কুরবানীর যৌক্তিকতা

রচনায় : মুহাম্মাদ মুকাম্মাল হক আল-ফায়যী,

অনার্স, কুরআন-হাদীস, কিং সউদ ইউনিভার্সিটি, রিয়ায, সউদীআরব।

গ্রাম+পোঃ- নূরপুর, বীরভূম ৫/২/২০১১ খ্রিঃ

আল্লাহর শত-কোটি প্রশংসা, যিনি আমাদেরকে বিবেকবান মানুষ হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। রাসূল প্রেরণ করে সকল প্রকার শিরক বিদআত হতে সতর্ক করে কেবল তাওহীদ ও সুন্নাতের অনুসারী করেছেন। অতঃপর শত কোটি শান্তির ধারা বর্ষিত হোক আমাদের শেষ নবী মুহাম্মাদ (সাঃ), তাঁর পরিবার এবং সাহাবাগণের উপর।

সংবাদ প্রতিদিন ১৪/১১/১০ রবিবার প্রকাশিত, সানোয়াজ খান কর্তৃক লিখিত ‘সামাজিক কল্যাণে খরচ হোক কোরবানির অর্থ’ লেখাটি পড়লাম।

মুসলমানদের এই দুর্দশা দেখে আমার খুবই দুঃখ হয়। এর কারণ ধর্মীয় জ্ঞানের অভাব ও ঈমানী দুর্বলতা। কথায় বলে, ‘অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী। তার মধ্যে সানোয়াজ খান একজন, ইসলামী জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ছাড়াই আবোল-তাবোল লিখে পত্রিকায় ছাপিয়ে দিয়ে ইসলামী চিন্তাবিদের আসন গ্রহণ করে বসেছেন।

জনাব সনোয়াজ খান! আপনি কুরবানীর অর্থ সামাজিক কল্যাণে খরচ করার দাবী জানিয়েছেন, তার সাথে ভূমিকায কুরবানী সম্পর্কে কিছু অসংগত শব্দও ব্যবহার করেছেন। যেমন ‘অর্থহীন’, ‘অকেজো’, অপ্রয়োজনীয়’, ‘অন্ধত্ব’, ‘অন্ধ অনুকরণ’, ‘কুসংস্কার’, ‘সেকেলেপনা’ ইত্যাদি।

আসলে আপনি এ বিষয়ে অজ্ঞ। কেমন করে তা শুনুন—

১। অন্ধত্ব, অন্ধানুকরণ কাকে বলে জানেন? যে ব্যক্তি কোন রকম দলীল প্রমাণ ছাড়া অন্ধের ন্যায় পথ চলে, তাকেই বলে অন্ধত্ব বা অন্ধানুকরণ। এই রোগের শিকার আপনি নিজেই, কারণ আপনি কোন রকম দলীল প্রমাণ ছাড়াই মাঠে হাড়ি ভেঙ্গে দিলেন। কুরবানীর প্রমাণ ধর্মীয় গ্রন্থে বিদ্যমান।

আবু হুরাইরাহ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আর্থিক সচ্ছলতা পেয়ে কুরবানী করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস সহীহ)

যে কর্মের প্রমাণ আছে, তা কোনদিন অন্ধ অনুকরণ হতে পারে না।

২। কুরবানীর জন্য খরচ করাটা আপনাকে মূল্যহীন অনর্থক মনে হয়েছে বলেই তার অর্থ সামাজিক কল্যাণে খরচ করার দাবি করেছেন। আমি বলব, কুরবানী যদি অনর্থক, মূল্যহীন বা অপচয় হয়, তাহলে ইসলামে আরো অনেক বিষয় আছে, যা বাহ্যিকভাবে অপচয় মনে হয়।

যেমন, হজ্জ যাতে মুসলিমগণ লাখ-লাখ টাকা খরচ করেন, সময়ও ব্যয় হয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায়ে সময় নষ্ট হয়। প্রতি ওয়াক্তে কম পক্ষে ৩০ মিনিট করে সময় লাগে। ৩০ কে ৫ দিয়ে গুণ করলে মোট সময় হয় ২,৩০ মিনিট। তাহলে এগুলোও বাদ দিয়ে অন্য কিছু করতে হয়!! আপনাদের মত ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে চললে ইসলাম শেষ!!

