আমার মাসুদ ভাইয়া, সিরিজ ৩

বিষয়: আমার দুশ্চিন্তা !

গোধুলীর আকাশে সূর্যটা তখনও হলুদ বর্ণ ধারণ করে ছিল ৷ রাস্তাঘাটাও তাঁর হলুদ বর্ণের আভায় আলোকিত ৷ এমনিতেই গ্রীষ্মকাল ৷ সকালে প্রচন্ড রৌদ্রে মাথার চাঁদি ফেঁটে যাওয়ার উপক্রম হয় ৷ মানুষ সাধারণত এই গ্রীষ্মকালে বিকেলের দিকে একটু স্বস্তি বোধ করে ৷ তবে আজ যেন আমার সব স্বস্তি দূর হয়ে গেছে, কিছুতেই নিজেকে মানাতে পারছি না ৷ এই গোধূলীকালেও যেন কাঁক ফাটা রোদের সবটুকু আমার গায়ে এসে পরেছে ৷ তবুও হাঁটছি আর হাঁটছি ৷

ফিরছিলাম ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস থেকে ৷ আজ আমার অস্বস্তির মূল কারণ হল, আজ যখন ক্লাস শেষে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য বসলাম তখন পাশে থাকা একজন বন্ধু আমাকে বলল, ‘দেখেছিস মেরাজ ! আজকের মুসলমানদের অবস্হা কি ! আল্লাহর প্রতি তারা বিশ্বাসের সে গঠন রচনা করেছে তাও কতটা অনির্ভযোগ্য, ফাল্ত এবং পবিত্র কোরআন ও হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক !

আমি বললাম, যেমন ! সে বলল, ‘এই ধর ! আজ আমরা বলি, আল্লাহ নিরাকার ৷ কিন্তু কোরআন ও হাদীস বলছে আল্লাহর আকার আছে ৷’ আমি একটু রেগে গিয়ে বললাম, ‘এই শোন ! এইসব কথা কখনও আমাকে বলতে আছিস না ৷ এখন তোদের মত কিছু নতুন মুসলমানরা আল্লাহর সম্মান ভূলে তারে অপমানের যত পন্থা হাজির করা শুরু করেছিস ৷’ এভাবে বন্ধুর সাথে এক কথা দু কথা বলে বন্ধুদেরকে আড্ডায় বসা অবস্হায় রেখে ক্যাম্পাস থেকে প্রস্হাণ করলাম ৷ কিন্ত তবুও যেন আমার মাথায় ঐ কথাটাই শুধু ভেসে বেড়াচ্ছে ৷ কিছুতেই যেন স্বস্তি পাচ্ছি না ৷

বাড়ির কাছাকাছি আসতেই মনে পড়ল আমার মাসুদ ভাইয়ার কথা ৷ উনি জেনারেল শিক্ষিত বটে ৷ কিন্তু সবসময় আমি উনাকে কোরআন ও সুন্নাহ চর্চা করতে দেখি ৷ ছোট থেকেই উনি আমাদের কোরআন শিখিয়েছেন ৷ বড় বড় আলেমদের সাথে উনার উঠাবসা, তাঁদের সম্মান করা, দলীলের ভিত্তিতে তাঁদের ফতোয়াগ্রহণকে গুরুত্ব দেওয়া, পাশাপাশি কোরআনকে আমাদের সামনে তুলে ধরার মত উপস্হাপনা ইত্যাদি সত্যিই আমাকে খুব মুগ্ধ করে ৷ আর যখন তিনি কোরআন শিখাতেন বা এখনও যখন কোরআনের বিভিন্ন কথা আমাদের সামনে উপস্হাপন করেন যেন মনে হয় এক বিরাট সমুদ্র থেকে পানি সংগ্রহ করছি ৷

যাইহোক, অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম যে ভাইয়াকেই প্রশ্নটা করে দেখব ৷ উনিই এর বস্তুনিষ্ঠ জবাব দেবেন বলে আমার বিশ্বাস ৷

