দেওয়ানবাগী পীরের ভ্রান্ত চিন্তাধারা ও তার খন্ডন

তার নাম মাহবুবে খোদা। ২৭ শে অগ্রহায়ন, ১৩৫৬ বঙ্গাব্দ মোতাবেক ১৪ই ডিসেম্বর, ১৯৪৯ সালে ব্ৰাক্ষ্মণবাড়ীয়ার আশুগঞ্জ থানাধীন বাহাদুরপুর গ্রামে তার জন্ম। তার পিতা সৈয়দ আবদুর রশীদ সরকার। প্রাথমিক স্কুল শিক্ষার পর তিনি তালশহর করিমিয়া আলিয়া মাদরাসায় লেখাপড়া করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। স্বাধীনতার পর সেনাবাহিনীতে রিলিজিয়াস টিচার পদে সুলতান আহমদ (চন্দ্রপাড়ার পীর) ছিলেন তার পীর এবং শ্বশুর। মাহবুবে খোদা নিজে এবং তার ভক্তবৃন্দ তাকে “সূফী সম্রাট” হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন।

তিনি ঢাকার অদূরে দেওয়ানবাগ নামক স্থানে একটি এবং ১৪৭ আরামবাগ ঢাকা- ১০০০ তে “বাবে রহমত” নামে আরেকটি দরবার স্থাপন করেছেন। তিনি সূফী ফাউণ্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। যা উপরোক্ত আরামবাগের ঠিকানায় অবস্থিত। উক্ত ফাউণ্ডেশন থেকে তার তত্ত্বাবধানে এবং নির্দেশে বেশ কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে :

 ১. সূফী সম্রাটের যুগান্তকারী অবদান আল্লাহ কোন পথে?

 ২. সূফী সম্রাটের যুগান্তকারী ধমীয় সংস্কার।

৩. স্রষ্টার স্বরূপ উদঘাটনে সূফী সম্রাট : আল্লাহকে সত্যিই কি দেখা যায় না ?

 ৪. বিশ্ব নবীর স্বরূপ উদঘাটনে সুফী সম্রাট : রাসূল (সা.) কি সত্যিই গরীব ছিলেন?

৫. মুক্তি কোন পথে?

৬. শান্তি কোন পথে?

৭. ওয়াজিফা।

৮. মানতের নির্দেশিকা ।

৯. এজিদের চক্রান্তে মোহাম্মাদী ইসলাম।

 ১০. সুলতানিয়া খাবনাম প্রভৃতি। এ ছাড়া উক্ত ফাউন্ডেশন কর্তৃক মাসিক আত্মার বাণী’ ও ‘সাপ্তাহিক দেওয়ানবাগ’ নামে দুটি পত্রিকা প্ৰকাশিত হয়ে থাকে। এসব গ্রন্থ ও পত্রিকার বর্ণনা থেকে দেওয়ানাবাগী সাহেবের আকীদা- ?

Dewanbagi Pir

 বিশ্বাস ও চিন্তাধারা সম্পর্কে যা জানা যায়, তা হল :

* দেওয়ানবাগী সাহেবের আক্বীদা-বিশ্বাস ও চিন্তাধারা-

১. মুক্তির জন্য ইসলাম ধর্ম গ্ৰহণ করা জরুরী নয়। যেমন ‘আল্লাহ কোন পথে’ – গ্রন্থে লেখা হয়েছেঃ যে কোন ধর্মের লোক তার নিজস্ব অবস্থায় থেকে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ করে তাঁর বিধানমত নিজেকে পরিচালিত করতে পারে। তাহলে নামধারী কোন মুসলমানের চেয়েও সে উত্তম । মোটকথা ইসলাম বা মুসলিম কোন ব্যক্তির নাম নয়, এটা আল্লাহ প্রদত্ত নির্দিষ্ট বিধান এবং বিধান পালনকারীর নাম । যে কোন অবস্থায় থেকে এই বিধান পালন করতে পারলেই তাকে মুসলমান বলে গণ্য করা যায়। আর যে কোন কুলে থেকেই এই চরিত্র অর্জন করতে পারলে তার মুক্তি হওয়া সম্ভব। (অর্থাৎ, স্বধৰ্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ জরুরী নয়।)[1]

