ইমাম নববীর সংক্ষিপ্ত জীবনী

আজ আমি আপনাদের সামনে রিয়াদুস সালেহীনের লেখক ইমাম নববীর জীবনী সম্পর্কে কিছুটা লিখব ইনশাআল্লাহ। আমি এটা সংগ্রহ করেছিলাম ইংরেজীতে একটা ওয়েবসাইট থেকে word ফরম্যাটে।ওয়েবসাইটটার ঠিকানা মনে নেই। তবে তথ্যগুলো আমি যাচাই করে লিখেছি।আর তথ্যগুলোতে কিছু তথ্য আমার নিজের সংগ্রহের রিয়াদুস সালেহীনের ভূমিকায় থাকা জীবনী থেকে সংগ্রহ করেছি।এছাড়া আমার বিভিন্ন তথ্য যতটুকু স্মৃতিতে মনে আছে তার উপর ভিত্তি করে লেখা্।কোন ভুল হলে তা জানাবেন তবে অবশ্যই প্রমাণ সহকারে।
ইমাম নববী


পুরো নাম: ইয়াহইয়া ইবনে শরাফ ইবনে মুরী ইবনে হাসান বিন হুসাইন।
কুনিয়াত বা উপনাম: আবু জাকারিয়াহ
কুনিয়াত বলা হয় আরবের বিভিন্ন ব্যক্তিদের উপনাম এর ভিত্তি করে।
যেমন নাবী কারীম (সা:)এর উপনাম আবুল কাসেম।
জাতিগত বৈশিষ্ট্য: আরবীয়
জন্মস্থান: আল-নাওয়ার এর গ্রামে যেটা এখনও উপস্থিত দামেষ্কের কাছে।
জন্মতারিখ: ৬৩১ হিজরী মুহাররম মাসে।
আরবদের জীবনে অনেক প্রকার নাম থাকত।
যেমন:
আসল নাম:
ব্যক্তির বাবার নামে
কুনিয়াত বা জন্ম হওয়া ও বেড়ে উঠার সাথে সাথে যে নামে পরিচিত।
লক্‌ব: এর অর্থ উপাধি।যেটা সে জীবনে অর্জন করে বিভিন্ন কৃতিত্বের সাথে।
নিসবাহ: এটা হতে পারে এলাকা, গ্রাম, জন্মস্থান, রাজ্য বা গোত্রের ভিত্তিতে।যেমন, আল-বুখারী যিনি বুখারাতে জন্মগ্রহণ করেছিলাম।
যেমন আল-কুরাশী, আল হাসেমী যেসব গোত্রের নামে করা হয়েছে।
যেহেতু তিনি নাওয়া’তে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তাই সেই অনুসারে তার নাম হয়েছে, আল নাওয়ী বা নববী।
ইমাম নববীর তার জীবদ্দশায় এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন, যে তিনি উপধি লাভ করেছিলেন, মুহিউস সুন্নাহ (সুন্নাতের পুনরিজ্জবনকারী)আবার অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, মুহিউদ্ দ্বীন।
তাঁর কার্যক্রম:

তিনি মাত্র দশ বছর বয়সে কুরআন হিফজ করেন।সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হচ্ছে যে, তিনি ছিলেন তাঁর পরিবারের একমাত্র শিক্ষিত ব্যক্তি।তিনি এসেছিলেন নিরক্ষর পরিবার থেকে।এ থেকে প্রমাণ হলো যে, বিদ্যার সর্বোচ্চ পিঠে উঠার জন্য শিক্ষাগত পটভুমি থাকা বাধ্যতামূলক নয়।ইমাম নববীর বাবা ছিলেন েএকজন দোকানদার যিনি গ্রামে একটি ছোট দোকান চালাতেন।কোন জ্ঞানী ব্যক্তির বসবাস ছিলো না নববী গ্রামে।
ইমাম নববী তার বাবার কাছে অনুমতি চান দামেস্কতে গিয়ে পড়ালেখার করার যেটা ছিল তত্কালীন সময়ের অন্যতম শিক্ষাকেন্দ্র।যেহেতু তারা খুবই নিম্নবিত্ত পরিবারের ছিলো তাই তার বাবা চাচ্ছিলেন যে তাঁর বড় ছেলে তার সাথেই থাক ও তাকে তার ব্যবসায় সহযোগিতা করুক।
সেই সময়ে ইমাম নববী তার সর্বোত্কৃষ্ট চেষ্টা করেন তার বাবাকে বুঝাতে।এবং সেই সাথে ইসলাম নিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে।যখন ইমাম নববী ১৭-১৯ বয়স বছরে পদার্পন করলেন, তখন তিনি তার বাবার কাছে পুনরায় অনুমতি চাইলেন, তথন তার বাবা তাকে অনুমতি দিলেন, কিছুদিন পরে তিনি ইসলাম নিয়ে পড়ালেখা করে তার জ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়েছিলেন। ৬৫১ হি আশেপাশে তিনি দামেস্ক যান।
দামেস্কতে তিনি বিখ্যাত আর-রাওয়াইয়াহ মক্তবে দুই বছর পড়ালেখা করেন এবং সেই সময়ে তিনি ছাত্রদের মধ্যে একজন আদর্শ রূপে আবির্ভূত হন।তিনি দিনে ১২টি বিষয় পড়তেন, যেখানে অন্যান্য ছাত্ররা ৪-৫টা বিষয় পড়তেন।তার ছাত্রর বর্ণনা করেন যে সে সময় তিনি দুইবছর ধরে বালিশ ব্যবহার করেন নি।কারণ তিনি ঘুমের চেয়ে জ্ঞানকে বেশী অগ্রাধিকার দিতেন।
দুই বছর পর তিনি পবিত্র হজ্জব্রত পালন করেন তার বাবার সাথে, সেই সময় মক্কা শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক রাজধানী ছিলো না, সেই সাথে ছিলো বিভিন্ন জ্ঞানীদের পদচারণায় মুখর।
যখন ইমাম নববী দামেস্কতে ফিরে আসেন তখন তিনি আবার চার বছর পড়াশুনা করেন।এটা বেশ অবাক করা ব্যাপার যে, তিনি সেই ছয় বছরে এতটাই শিখেছিলেন য, তিনি একজন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছিলেন।
তার সফলতার সাতটি গুণ:
জ্ঞানের জন্য সফর:
একটি উচ্চমানের শিক্ষালয়ে পড়ালেখা:
শিক্ষার জন্য উত্সর্গীকৃত ছাত্র:
অধিক সংখ্যক বিষয়ে পঠন:
ইমাম নববী হাদীস, ফিকহ, শাফেয়ী ফিকহ, আরবী ভাষা প্রভৃতিতে ছিলেন অসাধারণ।তিনি অনেক বই লিখেছেন, তার মধ্যে
ইমাম নববীর চল্লিশ হাদীস
রিয়াদুস সালেহীন
আল মাজমুউ যেটা মনে করা হয় শাফেয়ী মাযহাবের সবেচয়ে বড় কিতাব।