৩। কুসংস্কার : পশ্চিমা দেশের লোকেরা ইবাদতের উদ্দেশ্য ছাড়া লক্ষ লক্ষ গরু-ছাগল, ভেড়া খায়, এই আচরণকে আপনি কী বলবেন? মুসলমানদের ইবাদতের উদ্দেশ্যে বছরে একবার কুরবানী দেওয়াটা কি কেবল কুসংস্কার?!

৪। সেকেলেপনা : অনেকে ধর্মের কর্ম, যেমন পর্দা, সালাম বিনিময়, গাটের উপরে প্যান্ট পড়া ইত্যাদিকে ঘৃণা করে এবং বলে, ‘এসব সেকেলেপনা, কুসংস্কার’। তাদের মত আপনিও। এত বাহাদুরি কিসের? আল্লাহর বিধানকে সেকেলেপনা বলে ঘৃণা করেছেন, আর ভাবছেন বর্তমানে আমরা অনেক নতুন কিছু আবিষ্কার করেছি, তাই ধর্ম-কর্ম সেকেলে।

আমি বলব, সারা পৃথিবীটা সেকেলে, চন্দ্র-সূর্য সেকেল, মেয়েদের গর্ভে বাচ্চা ধারণ, গাভীর দুধ দান ইত্যাদি সেকেলে, এগুলো পরিবর্তন করে আধুনিক নিয়ে আসুন দেখি।

৫। মানুষের ন্যায় নীতি ও বিচার বুদ্ধি জাতীর চূড়ান্ত ফয়সালা : আপনার এই কথা একেবারে ভিত্তিহীন ও বাস্তব বিরোধী। মানুষের ন্যায়-নীতি, বিচার বুদ্ধি, এগুলো কোথা থেকে অর্জিত হবে চিন্তা করেছেন? জগতের জন্য তা চূড়ান্ত ফয়সালা হওয়ার কথা অনেক দূরের। বর্তমানে বিশ্বের মানুষ ন্যায়-নীতির কাঙ্গাল, যুলুম অত্যাচারের শিকার, তারা ন্যায়-নীতির অভাবে সুবিচার পাচ্ছে না। এটিই বাস্তব, যা আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না। মানুষকে ন্যায়নীতি শিক্ষা দেওয়ার জন্য ঐশীবাণীর প্রয়োজন। সেটিই জগতের চূড়ান্ত ফয়সালা, মানুষের নিজস্ব কোন নীতি নেই, তাকে যে পরিবেশে রাখা হবে সেইভাবে গড়ে উঠবে। সৃষ্টিকর্তা ভাল জানেন কোন নীতিতে মানব জাতির মঙ্গল আছে। কারণ, তিনিই তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। যেমন, গাড়ী প্রস্তুতকারক গাড়ী চালানোর নীতি ভাল করে জানে। আর সে জন্যই দেখা যায় ইলেকট্রনিক্সের কোন কিছু ক্রয় করা হলে তাতে ক্যাটালগ থাকে।

৬। ধর্মের নিয়মাবলী পালনের ক্ষেত্রে শুধু আত্মিক দিক নয়, সামাজিক প্রেক্ষাপটও চিন্তা করা উচিত।

উক্ত কথায় মনে হচ্ছে, আপনি ইসলাম ধর্মের পরিপূরক। ইসলাম যেন মুসলিমদের সামাজিক প্রেক্ষাপটের দীক্ষা দেয়নি, চিন্তা করতে বলেনি। অথচ ইসলামে অধিকাংশ বিধান কর্ম আত্মিক নয়, বাস্তব। ইসলাম কেবল ইবাদাতের নাম নয়, বরং তা একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, শাসন ব্যবস্থা তাতে আছে। নেই শুধু এ বিষয়ে আপনার জ্ঞান।

৭। ইসলাম ধর্মের কোরবানী সেই একটি ধর্মীয় আচার যার মধ্যে ত্যাগের থেকে আবেগই বেশি।

এ তথ্যটাও ভুল। কুরবানীর মধ্যে আবেগ নেই, ষোলো আনাই ত্যাগ। এর পিছনে যে ঘটনাটি আছে সেটি ত্যাগ শিক্ষার প্রতীক। ত্যাগ শিক্ষার জন্য আল্লাহ বিধানটি আমাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে ইব্রাহীম (আঃ) নিজ শিশু ইসমাঈল (আঃ)-কে কুরবানী করতে উদ্যত হয়েছিলেন। এটি পরীক্ষামূলক। তিনি এ পরীক্ষায় পাশ করেছিলেন। তাঁর এই ত্যাগের শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে কুরবানীর বিধান বজায় রাখেন। তবে শিশু নয়, পশুর। এটি আল্লাহর পক্ষ হতে আমাদের প্রতি দয়া।

