বাদশাহ কুতুবউদ্দীন আইবকের ইনসাফ

ছোটবেলায় হিন্দুস্তানের বাদশাহ কুতুবউদ্দীন আইবকের ইনসাফের বিষয়ে একটা ঘটনা পড়েছিলাম। একবার উনি শিকার করছিলেন। দূর থেকে একটা কিছু দেখে তির চালিয়ে দিলেন। তারপর শিকারের কাছে গিয়ে দেখলেন, একটি কিশোর তাঁর তিরের আঘাতে জখম হয়ে পড়ে আছে !

কয়েক মুহূর্তের মধ্যে সেই আহত কিশোরের মৃত্যু হল। বাদশাহ খোঁজ নিয়ে জানলেন, কিশোরটি ছিল কাছের এক গ্রামে বাস করা এক বৃদ্ধার একমাত্র সাহারা। সে জঙ্গলে কাঠ সংগ্রহ করে বিক্রি করত এবং যা মিলত তাই দিয়েই কোনও রকমে নিজের ও মায়ের পেট চালাত।

বাদশাহ কুতুবউদ্দীন নিহত কিশোরের মায়ের কাছে গেলেন। বললেন যে, ভুলবশত তাঁর ছোড়া তিরের আঘাতে তাঁর ছেলের মৃত্যু হয়েছে। মা কাঁদতে কাঁদতে বেহুঁশ হয়ে গেলেন।

এরপর বাদশাহ কুতুবউদ্দীন খোদ নিজেকে কাজীর আদালতে সোপর্দ করলেন এবং নিজের অপরাধের উল্লেখ করে নিজেরই বিরুদ্ধে মামলা চালানোর আর্জি পেশ করলেন।

কাজী সাহেব শুরু করলেন মোকদ্দমা। আদালতে ডেকে পাঠালেন মৃত কিশোরের বৃদ্ধা মাকে। তারপর তাঁকে বললেন, ‘আপনি যে শাস্তির কথা বলবেন, সেই শাস্তিই দেওয়া হবে এই অপরাধীকে।’

বৃদ্ধা বললেন, ‘এমন বাদশাহ ফের কোথায় পাওয়া যাবে, যিনি নিজেরই সাম্রাজ্যে নিজেরই বিরুদ্ধে মামলা চালাবেন এবং এমন এক ভুলের জন্যে যা করা হয়নি জেনেবুঝে !

আজ থেকে কুতুবউদ্দীন হবে আমার ছেলে। আমি মাফ করে দিলাম একে !’

কাজী সাহেব তখন বাদশাহ কুতুবউদ্দীনকে মুক্তি দিলেন এবং বললেন, ‘আপনি যদি আদালতে সামান্য হলেও আপনার শাহী প্রভাব দেখাতেন, তাহলে আমি আপনাকে এই বৃদ্ধার সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিতাম না, বরং আমি নিজেই আপনাকে কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তি দিতাম !’

এর উত্তরে বাদশাহ কুতুবউদ্দীন নিজের কোমর থেকে খঞ্জর বের করে, কাজীকে দেখিয়ে বললেন, আপনি যদি আমার সঙ্গে অপরাধীর মতো ব্যবহার না করে আমার বাদশাহীর কথা একটুও খেয়াল করতেন, তাহলে আমি এই খঞ্জর দিয়ে আপনাকে মৃত্যুর ঘাট পার করিয়ে দিতাম !’

এই হলো আসল বাদশাহী আর এই হলো ইনসাফ !

#অরবিন্দ_পাণ্ডে

আই.পি.এস অফিসার (বিহার)

হিন্দি থেকে বঙ্গায়ন :
Mohammad Hadiuzzaman

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88