আক্বীদার মাসআলায় কি মানুষের অজ্ঞতার অজুহাত গ্রহণযোগ্য?

প্রশ্ন : আক্বীদাহর মাসআলায় কি মানুষের অজ্ঞতার অজুহাত গ্রহণযোগ্য?

উত্তর:  আকীদার ক্ষেত্রে অজ্ঞতার অজুহাত গ্রহণ করা হবে কি না এ বিষয়টি অন্যান্য ফিক্বহী মাসআলার ন্যায় মতবিরোধপূর্ণ। কখনো কখনো এ মতভেদ শাব্দিক হতে পারে। কিন্তু আসলে তাদের মাঝে কোন মতভেদ নেই। যেমন কোন একটি ব্যাপারে বিদ্বানগণ একমত যে বিষয়টি কুফরী। কিন্তু যে ব্যক্তি কুফরীতে লিপ্ত হল, নির্দিষ্টভাবে তার উপর কি কুফরীর বিধান প্রযোজ্য হবে? কেননা সেখানে কুফরীর শর্তসমূহ বিদ্যমান এবং কাফির না হওয়ার প্রতিবন্ধকতা নেই। না কি কাফির হওয়ার দাবী অবর্তমান থাকায় বা কাফির হওয়ার কোন প্রতিবন্ধকতা থাকায় উক্ত ব্যক্তিকে কাফির বলা প্রযোজ্য হবে না? এ ব্যাপারে আলিমদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। কুফর প্রযোজ্যকারী বিষয় সম্পর্কে অজ্ঞতা দু’প্রকার।

 

(১) এমন ব্যক্তি হতে কুফরী প্রকাশ পাওয়া, যে ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মের অনুসারী অথবা সে কোন দ্বীনই বিশ্বাস করে না। সে এটা কোন সময় কল্পনাও করতে পারে না যে, সে যে বিষয়ের উপর রয়েছে, তা ইসলাম বহির্ভূত। এ ব্যক্তির উপর দুনিয়াতে কাফিরের বিধান প্রয়োগ করা হবে। আখিরাতের বিষয়টি সম্পূর্ণ আল্লাহর হাতে। এ ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য মত হল, আল্লাহ পরকালে তাকে পরীক্ষা করবেন। তাদের আমল সম্পর্কে আল্লাহই ভাল জানেন। আমরা ভাল করেই জানি যে, বিনা অপরাধে কেউ জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।

excuse about aqeedah

আল্লাহ বলেন,

وَلاَ يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا

অর্থ ঃ আপনার প্রতিপালক কাউকে যুল্ম করবেন না। (সূরা কাহ্ফ ঃ ৪৯)

দুনিয়াতে তার উপর কুফরীর বিধান প্রয়োগ হওয়ার কারণ এই যে, সে ইসলামকে দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করেনি। তাই তার উপর ইসলামের বিধান প্রয়োগ হবে না। আখিরাতে তাকে পরীক্ষা করার ব্যাপারে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ইবনুল কাইয়্যিম (রঃ) তাঁর রচিত “তরীকুল হিজ্বরাতাইন” নামক বইয়ে মুশরিকদের শিশুদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে হাদীসগুলো উল্লেখ করেছেন।

(২) এমন লোক থেকে কুফরী প্রকাশ পাওয়া, যার ধর্ম ইসলাম, কিন্তু সে এ কুফরী প্রযোজ্যকারী আকীদা নিয়ে বসবাস করছে অথচ সে জানে না যে, এ আকীদা ইসলাম বিরোধী। কেউ তাকে সতর্কও করেনি। এরূপ ব্যক্তির ক্ষেত্রে দুনিয়াতে ইসলামের বিধান প্রযোজ্য হবে অর্থাৎ তাকে মুসলমান হিসেবে গণ্য করা হবে। পরকালের বিষয়টি আল্লাহর হাতে। কুরআন, সুন্নাহ এবং আলিমদের বাণী হতে এ মর্মে অনেক দলীল রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّى نَبْعَثَ رَسُولًا 

