অল্প বয়সী বাচ্চার আল্লাহ ভীতি

অল্প বয়সী বাচ্চার আল্লাহ ভীতিঃ (বাচ্চাটা বড় হয়ে বিশ্ব বিখ্যাত আলেম হয়েছিল)

অনুলিখন: মাকসুদ বিন আমাল

আব্বাসীয় খেলাফতকালে শাইবান বংশের এক লোক বাদশাহর নিকট একান্ত গোপন তথ্য প্রচারের কাজ করত, তাঁর দায়িত্ব ছিল এই যে, সে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাজারে গিয়ে ঘুরাফেরা করত, আর সেখানে মানুষ যে সমস্ত কথা কানা-ঘোষা করত সে তাঁর রিপোর্ট তৈরি করে সীল মোহর দিয়ে তাঁর অফিসারের নিকট পেশ করত।
অতঃপর ঐ অফিসার রিপোর্ট সাজিয়ে বাদশাহর নিকট পেশ করত। আর তা এজন্য করা হত যে, রাজ্যের মধ্যে যেন নিরাপত্তা বজায় থাকে এবং সাধারণ মানুষ নিরাপদে বসবাস করতে পারে।
একদিন রিপোর্টার কোন বিশেষ কাজে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় বাজারে গিয়ে রিপোর্ট তৈরি করতে পারে নাই। পরে মানুষের কাছে বাজারের ব্যপারে যা কিছু শুনেছে তা রিপোর্ট আকারে লিখল এবং তাঁর উপর সীল মোহর মেরে দিল।
অতঃপর নিজের অল্প বয়সী ভাতিজাকে ডাকল যার নাম ছিল আহমদ, তাঁকে বললঃ হে আহমদ! তুমি কি ঐ অফিসারের অফিস চিন যে প্রতিদিন আমার কাছ থেকে রিপোর্ট নেয়?
বাচ্চা উত্তরে বললঃ হ্যাঁ, আমি চিনি।
চাচা বললঃ আমার এ রিপোর্টটি আজ তুমি নিয়ে গিয়ে অফিসারকে দিয়ে আস। আমি তাতে সীক মোহর করে দিয়েছি। আর অফিসারকে বলবা যে, আমার চাচা হঠাৎ কোন কাজে ব্যস্ত হয়ে গেছে তাই আজ সে আসতে পারে নাই, আর সে এই রিপোর্ট আমাকে দিয়ে পাঠিয়েছে।
বাচ্চা তাঁর চাচার কাছ থেকে রিপোর্টটি নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অফিসারের নিকট চলতে লাগল। রিপোর্টটি অফিসারের নিকট পৌঁছাবার পূর্বে তাঁর স্মরণ হল যে, তাঁর চাচা রিপোর্ট ফর্মে তারিখ দেয় নাই। তাই সে নিজেই সেখানে তারিখ লিখে দিল।
এখন ঐ বাচ্চা সামনের দিকে চলতে লাগল। পথিমধ্যে নদীর মাঝে একটি পুল পরল। হঠাৎ করে বাচ্চার মাথায় জাগল যে, হে আহমদ! যদিও তুমি ছোট মানুষ; কিন্তু তুমি ভাল করেই জান যে, ইসলামের দৃষ্টিতে তোমার একাজটি কেমন?
বাজারে মানুষ কি বলে না বলে তা তোমার চাচা নোট করে অফিসারকে দেয় যা ইসলামের দৃষ্টিতে একটি হারাম কাজ। কেননা এটি গুপ্তচুরি করা আর গুপ্তচুরির ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
অর্থঃ “এবং গুপ্তচুরি করো না।” (আল হুজুরাত- ১২)
তাই হে আহমদ তুমি এক নিসিদ্ধ কাজ করছ এবং এ কাজে তুমি অপরকে সাহায্য করছ যা থেকে কুরআন নিষেধ করেছে। তাঁর মনে জাগা একথাগুলো তাঁকে ভীষন্ন করে তুলল তখন সে তাঁর চাচার দেয়া রিপোর্টটি নদীতে ফেলে দিল এবং ঘরে ফিরে আসল।
যখন নিরাপত্তা অফিসারের নিকট রিপোর্ট পৌছতে দেরী হল তখন সে নিজের লোক পাঠাল যে দেখ কেন রিপোর্টটি অফিসারের নিকট পৌছতে দেরী হল। অফিসারের পাঠানো লোকটি যখন রিপোর্টারের নিকট পৌঁছল তখন সে বললঃ যে আমি আমার ভাতিজা আহমদের মাধ্যমে অফিসারের নিকট রিপোর্ট পাঠিয়েছি।
একথা শুনে অফিসারের পাঠানো লোকটি বাচ্চার নিকট গেল এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করলঃ তোমার চাচা তোমার মাধ্যমে যে রিপোর্ট অফিসারের নিকট পাঠিয়েছিল তা কোথায়?
বাচ্চা উত্তরে বললঃ আমি তো তা নদীতে ফেলে দিয়েছি। একথা শুনা মাত্র অফিসারে পাঠানো লোকটি ভয়ে চিল্লিয়ে উঠে বললঃ কেন?