৮। কোরবানী কেবল আচার পালন আর অন্ধ অনুকরণ ছাড়া আর কিছু নয়ঃ

কুরবানী পালন, আচার পালন নয় এবং অন্ধ অনুকরণও নয় বরং এটি অহীর বাণী দ্বারা প্রমাণিত। কেবল যারা দ্বীন-কানা, তারা দেখতে পায় না বলেই কুরবানী পালনকে আচার পালন বলে এবং অন্ধ অনুকরণ বলে।

৯। মুসলমানদের কোরবানী বাধ্যতামূলক নয়। আপনার এই ফতোয়া অসম্পূর্ণ। এ বিষয়ে মতভেদ আছে, ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) ও তাঁর সঙ্গীগণ বলেন, ‘বছরে একবার ওয়াজিব’। হানাফী ছাড়া অন্যান্যরা বলেন, সেটি সুন্নাত, ওয়াজিব নয়।’ (আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহ ৪/২৪৫)

ক্ষণেকের জন্য মেনে নিলাম যে, বাধ্যতামূলক নয়। তাহলে বলব, যে বিষয়টি বাধ্যতামূলক নয়, তার অর্থ থেকে তহবিল তৈরীও বাধ্যতামূলক নয়। তাহলে এ নিয়ে এত মাথা-ব্যথা কেন? সামাজিক উন্নয়নকল্পে সাধারণ চাঁদার মাধ্যমে তহবিল তৈরী করুন।

১০। এখনো বেশির ভাগ বিত্তবান মুসলিম সূদের উপর ঋণ গ্রহণ করছে। …….. অনেক ক্ষেত্রে সেই সূদের টাকাতেই পশু কোরবানি করছে। হেলায় সূদ সংক্রান্ত শরিয়তি বিধি-বিধানকে তারা অমান্য করছে …………….।

আপনার এই কথার ভিত্তিতে যদি কোরবানী বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং সেই টাকাতে তহবিল তৈরী করা হয়, তাহলে তো সূদের টাকাতেই তহবিল তৈরী হল। অথচ আপনি সূদ হারাম হওয়ার কথা বিশ্বাস করেন। আপনারই কথা (হেলায় সূদ সংক্রান্ত শরিয়তি বিধিবিধানকে তারা অমান্য করছে।) অদ্ভূত কান্ড!! সূদকে ঘৃণা করা ঈমানী লক্ষণ। এদিক থেকে আপনার কথায় বুঝা যাচ্ছে, বিত্তবানদের সূদ গ্রহণে কুরবানীর বিধান দায়ী। তাই কুরবানী বন্ধ করলে সূদ বন্ধ হবে এবং কুরবানীদাতাগণ সূদ সংক্রান্ত শরিয়তী বিধিবিধানকে অমান্য করা থেকে বেঁচে যাবেন। কথায় বলে ‘ঢাকের দায়ে মনসা বিক্রি বা বউ বন্ধক রেখে বেটির বিয়ে’। আপনি সূদ বন্ধ করতে গিয়ে শরিয়তের এক বিধানকে বাতিল করছেন, ভেবে দেখেছেন?

‘কোরবানীর অর্থ সামাজিক কল্যাণে খরচ করা হোক’—এই দাবি দিলাম। আমি আপনাকে কৃষকের মত বিশ্বাসী হতে বলছি, শিশুর ন্যায় নয়। জনৈক কৃষক গম বা ধানের পরিকার দানা মাটিতে ছড়াচ্ছিল, আর তার শিশুটি জমির পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিল। পিতার কর্ম দেখে অবাক হয়ে বলল, ‘আব্বা! আপনি এই সুন্দর দানাগুলো মাটিতে ফেলে নষ্ট করছেন কেন?” পিতা বললেন, ‘বৎস! নষ্ট করিনি, বপন করছি’।