অর্থ ঃ রাসূল না পাঠিয়ে আমি কাউকে শাস্তি দেব না। (সূরা ইসরা ঃ ১৫)

আল্লাহ বলেন,

وَمَا كَانَ رَبُّكَ مُهْلِكَ الْقُرَى حَتّٰى يَبْعَثَ فِي أُمِّهَا رَسُولاً يَتْلُوا عَلَيْهِمْ آيَاتِنَا وَمَا كُنَّا مُهْلِكِي الْقُرَى إِلَّا وَأَهْلُهَا ظَالِمُونَ

অর্থ ঃ আপনার পালনকর্তা জনপদসমূহকে ধ্বংস করেন না, যে পর্যন্ত তার কেন্দ্রস্থলে রাসূল প্রেরণ না করেন, যিনি তাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করেন এবং আমি জনপদসমূহকে তখনই ধ্বংস করি, যখন তার বাসিন্দারা যুল্ম করে। (সূরা কাসাস ঃ ৫৯)

আল্লাহ বলেন,

رُسُلًا مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ لِأَلَّا يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَى اللَّهِ حُجَّةٌ بَعْدَ الرُّسُلِ

অর্থ ঃ সুসংবাদদাতা ও ভীতি-প্রদর্শনকারী রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি, যাতে রাসূলগণের পরে আল্লাহর প্রতি অজুহাত বা যুক্তি করার মত কোন অবকাশ মানুষের জন্য না থাকে। (সূরা নিসা ঃ ১৬৫)

আল্লাহ বলেন,

وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ فَيُضِلُّ اللَّهُ مَنْ يَشَاءُ وَيَهْدِي مَنْ يَشَاءُ

অর্থ ঃ আমি সব রাসূলকেই তাদের জাতির ভাষাভাষী করেই প্রেরণ করেছি, যাতে তাদেরকে পরিষ্কারভাবে বোঝাতে পারেন। অতঃপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথ প্রদর্শন করেন। (সূরা ইবরাহীম ঃ ৪)

আল্লাহ তা‘আলা সূরা তাওবায় এরশাদ করেন,

وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُضِلَّ قَوْمًا بَعْدَ إِذْ هَدَاهُمْ حَتَّى يُبَيِّنَ لَهُمْ مَا يَتَّقُونَ

অর্থ ঃ আর আল্লাহ কোন জাতিকে হেদায়েত করার পর পথভ্রষ্ট করেন না যতক্ষণ না তাদের জন্য পরিষ্কারভাবে বলে দেন সে সব বিষয়, যা থেকে তাদের বেঁচে থাকা দরকার। (সূরা তাওবা ঃ ১১৫) 

আল্লাহ আরো বলেন,

وَهَذَا كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ فَاتَّبِعُوهُ وَاتَّقُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ أَنْ تَقُولُوا إِنَّمَا أُنزِلَ الْكِتَابُ عَلَى طَائِفَتَيْنِ مِنْ قَبْلِنَا وَإِنْ كُنَّا عَنْ دِرَاسَتِهِمْ لَغَافِلِينَ أَوْ تَقُولُوا لَوْ أَنَّا أُنزِلَ عَلَيْنَا الْكِتَابُ لَكُنَّا أَهْدَى مِنْهُمْ فَقَدْ جَاءَكُمْ بَيِّنَةٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ

অর্থ ঃ এটি এমন একটি বরকতময় গ্রন্থ, যা আমি অবতীর্ণ করেছি। অতএব তোমরা এর অনুসরণ কর এবং ভয় কর, যাতে তোমরা করুণাপ্রাপ্ত হও এবং যাতে তোমরা এ কথা বলতে না পার যে, গ্রন্থ তো কেবল আমাদের পূর্ববর্তী দু’টি সম্প্রদায়ের প্রতিই অবতীর্ণ হয়েছে। আমরা সেগুলোর পাঠ ও পঠন সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। কিংবা এ কথা বলতে না পার যে, যদি আমাদের প্রতি কোন গ্রন্থ অবতীর্ণ হত, আমরা তাদের চাইতে অধিক সঠিক পথপ্রাপ্ত হতাম। অবশ্যই তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ হতে তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ, হেদায়েত ও রহমত এসে গেছে। (সূরা আন‘আম ঃ ১৫৫-৫৭)

