এখানে কাপড়ের যেই অংশ খুলে রাখতে বলা হয়েছে তা হল জিলবাব। বৃদ্ধ মহিলাদের, যাদের বিয়ের কোন আশা নেই, তারা যদি জিলবাব ছাড়া বাইরে যান, তবে তাতে দোষ নেই। এখন কথা হচ্ছে, যদি জিলবাব বলে কোন OUTER GARMENT না থাকে, তবে এই আয়াতটার কোন মানেই হয়না বরং আল্লাহ্‌র নির্দেশের বিরোধী বক্তব্য হত।

হিজাব

আল্লাহ্‌ তা’লা জিলবাবের সাথে আরো স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন হিজাবের। চলুন আমরা সূরা আন নূরের ৩১ নাম্বার আয়াতটি দেখিঃ

“ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার খিমার বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত দাসী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক – যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।”

খিমার শব্দের অর্থ হল ওড়না, দোপাট্টা বা ওড়নি। যা সাধারণত সালোয়ার কামিজের সাথে পরা হয়। উপরের আয়াত অনুযায়ী এই খিমার বা ওড়না পড়ার নির্দেশ হচ্ছে তা দিয়ে মাথার উপর হতে বুকের নীচ পর্যন্ত ঢেকে ফেলতে হবে [মাথা ঢাকা মানে ফ্যাশান করে চুল দেখিয়ে দেয়া না। বরং চুল সহ ঢেকে ফেলা] এবং সেটা একটামাত্র খিমার দিয়েই। এই ধরনের ওড়না পড়াকেই বলা হয় হিজাব।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে মেয়েদের বের হবার সময় দুটি অবশ্য পরিধেয় কাপড় রয়েছে। একটি হল গলা থেকে পা অব্দি জিলবাব, আরেকটি হল মাথা থেকে পেঁচিয়ে বুক অব্দি খিমার বা ওড়না বা হিজাব।

জিলবাবের পরিধানের বিধান কি?

জিলবাব পরার কঠিন কিছু বিধান হলঃ
০১. এটি হবে OUTER GARMENT
০২. এটি হবে মোটা এবং ঘন, যাতে ভেতরের কোন কিছু দেখা না যায়। একদা বনী তামীম গোত্রের কতিপয় নারী উম্মুল মুমেনীন আয়েশা (রা:) এর নিকট আগমণ করে, তাদের পরিধানে ছিল পাতলা পোষাক। তিনি বললেন, তোমরা যদি মুমেনা হয়ে থাক, তবে এটা ঈমানদার নারীর পোষাক নয়। আর যদি ঈমানদার না হয়ে থাক, তবে এ পোষক দ্বারা উপকৃত হতে পারবে।যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করবে সে তো নিজেরই ক্ষতি করবে। আল্লাহ্‌র কোনই ক্ষতি হবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: আমার উম্মতের সবাই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তবে সে লোক নয় যে (জান্নাতে যেতে) অস্বীকার করে। তাঁরা প্রশ্ন করলেন, কে অস্বীকার করে? তিনি বললেন, যে আমার আনুগত্য করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে; আর যে আমার নাফারমানী করবে সেই জান্নাতে যেতে অস্বীকার করে। (বুখারী) বেপর্দা হওয়া জাহান্নামীদের কাজ: রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “জাহান্নামবাসী দুটি দল রয়েছে। যাদেরকে আমি এখনও দেখিনি একদল এমন লোক যাদের হাতে গরুর লেজের মত লাঠি থাকবে যা দিয়ে তারা লোকদেরকে প্রহার করবে আর অন্য দল এমন নারী যারা পোষাক পরেও উলঙ্গ থাকে” (মুসলিম)
০৩. এটি হবে ঢিলেঢালা, যাতে শরীরের কোন বাঁক বা অঙ্গ স্পষ্ট চোখ দিয়ে উপলব্ধি করা না যায়।
০৪. এটি কখনই এমন ভাবে ডিজাইন্ড হবে না, যে তা অন্য পুরুষকে আকর্ষণ করে ফেলে।

কতদূর পর্যন্ত জিলবাব ও হিজাব করতে হবে?

উপরোক্ত আয়াতের [আন নূর – ৩১] এই অংশটুকু খেয়াল করুনঃ

তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে

এই আয়াতের ব্যখ্যা মুসলিম বিজ্ঞ আলেমগণ দুই ভাবে করেছেন। এক পক্ষ বলছেন হাতের কব্জি ও পুরো মুখমন্ডল হল সাধারণত প্রকাশ পাওয়া অংশ। অন্য পক্ষ বলছেন হাতের কব্জি ও শুধু চোখ জোড়া হল সাধারণত প্রকাশ পাওয়া অংশ। অনেকে পায়ের পাতাকেও ঢেকে রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন [মৌজা দিয়ে]। এই ব্যাপারে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মতই গ্রহণ করার অনুরোধ রইলো।

জিলবাবকে বাংলা ভাষায় বুরখা বলা হয়ে থাকে সাধারণত। এখন আপনি যা খুশি তাই বলতে পারেন, বুরখা বলুন, জিলবাব বলুন, ওভারকোট, এপ্রোন, ক্লোক, যা খুশি। তবে আল্লাহ্‌র স্পষ্ট নির্দেশ আশার পরেও যদি “বুরখা পড়ার দরকার নাই, এমনি গা ঢাকলেই হল” নীতি অবলম্বন করেন, তবে ক্ষতি আপনারই।

“হে মু’মিনগণ!

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর এবং তোমরা যখন তার কথা শ্রবণ করছো তখন তা হতে মুখ ফিরিয়ে নিও না; এবং তোমরা তাদের ন্যায় হয়ো না যারা বলে ।
‘শ্রবণ করলাম’, বস্তুত তারা শ্রবণ করে না।”[সূরা আনফাল: ২০-২১]

পরিশেষে বলতে চাই, জিলবাব ও হিজাব নিয়ে লিখতে গেলে অনেক কথাই চলে আসে যা সময়ের অভাবে লিখতে পারলাম না। সংক্ষেপে মূল বিষয়গুলো তুলে আনার চেষ্টা করলাম। আশা করি ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

আসুন আমরা সঠিকভাবে আল্লাহ্‌র আদেশ নিষেধ মেনে চলার চেষ্টা করি।

“অতএব পবিত্র তিনি, যাঁর হাতে সবকিছুর রাজত্ব এবং তাঁরই দিকে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।” [৩৬-৮৩]

আল্লাহ্‌ সর্বজ্ঞানী

কৃতজ্ঞতা

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button