বাড়িতে ঢুকেই wash room থেকে ফ্রেশ হলাম ৷ অতঃপর কাপড় চেন্জ করে খেয়ে দেয়ে ভাইয়ার অপেক্ষা করতে লাগলাম ৷ মাগরিবের কাছাকাছি সময় তখন ৷ মাকে জিজ্ঞেস করলাম, মা ! ভাইয়ার কি আসতে আজ দেরি হবে ৷ মা বলল,’ তোর ভাইয়া আসতে আসতে মাগরিবের পর ৷ কিন্তু কেন ? ‘ আমি বললাম, না মা ! এমনিতেই ৷’

এরপর ভাইয়া এল ৷ তাঁর সাথে কথা বলা শুরু করতে করতে এশার সময় হয়ে এল ৷ এরপর সালাত শেষ করে যখন বাড়িতে আসলাম তখন ভাইয়া আর আমি ভাইয়ার ঘরে বিছানায় গিয়ে বসলাম ৷ অতঃপর বললাম, ‘ভাইয়া ! আজ আমি একটি বিষয় নিয়ে খুব টেনশনে আছি ৷ তোমার কাছে সেই বিষয়ের সমাধান চাচ্ছি ৷ ‘

মাসুদ ভাইয়া: তো ভাই আমার ! কি সমস্যা তোর বল ৷ আল্লাহ আমাকে যতটুকু তৌফিক দেবেন ততটুকু solve করার চেষ্টা করব ৷

আমি: ভাইয়া আমার প্রশ্নটা হচ্ছে ‘আল্লাহর কি সত্যিই আকার আছে’ ? এই বিশ্বাসটা কি তাঁর জন্য অপমানজনক নয় ?

মাসুদ ভাইয়া: হা হা হা ! অহ ! আচ্ছা এই তোর প্রশ্ন !

আমি: হ্যাঁ ভাইয়া ! এই টেনশনেই বিকেলেও এত হাঁপাচ্ছিলাম যেন মনে হচ্ছিল পুরো কাঁক ফাঁটা রোদ আমার মাথার চাঁদির উপর ভর করেছে !

মাসুদ ভাইয়া: আহা ! আমার ভাই কতইনা কষ্ট পেয়েছে ৷ তো ভাই প্রশ্নের উত্তরটি বলার আগে কিছু কথা মনে রাখা প্রয়োজন

আমি : কি ভাইয়া !

মাসুদ ভাইয়া : হুম ..বলছি ৷ শোন !

১৷ কথা বলার সময় মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে

২৷ পাল্টা প্রশ্ন করা যাবে না

৩৷ আমি কোন প্রশ্ন করলে হ্যাঁ অথবা না বা এইরকম কোন এক শব্দে উত্তর দিতে হবে

আমি: আচ্ছা ! ঠিকাছে ভাইয়া বল !

মাসুদ ভাইয়া : আমরা এখানে কোরআন ও সুন্নাহর মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা করার চেষ্টা করব ! প্রথমেই আমরা দেখব আল্লাহর আকার আছে কিনা ! প্রথমে আমরা একটি হাদীসের দিকে নজর দেব ৷ হাদীসটি হল: রাসূলুল্লাহ (صلي الله عليه وسلم ) বলেছেন,

-يجمع الله الناس فيقول من كان يعبد شيئا فليتبعه فيتبع من كان يعبد الشمس ويتبع من كان يعبد القمر ويتبع من كان يعبد الطواغيت وتبقي هذه الامة فيها منافقوها فياتيهم الله في غير الصورة التي يعرفون فيقول انا ربكم فيقولون نعوذ بالله منك هذا مكاننا حتي ياتبنا ربنا فاذا اتانا ربنا عرفناه فياتيهم الله في الصورة التي يعرفون فيقول انا ربكم فيقولون انت ربنا فيتبعونه ويضرب خسر جهنم –

