ড. মাহমুদ আত ত্বহহান এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

ড. মাহমুদ আত ত্বহহান। তাঁর পুরো নাম আবু হাফস মাহমুদ ইবনে আহমাদ আত ত্বহহান আল হালাবি আন নুয়াইমি। তিনি সিরিয়ার হালাব (আলেপ্পো)-র বাব নামক জেলায় ১৯৩৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং একটি সম্ভ্রান্ত ধর্মানুরাগী পরিবারে বেড়ে উঠেন। তার পিতার নাম আহমাদ আত ত্বহহান। তিনি বাব জেলা এবং পরবর্তীতে মানবিজ জেলায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন।

পরবর্তীতে আলেপ্পোর শরিয়াহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং ১৯৫৪ সালে এই পড়াশোনার সমাপ্তি ঘটে। আল হাফিয স্কুলে পড়াশোনাকালে তিনি শাইখ মুহাম্মাদ নাজিব খায়াতাহ এর তত্ত্বাবধানে কুরআন হিফয (মুখস্থ) করা শুরু করেন এবং আলেপ্পোর মাধ্যমিক পড়াশোনার সময় হিফয করা সমাপ্ত হয়।১৯৫৬ সালে তিনি ইউনিভার্সিটি অফ ডেমাস্কাস এর শরিয়াহ অনুষদে ভর্তি হন এবং ১৯৬০ সালে স্নাতক পড়াশোনা সম্পূর্ণ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনাকালেই তিনি বিবাহ করেন। স্নাতক পড়াশোনা শেষে ১৯৬১ সালে একজন রিজার্ভ অফিসার হিসেবে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন মানবিজের মুফতি-শাইখ জুমুআ আবু যালাম- এর কাছ থেকে তিনি আরবি ব্যাকরণ, আলফিয়্যাহ ইবনে মালিক এর দারস গ্রহণ করেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমি ১৯৪৬-১৯৪৯ এই তিন বছর মানবিজ শহরে ছিলাম। তখন আমি আলেপ্পোর খোসরাওয়ি স্কুলে ভর্তি হই। সেখানে থাকাকালে আমি আমার পরিবার এবং আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে যারা মানবিজ শহরে থাকতেন তাদের সাথে দেখাসাক্ষাৎ করতাম এবং ঐ বছরগুলোতে শাইখ জুমুআর কাছে ফিক্বহ, আরবি ব্যাকরণ এবং আলফিয়্যাহ ইবনে মালিক এর কিছু অংশ শিখেছি।”

মাধ্যমিকে পড়াশোনার সময় তিনি যাদের কাছ থেকে ইসলামী শিক্ষা অর্জন করেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন শাইখ আবদুল ওয়াহাব শুক্কার, মুহাম্মাদ আবুল খাইর জয়নুল আবেদীন, ফক্বিহ মুহাম্মাদ আল মাল্লাহ,মুহাম্মাদ নাজিব খায়াতাহ,ফক্বিহ মুহাম্মাদ সাল্কিনি, আলেপ্পোর মুফতি মুহাম্মাদ আসাদ আবাযি, আব্দুল্লাহ হাম্মাদ এবং আরও অন্যান্য। মিশরের আযহারে পড়াশোনাকালীন তিনি যাদের কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন শাইখ মুহাম্মাদ আবু যাহু,মুহাম্মাদ আস সামাহি। ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত তিনি সিরিয়ার হালাব-মানবিজ জেলায় শিক্ষকতায় যুক্ত ছিলেন। অতঃপর মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি হাদিস শাস্ত্র সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান অর্জন করেন এবং ১৯৬৯ সালে সেখান থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয় এর উসুলুদ দীন অনুষদ থেকে হাদিসশাস্ত্রে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তার থিসিসের বিষয়বস্তু ছিল “হাফিয খতিব আল বাগদাদী এবং হাদিস শাস্ত্রে তার অবদান”।

তার এই থিসিসের সুপারভাইজার ছিলেন শাইখ আব্দুল ওয়াহাব আব্দুল লতিফ। থিসিসটি প্রকাশিত হয় ১৯৮১ সালে। অতঃপর তিনি রিয়াদের মুহাম্মদ ইবনে সঊদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ অনুষদে যোগ দেন এবং সেখানে ৭ বছর কর্মরত ছিলেন, এসময়েই ১৯৭৭ সালে তিনি হাদিসশাস্ত্রের পরিভাষা সম্পর্কিত বিখ্যাত বই “তায়সিরু মুসত্বলাহিল হাদিস“-টি লিখেন যা সেসময়ে ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সঊদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ অনুষদের শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যপুস্তক হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর ১-২ বছর পরেই তিনি “উসুলিত তাখরিজ ওয়াদ দিরাসাতিল আসানিদ” নামক আরেকটি বিখ্যাত বই লিখেন।

তার পরবর্তী কর্মস্থল ছিল কুয়েত বিশ্ববিদ্যালয়ের “শরিয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ” ডিপার্টমেন্ট। এখানে তিনি ১৯৮২-২০০৫ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। সেখানে তিনি ৭০ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত প্রফেসর পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এভাবে মিশরে পড়াশোনা এবং সৌদি-কুয়েতে পেশাজীবন শেষে নিজ জন্মভূমি সিরিয়ায় তিনি প্রত্যাবর্তন করেন। ৩ স্ত্রী এবং ২ সন্তানকে নিয়েই তিনি জীবনের শেষ মুহুর্তগুলো কাটিয়েছেন। তার বাকি সন্তানেরা কর্মস্থলের সুবাদে অন্যত্র থাকতেন। আজকে এই মহান ব্যক্তিত্ব দুনিয়ার মায়া ছেড়ে পরকালের দিকে যাত্রা করলেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তার ভুলত্রুটি ক্ষমা করুন, তার নেকআমলসমূহ কবুল করুন এবং তার পুস্তক দ্বারা মুসলিম উম্মাহ-র উন্নতি সাধন করুন।

Credit: https://shamela.ws/index.php/author/1269

বাংলা লেখার সূত্র

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
kiw kow kan