ছিয়ামের রূহ!

ছিয়ামের রূহ! আমরা কি তার খোজ রাখি!

ছিয়ামের দুইটি রূপ, প্রথমটি প্রকাশ্য দ্বিতীয়টি গোপনীয়। প্রথমটি রোযার শরীর দ্বিতীয়টি রূহ! প্রথমটি ছোট রোযা দ্বিতীয়টি বড় রোযা। প্রথমটি সর্বস্তরের মানুষ পালন করতে পারে, কিন্তু দ্বিতীয়টি শুধু মাত্র মুমিন বান্দাই পালন করতে পারে; মুনাফিকরা কখনোই পারে না।
প্রথম প্রকার রোযার স্বরূপ আমরা সবাই জানি, আর তা হল: সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী মিলন থেকে বিরত থাকা। এই আমলটি করতে পারলেই আপনাকে রোযাদার বলা হবে।
এতে আপনি তারাবী, তিলাওয়াত, ছাদাকাহ না করলেও আপনাকে ছায়েম বলা হবে। এটি যদিও দীর্ঘ সময় পানাহার না করে কাটাতে হয়। তথাপী এটি খুব কঠিন কিছু নয়। আর তাই দেখা যায় নামাযীর সংখ্যার চাইতে রোযাদারের সংখ্যা অধিক। ছোট্র ছোট্র শিশুরাই শুধু নয়, সূদখোর, ঘুষখোর, বেনামাযী এমনকি মুনাফিক লোকও এই রোযা রেখে থাকে। এরা রোযার এই বাহ্যিক দিকটির দিকে দৃষ্টি দিয়েই যথেষ্ট মনে করে থাকে। কিন্তু রোযার রূহ বা আত্নাও যে আছে, তার কোন খবরই তারা রাখেনা। কিন্তু রূহানিয়াতের সন্ধান না পেলে তাদের ক্ষুধা ও পিপাসায় কষ্ট করা ছাড়া আর কোন ফায়েদা নেই।

রোযার দ্বিতীয় দিকটি হল রোযার রূহ। খুব খুব সম সংখ্যক লোক এর খোজ রাখে।
রোযার রূহ হল: রোযা রেখে শুধু পানাহার ও স্ত্রী মিলন থেকে নয়; বরং গোপন ও প্রকাশ্য সকল প্রকার মুহাররামাত, মাকরুহাত, মানহিয়্যাত বা সকল প্রকার পাপ থেকে বিরত থাকা। এমনকি অহেতুক কার্যকলাপ থেকেও বিরত থাকা। তার সাথে ইখলাস পূর্ণ ঈমান ও আল্লাহর কাছে পুরষ্কার লাভের ঐকান্তিক প্রত্যয় থাকা আবশ্যক। বেশী বেশী তিলাওয়াত, দান-সাদাকাহ করে, তাওবা, ইস্তিগফার, দুয়া,আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি ইত্যাদির মাধ্যমে রোযার রূহ সজিব থাকে।

siyamer ruh!
রোযার রূহ মারা যায় যে সব কারনে:
থাইল্যন্ডি, জুয়া, সূদ, ঘুষ, চুরি, ধোকাবাজী, অশ্লিল কথা, টিভির অশ্লিলতা, নেটের অশ্লিলতা, সময় ও অর্থ অপচয়, মানুষ হত্যা, মানুষকে কষ্ট দেয়া, গিবত, ঝগড়া ইত্যাদি।
রোযার রূহকে কুআরনের ভাষায় ‘তাক্বওয়া’ বলা হয়েছে। এই তাক্বওয়াই রোযার মূল উদ্দেশ্য।
বাহ্যিক রোযার ছাওয়াব পাওয়া না পাওয়া এবং হ্রাস ও বৃদ্ধি পাওয়া এই রূহানিয়াতের উপর নির্ভশীল। তাক্বওয়া তথা রোযার রূহকে মেরে ফেলা হলে ‘বাহ্যিক রোযা’র আর কোন গুরুত্ব বাকী থাকে না, এমনকি তাকে ‘প্রকৃত রোযা’ই বলা হয়নি।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: لَيْسَ الصِّيَامُ مِنَ الأَكْلِ وَالشُّرْبِ إِنَّمَا الصِّيَامُ مِنَ اللَّغْوِ وَالرَّفَثِ
শুধুমাত্র পানাহার ত্যাগের নাম রোযা নয়, প্রকৃত রোযা হল (সিয়াম অবস্থায়) বেহুদা ও অশ্লীল কথা এবং কাজ থেকে বিরত থাকা। (সহীহ ইবনু খুযাইমা)
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেছেন:
فَإِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلاَ يَرْفُثْ يَوْمَئِذٍ وَلاَ يَصْخَبْ فَإِنْ سَابَّهُ أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَهُ فَلْيَقُلْ إِنِّي امْرُؤٌ صَائِمٌ
তোমাদের মধ্যে কেউ যদি রোযা রাখে, সে যেন তখন অশ্লীল কাজ ও শোরগোল থেকে বিরত থাকে। রোযা রাখা অবস্থায় কেউ যদি তাকে গালাগালি ও তার সাথে মারামারি করতে আসে, সে যেন বলে “আমি সায়িম”। (মুসলিম-১১৫১)
হাদীছে আরো বলা হয়েছে: যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ এবং অজ্ঞতা থেকে মুক্ত হতে পারেনি সে ব্যক্তির শুধুমাত্র পানাহার বর্জনের (এ সিয়ামে) আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। (বুখারী-৬০৫৭)
রোযা’র রূহ জিন্দা আছে না মারা গেছে তা কি ভাবে বুঝা যাবে: প্রতিদিন রোযা রেখে প্রতিদিন ঈমান এবং তাক্বওয়ার চর্চা হচ্ছে কি না, নিজেকে নিক্ষুত ভাবে নিরিক্ষণ করলেই তা বুঝতে কারো কষ্ট হবে না।
গ্রন্থনা: আব্দুল্লাহ আল বাকী
পুর্ব জেদ্দা ইসলামী গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88