“কিয়ামতের দিন আল্লাহ মানুষকে একত্রিত করে বলবেন: যে যাকিছুর ইবাদত করত সে যেন তার অনুসরণ করে ৷ অতঃপর যারা সূর্যের ইবাদত করত তারা সূর্যের অনুসরণ করবে, যারা চন্দ্রের ইবাদত করত তারা চন্দ্রের অনুসরণ করবে আর যারা তাগুতের ইবাদত করত তারা তাগুতের অনুসরণ করবে ৷ অতঃপর বাঁকি থাকবে এই উম্মতের লোকেরা যাদের মধ্যে মুনাফিকরাও শামিল থাকবে ৷ অতঃপর আল্লাহ তাদের সামনে এমন এক আকৃতিতে আসবেন যে আকৃতির সঙ্গে তারা পরিচিত ছিল না বা জানত না ৷ অতঃপর বলবেন, আমি তোমাদের রব ৷ তারা বলবে, আমরা আল্লাহর কাছে তোমার থেকে আশ্রয় চাচ্ছি ৷ আমাদের রব না আসা পর্যন্ত আমরা এ স্হানেই থেকে যাব (অর্থাৎ আমরা তোমার অনুসরণ করব না) ৷ যখন আমাদের রব আমাদের কাছে আসবেন তখন আমরা তাঁকে চিনে নেব ৷ অতঃপর আল্লাহ তাদের সামনে সেই আকৃতিতে আসবেন যে আকৃতির সঙ্গে তাঁরা পরিচিত ছিল ৷ অতঃপর বলবেন, আমিই তোমাদের রব ৷ তারা বলবে, (হ্যাঁ) আপনিই আমাদের রব ! অতঃপর তারা সবাই তাদের রবের অনুসরণ করবে এবং জাহান্নামের পূল স্হাপন করা হবে ৷”(সহীহ বুখারী, অধ্যায় ৮১: সদয় হওয়া, অনুচ্ছেদ ৫২, হাদীস ৬৫৭৩, হাদীস ও পর্বের নম্বরবিন্যাস: মুহাম্মদ বিন হাজ্জাজ)

তাহলে এই হাদীস থেকে আমরা বুঝলাম যে , সবশেষে মহান আল্লাহ ঐ আকৃতিতে আসবেন যে আকৃতির ব্যাপারে ইতোপূর্বে তথা দুনিয়াতে কোরআন ও সুন্নাহর মাধ্যমে মুমিনরা পরিচিত ছিল ৷ অর্থাৎ আল্লাহর আকৃতি আছে এটি একটি সুপ্রতিষ্ঠিত ইসলামি বিশ্বাস !

আর এখানে صورة শব্দের অর্থ হল আকৃতি ৷ (দেখুন, আল-মুনীর আরবী-বাংলা অভিধান, ড ফজলুর রহমান, পৃষ্ঠা ৫৪১অথবা দেখুন একই লেখকের বই, আল-মু’জিমুল ওয়াফী, পৃষ্ঠা ৬৩৭ )

আর এই শব্দের সাথে ال যুক্ত হয়ে الصورة শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে ৷ যার অর্থ হল আল্লাহর আকৃতি আছে এটি একেবারেই সুনির্দিষ্ট ৷

তাই আমরা দেখি পবিত্র কোরআন ও সহীহ হাদীসে আল্লাহ সত্তার বিভিন্ন পরিচয় তুলা ধরা হয়েছে ৷ যেমন:

আল্লাহর হাত আছে

تبٰرك الذي بيده الملك – وهو علي كل شيء قدير ٥

“কতই না বরকতময় তিনি যার হাতে রাজত্ব ৷ তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান ৷”(সূরা মূলক ৬৭:১)

وما قدروا الله حق قدره – والارض جميعا قبضته يوم القيٰمة والسموت مطويت بيمينه- سبحٰنه وتعلي عما يشركون