উপরোক্ত বক্তব্যের প্রমাণ স্বরূপ দেওয়ানবাগী বলেনঃ আমার এখানে এক ব্যক্তি আসে। সে ভিন ধর্মের অনুসারী। তার ধর্মে থেকেই ওজীফা আমলের নিয়ম তাকে বলে দিলাম। কিছু দিন পর লোকটা এসে আমাকে জানালো- হুজুর একরাত্রে স্বপ্নে আমার রাসূল (সা.)-এর রওজা শরীফে যাওয়ার খোশ নসীব হয়। সেখানে গিয়ে উনার কদম মোবারকে সালাম দিয়ে জানালাম যে, শাহ দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলার দরবার শরীফ থেকে এসেছি। নবীজি শায়িত ছিলেন । তিনি দয়া করে উঠে বসলেন। নবীজি তার হাত মোবারক বাড়িয়ে আমার সাথে মোসাফা করলেন। মোসাফা করার পর থেকে আমার সারা শরীরে জিকির অনুভব করতে পারি।……. এখানে আমার অবস্থা এই যে, যখন যা কিছু করতে চাই তখন আমার হৃদয়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে সংবাদ চলে আসে-তুমি এভাবে চল।[2]

খন্ডন :

إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللّهِ الإِسْلاَمُ

অর্থাৎ আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীত ধর্ম হল ইসলাম [সূরা আলে ইমরান : ১৯] অন্য এক আয়াতে বলা হয়েছেঃ

وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الإِسْلاَمِ دِيناً فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ-

অর্থাৎ, কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম সন্ধান করলে কস্মিনকালেও তার থেকে তা গ্ৰহণ করা হবে না। এমন ব্যক্তি পরকালে চির হতভাগাদের দলে থাকবে। [সূরা আলে ইমরান : ৮৫]

রাসূল (সা.) বলেনঃ لوکان موسی حیا لما وسعه الااتباعی – (مشکوة عن احمد و البهقی)

অর্থাৎ হযরত মুসা নবীও যদি জীবিত থাকতেন, তবে আমার অনুসরণ না করে। তারও কোন উপায় থাকত না ।

তিনি জান্নাত, জাহান্নাম, হাশর, মীযান, পুলসিরাত, কিরামান কাতেবীন, মুনকার নাকীর, ফিরিশতা, হুর, তাকদীর, আমলনামা ইত্যাদি ঈমান-আকীদা সংশ্লিষ্ট যাবতীয় বিষয়কে অস্বীকার করেছেন। অর্থাৎ এগুলোর তিনি এমন ব্যাখ্যা দিয়েছেন যা এগুলো অস্বীকার করার নামান্তর। ‘আল্লাহ কোন পথে? গ্রন্থে সে ব্যাখ্যাগুলো বিদ্যমান। উক্ত গ্রন্থে প্রথমে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা’আত এ সব বিষয়ে যে আকীদা-বিশ্বাস রাখেন সেগুলোকে প্রচলিত ধারণা[3] বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে, তারপর আল্লাহপ্রাপ্ত সাধকগণের বরাদ দিয়ে সেগুলোর এমন অর্থ বলা হয়েছে যা এগুলোকে অস্বীকার করার নামান্তর। যেমন- বলা হয়েছে প্রচলিত ধারণা মতে ‘হুর’ বলতে বেহেশতবাসীর জন্য নির্ধারিত সুন্দরী রমণীকে বুঝানো হয়েছে। তারপর বলা হয়েছে- আল্লাহপ্রাপ্ত সাধকগণ বলেন ‘হুর’ বলতে মানুষের জীবাত্মা বা নফসকে বুঝায়। এভাবে ঈমান আকীদার সাথে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় বিষয়ের ক্ষেত্রে করা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা হল । যেমন :

* জান্নাত সম্পর্কে বলা হয়েছে– “প্রভূর সাথে পুনরায় মিলনে আত্মার যে প্রশান্তি ও আনন্দ লাভ হয় উহাই শ্রেষ্ঠ সুখ। এ মহামিলনের নামই প্রকৃত জান্নাত।” এখানে জান্নাতের স্বতন্ত্র অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হয়েছে এবং জান্নাত বলতে আত্মিক সুখকে বোঝানো হয়েছে।[4]

* জান্নাতের হুর সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ হুর বলতে মানুষের জীবাত্মা বা নফসকে বুঝায়।[5]

* জাহান্নাম সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ “আত্মার চিরস্থায়ী যন্ত্রণাদায়ক অবস্থাকেই জাহান্নাম বলে”।[6] এখানে জাহান্নামের স্বতন্ত্র অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হয়েছে এবং আত্মার যন্ত্রণাকে জাহান্নাম বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