কি কারণে তুমি রিপোর্ট নদীতে নিক্ষেপ করেছ? …………… কারণ কি?
বাচ্চা উত্তরে বললঃ কেননা গুপ্তচুরি যা ইসলামী শরীয়ত নিষিদ্ধ করেছে। তাই আমি চাই যে, ঐ হারাম কাজে আমার পক্ষ থেকে কোন সহযোগীতা না থাকুক।
ঐ লোকটি বাচ্চার উত্তর শুনে দ্রুত গিয়ে অফিসারকে বললঃ অফিসার বাচ্চা সম্পর্কে শোনার পর বাচ্চার কথাগুলো তাঁর অন্তরে রেখাপাত করল আর সে বলে উঠলঃ
এ বাচ্চা এত বড় পরহেযগার ………… তাহলে আমাদের কতটুকু পরহেযগার হওয়া দরকার । আমরা কোথায় আছি?
এরপর থেকে ঐ বাচ্চার প্রতি তাঁর গভীর দৃষ্টি ছিল। তাঁর মনে হচ্ছিল যেন সে ঐ বাচ্চাকে নয়; বরং কোন যুবককে দেখতেছে। আপনি কি জানেন ঐ বাচ্চাটি কে ছিল?
এ বাচ্চা ঐ নামী-দামী ব্যক্তিত্ব যার পূর্ণ নাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) বলে সবাই জানে। যে একজন বড় মাপের হাদীস বিশারদ এবং বিশিষ্ট ফেকাহ শাস্রবিদ। যাকে তাকওয়ার ইমাম বলা হয়, যে খলীফা মামুনের যুগে সমস্ত পরীক্ষা সমূহকে দৃঢ়ভাবে মোকাবেলা করেছিলেন এবং ইসলামী আক্বীদার পক্ষ অবলম্বন করে এর বিপক্ষের সমস্ত ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করেছেন। সত্যের বানী প্রকাশে সর্বপ্রকার বিপদ মাথা পেতে মেনে নিয়েছেন। কঠিন বিপদের সময়ও কুরআন ও হাদীস থেকে দূরে সরে গিয়ে আল্লাহর দ্বীনে নিজের পক্ষ থেকে একটি শব্দ বৃদ্ধি করাও সহ্য করেন নাই। জী হ্যাঁ! এই বাচ্চাই ইমাম আহমদ নামে প্রসিদ্ধ ছিল।
তাঁর উপর হামলাকারী সবাই আজ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, ভাল করে তাদের নাম নেওয়ার মত কেউ নেই; কিন্তু আহমদ বিন হাম্বল (রাহিঃ)- এর নাম আসা মাত্রই এক ইসলামী হিরোর প্রতিচ্ছবি মানুষের মন-মস্তিষ্কে ভেসে উঠে। এ বাচ্চা বড় হয়ে অনেক বড় একজন হাদীস বিশারদ হয়েছিলেন; কিন্তু শৈশব থেকেই প্রতিটি বিষয় কুরআন ও সুন্নাতের আলোকে আমল করা তাঁর অভ্যাস ছিল।
সূত্রঃ সোনালী পাতা, পৃষ্ঠা ৩২১-৩২২-৩২৩
ইমাম আহমদ রহঃ যেখানে শৈশব থেকে কুরআন ও সুন্নাতের আলোকে চলতেন অথচ পৃথিবীর অনেক মুসলিম আমৃত্যু কথিত পীর, হুজুর, আলেমদের কথার উপর মনগড়া ফতুয়ার আলোকে আমল করছে !!!!!! কুরআন ও সুন্নাত (সহীহ হাদীস) কে এড়িয়ে মাযহাবী মনগড়া ফিকহের কিতাবের উপর আমল করছে!!!!!!!
তাদের মন্তব্য হলঃ সহীহ হাদীসে থাকলে কি হবে মাযহাবে নাই তাই মানা যাবে না!! হুজুর যেভাবে বলছে সেভাবে আমল করতে হবে!!!!!!!! হুজুররা কি কুরআন হাদীস বুঝে না!!!!!!!
আর ইমাম আহমদ রহঃ এর মন্তব্য ছিলঃ অর্থঃ “এবং গুপ্তচুরি করো না।” (আল হুজুরাত- ১২)
তাই হে আহমদ তুমি এক নিষিদ্ধ কাজ করছ এবং এ কাজে তুমি অপরকে সাহায্য করছ যা থেকে কুরআন নিষেধ করেছে।
এখানেই উনার মত ইমামদের সাথে আমাদের পার্থক্য…
যেদিন মুসলিমরা সকল গোঁড়ামি ত্যাগ করে উনার মত মানসিকতা অর্জন করতে পারবে, কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে চলতে পারবে সেদিন ইন শা আল্লাহ মুসলিমরা সম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে চলতে পারবে। সুখ শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। আল্লাহ আমাদেরকে সেই তাওফিক দান করুক। আমীন।

 

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88