ব্রিটিশ সম্রাজ্যের পাঁচ নিষ্ঠুরতা

ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিষয়ে কয়েকদিন আগে ব্রিটিশদের মধ্যেই এক সমীক্ষা চালানো হয়। এতে দেখা যায় ওই সাম্রাজ্য নিয়ে গর্ব করেন ৪৪ শতাংশ। আরো ৪৩ শতাংশ একে ভালো বলেই দাবি করে। এমন অনেক সমীক্ষায় একটি বিষয়ই দেখা যায়, ব্রিটিশরা স্বাভাবিকভাবে আগে থেকেই সাম্রাজ্য নিয়ে গর্ববোধ করে। খুব কম ব্রিটিশই আছে যারা ওই সাম্রাজ্যকে খারাপভাবে দেখে।

ব্রিটিশদের এমন গর্ব থাকতেই পারে, কারণ ১৯২২ সালেও বিশ্বের পাঁচভাগের একভাগ ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত। এমনকি কথাও প্রচলিত ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সূর্য কখনো ডোবে না। তবে ব্রিটিশ সম্রাজ্যের পুরো ইতিহাস ভালোভাবে জানা হলে সমীক্ষার ফল ভিন্ন হতে পারত। ব্রিটিশ শাসনামলেই ঘটেছে অনেক গণহত্যা। এ ছাড়া ব্রিটিশ সাম্রাজ্যেই ঘটেছে অনেক দুর্ভিক্ষ যে জন্য ব্রিটিশদের অর্থনৈতিক নীতিকেই দায়ী করা হয়।

ব্রিটিশ সম্রাজ্যের পাঁচটি বড় নিষ্ঠুরতার কথা তুলে ধরেছে ব্রিটেনেরই সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট

বয়ার কনসেনট্রেশন ক্যাম্প

1453304246-British-1

স্বাধীনতাকামী অ্যাংলো বয়ারদের সঙ্গে ব্রিটিশ ও আইরিশদের হয় বয়ার যুদ্ধ। ১৮৯৯ থেকে ১৯০২ সাল পর্যন্ত চলে দ্বিতীয় বয়ার যুদ্ধ। এই যুদ্ধে বিজয়ী হয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্য। যুদ্ধ শেষে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে স্থান হয় এক লাখ সাত হাজারের বেশি বয়ারের, যার বেশির ভাগই ছিল নারী ও শিশু। রোগ-শোক, খাবারের স্বল্পতাসহ নানা কারণে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পেই মৃত্যু হয় ২৭ হাজার ৯২৭ জনের। আর কত হাজার যে কালো মানুষ মারা গেছে তার কোনো হিসাবই রাখা হয়নি।

অমৃতসরে গণহত্যা

1453304282-British-2

১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল। ভারতের অমৃতসরে ব্রিটিশবিরোধী বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভকারীদের জালিয়ানওয়ালা বাগানে আটকে রেখে গুলি চালায় ব্রিটিশরা। গুলি চালনাকারী ব্রিটিশদের অধীনস্ত গুর্খা সেনা হলেও এর নির্দেশদাতা ছিলেন ব্রিটিশ ব্রিগেডিয়ার রেজিনাল ডায়ার। গোলাবারুদ শেষ না হওয়া ভারতীয় বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানো হয়। ১০ মিনিটের ওই চরম নিষ্ঠুর ঘটনায় ব্রিটিশ সরকারের হিসাবে ৩৭৯ জন নিহত হয়। তবে অন্যদের হিসাবে তা হাজারের বেশি। এ ছাড়া আরো হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছিল। ব্রিগেডিয়ার ডায়ারকে একজন নায়ক হিসেবে চিহ্নিত করে তৎকালীন ব্রিটিশরা। ওই সময় ব্রিটেনে তাঁর জন্য ২৬ হাজার পাউন্ড চাঁদাও তোলা হয়।

ভারত বিভক্ত করা

1453304278-British-3

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ আইনজীবী শেরিল রেডক্লিফকে দেওয়া হয় ভারত বিভক্ত করার দায়িত্ব। অতিদ্রুত এই কাজ শেষ করে ভারতবর্ষে রেখে যান দীর্ঘ বিভক্তি। রেডক্লিফের ধর্মভিত্তিক দেশের সীমারেখা ভাগের কারণে এক কোটির বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। আর ধর্মীয় হানাহানিতে নিহত হয় ১০ লাখেরও বেশি মানুষ।

মাউ মাউ বিদ্রোহ

1453304390-British-4

১৯৫১ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত আফ্রিকার কেনিয়ায় ঘটেছিল মাউ মাউ বিদ্রোহ। কেনীয়দের দাবি, হাজার হাজার নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল ওই সময়। এজন্য পুরোপুরিই দায়ী ব্রিটিশরা। আর ব্রিটিশদের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পেও নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হয় হাজার হাজার কেনীয়। মার্কিন ইতিহাসবিদ ডেভিড অ্যান্ডারসনের মতে, কেনিয়ায় ব্রিটিশ শাসনকালে বিদ্রোহে নিহতের সংখ্যা ২০ হাজার। তবে হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্লোস এলকিনের মতে এই নিহতের সংখ্যা লাখের বেশি।

ভারতে দুর্ভিক্ষ

1453304324-British-5

ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের কয়েকটি দুর্ভিক্ষে এক কোটি ২০ লাখ থেকে দুই কোটি ৯০ লাখ মানুষ মারা যায়। খাদ্যের অভাবে এসব দুর্ভিক্ষের সময় লাখ লাখ টন গম ভারত থেকে ব্রিটেনে নিয়েছে ব্রিটিশরা। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে ৪০ লাখ বাঙালি মারা যায়। অথচ ওই সময় ভারত থেকে খাবার নেওয়া হয়েছে ব্রিটিশ সৈন্যদের জন্য এবং খাবার রপ্তানি হয়েছে গ্রিসে। অথচ ওই সময়ের ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল বলেছেন, তিনি ভারতীয়দের ঘৃণা করেন। তারা বন্য মানুষ এবং বন্য ধর্মে বিশ্বাসী। খরগোশের মতো জন্মহারের কারণেই এমন দুর্ভিক্ষ হয়েছে বলে দাবি করেছেন চার্চিল।

উৎসঃ ionlinemedia

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88