* হাশির বা পুনরুত্থান সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ “সূফী সাধকগণের দৃষ্টিতে মানুষের হাশর পৃথিবীর বুকে সংঘটিত হয়ে থাকে। মানুষকে তার কর্মের প্রতিফল সঙ্গে সঙ্গেই প্ৰদান করা হয়”।[7] এখানে মৃত্যুর পর স্বশরীরে পুনরুত্থানকে অস্বীকার করা হয়েছে।

উক্ত গ্রন্থে অত্যন্ত পরিষ্কার ভাষায় মৃত্যুর পর স্বশরীরে পুনরুত্থানকে অস্বীকার করে বলা হয়েছেঃ “প্রকৃতপক্ষে (মৃত্যুর পর) মৃত ব্যক্তির দেহের কোন ক্রিয়া থাকে না, তার আত্মার উপরেই সবকিছু হয়ে থাকে। আর এ আত্মাকে পরিত্যক্ত দেহে আর কখনো প্ৰবেশ করানো হয় না”।[8]

* পুলসিরাত সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ “পুলসিরাত পার হওয়া বলতে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ঈমানের উপর কায়েম থাকা এবং ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ করাকে বুঝায়”।[9]

* মীযান সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ “মীযান বলতে মানুষের ষড়রিপুমুক্ত পরিশুদ্ধ বিবেক কে বুঝায়”।[10]

* মুনকার-নাকীর সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ “মুনকার ও নাকীর বলতে কোন ব্যক্তির ভাল ও মন্দ কর্মবিবরণীকে বুঝায়”।[11]

 কিরামান কাতেবীন সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ পরমাত্মার বিদ্যমান সূক্ষ্ম শক্তি যা ফেরেশতার ন্যায় ক্রিয়াশীল উহাই আলাদা আলাদা ভাবে পাপ এবং পূণ্যের বিবরণী লিপিবদ্ধ করে অর্থাৎ, তা পরমাত্মার স্মৃতিফলকে সংরক্ষিত হয়।[12]

* আমলনাম সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ আমলনামা বলতে মানুষের সৎ কর্মের দ্বারা আত্মার উন্নতি এবং অপকর্মের দ্বারা আত্মার অবনতিকে বুঝায়।[13]

* ফিরিশতা সম্পর্কে বলা হয়েছে : ফেরেশতা আলমে আমর বা সূক্ষ্মতিসূক্ষ্ম জগতের বস্তু এবং ষড়রিপুমুক্ত পুতঃপবিত্র আত্মা বিশেষ। মানুষের মাঝে ২টি আত্মা রয়েছে। একটি জীবাত্মা এবং অপরটি পরমাত্মা। পরমাত্মার ২টি অংশ। যথা- মানবাত্মা ও ফেরেশতার আত্মা। এই ফেরেশতার আত্মাই মানুষের দেহের ভিতরে ফেরেশতার কাজ করে থাকে”।[14]

* দেওয়ানবাগীর বিশ্বাস হল আল্লাহ ও জিব্রাঈল এক ও অভিন্নঃ “আত্মার বাণী” (৫ম বর্ষ ১ম সংখ্যা) পত্রিকায় আছে”।[15] সুলতানিয়া মুজাদ্দেদিয়া তরীকার ইমাম চন্দ্রপুরী ফরমানঃ জিব্রাঈল বলতে অন্য কেহ নন স্বয়ং হাকীকতে আল্লাহ। উল্লেখ্য- এ পত্রিকার সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি হলো মাহবুবে খোদা দেওয়ানবাগী স্বয়ং নিজে।

* তাকদীর সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ তাকদীর বলতে মানুষের কর্মফলকে বুঝায়। অর্থাৎ, মানুষের কর্মের দ্বারা অর্জিত উন্নতি অবনতির সংরক্ষিত হিসাব নিকাশকে বুঝায়। সৃষ্টির আদি হতে অদ্যাবধি এবং কিয়ামত পর্যন্ত মানুষের আত্মা বিভিন্ন বাহনে আরোহন পূর্বক কর্মের যে স্মরণীয় স্মৃতিশক্তি আত্মার মধ্যে সংরক্ষিত হয়েছে উহাকেই মূলতঃ তাকদীর বলে”।[16]

