‘মুসলিমদের নিয়ে উপহাসই আমার ইসলাম গ্রহণের টার্নিং পয়েন্ট’

আমি একজন ব্রিটিশ নারী। অনেক বছর ধরেই আমি কিছু একটা খোঁজ করছিলাম, কিন্তু অনেক চেষ্টার পরও আমি তা পাচ্ছিলাম না। তাই আমি বিভ্রান্ত ছিলাম। আমার বন্ধুদের সঙ্গে আমার নিজেকে বেখাপ্পা মনে হতো কারণ আমার বন্ধুরা ছুটির দিন এলেই বলত, ‘ওয়াও, এটা সাপ্তাহিক অবকাশের দিন, আমাদের পার্টি দেয়া প্রয়োজন। চলো শুরুতেই বিয়ারের বোতল খুলি এবং তারপর পোশাক পরা যাক।’

তখন আমি মনে মনে ভাবতাম, ‘কেন?’ এবং তারপর হঠাৎ করেই আমার পৃথিবী বদলে গেল।

দুবাইয়ে চাকরির প্রস্তাব আমি প্রচুর ভ্রমণের নেশা ছিল এবং ৩০ বছর বয়সে মনে হলো ‘যথেষ্ট হয়েছে, এবার আমাকে কোথাও স্থায়ী হতে হবে।’ তাই আমি বাড়িতে ফিরে গিয়েছিলাম এবং একটি চাকরির অনুসন্ধান করছিলাম। কিন্তু আমি কোনো চাকরি যোগার করতে পারিনি। তবুও, আমি ভাবলাম ‘ঠিক আছে, আমি এখন ছুটিতে দুবাই যাচ্ছি।’

দুবাইয়ে আসার দুই সপ্তাহ পরে আমি একটি চাকরির প্রস্তাব পাই। আমার মা-বাবা সত্যিই সত্যিই আমাকে নিয়ে অনেক আতঙ্কিত ছিল। পাশ্চাত্য দেশের একজন নারীর আরব দেশে ভ্রমণ নিয়ে আমার মতো আমার বাবা-মায়েরও অনেক অবান্তর ধারণা ছিল।

এই অবান্তর ধারণা কেবল আমাদের মধ্যেই ছিল না, প্রায় প্রতিটি পশ্চিমাই এই ধারণা পোষণ করে। এটি ছিল ২০০১ সালের শেষের দিক। আপনি জানেন, ওই সময় ৯/১১ সংঘঠিত হয়েছিল এবং এই ঘটনার কারণে আমাকে নিয়ে সবাই শুধু খারাপ কিছু আশা করছিল। আমার বেড়ে ওঠার পথে আমি মুসলিমদেরও ছোঁয়া পেয়েছি। এটি আসলেই শুরু হয়েছিল আমার বড় ভাই যখন ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়, তখন থেকেই।

সুতরাং তার বোন হওয়ায় এবং তার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাতে আমরা একত্রে ইসলামি কেন্দ্রগুলোতে যেতাম। আমি তার সঙ্গে বেশ কয়েকটি ইসলামি কেন্দ্রে গিয়েছিলাম এবং কয়েকটি সেশনে অংশগ্রহণ করেছি। আমরা একসঙ্গে কয়েকটি বই পড়েছি।

কিন্তু এসব কিছু সত্যিই আমাকে অনুপ্রাণিত করতে পারেনি যে, ‘ওহ, আমি এখন ইসলামে ধর্মান্তরিত হবো।’ এবং তারপর আমি একটি ইসলামিক দেশে এসেছি এবং আমার মুসলিম অভিজ্ঞতা অনেকটাই ভিন্ন।

