মুফতির পরিচয় ও গুণাবলী

আমাদের সমাজে মুফতি কথাটি বেশ প্রচলিত। সাধারণত বিভিন্ন কওমী মাদরাসা থেকে পাশ করা আলেমদেরকে মুফতি বলে। ইসলামী শারীআতে মুফতির পরিচয় কিছুটা ভিন্ন। মুফতির পরিচয় ও গুনাবলী সম্পর্কে এই ছোট পোস্ট।

সংজ্ঞা: মুফতি শব্দটির উত্পত্তি ফাতওয়া থেকে। সাধারণভাবে যিনি ফাতওয়া দেন তাকে মুফতি বলা হয়।  শারঈ হুকুম অনুযাযী যিনি প্রশ্নের জবাব প্রদান করেন তাকে ‘মুফতী’ বলা হয়। (লুগাতুল হাদীস)। আরো বৃহৎ পরিভাষায়, মুফতি বলতে ইসলামী শরীআহর ব্যাখ্যা দানকারীকে বুঝায় যিনি ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের উপর দক্ষ।

মুফতি বলতে সাধারণত ইসলামী আইন বিষয়ে দক্ষ ব্যক্তিকে বুঝায় যিনি শরীআহর বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং যিনি ইসলামী আইন বিষয়ে দক্ষ আলেমদের নিকট থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন।

সাধারণত এই স্তরে পৌছাতে ফিকহ, উসুলে ফিকহ, ফাতওয়ার কিতাব সহ অন্যান্য বিষয়ে দক্ষতা থাকা বাঞ্জনীয়।

আমাদের উপমহাদেশে কওমী মাদরাসায় সাধারণ আলিম কোর্সের পর পড়ানো হয়। কোর্স কমপ্লিট করার পর শিক্ষকদের কাছ থেকে ইজাজা (অনুমতিজ্ঞাপক) নেওয়া হয়।

একজন ইসলামী পন্ডিতও মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়েও ইসলাম বিষয়ে ফাতওয়া দিতে পারেন যদি তার মাঝে ইসলামের উপর প্রয়োজনীয় দখল খাকে। বিভিন্ন দেশে ফতোয়া বোর্ড বিদ্যমান। সেসব দেশের এই ফতোয়া বোর্ডের সদস্যদেরকে মুফতি বলা হয় আর এই বোর্ডের প্রধানকে গ্র্যান্ড মুফতি বলা হয়।

William Cleveland তাঁর  A History of the Modern Middle East বইয়ে মুফতির সংজ্ঞায় লিখেছেন, ইসলামী শরীআহ’র আইন সম্পর্কে দক্ষ যোগ্যতাসম্পন্ন আলিমের মতামতকে ফাতওয়া বলা হয়। মুফতি আলেমদের এই পরিষদের সদস্যদেরকে বলা হয়। কাযীদের উপরে তাদের স্থান।

মুফতির গুনাবলী:

  • আরবী ভাষা  ও সাহিত্যের উপর যথার্থ জ্ঞান থাকা।
  • পবিত্র  কুরআন ও সুন্নাহ সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান থাকা।
  • কুরআন ওসুন্নাহর বিধান দলীল সহকারে উপস্থাপন করার যোগ্যতা থাকা।
  • অন্যান্য ধর্ম সম্পর্কে ধারণা থাকা।
  • সামাজিক প্রেক্ষাপট ও সমসাময়িক আইন সম্পর্কে ধারণা থাকা।
  • ইসলামী আইন সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা।
  • চারিত্রিক গুণাবলী: তাক্বওয়া, সত্যবাদীতা, দূরদর্শিতা, ন্যায়পরায়ণতা, ধীশক্তি সম্পন্ন হওয়া।

দ্বীনি মাসআলা গ্রহণ করা সম্পর্কে তাবেই বিদ্বান ইবনে সীরিন (রহ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই কিতাব ও সুন্নাতের ইলম হচ্ছে দ্বীনের ভিত্তি। সুতরাং তোমরা লক্ষ্য কর যে, তোমাদের দ্বীন তোমরা কার নিকট থেকে গ্রহণ করছ। ( মুসলিম, মিশকাত হা/২৭৩)।

তিনি আরও বলেন, সুন্নাতের অনুসারী হলে তার বর্ণিত হাদীস গ্রহণযোগ্য হবে। বিদ’আতী হলে তার হাদীস গ্রহণ হবে না।

ফতোয়া গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক হতে হবে। ফতোয়া অবশ্যই কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক হতে হবে। নতুবা গ্রহণ করা যাবে না। কারও ফতোয়া কুরআন সুন্নাহর বিপরীত হলে তা বর্জন করে কুরআন সুন্নাহয় ফিরে আসতে হবে। আমাদের উচিত যোগ্যতা সম্পন্ন আলেমকেই ফতোয়া জিজ্ঞেস করা। এবং ফতোয়া অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে দলীলে ভিত্তিতে। কারণ কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

অতএব কাবীরাগা গুনাহগার ব্যক্তি যিনি তাওবাহ করেননি, তার ফতোয়া গ্রহণকরা থেকে আমাদরে বেঁচে থাকা কর্তব্য।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88