এভাবে ঈমান-আকীদার সাথে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় বিষয়ের ক্ষেত্রে এমন ব্যাখ্যা পেশ করা হয়েছে যা উক্ত বিষয়গুলোকে অস্বীকার করার নামান্তর । অথচ এ বিষয়গুলো জরুরিয়াতে দ্বীন[17]-এর অন্তর্ভুক্ত। আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের নিকট এর যে, প্রতিষ্ঠিত ও চিরন্তন অর্থ এবং ব্যাখ্যা তার উপর সকলের ইজমা বা ঐক্যমত রয়েছে। আর এ ধরণের জরুরিয়াতে দ্বীনকে অস্বীকার করা কুফরী। আল্লামা সুবকী (রহঃ) তার جمع الجو امع   গ্রন্থে লিখেছেন  :

جاحد المتحع عليه المعلوم من الدين بالضرورة كافر مطلقا–

অর্থাৎ, জরুরিয়াতে দ্বীন- যার উপর ইজমা সংঘটিত আছে- তার অস্বীকারকারী এক বাক্যে কাফের।

তবে এ ধরণের ক্ষেত্রে দেখতে হবে যে, প্রথমত : যদি তারা কোন ব্যাখ্যা ছাড়াই বেধড়ক কুরআন হাদীছের ভাষ্যকে অস্বীকারপূর্বক মনগড়া মতামত ব্যক্ত করে। কিংবা শরঈ হুকুমের মাঝে যে ব্যাখ্যামূলক মতামত (تاويل) তারা দেয়, তা (تاويل)  এর নিয়ম নীতি অনুসরণ করে দেয় না, তাহলে তারা যে ব্যাখ্যা (تاويل) এর আলোকে নিজেদের ধ্যান-ধারনা পোষণ করেছে তা শরীয় আতের নীতি মাফিক না হওয়াতে তারা কুফুরীতে লিপ্ত হয়ে পড়বে।

হযরত মাওলানা ইদরীস কান্দলভী লিখেছেন- কোন জরুরিয়াতে দ্বীনে যদি এমন ব্যাখ্যা দেয়া হয় যা তার প্রসিদ্ধ ও সুবিদিত অর্থের বিপরীত, তাহলে এটা সে বিষয়কে অস্বীকার করারই নামান্তর।[18]

উপরোক্ত ঈমান-আকীদা সংক্রান্ত বিষয়াদির বাইরে আমলগত বিভিন্ন বিষয়েও তিনি মারাত্মক বিভ্রাত্তিকর ও গোমরাহীমূলক ধ্যান-ধারনা পোষণ করেন। যেমনঃ

১. দেওয়ানবাগী পুনর্জন্মবাদের প্রবক্তা। চন্দ্রপাড়া পীরের আকীদা একই রকম, তিনিও পুনর্জন্মবাদের প্রবক্তা ছিলেন। চন্দ্রপাড়ার পীর পুনর্জন্মবাদের প্রবক্তা। মাসিক আত্মার বাণী ৫ম বর্ষ ৬ষ্ঠ সংখ্যা ২৬ সংখ্যা পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে : চন্দ্রপুরী ফরমাইলেন পুনর্জন্ম সম্বন্ধে কুরআনেই আছে-

كَيْفَ تَكْفُرُونَ بِاللَّهِ وَكُنتُمْ أَمْوَاتاً فَأَحْيَاكُمْ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيكُمْ ثُمَّ إِلَيْهِ تُرْجَعُونَ-

 অর্থাৎ কিভাবে তোমরা আল্লাহর সাথে কুফৱী করা? অথচ তোমরা ছিলে প্রাণহীন, তিনি তোমাদেরকে জীবন দান করেছেন, আবার তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন ও পুনরায় তোমাদেরকে জীবন দান করবেন অনন্তর তোমরা তার দিকেই ফিরে যাবে।  [সূরা বাকারা : ২৮]

চন্দ্রপুরীর মতে এখানে (ثم يحييكم) -এর অর্থ পৃথিবীতে পুনরায় জন্মলাভ করা। উল্লেখ্য দেওয়ানবাগী। উক্ত পত্রিকার সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি এবং চন্দ্রপাড়ার পীর তার পীর ও শশুর। সৃতরাং বুঝা যায় দেওয়ানবাগীর আকীদাও অনুরূপ। ‘আল্লাহ কোন পথে’ গ্রন্থেও পুনর্জন্মবাদের স্বপক্ষে বর্ণনা দেখতে পাওয়া যায়।

খন্ডন :