“তারা আল্লাহর যথাযোগ্য মর্যাদা বোঝেনি ৷ কেয়ামতের দিন সমস্ত পৃথিবী আল্লাহর মুঠিতে থাকবে আর সমস্ত আসমান ভাঁজ করা অবস্হায় তাঁর ডান হাতে থাকবে ৷ আর তাঁরা যাকে শরীক করে তা থেকে তিনি অত্যন্ত পবিত্র এবং বহু ঊর্ধ্বে ৷”(সূরা যুমার ৩৯:৬৭)

তাহলে এই আয়াতে আল্লাহর হাত আছে এই কথা বলার পাশাপাশি আরও বলছে তাঁর হাতের মুষ্ঠিও আছে, তাঁর ডান হাতও রয়েছে ৷ হাদীস থেকে আমরা আরও জানতে পারি আল্লাহর বাম হাতও রয়েছে ৷ তাঁর হাত দুটি, তাঁর হাতের আঙ্গুল রয়েছে ৷

এই বলে ভাইয়া জগ থেকে পানি ঢাললেন, অতঃপর চুমুক দিয়ে পর পর তিন ঢোকে সমস্ত পানি শেষ করে ফেললেন ৷ অতঃপর আবার বলা শুরু করলেন ৷ —

যেমন:

আল্লাহর আঙ্গুল নিয়ে বলা একটি হাদিস

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) বলেন,

جاء حبر الي النبي صلي الله عليه وسلم فقال يا محمد او يا ابا القاسم ان الله يمسك السموات يوم القيامة علي اصبع والارضين علي اصبع والجبال والشجر علي اصبع والماء والثري علي اصبع وسائر الخلق علي اصبع ثم يهزهن فيقول انا الملك انا الملك فضحك رسول الله صلي الله عليه وسلم تعجبا مما قال الحبر تصديقا له ثم قرا “(وما قدروا الله حق قدره- والارض جميعا قبضته يوم القيامة والسموات مطويات بيمينه- سبحانه وتعالي عما يشركون) . –

” এক ইহুদী পাদ্রী নবী (صلي الله عليه وسلم) কাছে এসে বলল, হে মুহাম্মদ বা হে আবুল কাসেম ! নিশ্চয় আল্লাহ কেয়ামতের দিন সমস্ত আসমান সমূহকে এক আঙ্গুলে সমস্ত যমীনকে এক আঙ্গুলে , পাহাড়সমূহ ও গাছ-পালাসমূহকে এক আঙ্গুলে, সমস্ত পানি ও মাটিকে এক আঙ্গুলে এবং সকল প্রকার সৃষ্টিকে এক আঙ্গুলে ধারণ করবেন ৷ অতঃপর সেগুলোকে দুলিয়ে বলবেন, ‘আমিই বাদশাহ ! আমিই বাদশাহ !’ পাদ্রীর কথা শুনে রাসূলুুল্লাহ (صلي الله عليه وسلم ) বিষ্ময়ের সাথে হাসলেন, অতঃপর তাঁর কথার সত্যতা স্বরূপ এই আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন:

وما قدروا الله حق قدره- والارض جميعا قبضته يوم القيامة والسموات مطويات بيمينه- سبحانه وتعالي عما يشركون

(যার অর্থ:’তারা আল্লাহর যথাযোগ্য মর্যাদা বোঝেনি ৷ কেয়ামতের দিন সমস্ত পৃথিবী আল্লাহর মুঠিতে থাকবে আর সমস্ত আসমান ভাঁজ করা অবস্হায় তাঁর ডান হাতে থাকবে ৷ আর তাঁরা যাকে শরীক করে তা থেকে তিনি অত্যন্ত পবিত্র এবং বহু ঊর্ধ্বে ৷'(সূরা যুমার ৩৯:৬৭)” ৷ (সহীহ মুসলিম, অধ্যায় ৫২, হাদীস ২৭৮৬, হাদীস ও পর্বসূচীর নম্বরবিন্যাস: ফুয়াদ আব্দুল বাক্বী)

