ইসলামে মানবকল্যাণের গুরুত্ব

ইসলামে মানবকল্যাণের গুরুত্ব

ইসলাম শুধু মুসলিমদের জন্য কল্যাণকর দ্বীন নয়, বরং সকল মানুষের জন্য কল্যাণকর।  এমনকি অন্যান্য পশুপাখির প্রতিও দয়াশীল হওয়ার নির্দেশ রয়েছে ইসলামের মধ্যে। এছাড়াও অকারণে গাছের পাতাও ছিড়তে নিষেধ করা হয়েছে।

মানুষের বিপদে আপদে পাশে দাড়ানো ও সাহায্য করার প্রতি ইসলামের শুধু নির্দেশ নয়,বরং এর প্রতি উত্সাহিত ও বিশেষ নেকীর কাজ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

কুরআনে সতআমল করার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ রয়েছে যে,

إِنَّ رَحْمَتَ اللَّهِ قَرِيبٌ مِّنَ الْمُحْسِنِينَ [٧:٥٦]

অনুবাদ: নিশ্চয়ই যারা নেক আমল করে, আল্লাহর রহমদ তাদের নিকটবর্তী। (সুরা আল-আরাফ, আয়াত নং-৫৬)।

সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন যে,

আল্লাহ তার বান্দাদের মধ্যে দয়ালুদের প্রতিই দয়ালু থাকেন। ( বুখারী)।

এছাড়াও অন্য হাদীসে রাসূলুললাহ (সা) বলেছেন,

জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: যে লোক মানুষের প্রতি দয়া-অনুগ্রহ প্রদর্শন করে না আল্লাহ তাআলাও তাকে দয়া করেন না। ( সহীহ তিরমিযী, হা/১৯২২)।

হৃদয়হীন,নিষ্ঠুর ও দুর্ভাগা মানুষ আল্লাহর রাহমাত থেকে বঞ্চিত হয়।

এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন যে, শুধুমাত্র হৃদয়হীন,নিষ্ঠুর ও দুর্ভাগা মানুষের কাছ থেকেই রাহমাত ছিনিয়ে নেয়া হয়। ( সহীহ তিরমিযী, হা/১৯২৩)।

যারা পৃথিবীতে বাস করে তাদের প্রতি দয়ালু হওয়া সকল মুসলিমের কর্তব্য। তা না হলে উপরওয়ালা (আল্লাহ) আমাদের প্রতি দয়া করবেন না। যে লোক দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করে, আল্লাহও তার সাথে দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করে। এই ব্যাপারে কঠোর নির্দেশ এসেছে সহীহ তিরমিযী হা/১৯২৪ এ।

এক মুসলিম অপর মুসলিমেরদ ভাই। তার উচিত তার সাথে কোনরকম বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, তার প্রসঙ্গে মিথ্যা বলবে না, তাকে অপমান করবে না। প্রত্যেক মুসলিমের মান-সম্মান, ধন-সম্পদ ও রক্তের উপর হস্তক্ষেপ করা অপর মুসলিমের উপর হারাম। (মুসলিম,তিরমিযী)।

একজন মু’মিন ব্যক্তি অন্য মু’মিনের জন্য একটি সুদৃঢ় প্রাসাদস্বরুপ, যার একটি অংশ অপর অংশকে শক্তিশালী করে।

রোগীর সেবা করা ওয়াজিব নামে একটি পরিচ্ছেদ এনে ইমাম বুখারী তাঁর বুখারী শরীফের ২২৫৩ নং অনুচ্ছেদে একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন যে,

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, তোমরা ক্ষুধার্তকে খাবার দাও, রোগীর সেবা কর ও কয়েদীকে মুক্ত কর। ( বুখারী, হা/৫২৪৬)।

এমনকি সেই অধ্যায়ে বেদুঈন, শিশু ও মুশরিকদেরও সেবা করার হাদীস রয়েছে। এ থেকে বুঝা যায় যে, অমুসলিম হলেও সেই ব্যক্তির সেবা করা ওয়াজিব।

তেমনি ভাবে রোগীকে দেখতে যাওয়া অন্যতম নেকীর কাজ । রোগীকে দেখতে গিয়ে রোগীর মাথায় ডান হাত রেখে বা ডান হাত বুলিয়ে দুআ পড়ার প্রতি নির্দেশ রয়েছে।

أَذْهِبِ الْبَأْسَ رَبَّ النَّاسِ وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لاَّ يُغَادِرُ سَقَمًا-

অর্থ: কষ্ট দূর কর হে মানুষের প্রতিপালক! আরোগ্য দান কর। তুমিই আরোগ্য দানকারী। কোন আরোগ্য নেই তোমার দেওয়া আরোগ্য ব্যতীত। যা কোন রোগীকে ধোঁকা দেয় না।

অথবা এই ছোট দুআটি পড়া যেতে পারে।

لاَ بَأْسَ طَهُوْرٌ إنْ شآءَ اللهُলা বাসা ত্বহূরুন ইনশা-আল্লাহ। ‘কষ্ট থাকবে না। আল্লাহ চাহে তো দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন’।

পরিশেষে আপনাদের প্রতি আমাদের আহবান । আসুন সাভারের এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার জন্য আমরা আহতদের সেবায় এগিয়ে আসি। তাদের  জন্য রক্ত, অক্সিজেন,ঔষধ, খাবার,পানীয় প্রভৃতি সরবরাহ করে তাদের পাশে এগিয়ে আসি। যাদের সামর্থ আছে তারা এই উদ্ধার কার্যে এগিয়ে আসি। যারা দূরে রয়েছি তারাও বিভিন্ন ভাবে সহযোগীতা করি। বিপদে অন্যকে সান্তনা দেওয়াও একটি সাদকাহ। তাই আমার নিহত ও আহতদের জন্য দুআ করি। এর জন্য কোন আনুষ্ঠানিকতা নয়,বরং নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে দুআ করি।

সরকারের প্রতি আমাদের অনুরোধ এই বিপদের দিনে কোন শোক দিবসের আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং সবাই মিলে কাজ করি। সেই সাথে এই সব বিপদ মোকাবেলায় সুব্যবস্থা নেওয়া হোক যাতে এর পরে এরকম বিপদে তরিত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। আর ওইসব কুলাঙ্গারদের বিচার করা হউক যারা এই সব গরীব দুখীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন। তাদের উতকৃষ্ট বিচারই এসব দূর্ঘটনা ভবিষ্যতে রুখতে পারে। আল্লাহ আমাদের বিপদগ্রস্থদের প্রতি এগিয়ে আসার তাওফিক দিন।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button