এমনি আরো অসংখ্য আয়াত রয়েছে, যা প্রমাণ করে যে, মানুষের কাছে দ্বীনের শিক্ষা দান ও তা বর্ণনা করার পূর্বে হুজ্জত কায়েম হবে না।

সহীহ মুসলিমে আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَا يَسْمَعُ بِي أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الْأُمَّةِ يَهُودِيٌّ وَلَا نَصْرَانِيٌّ ثُمَّ يَمُوتُ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِالَّذِي أُرْسِلْتُ بِهِ إِلَّا كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ

অর্থ ঃ ঐ সত্বার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, এ উম্মাতের কোন ইয়াহূদী বা নাসারা আমার কথা শুনে আমার আনিত বিষয়সমূহের প্রতি ঈমান আনয়ন না করে মৃত্যুবরণ করলে সে জাহান্নামের অধিবাসী হবে।( মুসলিম, অধ্যায় ঃ কিতাবুল ঈমান)

আলিমগণ বলেন, নতুন মুসলিম বা অমুসলিম দেশের নাগরিক বা মুসলিম থেকে দূরবর্তী স্থানের অধিবাসী হওয়ার কারণে কেউ যদি কুফরী কাজে লিপ্ত হয়, তাকে কাফির হওয়ার ফাতাওয়া দেয়া যাবে না।( মুগনী, ৮/১৩১) শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেন, যারা আমাকে চেনে, তারা অবশ্যই জানে যে, নির্দিষ্টভাবে কাউকে কাফির বা ফাসিক বলা থেকে আমি কঠোরভাবে নিষেধ করে থাকি। তবে যে ব্যক্তি কাফির বা ফাসিক হওয়ার কারণসমূহ সম্পর্কে অবগত আছে, তার কথা ভিন্ন। আমি আবারও বলছি যে, এ উম্মতের কেউ ভুলক্রমে অন্যায় কাজে লিপ্ত হলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দিবেন। চাই আকীদার মাসআলায় ভুল করুক কিংবা অন্য কোন মাসআলায়। সালাফে সালিহীন অনেক মাসআলায় মতভেদ করেছেন। তারপরও কেউ কাউকে কাফির বলেননি। তাদের থেকে এও বর্ণিত আছে যে, যে ব্যক্তি এরূপ কথা বলবে, সে কাফির হয়ে যাবে। কিন্তু কর্মের উপরে হুকুম লাগানো এবং ব্যক্তির উপরে হুকুম লাগানোর মাঝে পার্থক্য রয়েছে। শায়খুল ইসলাম আরো বলেন, কাউকে কাফির বলার ব্যাপারে কঠোরভাবে সাবধান করা হয়েছে। কারণ, কুফরীতে লিপ্ত ব্যক্তি এমন হতে পারে যে, সে নতুন মুসলিম অথবা সে আলিম-উলামা থেকে দূরের কোন জনপদে বসবাস করছে। কাজেই এরূপ ক্ষেত্রে দ্বীনের কোন বিষয় অস্বীকার করলেই তাকে কাফির বলা যাবে না। যতক্ষণ না তার কাছে হুজ্জ্বত (কুরআন-সুন্নাহর দলীলসমূহ) পেশ করা হবে। হতে পারে যে, সে দলীল-প্রমাণ শুনেনি অথবা শুনেছে কিন্তু বিশুদ্ধ সূত্রে তার কাছে পৌঁছেনি। কখনো এও হতে পারে যে, সে একজন আলিম। তার কাছে দলীল রয়েছে বা দলীলের ব্যাখ্যা রয়েছে। যদিও তা সঠিক নয়।( মাজমূআয়ে ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ঃ ৩/৩৩৯)