তা দেখে বাহ্যিকভাবে নষ্ট করা মনে হয়েছিল, তাই শিশু তার পিতাকে বীজ নষ্ট না করার দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু পিতার বিশ্বাস যে, তাতে লাভ আছে। তাই সে নিজ কর্মে সন্তুষ্ট ছিল। অনুরূপ যারা শরিয়তের কর্ম পালনের লাভ বিশ্বাস করেন, তারা ঐ শিশুর ন্যায়। তাদের জন্য কুরবানী পালনকে অর্থহীন মনে করা কোন আশ্চর্য বিষয় নয়।

‘কোরাবনীর অর্থ সামাজিক কল্যাণে খরচ হোক’—এই দাবি চরম পর্যায়ের অপরাধ। কারণ তা ইসলাম ধর্মের বিধান পরিবর্তনের দাবি। তা ছাড়া আপনার উক্ত দাবি অর্থহীন, কারণ কুরবানী থেকে ব্যক্তি, জাতি এবং সমাজ উপকৃত হয়, আপনি যা চাচ্ছেন, তার থেকে অনেক বেশী। কুরবানীর মাংস কেউ এক খায় না, সবটা খাওয়ার বিধানও নেই, দান করে খেতে হয়। আমার মনে হয় গরীব, অসহায়, ইয়াতীমরা ঐ সময় সবচেয়ে বেশী মাংস খেতে পায়, তৃপ্তি পায়। তা ছাড়া কুরবানী পশুর চামড়ার টাকা গ্রামের সরদারের কাছে জমা করা হয় এবং তা অভাবী, অনাথ, বিধবা গরীব ছাত্র-ছাত্রী এবং ইসলামী শিক্ষামূলক খাতে ব্যয় করা হয়। আবার কেউ নিজ হাতে দেয়। সুতরাং আপনার দাবি অর্থহীন এবং যুক্তিহীন।

দ্বিতীয়তঃ মুমিনগণ কুরবানীর মাধ্যমে পরকালের লাভ পেতে চায়। তাহলে বুঝতে পারলেন, কুরবানীতে ইহ-পর দু’জগতে লাভ রয়েছে। আর আপনার দাবি কেবল ইহজগতের আংশিক লাভের দিকে। এক তীরে দুই শিকার অধিক লাভজনক, না এক তীরে এক শিকার?

আপনার মতো সমাজ-দরদী লোকের উপদেশ ইসলাম প্রয়োজন মনে করে না। কারণ, ইসলাম দুঃস্থ বালক-বালিকা, গরীব-বিধবা ঋণগ্রস্ত, ইয়াতীম এবং সামাজিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে পরিপূর্ণ ব্যবস্থা রেখেছে, যা সকলের জন্য উপযোগী।

যাকাতঃ এটি ইসলামের পাঁচটি মূল ভিত্তির মধ্যে একটি। ধনীদের সম্পদ নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করলে শতকরা আড়াই টাকা যাকাত ফরয হয়। এটি আসমানে পাঠানো হয় না। উপরি উল্লিখিত খাত ও অন্যান্য সামাজিক কল্যাণে খরচ করা হয়। সত্যিকার অর্থে এই বিধান যদি বিশ্বের মানুষ অনুসরণ করত, তাহলে বিশ্বের অর্থনীতির ভারসাম্য বজায় থাকত। গরিবী দূরীভূত হত, চুরি বন্ধ হত, রাহাজানি বন্ধ হত। কারণ, অভাবে স্বভাব নষ্ট হয়, আমরা সকলে জানি।

সাদকাহঃ (সাধারণ দান) সাধারণ দানের জন্য রাসূল (সাঃ) উম্মাতকে উৎসাহিত করেছেন,

আবু বুরদাহ নিজ পিতা হতে, তিনি তাঁর দাদা হতে, তিনি নবী (সাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বললেন, ‘প্রতিটি মুসলিমের জন্য সদকাহ (দান) করা জরুরী’। সাহাবাগণ বললেন, যে ব্যক্তি কাজ না পায়, সে?” তিনি বললেন, সে তার দু হাতে কর্ম করবে, তাতে সে নিজ উপকৃত হবে এবং দান করবে। তারা বললেন, যদিসে অক্ষম হয়, তাহলে?” তিনি বললেন, ‘অতি অভাবী ব্যক্তিকে সাহায্য করবে।’ তারা বললেন, ‘যদি না পারে?’ তিনি বললেন, ‘তাহলে উত্তম কর্ম করতে আদেশ করবে। বললেন, তা যদি না করে?’ তিনি বললেন, ‘অপকর্ম হতে বিরত থাকবে। সেটি তার জন্য সদকাহ (দান) হবে’। (বুখারী)

