জোড়া লাগানো মানুষের বিয়ের বিধান
জোড়া লাগানো মানুষের বিয়ের বিধান
রচনায় : আবদুল্লাহ মাহমুদ
কিছুদিন থেকে জোড়া লাগানো মানুষের বিয়ের বিধান নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনা করার পর এ সংক্রান্ত মাসআলায় আমার কাছে যা প্রাধান্যযোগ্য মনে হয়েছে, তা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। আলিমগণ এ বিষয়ে তাদের মত উল্লেখ করতে পারেন এবং আমার মতামত পর্যালোচনা করতে পারেন।
এ বিষয়ে প্রথম কথা হচ্ছে, কুরআন ও হাদীসে এ সংক্রান্ত স্পষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা পাওয়া যায় না। যার কারণে আলিমগণ নিজেদের গবেষণা ও ইজতিহাদের আলোকে এ বিষয়ে বিভিন্ন মতামত প্রদান করেছেন। ফলশ্রুতিতে এ বিষয়ে আলিমদের বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়।
জোড়া লাগানো প্রথমত তিন প্রকার হতে পারে:
১. জোড়া লাগানো হলেও একজন সুস্থ ও স্বাভাবিক কিন্তু অন্য মারা গিয়েছে বা অন্য জনের শরীর সম্পূর্ণ অবশ ও অকার্যকর। এমন যদি হয়ে থাকে, তাহলে বিয়ে করতে কোনো সমস্যা নেই।
২. জোড়া লাগানো হলেও একজনের ভেতর আরেকজন রয়েছে। অন্যজন বাহ্যিকভাবে নেই বরং সম্পূর্ণ ভিতরে রয়েছে। এমন যদি হয়ে থাকে, তাহলে বিয়ে করতে কোনো সমস্যা নেই।
৩. জোড়া লাগানো তবে দুজনই সম্পূর্ণ সুস্থ ও বাহ্যত আলাদা আলাদা মানুষ এবং সবকিছুই ডবল ডবল। মূলত এই তিন নম্বর অবস্থা নিয়ে আলিমদের মাঝে বিস্তর মতপার্থক্য রয়েছে। তবে এ বিষয়ে সবাই একমত যে, অস্ত্রপাচারের মাধ্যমে যদি দুজনকে আলাদা করে দেওয়া যায়, তাহলে উভয়জন তখন ভিন্ন মানুষ আর উভয়ের বিয়ে করতে কোনো সমস্যা নেই।
তিন নম্বর অবস্থার আরও দুটি অবস্থা হতে পারে:
ক. জোড়া লাগানো দুজন কিন্তু দুজনের জীবন, প্রকৃতি ও ব্যক্তিত্ব আলাদা আলাদা।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে দুজনের জীবন, প্রকৃতি ও ব্যক্তিত্ব আলাদা আলাদা কি না, তা নির্ণয়ের পদ্ধতি কী? এ নিয়ে আলিমদের মাঝে চরম মতপার্থক্য রয়েছে। তবে অধিকাংশজন বলেছেন, দুজনকে বাহ্যত আলাদা মনে হলেও তাদের পেশাব-পায়খানা, শ্বাস-প্রশ্বাস একসাথে হলে, দুজন একসাথে নাক ডাকলে এবং দুজনের এক সাথে ঘুম ভাঙলে, দুজনের জীবন, প্রকৃতি ও ব্যক্তিত্ব আলাদা আলাদা বলে গণ্য হবে না; বরং একজন বলে গণ্য হবে। আর যদি এগুলো একসাথে না হয়, তাহলে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি বলে গণ্য হবে। তবে বর্তমান সময়ে আমরা অভিজ্ঞ ডাক্তারের কাছে গিয়ে এর সমাধান গ্রহণ করতে পারি। ডাক্তার যদি আলাদা আলাদা ব্যক্তি বলে তবে আলাদা আলাদা ব্যক্তি গণ্য হবে; অন্যথায় একজন বলে গণ্য হবে।
.