জমহুরের মতে এখানে (ثم يحييكم) এর অর্থ হাশরে পুনরায় জীবিত অবস্থায় উখিত হওয়া । আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদা হল পুনর্জন্মবাদে বিশ্বাস করা কুফরী।[19]

২. তিনি নিজে হজ করেননি। এ বিষয়ে তার আল্লাহ কোন পথে? গ্রন্থে লেখা হয়েছে : তার জনৈক ভক্ত আহমদ উল্লাহ দেওয়ানবাগী সাহেব কেন হজ করেননি- এটা চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে যান। স্বপ্নে দেখেন হযরত ইব্রাহীম (আ.) নির্মিত মক্কার কা’বা ঘর এবং স্বয়ং রাসূল (সা.) বাবে রহমতে হাজির হয়েছেন। রাসূল (সা.) তাকে উদ্দেশ্যে করে বলেছেন- আমি স্বয়ং আল্লাহর নবী মুহাম্মদ (সা.) তাঁর সাথে আছি এবং সর্বক্ষণ থাকি। আর কাবা ঘরও তাঁর সম্মুখে উপস্থিত আছে আমার মুহাম্মদী ইসলাম শাহ দেওয়ানবাগী প্রচার করতেছেন। তার হজ করার কোন প্রয়োজন নেই”।[20]

এখানে মক্কাস্থিত বাইতুল্লাহ শরীফে গিয়ে হজ্জ পালন করার ফরাযিয়াতকে অস্বীকার করা হয়েছে। আর হজ্জ হল ইসলামের পঞ্চ বুনিয়াদের একটি। এটাকে অস্বীকার করা সন্দেহাতীতভাবে কুফুরী।

এসব কুফুরী আকীদা-বিশ্বাস ছাড়াও তিনি কুরআন- হাদীছের বহু বক্তব্যকে চরম ভাবে বিকৃত করেছেন। যেমন কুরআনে বর্ণিত হযরত আদম ও হাওয়া কর্তৃক নিষিদ্ধ ফল খাওয়া সম্বন্ধে তার বক্তব্য হল : এই ফল দ্বারা যদি গান্দম ফল ধরা হয়, তাহলে অর্থ হবে গমের আকৃতির ন্যায় নারীদের গোপন অঙ্গ এবং আঞ্জির ফল ধরা হলে তার অর্থ হবে সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত নারীর বক্ষযুগল। অতএব আদিম হাওয়ার নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণ অর্থ তাদের যৌন মিলন।[21]

জমহুরে উম্মতের নিকট গৃহীত পরিস্কার ব্যাখ্যার বিপরীত। এরূপ ব্যাখ্যা প্রদানকারীদের বলা হয় যিন্দীক ও মুলহিদ।

উপরোল্লেখিত বিষয় ছাড়াও বিভিন্ন আকাইদগত বিষয় ও বিভিন্ন মাসায়েলের ক্ষেত্রে তিনি জমহুরের মতামতের বিপরীত এবং অদ্ভুত ধরণের কিছু বক্তব্য পেশ করেছেন। যেমন  :

১. আল্লাহ ও রাসূলকে স্বচক্ষে না দেখে কালিমা পড়ে সাক্ষ্য দেয়ার ও বিশ্বাস করার কোন অর্থ হয় না ।

২. কুরআন, কিতাব, হাদীছ, তাফসীর পড়ে আল্লাহকে পাওয়া যায় না। একমাত্র মুরশিদের সাহায্য নিয়ে আধ্যাতিক সাধনা করেই আল্লাহকে পাওয়া সম্ভব, এমনকি দুনিয়াতেই স্বচক্ষে দেখা যায় । (নাউযুবিল্লাহ)

৩. আল্লাহর সাথে যোগাযোগ সবই ক্বালবেই (অন্তরে) হয়ে থাকে। অন্যভাবে হাজার ইবাদত করেও আল্লাহকে পাওয়া যায় না।

৪. সাধনার দ্বারা আল্লাহকে নিজের ভিতরেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব, বাইরে কোথাও নয়। কঠিন সাধনার মাধ্যমে আমিত্বকে সম্পূর্ণ বিসর্জন দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী সাধকের সাথে আল্লাহ এমনভাবে মিশে যান, যেমন চিনি দুধের সাথে মিশে একাকার হয়ে যায়। তখন ঐ বান্দাকে আল্লাহ থেকে আলাদা করা মুশকিল।

৫. এরূপ ধ্যান করবেন, আদমের জীরে কদম (পায়ের নীচে) ক্বালব। এই ক্বালবে আল্লাহ ও রাসূল থাকেন।