যাকাতুল ফিতরঃ (ফিতরা) এটি রাসূল (সাঃ) উম্মাতের উপর ফরয করেছেন, এটি দিতে হয় ঈদের দিন নামাযের পূর্বে অথবা তার দু-একদিন পূর্বে দেওয়া যায়। তাতে আমাদের সমাজের গরীবগণ ঈদের খুশীতে অংশগ্রহণ করতে পারে।

…………………………..

অর্থঃ ইবনে উমার (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) যব অথবা খেজুর হতে এক সা ফিতরা স্বাধীন, ক্রীতদাস, নারী-পুরুষ, ছোট-বড় মুসলিমদের উপর ফরয করেছেন এবং ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে তা আদায় করতে আদেশ দিয়েছেন। (বুখারী)

বাইতুল মালঃ সরকারী ফান্ড, সরকারীভাবে সেই সুযোগ না থাকলে, মুসলিমদের ঐ রকম ফান্ড থাকা অবশ্য করণীয়। যেখান থেকে সমাজের গরীব, ইয়াতীম, বিধবা, অন্ধ, অভাবী ব্যক্তিদের সাহায্য করা হবে। যেমন, উমার বিন খাত্তাব (রাঃ) নিজ খেলাফতকালে করতেন। কে কোথায় কষ্ট পাচ্ছে, তা দেখার জন্য তিনি রাতের আঁধারে ঘুরে বেড়াতেন। একদিন তিনি দেখলেন, জনৈক মহিলা হাঁড়ি গরম করছেন, তাঁর ছেলেগুলো পাশে কান্না করছে, উমার (রাঃ) বললেন, ‘তুমি কেমন মা যে, সন্তানরা কান্না করছে, অথচ তুমি তাদেরকে খাবার দিচ্ছ না কেন?’ উত্তরে মহিলা বললেন, ‘আসলে খাবার নেই, এমনি তাদেরকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য পানি গরম করছি। এরপর তিনি অবিলম্বে বায়তুল মালের ভান্ডারে গিয়ে বস্তায় আটা ও অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী ভরে চাকরকে বললেন, ‘আমার পিঠে উঠিয়ে দাও। চাকর বলল, ‘আমাকে দিন, নিয়ে যাই।” উমার (রাঃ) বললেন, “আমার পিঠে চাপিয়ে দাও।” চাকর বলল, ‘আমাকে দিন, আমি নিয়ে যাই’। উমার (রাঃ) বললেন, আমার পিঠে চাপিয়ে দাও, কারণ কাল কিয়ামতের দিন তুমি আমার বোঝা বহন করবে না’।

উমার বিন খাত্তাব (রাঃ) রাষ্ট্র পরিচালনায় ও সামাজিক খেদমতে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। তিনি দেহরক্ষী ছাড়াই বালুর উপরে নির্বিঘ্নে ঘুমাতেন। এ কথা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণীক্ষরে লেখা আছে। মুসলিম হিসেবে এ ইতিহাস আপনার জানা দরকার।

– সাদকায়ে জারিয়াঃ (জারি সদকাহ) অর্থাৎ, সামাজিক কল্যাণে কিছু তৈরী করা, সেটি যতদিন থাকবে তার নেকী সে পেতে থাকবে, মরণের পরও পেতে থাকবে। যেমন, মসজিদ তৈরী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ইয়াতীম খান, পাঠাগার কুপ খনন, পানির ব্যবস্থা, চিকিৎসার ব্যবস্থা ইত্যাদি।

আবু হুরাইরাহ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “মানুষ যখন মরে যায়, তখন তার আমলের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি পথ খোলা থাকে: (১) সদকায়ে জারিয়া। (২) অথবা জ্ঞান যদ্বারা উপকৃত হওয়া যায়। (৩) অথবা এমন সন্তান, যে তার জন্য দুআ করে। (মুসলিম)

আশা করি, এবার বুঝতে পেরেছেন যে, অধিক সমাজ দরদী কে, আপনি, না ইসলামী বিধান ?