আবার নিচের হাদিস থেকে দেখেতে পাই, বলা হয়েছে আল্লাহর ডান হাত ও বাম হাত রয়েছে ৷

আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলুল্লাহ (صلي الله عليه وسلم) বলেছেন,

يطوي الله عز وجل السموات يوم القيامة ثم يأخذهن بيده اليمني ثم يقول انا الملك ايم جبارون ؟ اين المتكبرون؟ ثم يطوي الارضين بشماله ثم يقول انا الملك اين جبارون؟ اين المتكبرون –

“আল্লাহ عز وجل কিয়ামতের দিন সমস্ত আসমানকে গুঁটিয়ে নেবেন, অতঃপর সেগুলোকে ডান হাতে ধারণ করে বলবেন, ‘আমিই বাদশাহ ! দুনিয়ার প্রতাপশালীরা আজ কোথায় ! দুনিয়ার অহংকারীর আজ কোথায় !’ অতঃপর সমস্ত যমীনকে তাঁর বাম হাতে গুঁটিয়ে বলবেন, ‘আমিই বাদশাহ ! দুনিয়ার প্রতাপশালীরা আজ কোথায় ! দুনিয়ার অহংকারীর আজ কোথায় !’৷ ” (সহীহ মুসলিম, অধ্যায় ৫২, হাদীস ২৭৮৮, হাদীস ও পর্বসূচীর নম্বরবিন্যাস: ফুয়াদ আব্দুল বাক্বী)

এমনিভাবে নিচের হাদীস থেকে জানতে পারি আল্লাহর হাত দুটি, তিনি তাঁর আঙ্গুলকে সংকোচন ও প্রসারণ করে থাকেন:

আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলুল্লাহ (صلي الله عليه وسلم ) বলেন,

ياخذ الله عز وجل سمواته وارضيه بيديه فيقول انا الله ويقبض اصابعه ويبسطها- انا الملك—

“(কিয়ামতের দিন ) আল্লাহ عز وجل সমস্ত আসমান ও যমীনকে তাঁর দুই হাতে ধারণ করে বলবেন: আমিই আল্লাহ ! এবং তাঁর আঙ্গুলসমূহকে সংকোচন ও প্রসারণ করে বলবেন: আমিই বাদশাহ ! ” (সহীহ মুসলিম, অধ্যায় ৫২, হাদীস ২৭৮৮, ২৫/…. হাদীস ও পর্বসূচীর নম্বরবিন্যাস: ফুয়াদ আব্দুল বাক্বী)

এছাড়াও আমরা আল্লাহর সত্তার পরিচয় সম্পর্কে আরও অনেক কিছু জানতে পারি ৷

যেমন:

আল্লাহর চেহারা আছে:

كل من عليها فان ٥ ويبقي وجه ربك ذو الجلل والاكرام ٥

“ভূপৃষ্ঠের সবকিছুই ধ্বংসশীল ৷ কেবল মহামহিমাময় ও মহা সম্মানিত রবের চেহারা ছাড়া ৷”(সূরা রহমান ৫৫:২৬-২৭)

আল্লাহর চোখ আছে,

تجري باعيننا جزاء لمن كات كفر ٥

“এটা চলত আমার চোখের সামনে ৷ এটা তাঁর পক্ষ থেকে প্রতিশোধ ছিল যাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল ৷”(সূরা ক্বমার ৫৪:১৪)

আরও বলতে পারি আল্লাহর পা আছে ৷ তাঁর পায়ের নলা আছে ৷ যেমন পায়ের নলা সম্পর্কে বলা হয়েছে

يوم يكشف عن ساق ويدعون الي السجود فلا يستطيعون ٥

“সেদিন পায়ের নলা উন্মুক্ত করা হবে এবং তাদেরকে সেজদা করতে আহ্বান জানানো হবে অথচ তারা সক্ষম হবে না ৷”(সূরা ক্বালাম ৬৮:৪২)