৬. কুরআনে আল্লাহ আমাদেরকে এই ধারণা দিচ্ছেন যে, তিনি আমাদের ভিতরে এবং অতি নিকটে অবস্থান করেন কিন্তু আমরা এতই মূখ্য যে, তাঁর অবস্থান সাত আসমানের উপর বলে মনে করে থাকি।

৭. গত ১৯৯৮ সালে বিশ্ব আশেকে রাসূল সম্মেলনে আল্লাহ ও রাসূল স্বয়ং দেওয়ানবাগে এসেছিলেন। আল্লাহ ফেরেশতাদের নির্দেশ দিলেন উক্ত সম্মেলনে উপস্থিত সমস্ত আশেকদের তালিকা তৈরী করতে। ঐ তালিকাভূক্ত সবাই বেহেশতে চলে যাবে।[22]

৮. সূর্যোদয় পর্যন্ত সেহরী খাওয়ার সময়। সুবহে সাদেক অর্থ প্ৰভাত কাল। হুজুরেরা ঘুমানোর জন্য তাড়াতাড়ি আযান দিয়ে দেয়। আপনি কিন্তু খাবার বন্ধ করবেন না। আযান দিয়েছে নামাযের জন্য। খাবার বন্ধের জন্য আযান দেয়া হয় না।[23]

৯. দেওয়ানবাগী ও তার অনুসারীগণ প্রচলিত মীলাদ অনুষ্ঠানের উপর অত্যন্ত জোর প্রদান করে থাকেন। তাদের শ্লোগান হল “ঘরে ঘরে মীলাদ দাও রাসূলের শাফাআত নাও”।

এ ধরণের যিন্দীক ও মুলহিদ সূলভ এবং কুফরী আকীদা-বিশ্বাস পোষণ করা সত্ত্বেও দেওয়ানবাগী সাহেবের দাবী হল  :

১. তিনি আসল ইসলামের প্রচারক। তিনি তার প্রচারিত উপরোক্ত ধ্যান-ধারনা সম্বলিত মতবাদের নাম দিয়েছেন মোহাম্মাদী ইসলাম।[24] তার বক্তব্য হল- তার মতবাদের বাইরে সারা বিশ্বে যে ইসলাম চালু রয়েছে এটা আসল ইসলাম নয়, এজিদী ইসলাম, এজিদী চক্রান্তের ফসল।

২. আল্লাহই তাকে গোটা বিশ্বে খাঁটি মোহাম্মাদী ইসলাম প্রচারের দায়িত্ব দিয়ে নূরে মোহাম্মদীর ধারক ও বাহক রূপে পাঠিয়েছেন। তার সাপ্তাহিক পত্রিকায় লেখা হয়েছে- আল্লাহ ও রাসূল (সা.) সহ সমগ্র রূপে নবী রাসূল, ফেরেশতা এবং দেওয়ানবাগী ও তার মোর্শেদ চন্দ্রপাড়ার মৃত আবুল ফজলের উপস্থিতিতে সমস্ত ওলী আউলিয়াগণ এক বিশাল ময়দানে সমবেত হয়ে সর্বসম্মতিক্রমে দেওয়ানবাগীকে মোহাম্মাদী ইসলাম-এর প্রচারক নির্বাচিত করেন। অতঃপর সবাইকে নিয়ে আল্লাহ এক বিশাল মিছিল বের করেন। আল্লাহ, রাসূল দেওয়ানবাগী ও তার পীর- এর ৪ জনের হাতে মোহাম্মাদী ইসলামের পতাকা। আল্লাহ, দেওয়ানবাগী ও তার পীর- এই ৩ জন। সমানের সারিতে। সমস্ত নবী রাসূলসহ বাকীরা পেছনে। মিছিলে আল্লাহ নিজেই শ্লোগান দিচ্ছিলেন মোহাম্মদী ইসলামের আলো ঘরে ঘরে জ্বালো”।[25]

৪. তিনি বর্তমান যামানার মোজাদ্দেদ, মহান সংস্কারক, শ্রেষ্ঠতম ওলী- আল্লাহ।[26]

তার সম্পর্কে উপরোক্ত দাবী ও তার বুযুর্গী প্রমাণে তার ও তার ভক্তদের বিভিন্ন স্বপ্নের উল্লেখ করা হয়েছে। যেমনঃ তিনি খাবে দেখেছেন যে, ঢাকা ও ফরিদপুরের মধ্যখানে একটি বাগানে নবীজির প্রাণহীন দেহ খালি গায়ে পড়ে আছে। অতঃপর সবশেষে নবীজি দেওয়ানবাগীর সাথে হেঁটে হেঁটে চলে এসেছেন।[27]