শায়খুল ইসলাম মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওয়াহ্হাব বলেন, আমি ঐ ব্যক্তিকে কাফির বলি, যে দ্বীনে মুহাম্মাদী সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর তাকে গালি-গালাজ করল। শুধু তাই নয়, মানুষকে আল্লাহর দ্বীন হতে বিরত রাখল এবং ধার্মিক লোকদের সাথে শত্র“তা পোষণ করল। আমি এ শ্রেণীর লোকদেরকে কাফির বলে থাকি।( আদ্ দুরারুস্ সানীয়া ঃ ১/৫৬) তিনি আরো বলেন, যারা বলে আমরা ব্যাপকভাবে মানুষকে কাফির বলি এবং দ্বীন পালনে সক্ষম ব্যক্তিকেও আমাদের কাছে হিজরত করে চলে আসতে বলি, তারা অপবাদ দানকারী মিথ্যুক। তারা মানুষকে আল্লাহর দ্বীন গ্রহণ করতে বাধা দিয়ে থাকে। আবদুল কাদের জ্বিলানী এবং সাইয়্যিদ আহ্মাদ বাদভীর কবরের উপরে যে মূর্তি রয়েছে, তার উপাসকদেরকে যদি অজ্ঞতার কারণে এবং তাদেরকে কেউ সতর্ক না করার কারণে কাফির না বলি, তাহলে কিভাবে আমরা এমন নির্দোষ লোকদেরকে আমাদের দিকে হিজরত না করার কারণে কাফির বলব, যারা কখনো আল্লাহর সাথে শরীক করেনি এবং আমাদের কুফর প্রতিপন্ন করেনি ও আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধও করেনি?( আদ্ দুরারুস্ সানীয়া ঃ ১/৬৬)

আল্লাহর কিতাব, রাসূলের সুন্নাত এবং আলিমদের কথা অনুযায়ী দলীল-প্রমাণ পেশ করা ব্যতীত কাউকে কাফির বলা যাবে না। আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের দাবীও তাই। তিনি অজুহাত পেশ করার সুযোগ দূর না করে কাউকে শাস্তি দিবেন না। বিবেক দ্বারা মানুষের উপরে আল্লাহর হক সাব্যস্ত করা সম্ভব নয়। যদি তাই হত, তাহলে রাসূল প্রেরণের মাধ্যমে হুজ্জ্বত পেশ করা যথেষ্ট হত না।

সুতরাং যে মুসলিম, সে ততক্ষণ পর্যন্ত মুসলিম হিসেবেই পরিগণিত হবে, যতক্ষণ না শরীয়তের দলীলের মাধ্যমে তার ইসলাম ভঙ্গ হবে। কাজেই কাফির বলার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ, তা না হলে দু’টি বড় ধরনের ভয়ের কারণ রয়েছে।

(১) আল্লাহর উপর মিথ্যাচারিতার অপবাদ দেয়া। সাথে সাথে যার উপর হুকুম লাগানো হল তাকেও এমন দোষে দোষী সাব্যস্ত করা হল, যা থেকে সে সম্পূর্ণ মুক্ত। আল্লাহর উপর মিথ্যাচারিতার অপবাদ এভাবে দেয়া হল যে, এমন ব্যক্তিকে কাফির বলা হয়েছে, যাকে আল্লাহ কাফির বলেননি। এটি আল্লাহ যা হালাল করেছেন, তা হারাম করার শামিল। কেননা কাউকে কাফির বলা বা না বলা এটি কেবলমাত্র আল্লাহরই অধিকার। যেমনিভাবে কোন কিছু হারাম করা বা হালাল করার দায়িত্ব আল্লাহর উপরে।

(২) দ্বিতীয় সমস্যাটি হল মুসলিম ব্যক্তি যে অবস্থার উপর প্রতিষ্ঠিত, তার বিপরীত অবস্থানে নিয়ে যাওয়া। কেননা যখন কোন মুসলিমকে লক্ষ্য করে কাফির বলবে, তখন সে যদি কাফির না হয়, তাহলে ফাতাওয়াদানকারী নিজেই কাফির হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সহীহ মুসলিমে ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