এভাবে আল্লাহর আকারের বিষয়টি নিয়ে আরও অনেক দলীল পেশ করা যেতে পারে ৷ তবে আল্লাহর আকার আছে এই বিশ্বাসের ক্ষেত্রে কিছু মূলনীতি মনে রাখতে হবে ৷

তা হল

قل هو الله احد ٥ الله الصمد ٥ لم يلد ولم يولد ٥ ولم يكن له كفوا احد ٥

“তিনিই আল্লাহ, যিনি একক ও অদ্বীতিয় ৷ আল্লাহ কারও মুখাপেক্ষী নন ৷ তিনি কাউকে জন্ম দেননি ৷ কারও দ্বারা জন্ম নেননি ৷ এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই ৷”(সূরা ইখলাস ১১২:১-৪)

ليس كمثله شيء-

“তাঁর মত কোন কিছুই নেই ৷”(সূরা শু’রা ৪২:১১)

এই আলোচনার ভিত্তিতে আমরা নিম্নোক্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারি ৷ যথা:

১৷ তাঁর আকার কেমন তা কেবল তিনিই ভাল জানেন ৷

২৷ আল্লাহর গঠন কিরূপ এ সম্পর্কে অন্য কেউ অবগত নয় ৷

৩৷ তাঁর গঠন তেমনিই যেমনটি তাঁর সত্তা ও গুনাবলির সাথে মানানসই

৪৷ তাঁর আকারের স্বরূপ কেমন তা কারও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয় নয়

৫৷ তাঁর আকৃতি কেবল তাঁর জন্যই সুনির্ধারিত ৷ মানুষ বা অন্য কোন সৃষ্টির আকার থেকে তাঁর আকার সম্পূর্ণ পৃথক ও অত্যন্ত পবিত্র ৷

৬ ৷ আর তাকে নিরাকার বলা মানে হল তাঁর সত্ত্বাকে অস্বীকার করা

৭৷ যার আল্লাহর আকৃতি বানিয়ে পূজা করে তাঁরা আল্লাহর সাথে শিরক করে ৷

৮৷ তাঁর আকৃতির স্বরূপ সম্পর্কে কোন রকম প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না ৷ কোরআন ও হাদীসে যতটুকু আছে কেবল ততটুকুই বিশ্বাস করতে হবে ৷

আর ভাই আরেকটি কথা ৷

আমি: কি ভাইয়া বল ?

মাসুদ ভাইয়া: আচ্ছা ! বলতো তুই কিসে সম্মানবোধ করবি তা কি তোর চাইতে আমি বেশী বুঝব ?

আমি: না !

মাসুদ ভাইয়া: তাহলে একইভাবে যিনি মহাজ্ঞানী, যিনি আমাদের একমাত্র রব, আমাদের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা তাঁর সম্মানের ব্যাপারটিও একমাত্র তিনিই ভাল বুঝবেন অন্য কেউ নয় ৷

এরপরও কেউ যদি ‘আল্লাহর আকার আছে এটা বিশ্বাস করা কি তাঁর মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করে না ‘ এমন প্রশ্ন করে তবে তা হবে নিতান্তই বোকামী ৷

সেদিন আলোচনা যখন এই পর্যন্ত এলো ঘড়িতে তখন রাত ১০:১৫ পার হয়ে গেছে ৷ আলোচনা শেষ হলে কিছুক্ষণ পর আমি ও মাসুদ ভাইয়া দুজন একটু ছাঁদে গেলাম ৷ দেখলাম কি সুন্দর পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে ৷ যেন তা আমাদের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে ৷

হঠাৎ এক মায়াভরা চাহুনীতে ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল, জানিস ভাই ! এমনি এক পূর্ণিমার জোৎস্না ভরা চাঁদনি রাতে মুমিনগণ আল্লাহকে দেখতে পাবে কোন রকম ভীরের সম্মুখীন হওয়া ছাড়াই !