আরও স্বপ্ন বর্ণনা করা হয়েছে যে, রাসূল (সা.) স্বপ্নযোগে তাকে “ইসলাম ধর্মের পুনর্জীবনদানকারী” খেতাবে ভূষিত করেছেন।[28]

এভাবে তার সূফী ফাউণ্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত বইগুলির বিভিন্ন স্থানে তার নিজের এবং তার ভক্তবৃন্দের বিভিন্ন স্বপ্ন বর্ণিত হয়েছে যা দ্বারা তার বুযুর্গী প্রমাণ করার প্রয়াস নেয়া হয়েছে। অথচ স্বপ্ন কোন দলীল নয়। কাষী ইয়ায বলেনঃ স্বপ্নের দ্বারা কোন নিশ্চিত জ্ঞান অর্জিত হয় না। এ ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের ইজমা’ রয়েছে। আল্লামা নববী বলেন- অদ্রুপ স্বপ্নের দ্বারা কোন হুকুমের পরিবর্তন ঘটানো যায় না। এ ব্যাপারে ইত্তেফাক বা সর্বসম্মত মত রয়েছে। যদিও হাদীছে বলা হয়েছে

من ران وق النام فقدر ای الحق

অর্থাৎ, নবী করীম (সা.) বলেন যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখল। সে যেন আমাকেও দেখল । কেনা শয়তান আমার রূপ ধারন করতে পারে। এ হাদীসে বুঝানো হয়েছে যে, রাসূল (সা.) কে স্বপ্নে দেখা মিথ্যা হতে পারে না। কেননা শয়তান রাসূল (সা.)-এর আকৃতি ধারণ করতে পারে না। তবে স্বপ্নে সে যা শুনেছে তা সঠিকভাবে বুঝতে পেরেছে এবং তা সঠিকভাবে মনে রাখতে পেরেছে, তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তাই স্বপ্ন কোন দলীল হতে পারে না। এ ব্যাপারে আল্লামা নববী তার দীর্ঘ ইবরাতে যা বলেছেন, সংক্ষিপ্ত ভাবে তার কিছু অংশ তুলে ধরা হল :

قال القاضی عیاض : ……… لایقطع بامر المنام ولا انه تبطل بسببه سنة ثبتت ولا تثبت به سنة لم تثبت وهذا باجماع العلماء هذا کلام القاضی و کذا قاله غیره من اصحابه وغیرهم فنقلوا الاتفاق

علی انه لای غیر به بسبب ما براه النائم ما تقر روی الشرع –

কিছু লোক হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রা.) কর্তৃক স্বপ্নে আযানের শব্দগুলো শুনেছিলেন এবং রাসূল (সা.) সে অনুযায়ী আযান প্রবর্তন করেছিলেন- এ দ্বারা স্বপ্ন দলীল বলে প্ৰমাণ পেশ করে থাকেন। কিন্তু এটা ঠিক নয়। কেননা সেখানে স্বপ্নটি সঠিক বলে রাসূল (সা.) স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেনঃ

ان هذه لرؤیا حق – (ترمذی ح— /۱) অর্থাৎ এটা অবশ্যই সত্য স্বপ্ন ।

রাসূল (সা.) এরূপ স্বীকৃতি না দিলে শুধু ঐ সাহাবীর স্বপ্নের ভিত্তিতে আযান প্রচলিত হত না। আর রাসূল (সা.)-এর ইন্তেকালের পর কারও স্বপ্ন সত্য হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেয়ার যেহেতু কেই থাকেনি, তাই এখন কারও স্বপ্নকে দলীল হিসেবে দাড় করানো যাবে না। এখানে এ কথাও স্মরণ রাখা দরকার যে, রেওয়াতে দ্বারা প্রমাণিত আছে- হযরত ওমর (রা.) এর ২০ দিন পূর্বে আযানের এরূপ শব্দ স্বপ্নে দেখেছিলেন। কিন্তু তিনি সে স্বপ্নের ভিত্তিতে সেভাবে আযান দেয়া শুরু করেননি।

