সিয়ামের আদব, করণীয় ও বর্জণীয় (পর্ব: ৬)
সিয়ামের আদব, করণীয় ও বর্জণীয় (পর্ব: ৬)
আলোচ্য বিষয়: সিয়ামের হুকুম
রমযানের সওম ফরয। এর ফরযিয়্যাত আল্লাহর কিতাব, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত ও মুসলিমদের ইজমা দ্বারা প্রমাণিত।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
“হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর। * নির্দিষ্ট কয়েক দিন। তবে তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ হবে, কিংবা সফরে থাকবে, তাহলে অন্যান্য দিনে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আর যাদের জন্য তা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদয়া- একজন দরিদ্রকে খাবার প্রদান করা। অতএব যে স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত সৎকাজ করবে, তা তার জন্য কল্যাণকর হবে। আর সিয়াম পালন তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জান। * রমযান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের সহজ চান এবং কঠিন চান না। আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর”। [সূরা আল-বাকারা: (১৮৩-১৮৫)]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি বস্তুর উপর রাখা হয়েছে: সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল। সালাত কায়েম করা। যাকাত প্রদান করা। বায়তুল্লাহ শরিফের হজ করা ও রমযানের সওম পালন করা”। বুখারি ও মুসলিম। মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে: “এবং রমযানের সওম ও বায়তুল্লাহ শরিফের হজ”।
রমযানের সওমের ফরযিয়্যাত সম্পর্কে সকল মুসলিম একমত। রমযানের সওমের ফরযিয়্যাত যে অস্বীকার করবে, সে মুরতাদ ও কাফের। অতঃপর সে যদি তওবা করে ও এর ফরযিয়্যাত মেনে নেয়, তাহলে তার তওবা কবুল করা হবে, অন্যথায় তাকে কাফের হিসেবে হত্যা করা হবে।
হিজরতের দ্বিতীয় বছর মুসলিম উম্মাহর উপর সওম ফরয হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নয়টি রমযান মাসের সওম পালন করেছেন। প্রত্যেক সাবালক ও বিবেকবান মুসলিমের উপর সওম ফরয।
কাফেরদের উপর সওম ওয়াজিব নয়, ইসলাম ব্যতীত তাদের সওম গ্রহণযোগ্য নয়। সাবালক হওয়ার পূর্বে বাচ্চাদের উপর সওম ফরয নয়। পনের বছর পূর্ণ হলে, অথবা নাভির নিচে পশম গজালে, অথবা স্বপ্ন দোষ ইত্যাদির মাধ্যমে বীর্যপাত ঘটলে বাচ্চারা সাবালক হয়। নারীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আরেকটি নিদর্শন হচ্ছে ঋতু বা হায়েস আসা। এসব আলামতের যে কোন একটি দ্বারা তাদের সাবালক হওয়া সাব্যস্ত হবে। হ্যাঁ অভ্যাস গড়ার জন্য বাচ্চাদের সওমের নির্দেশ দেবে, যদি এতে তাদের কষ্ট না হয়। পাগল বা মস্তিষ্ক বিকৃতদের উপর সওম ওয়াজিব নয়। বড় হওয়ার পরও যদি কোন বাচ্চা প্রলাপ বকে, ভাল-মন্দ যাচাই করতে অক্ষম হয়, তাহলে তার উপর সিয়াম ফরয হবে না এবং তার পক্ষ থেকে কাফ্ফারাস্বরূপ খাদ্য দিতে হবে না।
আগামী পর্বে সিয়ামের হিকমত ও ফায়দা প্রসঙ্গে আলোচনা হবে ইনশা আল্লাহ ।