জিহাদ ফি সাবীলিল্লাহ

রচনায় :- আব্দুস সামাদ সালাফী

ইসলামে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ্‌র গুরুত্ব অত্যধিক। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে জিহাদ-এর প্রকৃতি ও পদ্ধতি সম্পর্কে সবিস্তারে আলোকপাত করা হয়েছে। মহানবী (ছাঃ) এরশাদ করেন-

جَاهِدُوا الْمُشْرِكِينَ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَيْدِيكُمْ وَأَلْسِنَتِكُمْ

‘তোমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধে তোমাদের সম্পদ, জীবন ও ভাষা দ্বারা জিহাদ কর’ (আবু দাউদ ও নাসাঈ)।

উল্লেখিত হাদীছে রাসূলে করীম (ছাঃ) জিহাদ করার জন্য আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। কুরআন মাজীদে আল্লাহপাক বলেন,

كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ وَهُوَ كُرْهٌ لَّكُمْ

অর্থাৎ তোমাদের উপরে ক্বিতাল বা যুদ্ধ ফরয করা হয়েছে’।

আল্লাহ আরও বলেন, ‘সমস্ত মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর’।

পবিত্র কুরআনের উপরোক্ত আয়াত ও হাদীছ দ্বারা জিহাদ করা যে ফরয তা স্পষ্টভাবে বুঝা যায়। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে বলতে হয় জিহাদ ‘ফরযে আইন’। তবে অন্যান্য আয়াত ও হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় যে জিহাদ ‘ফরযে কিফায়া’। ফরযে আইন অর্থ যে, সকলকে জিহাদে অংশ গ্রহণ করতে হবে; একাজে কাউকে বিচ্ছিন্ন থাকা বৈধ নয়। পক্ষান্তরে ফরযে কিফায়া অর্থ হ’ল যে, কিছু সংখ্যক লোক উক্ত কাজে অংশ গ্রহণ করলে হবে; সকলের অংশ গ্রহণ প্রয়োজন নেই। একটি ইসলামী রাষ্ট্রের শাসক যদি সাধারণ ভাবে সবাইকে কোন নির্দেশ দেন, তাহলে সেটা ফরযে আইন হবে। অন্যথায় সেটা ফরযে কিফায়া হিসাবে পরিগণিত হবে।

ইসলামের সূচনা লগ্ন থেকেই জিহাদ চালু রয়েছে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত চালু থাকবে-ইনশাআল্লাহ। জালিমদের সীমাহীন জুলুম থেকে মুক্তির জন্য বর্তমানে কাস্মীর, বসনিয়া, চেচনিয়া সহ পৃথিবীর বহু দেশের মুসলমানেরা জিহাদে লিপ্ত আছেন। বর্তমান পৃথিবীতে সশস্ত্র যুদ্ধের সাথে সংযোজিত হয়েছে ‘চিন্তাশক্তির লড়াই’। এ বিষয়ে আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে। আমাদেরকেও চিন্তাশক্তির মাধ্যমে তাদের ভ্রান্ত মতবাদের যুক্তি ভিত্তিক ও দাঁতভাংগা জওয়াব দিতে হবে। পাশ্চাত্য বা দূর প্রাচ্যের লোকেরা আমাদের প্রাণ প্রিয় ধর্ম ইসলাম ও ইসলামের অনুসারীদের বিরুদ্ধে চিন্তাশক্তি ও কূটকৌশলকে বেশী বেশী করে কাজে লাগাচ্ছে এবং এতে অনেকাংশেই তারা সফলকামও হয়েছে। অমুসলিমদের সব রকমের চিন্তা, কথা, কৌশল ও তৎপরতার বিরুদ্ধে মুসলমানদেরকে প্রস্তুত থাকার জন্য এবং তাদের সাথে মোকাবেলা করার জন্য আল্লাহ্‌র নির্দেশ শুনুন

 كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ وَهُوَ كُرْهٌ لَّكُمْ ۖ وَعَسَىٰ أَن تَكْرَهُوا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ

“তোমাদের উপরে যুদ্ধ ফরয করা হয়েছে। অথচ তা তোমাদের কাছে অপসন্দনীয়” (বাক্বারাহ ২১৬)।

আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র আরও বলেন-

 يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ جَاهِدِ الْكُفَّارَ وَالْمُنَافِقِينَ وَاغْلُظْ عَلَيْهِمْ ۚ وَمَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ ۖ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ 

“হে নবী! আপনি কাফির ও মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করুন এবং তাঁদের উপর কঠোর হউন। তাদের আবাসস্থল হ’ল জাহান্নাম। আর উহা কত নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তন স্থল (তাহরীম : ৬)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি মারা গেল অথচ সে জিহাদ করল না কিংবা জিহাদ করার কোন সংকল্প বা ইচ্ছাও পোষণ করল না সে এক ধরণের নেফাকের (মুনাফিক) অবস্থায় মৃত্যু বরণ করল” (মুসলিম)।

প্রিয় নবী (ছাঃ) ভবিষ্যদ্বাণী করতে গিয়ে বলেন, “আমার উম্মতের মাঝে একটা দল থাকবে যারা হকের পথে যুদ্ধ করবে এবং বিরোধী পক্ষের উপরে বিজয়ী হবে। তাদের সর্বশেষ দলটি দাজ্জালের সাথে লড়াই করবে” (আবু দাউদ)।

এ বিষয়ে আল্লাহ্‌র ঘোষণা শুনুন-

 يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَىٰ تِجَارَةٍ تُنجِيكُم مِّنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ 

تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ

‘হে মুমিন গণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন একটা ব্যবসায়ের কথা বরে দিব যা তোমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হ’তে মুক্তি দিবে? উহা এই যে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে ও তোমাদের ধন-সম্পদ এবং জীবন দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে। ইহাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম যদি তোমরা বুঝ’ (সূরা ছফ-১০-১১)

আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র বলেন-

 أَمْ حَسِبْتُمْ أَن تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللَّهُ الَّذِينَ جَاهَدُوا مِنكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِينَ

“তোমরা কি ধারণা করেছ যে, জান্নাতে প্রবেশ করবে অথচ আল্লাহ এখনও জানেন না তোমাদের মধ্যে কারা জিহাদ করেছে এবং কারা ধৈর্য্যশীল” (আলে-ইমরান-১৪২)

মানুষের মাঝে এরূপ ধারণা থাকতে পারে যে, ইসলামে জিহাদটা এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বা কাজ নয়, যা না করলেই নয়; বরং এটা করলেও চলে না করলেও কিছু যায় আসেনা। এই ভুল ধারণাকে খণ্ডন করার জন্য আল্লাহ তা’আলা বলেন,

لَّا يَسْتَوِي الْقَاعِدُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ غَيْرُ أُولِي الضَّرَرِ وَالْمُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ ۚ فَضَّلَ اللَّهُ الْمُجَاهِدِينَ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ عَلَى الْقَاعِدِينَ دَرَجَةً ۚ وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَىٰ ۚ وَفَضَّلَ اللَّهُ الْمُجَاهِدِينَ عَلَى الْقَاعِدِينَ أَجْرًا عَظِيمًا

“প্রয়োজনীয় কোন ওযর ছাড়াই গৃহে বসে থাকা মুসলমান এবং স্বীয় জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহ্‌র পথে জিহাদকারী মুজাহিদগণ সমান হ’তে পারে না। যারা স্বীয় ধন-প্রাণ দ্বারা জিহাদ করে আল্লাহ তাদের পদ মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন গৃহে উপবেশন কারীদের চেয়ে এবং আল্লাহ সকলকেই কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আল্লাহ মুজাহিদীনকে ঘরে উপবেশন কারীদের উপরে মহান প্রতিদানে শ্রেষ্ঠ করেছেন (নিসা-৯৫)।

আল্লাহ তায়ালা জিহাদ পরিত্যাগকারী, অলস, আরামপ্রিয়, ধন-সম্পদ, ব্যবসা-বাণিজ্য, ছেলে-মেয়ে, আত্মীয়-স্বজনদের আদর যত্নে যারা মত্ত রয়েছে, তাদের ব্যাপারে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেন,

قُلْ إِن كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُم مِّنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّىٰ يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ ۗ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ

‘হে রাসূল! তুমি বলে দাও তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভ্রাতা, তোমাদের পত্নী তোমাদের আত্মীয়-স্বজন তোমাদের ধন-সম্পদ যা তোমরা উপার্জন কর, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান যা তোমরা অধিক ভালবাস ইত্যাদি যদি আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং তার রাস্তায় জিহাদ করা অপেক্ষা প্রিয় হয়, তবে আল্লাহ্‌র বিধান আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কর। আল্লাহ ফাসিক সম্প্রদায়কে হেদায়াত করেন না’ (তওবা ২৪)।

পবিত্র কুরআনের উপরোক্ত আয়াত সমূহ ও বর্ণিত হাদীছ গুলি থেকে প্রতীয়মান হয় যে,

(১) মুমিনদেরকে সর্বদা জিহাদ করতে হবে।

(২) কোন কোন সময় জিহাদ ‘ফরযে আইন’ হয়।

(৩) সাধারণ ভাবে জিহাদ ‘ফরযে কিফায়া’।

(৪) জিহাদ ত্যাগকারী আল্লাহ্‌র গযবে নিপতিত হবে।

(৫) জিহাদ না করলে বা জিহাদের ইচ্ছা পোষণ না করলে মুনাফিকের মৃত্যু হবে।

(৬) আল্লাহ্‌র নিকট মুজাহিদদের জন্য উত্তম পারিতোষিক আছে।

(৭) জিহাদ বিরামহীনভাবে ক্বিয়ামত পর্যন্ত চলবে।

(৮) জিহাদ ধন-সম্পদের মাধ্যমে হয়।

(৯) জিহাদ জীবন দিয়ে হয়।

(১০) জিহাদ মুখের ভাষা দিয়ে হ’তে পারে, কখনও বা হ’তে পারে কলমের মাধ্যমে।

(১১) চিন্তাশক্তি দিয়েও জিহাদ করতে হবে।

পরিশেষে যেটা বলতে চাইব সেটা হ’ল অমুসলিমদের বিরুদ্ধে জান, মাল, কথা, কলম ও সংগঠন-এর মাধ্যমে জিহাদ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।

আমরা যে বিষয়ে বেশী পারঙ্গম সে বিষয়টিকে আমরা জিহাদের মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করব। আল্লাহ বলেন, “তাদের বিরুদ্ধে জিহাদের জন্য সাধ্যানুযায়ী শক্তি সঞ্চয় কর”। কাজেই যার যতটুকু ক্ষমতা আছে তা দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে ও দ্বীনকে শক্তিশালী করার জন্য ব্যয় করতে হবে। আর যে কোন সময় জিহাদের ডাক আসলে তাতে দ্রুত শরীক হওয়ার জন্য মানসিক ও আন্তরিকভাবে সদা প্রস্তুত থাকতে হবে এবং এটাকে ঈমানী দায়িত্ব বলে নিতে হবে।

আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে জিহাদে শরীক হওয়ার জন্য এবং জিহাদী কাজে সাধ্যানুযায়ী সহযোগীতা করার জন্য তাওফীক দান করুন। আমীন!

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

১টি মন্তব্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88