স্বপ্ন দ্বারা কোন কিছুর দলীল দাঁড় করানো যায় না। বুযুর্গী স্বপ্ন দ্বারা প্রমাণিত হয় না; বুযুর্গী প্রমাণিত হয় সহীহ-ঈমান-আকীদা ও সহীহ আমল দ্বারা। অতএব, যতই স্বপ্ন বর্ণনা করা হোক দেওয়ানবাগীর ন্যায় যিন্দীক, মুলহিদ ও কুফরী পোষণকারী ব্যক্তি (এসব আকীদা পরিত্যাগ করা ব্যতীত) কস্মিনকালেও বুয়ুৰ্গ হতে পারে না।

তথ্যসূত্র : 

[1] “আল্লাহ কোন পথে? ৩য় সংস্করণ, ডিসেম্বর, ১৯৯৭ খ্ৰীষ্টাব্দে, পৃঃ ১১৩-১১৪ ও ১২৫-১২৬।

[2] ‘মানতের নির্দেশিকা’ পৃঃ ৩১, দ্বিতীয় সংস্করণ, জুন ২০০১ ৷৷

[3] প্রচলিত ধারনা তাদের মতে প্রকৃত ধারণা নয়, অর্থাৎ এটা ভুল। এ কথা “আল্লাহ কোন পথে?” গ্রন্থের ভূমিকায় বলা হয়েছে।

[4] “আল্লাহ কোন পথে”? ৩য় সংস্করণ, ডিসেম্বর, ১৯৯৭ খ্রীষ্টাব্দ, পৃঃ ৪০।

[5] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১১২।

[6] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৪৪।

[7] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৫৪।

[8] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৫৯।

[9] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৬০।

[10] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৫৭।

[11] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৬৯।

[12] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৬৮।

[13] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১২৮।

[14] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১০৩।

[15] বাতিল পীরের পরিচয়, মুফতী মুহাম্মাদ শামছুল হক, পৃঃ ২২।

[16] ‘আল্লাহ কোন পথে? ৩য় সংস্করণ, পৃষ্ঠা ১৩০।।

[17] এটা একটি পরিভাষা, এর অর্থ হল তা এমন বিষয় যা সকলের কাছে সুবিদিত, আম খাস নির্বিশেষে সকলেই সে সম্বন্ধে অবগত ॥

[18] عقئد الاسلام

[19] كشاف اصطلاحات الفنون

[20] আল্লাহ কোন পথে? দ্বিতীয় সংস্করণ, মে/১৯৯৭, পৃষ্ঠা ১৯২-১৯৩। উল্লেখ্য অত্র বইয়ের তৃতীয় সংস্করণে নিরবে এ বিষয়টির উল্লেখ পরিত্যাগ করা হয়েছে।

[21] আল্লাহ কোন পথে? ৩য় সংস্করণ, ডিসেম্বর, ১৯৯৭ খ্ৰীষ্টাব্দ, পৃঃ ৯৮ ৷৷

[22] সূত্র : মাসিক আত্মার বাণী, সংখ্যা- নভেম্বর-৯৯, পৃঃ ১০।।

[23] সূত্র : মাসিক আত্মার বাণী, সংখ্যা- নভেম্বর-৯৯, পৃঃ ৯।।

[24] তার প্রায় প্রত্যেকটা বইয়ের প্রচ্ছদ মোহাম্মদী ইসলাম লেখা আছে এবং এই ইসলামের বিশেষ পতাকা দেখানো হয়েছে।

[25] সাপ্তাহিক দেওয়ানবাগ পত্রিকা, সংখ্যা- ১২/৩/৯৯ শুক্রবার।।

[26] আল্লাহ কোন পথে? গ্রন্থের তৃতীয় সংস্করণের ভূমিকা, ১৩৭ পৃষ্ঠা, রাসূল সত্যিই কি গরীব ছিলেন ? পৃষ্ঠা নং- ১২ (ভূমিকা) ৷

[27] তথ্যসূত্র : ‘রাসূল সত্যিই কি গরীব ছিলেন? পৃষ্ঠা- ১২ (ভূমিক), চতুর্থ সংস্করণ, সেপ্টেম্বর, ২০০১ ৷

[28] প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১১।।

** লেখাটি আবদুশ শাফী আহমাদ রচিত “ঈমান বিধ্বংসকারী আক্বীদা ও মারেফতের গোপন প্রশ্নের জবাব” বই থেকে সংকলিত।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
slot online skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 rtp slot slot bonus new member skybet88 mix parlay slot gacor slot shopeepay mix parlay skybet88 slot bonus new member