আমি: কি বলছ ভাইয়া !

মাসুদ ভাইয়া: হুম ়়়়৷

জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) বলেন,

كنا عند رسول الله صلي الله عليه وسلم فنظر الي القمر ليلة.البدر وقال انكم سترون ربكم عيانا كما ترون.هذا القمر لا تضامون في رؤيته –

” একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ (صلي الله عليه وسلم) এর সাথে ছিলাম ৷ হঠাৎ তিনি পূর্ণিমার রাতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, শোন ! নিশ্চয়ই তোমরা অতি শীঘ্রই তোমাদের রবকে স্পষ্টভাবে দেখতে পাবে যেভাবে তোমরা এই চাঁদকে স্পষ্ট দেখছ ৷ তাঁকে দেখতে তোমরা কোন ভীরের সম্মুখীন হবে না ! “(সহীহ বুখারী ও মুসলিম; রিয়াদুস সালেহীন ১৯০৪)

নবী (صلي الله عليه وسلم ) আরও বলেছেন,

جنتان من فضة انيتهما وفيهما وجنتان من ذهب انيتهما وفيهما وما بين القوم وبين ان ينظروا الي ربهم الا رداء الكبرياء علي وجهه في جنة عدن—

“দুটি জান্নাত এমন যার পাত্রসমূহ ও অন্যান্য সামগ্রী রূপার তৈরি ৷ আর দুটি জান্নাত এমন যার পাত্রসমূহ ও অন্যান্য সামগ্রী স্বর্ণের তৈরি ৷ আর ‘আদন’ নামক জান্নাতে জান্নাতীরা আল্লাহর দর্শন লাভ করবে ৷ তখন তাঁদের ও আল্লাহর মাঝে আল্লাহর মহিমাময় চাঁদর ব্যাতিত আর কোন অন্তরায় থাকবেনা ৷”( সহীহ মুসলিম, অধ্যায় ১:ইমান পর্ব, অনুচ্ছেদ ৮০, হাদীস ১৮০)

তিঁনি আরও বলেন,

إذا دخل الجنة الجنة قال يقول الله تبارك وتعالي تريدون شيئا ازيدكم فيقولون الم تبيض وجوهنا الم تدخلنا الجنة.وتنجنا من النار قال فيكشف الحجاب فما اعطوا شيئا احب اليهم من نظر الي ربهم عز وجل—

” যখন জান্নতিরা জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন আল্লাহ তাবারাকা তাআ’লা বলবেন, তোমরা কি চাও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ আরও বাড়িয়ে দেই ৷ তারা বলবে, তুমি কি আমাদের চেহারাকে আলোকজ্জ্বল করনি, আমাদেরকে জান্নাতে দাখিল করনি, আমাদের জাহান্নাম থেকে রক্ষা করনি ৷ নবী (صلي الله عليه وسلم) বলেন, অতঃপর মহান আল্লাহ তাআ’লা আবরণ তুলে নেবেন ৷ মহান রব আল্লাহ আযযা ওয়াজল্লার দর্শনের চাইতে অধিক পছন্দীয় আর কিছুই তাদের দেয়া হবে না ৷”( সহীহ মুসলিম, অধ্যায় ১:ইমান পর্ব, অনুচ্ছেদ ৮০, হাদীস ১৮১ )

মা হঠাৎ নিচ থেকে ফোন দিলেন, ” এই কিরে ! কোথায় তোরা ! ভাত খেতে হবে না “৷

— হ্যাঁ মা এইতো এখনি আসছি ৷

এই বলে দুজনেই সিঁড়ি বেঁয়ে নামতে লাগলাম ৷

আমার দুশ্চিন্তা/মেরাজুল ইসলাম প্রিয়

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

১টি মন্তব্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
slot online skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 rtp slot slot bonus new member skybet88 mix parlay slot gacor slot shopeepay mix parlay skybet88 slot bonus new member