إِذَا قَالَ الرَّجُلُ لِأَخِيهِ يَا كَافِرُ فَقَدْ بَاءَ بِهِ أَحَدُهُمَ

অর্থ ঃ যখন কোন ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইকে কাফির বলবে, তখন তাদের দু’জনের একজন কাফিরে পরিণত হবে।( বুখারী, অধ্যায় ঃ কিতাবুল ঈমান) অন্য বর্ণনায় রয়েছে, যাকে কাফির বলা হল, সে যদি কাফির হয়ে থাকে তাহলে কাফির হবে। অন্যথায় ফাতাওয়া দানকারী নিজেই কাফিরে পরিণত হবে।( মুসলিম, অধ্যায় ঃ কিতাবুল ঈমান)

সহীহ মুসলিমে আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে,

وَمَنْ دَعَا رَجُلًا بِالْكُفْرِ أَوْ قَالَ عَدُوَّ اللَّهِ وَلَيْسَ كَذَلِكَ إِلَّا حَارَ عَلَيْهِ

অর্থ ঃ যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে কাফির বলবে অথবা আল্লাহর শত্র“ বলবে, সে অনুরূপ না হয়ে থাকলে যে বলল সে নিজেই কাফির বা আল্লাহর শত্র“ হিসেবে পরিণত হয়ে যাবে।( মুসলিম, অধ্যায় ঃ কিতাবুল ঈমান)

যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে কাফির বলে, সে নিজের আমল নিয়ে অহংকার করে এবং অপরকে তুচ্ছ জ্ঞান করে থাকে। এ ধরনের ব্যক্তি দু’টি সমস্যার সম্মুখীন। নিজের আমলকে খুব বড় মনে করলে আমল ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তার মধ্যে অহংকার আসার কারণে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন,

قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ الْكِبْرِيَاءُ رِدَائِي وَالْعَظَمَةُ إِزَارِي فَمَنْ نَازَعَنِي وَاحِدًا مِنْهُمَا قَذَفْتُهُ فِي النَّارِ

অর্থ ঃ আল্লাহ বলেন, অহংকার আমার চাদর। বড়ত্ব আমার পোষাক। যে ব্যক্তি আমার কোন একটি পোষাক নিয়ে টানাটানি করবে, আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।( আবূ দাউদ, অধ্যায় ঃ কিতাবুল লিবাস)

সুতরাং কাউকে কাফির বলার পূর্বে দু’টি বিষয় খেয়াল করতে হবে ঃ

(১) আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলের সুন্নাহতে কাজটিকে কুফরী বলা হয়েছে কিনা। যাতে করে আল্লাহর উপরে মিথ্যাচারিতায় লিপ্ত না হয়।

(২) যার ভিতরে কাফির হওয়ার কারণ ও শর্তসমূহ বিদ্যমান রয়েছে, কেবলমাত্র তার উপরই কুফরীর বিধান প্রয়োগ করা। কাফির হওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হল, জেনে-শুনে শরীয়ত বিরোধী এমন কাজে লিপ্ত হওয়া, যা কুফরীকে আবশ্যক করে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَمَنْ يُشَاقِقْ الرَّسُولَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّى وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ وَسَاءَتْ مَصِيرًا

অর্থ ঃ আর সুপথ প্রকাশিত হওয়ার পর যে রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মু’মিনগণের বিপরীত পথের অনুগামী হয়, আমি তাকে তাতেই প্রত্যাবর্তন করাবো, যাতে সে প্রত্যাবর্তন করতে চায় এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তন স্থল। (সূরা নিসা ঃ ১১৫)

জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করার শর্ত হল হেদায়েত সুস্পষ্ট হওয়ার পর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর বিরোধিতা করা।

কাজটি করলে কাফির হয়ে যাবে, এটা জানা কি জরুরী? নাকি কাজটি শরীয়তে নিষেধ এতটুকু জানাই যথেষ্ট? যদিও কাজটির ফলাফল সম্পর্কে অবগত না থাকে।