পরামর্শ

জনাব, আপনাকে আমি পরামর্শ দিচ্ছি তা গ্রহণ করলে নিশ্চয় সমাজ উপকৃত হবে। এমন কিছু বিষয় যাতে মোটা অংকের টাকা ব্যয় হয়, অথচ তাতে কোন উপকার নেই, স্বাস্থ্যগত, আর্থিক এবং সামাজিক কোন প্রকার লাভ নেই। সেগুলো বন্ধ করে তার অর্থে তহবিল তৈরী করুন।

ধূমপানঃ আমাদের সমাজে লক্ষ লক্ষ মানুষ ধূমপান করে। প্রতিদিন কত লোক ধূমপান ক’রে কত টাকা নষ্ট করে, তার সঠিক পরিমাণ জানা খুব মুশকিল। তাও আন্দাজ করা হচ্ছে কুরবানী থেকে অনেক বেশী। আর ধূমপানে ক্ষতি ছাড়া বিন্দুমাত্র উপকার নেই।

ক৷ অর্থের ক্ষতিঃ অকারণে অর্থ জ্বালিয়ে ছাই করা।

খ। স্বাস্থ্যের ক্ষতিঃ তার মধ্যে আছে নিকোটিন। যার কারণে শ্বাসনালীতে ক্যানসার হয়। ডাক্তারগণ ভাল করে এ কথা জানেন।

গ৷ ধূমপানে পরিবেশ নষ্ট হয়, ধূমপায়ীর ধুমে যার নাকে-মুখে প্রবেশ করে, সেও ধূমপায়ীর ন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি চরম পর্যায়ের সামাজিক ক্ষতি।

ঘ। ধর্মীয় নীতির বিরোধি, যারা ধর্ম নীতির বিপরীতে কর্ম করে তারা ধর্মীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আপনার এ বদ অভ্যাস আছে কি না জানি না। যদি থাকে, তাহলে তার অর্থটা জমা করতে আরম্ভ করুন।

মদঃ অনেকে দেশী-বিদেশী মদ পান করে, এক একটি বাঁধানো বোতলের কত দাম আমার জানা নেই, এর পিছনে পয়সা কম নষ্ট হয় না। এতে সমাজের কী উপকার আছে?

হোটেলঃ বড় বড় হোটেলের ঠাটবাটে যে অপচয় হয়, তা নিশ্চয় আপনার অজানা নেই, মাত্র এক রাতের বিল লক্ষাধিক।

বিবাহঃ কিছু কিছু বিবাহে অনেক অপচয় হয়। এ কথাও আপনি জেনে থাকবেন।

জন্ম দিবস পালনঃ অনেকে জন্ম দিবসের অনুষ্ঠান করে থাকেন এবং খরচ করেন অনেক। এগুলো কুসংস্কার, বিজাতির কালচার।

আমি নিশ্চিত যে, ঐ সমস্ত টাকায় তহবিল তৈরী হলে ব্যক্তি ও সমাজ সকলে উপকৃত হবে। অথচ কোন ধর্মে হস্তক্ষেপ করা হবে না। সুতরাং আপনি ঐ সকল অপকর্ম বন্ধ করার লক্ষ্যে ও তার অর্থ সামাজিক কল্যাণে খরচ হোক এই মর্মে পত্রিকায় লিখে জনগণের কাছে আবেদন জানান।

সমাজ সেবার জন্য এত পথ থাকতে একটিও দেখতে পেলেন না! সোজা কুরবানীতে হাত!? জেনে রাখুন, ইসলামের প্রতিটি বিধান সূক্ষ, যুগোপযোগী, দর্শনভিত্তিক এবং উপকারে ভরা। তাতে পরিবর্তন, সংযোজন-বিয়োজন করার পথ নেই। কারণ, সেটি সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত। তাঁর বিধানে কোন রকম হস্তক্ষেপ চলে না। এই ন্যূনতম জ্ঞানটুকু মুসলিম হিসেবে থাকা আবশ্যক। যা হয়ে গিয়েছে, তার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান। তিনি আপনাকে ক্ষমা করবেন। তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু এবং দ্বীনকে জানার জন্য বই পড়ুন। জ্ঞানের আলোকে বুঝতে পারবেন ধর্মের রহস্য।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88