তার অন্যতম গুণ যা আল্লাহ তাকে দিয়েছিলেন,
কাজের প্রতি আন্তরিকতা
বিভিন্ন বিষয়ের উপর লেখার
আমরা যা সারা জীবনে লিখতে পারতাম তা তিনি অর্জন করেছিলেন এক বছরে
তিনি সবসময় রাতের নামায বা কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদ পড়তেন, প্রায়ই রোজা রাখতেন ও যিকরে মগ্ন থাকতেন।
তিনি তার জীবন ধারণে খুবই সহজ সরল ছিলেন তিনি তার কাজের জন্য কোনরূপ payment নিতে অস্বীকার করেন, তার একটি ঘর ছিলো যা বইয়ে পরিপূণ ছিলো।এমনই যে তার ছাত্ররা এসে বসার জায়গা পেত না।
তার ছাত্ররা একদিন প্রশ্ন করলেন যে, শায়খ! আপনি অনেক সুন্নাহ পালন করেন কিন্ত একটি ছাড়া (বিবাহ)? তখন ইমাম নববী বলেন, যে তার ভয় হয় যে, তিনি এই সুন্নাহ পালন করতে গিয়ে আরেকটি পাপ সংগঠিত করেন।
তাঁর রচিত বই:

A. চল্লিশ হাদীস ইমাম নববীর
B. রিয়াদুস সালেহীন
C. শরহে মুসলিম শরাহ গ্রন্থ বলতে বাংলায় ভাষ্যগ্রন্থ বলা হয় সহজ বাংলায় বলা হয়, ব্যাখ্যা গ্রন্থ।যেমন বুখারী শরীফের শরাহ গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ফাতহুল বারী,উমদাতুল কারী প্রভৃতি।
D. আত-তিবিয়ান ফি আদাব হামালাত আল কুরআন
E. রাওয়াধান আত-তালিবান
F. আল মাজমুউ
G. মুখতাসার উসুদুল গাবাহ
H. জামিউস সুন্নাহ
I. তাহযীবুল আসমা ওয়াস সিফাত
J. কিতাবুর রাওদা্হ
K. কিতাবুল আযকার
L. শরহে সুনানী আবু দাউদ
M. বুস্তানুল আরেফীন
N. রিসালাতুল ইসতিহবাবুল কিয়াম লি আহলিল ফাদল
O. তাবাকাত ফুকাহায়ে শাফেইয়া
P. সহীহ বুখারীর শারহে কিতাবুল ঈমান
Q. কিতাবুল মুবহাবাত
R. ইরশাদ ফি উলুমিল হাদীস
S. রিসালাহ ফি কিসমাতিল গানাইম
T. শারহে সুনানে আবী দাউদ
U. শারহে মুহাযযাব
তার এই সব বইয়ের মধ্যে মুসলিম শরীফের শরাহ গ্রন্থটিকে সেরা ধরা হয়।
মৃত্যু:
তিনি আল-কুদস (জেরুজালেম)চলে যান এবং সেখানে স্বল্প সময়রে জন্য শিক্ষা দেন।যখন তিনি দামেস্কতে ফিরে আসেন তিনি অসুস্থতায় ভুগেন দুই মাস ধরে।তারপর আরও অসুস্থ হতে থাকেন।এবং তিনি তার গ্রামে ফিরে আসেন।
তিনি ৬৭৬হি তে শনিবার ২৪শে রজব ৪৫-৪৬ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।
ইমাম যাহাবী তার সম্পর্কে বলেন, তিনি তিনটি চারিত্রিক বৈশিষ্টকে একত্রিত করতে পেরেছিলেন, যদি কারও একটি থাকত তবে যে কেউ ইমাম হতে পারতেন,
1) যুহদ
2) বৃত্তি
3) অন্যায়ের প্রতিরোধ ও সত্য বলার সাহসিকতা

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button