উত্তর হল, কাজটি শরীয়তে নিষেধ এ কথা জেনে তাতে লিপ্ত হলেই হুকুম লাগানোর জন্য যথেষ্ট। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) রামাযান মাসে দিনের বেলায় স্ত্রীর সাথে সহবাস করার কারণে এক লোকের উপর কাফ্ফারা ওয়াজিব করেছিলেন। কারণ, সে জানতো দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাস করা হারাম। কিন্তু কাফ্ফারা ওয়াজিব হওয়ার কথা জানতো না। বিবাহিত পুরুষ ব্যভিচারকে হারাম জেনে তাতে লিপ্ত হলে তাকে রজম করতে হবে। যদিও সে বিবাহিত যিনাকারীর শাস্তি যে রজম, তা সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে।

জোরপূর্বক কাউকে কুফরী কাজে বাধ্য করা হলে, তাকে কাফির বলা যাবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

مَنْ كَفَرَ بِاللَّهِ مِنْ بَعْدِ إِيمَانِهِ إِلَّا مَنْ أُكْرِهَ وَقَلْبُهُ مُطْمَئِنٌّ بِالْإِيمَانِ وَلَكِنْ مَنْ شَرَحَ بِالْكُفْرِ صَدْرًا فَعَلَيْهِمْ غَضَبٌ مِنْ اللَّهِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ 

অর্থ ঃ কেউ ঈমান আনার পরে কুফরীতে লিপ্ত হলে এবং কুফরীর জন্য অন্তরকে খুলে দিলে তার উপর আপতিত হবে আল্লাহর গযব এবং তার জন্যে রয়েছে মহা শাস্তি। তবে তার জন্যে নয়, যাকে কুফরীর জন্যে বাধ্য করা হয়েছে। কিন্তু তার চিত্ত ঈমানে অবিচল। (সূরা নাহল ঃ ১০৬) 

অধিক আনন্দ প্রকাশ করতে গিয়ে বা চিন্তিত অবস্থায় অথবা রাগান্বিত হয়ে অথবা ভীত অবস্থায় কুফরী বাক্য উচ্চারণ করলে কাফির হয়ে যাবে না। আল্লাহর বাণী,

وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُمْ بِهِ وَلَكِنْ مَا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا

অর্থ ঃ ভুলক্রমে কোন অপরাধ করলে তোমাদের কোন দোষ নেই। কিন্তু তোমাদের অন্তরে সংকল্প থাকলে অপরাধ হবে। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আহ্যাব ঃ ৫)

সহীহ মুসলিমে আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন ঃ

لَلَّهُ أَشَدُّ فَرَحًا بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ حِينَ يَتُوبُ إِلَيْهِ مِنْ أَحَدِكُمْ كَانَ عَلَى رَاحِلَتِهِ بِأَرْضِ فَلَاةٍ فَانْفَلَتَتْ مِنْهُ وَعَلَيْهَا طَعَامُهُ وَشَرَابُهُ فَأَيِسَ مِنْهَا فَأَتَى شَجَرَةً فَاضْطَجَعَ فِي ظِلِّهَا قَدْ أَيِسَ مِنْ رَاحِلَتِهِ فَبَيْنَا هُوَ كَذَلِكَ إِذَا هُوَ بِهَا قَائِمَةً عِنْدَهُ فَأَخَذَ بِخِطَامِهَا ثُمَّ قَالَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ اللَّهُمَّ أَنْتَ عَبْدِي وَأَنَا رَبُّكَ أَخْطَأَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ

অর্থ ঃ গুনাহ করার পর বান্দা যখন তাওবা করে, তখন আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির চেয়ে বেশী খুশী হন, যে একটি বাহনের উপর আরোহণ করে মরুভূমির উপর দিয়ে পথ চলতে ছিল। এমন সময় বাহনটি তার খাদ্য-পানীয় সব নিয়ে পলায়ন করল। এতে লোকটি নিরাশ হয়ে একটি গাছের নিচে এসে শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ নিদ্রায় থাকার পর উঠে দেখে বাহনটি তার সমস্ত আসবাবপত্র সহ মাথার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সে বাহনটির লাগাম ধরে আনন্দে বলে উঠল, হে আল্লাহ! আপনি আমার গোলাম, আমি আপনার প্রতিপালক। খুশীতে আত্মহারা হয়েই সে এ ধরনের ভুল করেছে।( মুসলিম, অধ্যায় ঃ কিতাবুত্ তাওবাহ)