যদি দুজন আলাদা আলাদা ব্যক্তি হয়, তাহলে তার বিধান কী, তা নিয়ে তিন মত রয়েছে।
এক. তারা বিয়ে করতে পারবে না। কারণ, বিয়ে করলে অনেক সমস্যা রয়েছে, যেমন―শারীরিক সম্পর্ক ও অন্যান্য সম্পর্কের সময় পর্দা করা হবে না, যার সাথে বিয়ে হবে সে ছাড়া অন্য জনও তা উপভোগ করবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
দুই. তারা বিয়ে করতে পারবে। কারণ, বিয়ে না করলে হারাম সম্পর্কে জড়িত হতে পারে।
তিন. সরাসরি বিয়ে হারামও বলা যাবে না আবার হালালও বলা যাবে না। বরং তাদের অবস্থা অনুযায়ী বিধান প্রযোজ্য হবে। আর তা হচ্ছে, যদি বিয়ে না করার কারণে তারা জেনায় জড়িয়ে যায়, তাহলে বিয়ে করতে পারে। অথবা যদি একজন পাগল হয় আর অন্য জন সুস্থ হয়, তাহলেও বিয়ে করতে পারে। কারণ, যে কারণে বিয়ে করা হারাম বলা হচ্ছে, একজন পাগল হওয়ার কারণে তা আর বিদ্যমান নেই। তবে যার সাথে বিয়ে হবে কেবল তাকেই স্বামী বা স্ত্রী হিসেবে গণ্য করতে হবে। অন্য জনের সাথে দাম্পত্যজীবনের কোনো কিছু প্রয়োগ করা যাবে না। এ ছাড়া অন্যান্য সময়ে বিয়ে করতে পারবে না। আর আমার কাছে এই মতটি গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়েছে। আল্লাহু আলাম।
.
খ. দুজনের জীবন, প্রকৃতি ও ব্যক্তিত্ব আলাদা আলাদা কি না, তা জানা যায় না। যেমন নিম্নাংশ জোড়া লাগানো কিন্তু ওপরের অংশ ভিন্ন ভিন্ন। এ ক্ষেত্রে যদি দেখা যায়, তাদের লজ্জাস্থান একটাই এবং বাচ্চা প্রজনন অঙ্গও একটাই, তাহলে বিয়ে করা যেতে পারে।
.
আর যদি লজ্জাস্থান দুটি হয়, তার বিয়ে নিয়ে আলিমদের মাঝে মতপার্থক্য রয়েছে। একদল আলিমের মতে বিয়ে করতে পারে। দ্বিতীয় মত হচ্ছে, বিয়ে করা জায়েয নয়। তাদের এমন মতপার্থক্যের কারণ হচ্ছে, যারা বলেছেন তারা আলাদা আলাদা, তাদের মতানুযায়ী বিয়ে জায়েয হবে না। আর যারা বলেছেন তা আলাদা আলাদা নয়, তাদের মতানুযায়ী বিয়ে জায়েয।
.
তবে আমরা বর্তমান সময়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী আলাদা আলাদা কি না, তা নির্ধারণ করতে পারি। যদি ডাক্তার বলে যে, উভয়ের লজ্জাস্থান ভিন্ন ভিন্ন এবং একজনের লজ্জাস্থান অন্যজনের নয়, যেমন এক লজ্জাস্থানে মিলন করলে এর মাধ্যমে একজন বাচ্চা প্রসব করবে বা একজন আনন্দ উপভোগ করবে, তাহলে এর বিধান হচ্ছে, উপরিউক্ত আলাদা আলাদা ব্যক্তির দুই সুরতে বিয়ে করতে পারে। অর্থাৎ যদি বিয়ে না করার কারণে তারা জেনায় জড়িয়ে যায়, তাহলে বিয়ে করতে পারে। অথবা যদি একজন পাগল হয় আর অন্য জন সুস্থ হয়, তাহলেও বিয়ে করতে পারে। কারণ, যে কারণে বিয়ে করা হারাম বলা হচ্ছে, একজন পাগল হওয়ার কারণে তা আর বিদ্যমান নেই। অন্য অবস্থায় বিয়ে করবে না। আর লজ্জাস্থান আলাদা আলাদা হলেও তাদের প্রজনন অঙ্গ এক হয় এবং উভয়জন আনন্দ উপভোগ করে, তাহলে একজন গণ্য হয়ে বিয়ে করতে পারে।