শিশু প্রকৃতি
শিশুরা শুধু দেখেনা, তারা ভাবে, কল্পনা করে। তাদের কল্পনার গতি বল্গাহীন। তাদের কল্পনায় অসম্ভবও সম্ভব বলে প্রতিভাত হয়। পঙ্খীরাজ ঘোড়া একটি শিশুকে পিঠে নিয়ে তারকা জগত পার হয়ে যাচ্ছে এরূপ কল্পনা করতে তাদের কোন কষ্টই হয়না। অসম্ভব মনে হয়না।
পূর্ণ বয়স্ক, অভিজ্ঞ ব্যক্তির অভিজ্ঞতার প্রয়োজন। শিশুর অন্যদের অভিজ্ঞতার তেমন প্রয়োজন নেই। কারণ, শিশু বিশ্লেষণ করতে পারেনা। সে যতটুকু কাছে থেকে দেখে, ততটুকুর বেশী। বুঝতে পারেনা।
মনের খবর
জানা, খবর না রাখা শিশুর জন্যে লজ্জাজনক করে তুলতে হবে। ঘরের কোথায় কি সুন্দর জিনিষ আছে এ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে তাদের জ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োজনীয়তা বুঝাতে হবে।
ঘ্রাণ
ঘরের কোথায় কি আছে কুকুর গন্ধ শুকে তা বুঝতে পারে। শিশুদের ঘ্রাণ শক্তিও প্রখর। ঘরের কোথায় কি রাখা আছে বাবা মা ভুলে গেলেও শিশুরা একবার দেখে মনে রাখতে পারে।
শিশুদের শুধু ঘ্রাণশক্তি নয়, দর্শনশক্তি প্রবল। তাদের দৃষ্টি অত্যন্ত প্রখর। কিছুই তাদের নজর এড়ায়না। তারা অনেক কিছু বুঝেনা। কিন্তু দেখে এবং বয়স্কদের ব্যাপারে উৎসুক হয়।
মা বাবা যখন অতিথিদের সাথে কথা বলেন, তখন কতটুকু আন্তরিকতার সঙ্গে বলেন শিশুরা। অনুভব করতে পারে। তাদের সম্বন্ধে পরে যে সমস্ত আলোচনা বাবা-মা এর মাঝে হয় তা হতে শিশুরা বুঝতে পারে কার সাথে সম্পর্ক কত গভীর এবং ভালবাসা কতটুকু।
সম্পর্কে মৌখিক এবং আন্তরিক দু’ধরণের মাপকাটি শিশুরা ব্যবহার করতে অভ্যস্ত নয়। তারা অতিথিদের সাথে সে ধরণের ব্যবহারই করে যেমন তাদের প্রতি তাদের বাবা-মা করে থাকে।
খালা ফুফু
বাবা মার সম্পর্ক যাদের সাথে আন্তরিক, কথাবার্তায় আন্তরিকতার বাড়াবাড়ি না হলেও সে সমস্ত বাসায় যেতে এবং তারা কিছু এনে হাতে দিলে তারা গ্রহণ করতে আপত্তি করবেনা। খালা, ফুফুর বাসায় যেতে মায়ের অনুমতির অপেক্ষা করেনা। আগেই কোলে উঠে বসে থাকে বা তাদের গাড়ীতে আগে গিয়ে উঠে।
শিশুরা লক্ষ্য করে খালা বা ফুফুর বাড়ীতে জিনিসপত্র ভেঙ্গে ফেললে খালা-ফুফুর ভ্রু-কুঁচকে যায়না, নিঃশব্দে কপালেও ভাজ পড়েনা। বরং শো-কেসের জিনিস হাতাহাতি করতে গিয়ে ভেঙ্গে ফেললে খালা-ফুফুর কোলে বন্দীখানার জায়গাটা অতি সহজে পাওয়া যায়।
দামী জিনিষটা কে ভেঙ্গেছে জিজ্ঞাসা করলেও ভয়ে ভয়ে নয়, নিঃশঙ্কচিত্তে মাথা নেড়েই জবাব দেয় সেই ভেঙ্গেছে। আর জানে দোষটাও মাফ হয়ে গেছে।
ও ঠিকই বুঝতে পারে নিজের ঘরে শো-কেইসের জিনিষ ভেঙ্গে মায়ের কাছে থেকে যতটুকু শাস্তি পাওয়া যেতো, খালার কাছ থেকে ততটুকুও পাওয়া যাবেনা।
শিশুর মন মানসিকতা ও প্রবণতা নদীর সাথে তুলনীয়। খাল কেটে নদীর পানি বহু দূরে নেয়া যায়। খাল ক্রমশঃ গভীর করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নদীতে এনে ফেলা যায়।
নদীর পানি খাল কেটে এঁকে-বেঁকে যত দিকে ইচ্ছা নেয়া যায়, এক জায়গায় ঘুরান যায়। বিপরীত মুখেও প্রবাহিত করা যায়। শিশুর মন মানসিকতা, প্রবণতাও অনুরূপ। ভালোর দিকে নেয়া যায়। মন্দের দিকে টানা যায়। ভালোমন্দ উভয় দিকে প্রবাহিত এবং প্রসারিত করা যায়।
শিশুর পিতামাতা, শিক্ষক আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব কর্তৃক এবং পরিবেশের কারণে শিশুর মেধা ও প্রবণতা বিভিন্ন দিকে প্রভাবিত ও প্রবাহিত করা সম্ভব।
সূত্র: মহানবী ও শিশু বই থেকে। লেখক: এ. জেড. এম. শামসুল আলম