কাফির বলার পথে আরেকটি বাধা হল কাজটি কুফরী হওয়ার ব্যাপারে কুফরীতে লিপ্ত ব্যক্তির কাছে তা’বীল বা ব্যাখ্যা থাকা। যাতে করে সে তাকে সত্য মনে করে। কাজেই সে তার ধারণা মতে পাপ বা শরীয়ত বিরোধী কাজে লিপ্ত হয়নি।

আল্লাহ বলেন,

 وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُمْ بِهِ وَلَكِنْ مَا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا

অর্থ ঃ ভুলক্রমে কোন অপরাধ করলে তোমাদের কোন দোষ নেই। কিন্তু তোমাদের অন্তরে সংকল্প থাকলে অপরাধ হবে। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আহ্যাব ঃ ৫) 

আল্লাহ আরো বলেন,

لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا

অর্থ ঃ আল্লাহ কাউকে সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না। (সূরা বাকারা ঃ ২৮৬)

ইমাম ইবনে কুদামা আলমাকদিসী বলেন, কোন প্রকার সন্দেহ বা ব্যাখ্যা ব্যতীত কেউ যদি নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করা হালাল ভেবে হত্যা করে এবং তাদের সম্পদ আত্মসাৎ করে, তাহলেও সে কাফির হয়ে যাবে। আর যদি তা’বীল করে কাফির ভেবে হত্যা করে এবং সম্পদ হালাল জেনে আত্মসাৎ করে, তবে তাদেরকে কাফির বলা হবে না। এজন্যে খারিজীদেরকে অধিকাংশ আলিমগণ কাফির বলেননি। অথচ তারা মুসলিমদের জান-মাল হালাল মনে করত। তাদেরকে কাফির না বলার কারণ এই যে, তারা তা’বীল বা অপব্যাখ্যা করে মুসলিমদেরকে হত্যা করেছিল। খারিজীরা অনেক সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবিয়ীদের রক্ত ও সম্পদ হালাল মনে করত। শুধু তাই নয় এ কাজকে তারা আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের মাধ্যম মনে করত। তা সত্ত্বেও আলিমগণ তাদেরকে কাফির বলেননি। কারণ, তাদের কাছে অপব্যাখ্যা ছিল।( খারিজীর বিশ্বাস এই যে, কোন মুসলমান যদি ক্ববীরা গুনাহে লিপ্ত হয়, সে ইসলাম থেকে বের হয়ে কাফির হয়ে যায় এবং তার জান-মাল হালাল হয়ে যায়।

ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রঃ) বলেন, কুরআনের বিরোধিতা করা খারিজীদের উদ্দেশ্য ছিল না। বরং কুরআন বুঝতে গিয়ে ভুল করার কারণে তারা বিদ‘আতে লিপ্ত হয়ে পাপী মু’মিনদেরকে কাফির মনে করেছে।( মাজমূআয়ে ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ঃ ১৩/৩০) তিনি আরো বলেন, খারিজীরা কুরআনের বিরোধিতা করে মু’মিনদেরকে কাফির বলেছে। অথচ কুরআনের ভাষায় মু’মিনদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। তারা বিনা ‘ইল্মে, সুন্নাহ্র অনুসরণ না করে এবং কুরআনের জ্ঞানীদের কাছে না গিয়ে কুরআনের অস্পষ্ট আয়াতগুলোর অপব্যাখ্যা করেছে। ইমামগণ ঐক্যবদ্ধভাবে খারিজীদেরকে নিন্দা করেছেন এবং গোমরা বলেছেন। তবে তাদেরকে কাফির বলার ক্ষেত্রে দু’টি বর্ণনা পাওয়া যায়। আলী (রাঃ) বা অন্য কোন সাহাবী তাদেরকে কাফির বলেননি। বরং তাদেরকে যালিম এবং সীমালঙ্ঘনকারী মুসলমান হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল ও অন্যান্য ইমামগণ থেকেও এ ধরনের কথা বর্ণিত আছে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) খারিজীদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে বলেছেন। চতুর্থ খলীফা আলী (রাঃ) তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করেছেন। সাহাবা ও পরবর্তী উত্তম যুগের ইমামগণ তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন। কিন্তু তাদের কেউ খারিজীদেরকে কাফির বলেননি। বরং তাদেরকে মুসলমান মনে করেছেন। তারা যখন অন্যায়ভাবে মানুষের রক্তপাত শুরু করল এবং মুসলিমদের ধন-সম্পদের উপর আক্রমণ করল, তখন আলী (রাঃ) তাদের এই যুল্ম এবং বিদ্রোহ দমন করার জন্য যুদ্ধ করেছেন। তাদেরকে কাফির মনে করে যুদ্ধ করেননি। তাই তিনি তাদের মহিলাদেরকে দাসী হিসেবে বন্দী করেননি এবং তাদের সম্পদকে গণীমত হিসেবে গ্রহণ করেননি। তাদের গোমরাহী কুরআনের দলীল, মুসলিমদের ইজমা দ্বারা প্রমাণিত। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার আদেশ দিয়েছেন। তথাপিও আলিমগণ তাদেরকে কাফির বলেননি। তাহলে কিভাবে এমন ফির্কার লোকদেরকে কাফির বলবেন, যাদের চেয়ে বড় আলিমগণ অনেক মাসআলায় ভুল করেছেন। সুতরাং এক দলের পক্ষে অপর দলকে কাফির বলা এবং জান-মাল হালাল মনে করা জায়েয নেই। যদিও তাদের ভিতরে বিদ‘আত বর্তমান রয়েছে। মূল কথা তারা যে বিষয়ে মতভেদ করেছে সে সম্পর্কে তারা সকলেই অজ্ঞ। কোন মুসলিম যদি তা’বীল করে কারও বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বা কাউকে কাফির বলে, তবে উক্ত মুসলিমকে কাফির বলা যাবে না। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বাণী থেকে যে হুকুম সাব্যস্ত হয়, দাওয়াত না পৌঁছিয়ে বান্দার ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হওয়ার ক্ষেত্রে হাম্বলী মাযহাবের আলিমগণের তিন ধরনের বক্তব্য রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে কুরআনের বক্তব্যই সঠিক।

আল্লাহ বলেন,

وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّى نَبْعَثَ رَسُولًا 

অর্থ ঃ রাসূল না পাঠিয়ে আমি কাউকে শাস্তি দেব না। (সূরা ইসরা ঃ ১৫) 

رُسُلًا مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ لِأَلَّا يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَى اللَّهِ حُجَّةٌ بَعْدَ الرُّسُلِ

অর্থ ঃ সুসংবাদদাতা ও ভীতি-প্রদর্শনকারী রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি, যাতে রাসূলগণের পরে আল্লাহর প্রতি যুক্তি আরোপ করার মত কোন অবকাশ মানুষের জন্য না থাকে। (সূরা নিসা ঃ ১৬৫)

বুখারী ও মুসলিমে আছে, আল্লাহর চেয়ে অধিক ওজর-অযুহাত গ্রহণকারী আর কেউ নেই। এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা সুসংবাদদাতা এবং ভয় প্রদর্শনকারী হিসেবে রাসূল প্রেরণ করেছেন।

মোট কথা অজ্ঞতার কারণে কেউ কুফরী করলে অথবা কুফরী বাক্য উচ্চারণ করলে কাফির হবে না। এটাই আল্লাহর কিতাব, রাসূলের সুন্নাত এবং আলিমদের পথ।

সূত্র

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
slot online skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 rtp slot slot bonus new member skybet88 mix parlay slot gacor slot shopeepay mix parlay skybet88 slot bonus new member