হঠাৎ আমি ভাবলাম যে তারা (মুসলিমরা) আসলেই খুব সুন্দর। তারা আপনার সঙ্গে অত্যন্ত সম্মান দিয়ে আচরণ করে। এটি আমাকে স্বস্তি দিয়েছিল। শুরুতে আমি অন্যান্য দেশের নাগরিকদের তুলনায় ইউরোপীয়দের সঙ্গে বেশি মিশতাম, কারণ আমি আমার সান্ত্বনার জায়গাটি ধরে রাখতে চেয়েছিলাম।

কিন্তু তারপর এক পর্যায়ে আমি আমার সান্ত্বনার জায়গাটি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলাম কারণ হঠাৎ করেই এটি আমার জন্য আর স্বস্তিদায়ক ছিল না।

আমি আমার শাহাদাহ (কালেমা শাহাদাত পাঠ) ঘোষণার ছয় মাস আগে থেকে আবায়া (বোরখা) পরা শুরু করলাম । আমি শুরু থেকেই আবায়া পছন্দ করতাম, কিন্তু সবসময় এটা পরিধান করা এড়িয়ে চলতাম কারণ আমার কাছে মনে হতো – আমার মতো একজন শ্বেতাঙ্গ নারী আবায়া পরিধান করলে তা এখানকার স্থানীয়দের প্রতি অসম্মান দেখানো হতে পারে এবং প্রত্যেকে হয়তো বিরক্ত হতে পারে।

ওই সময় আমার প্রাক্তন স্বামী সম্পর্কে আমার মনে ভয় কাজ করছিল কারণ আমার বিবাহটি ছিল অনেকটা দুঃস্বপ্নের মতো। যদিও তখনো সে আমার স্বামী ছিল। তাই ধীরে ধীরে আমি তার থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করি। দেশে ফিরে গিয়ে আমরা আমাদের বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে আলোচনা করতাম এবং আমি সব সময় তাকে আমার কাছ থেকে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করতাম।

এবং তিনি সবসময় বলত, ‘না, তুমি আমার স্ত্রী। আমি এখানেই থাকব। আমি যখন সিদ্ধান্ত নেব, কেবল তখনই চলে যাব কারণ আমি পুরুষ এবং আমিই সিদ্ধান্ত নেব।’ এবং তারপর এক সকালে আমি ঘুম থেকে জেগে ওঠি এবং ভাবলাম, ‘ঠিক আছে, আজ থেকে আমি একজন মুসলিম হয়ে যাব।’

তাই আমি গোছল করে পবিত্র হয়ে নিলাম এবং পোশাক পরে আমি আমার উদ্দেশ্য সাধন করতে বেড়িয়ে পড়ি। বিষয়টি নিয়ে আমি কারো সঙ্গে আলাপ করিনি এবং কেউ তা জানত না। সাত বছর আগে ইসলামে ধর্মান্তরিত এক জার্মান বোনের কাছে আমি যাই এবং তাকে নিয়ে আমি আমার শাহাদাহ ঘোষণা করি।

আমি বাসায় ফিরে আসলাম এবং শুধু ‘সুবহানাল্লাহ’ বলতাম। তখনো আমার আমার স্বামী জানতেন না যে আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি এবং আমি সেই সময় তাকে এটি বলতে চাইনি কারণ গত ছয় মাসে আমি প্রতিদিন তাকে জিজ্ঞাসা করতাম, ‘আপনি কখন চলে যাচ্ছেন?’ এবং আমি ভাবলাম আজকে আমি তাকে আবারো জিজ্ঞাসা করব ‘সুবহানাল্লাহ’ ‘তাহলে আপনি কখন চলে যাচ্ছেন?’

আমার মুখে বারবার ‘সুবহানাল্লাহ’ শুনে সে বুঝতে পারে আমি মুসলিম হয়েছি। এবং তারপর তিনি বললেন, ‘আমি আজই চলে যাব। আমি ইতোমধ্যেই আমার জামাকাপড় গুছিয়ে নিয়েছি।’ সুতরাং এটি ছিল আল্লাহর একটি ইশারা যে আমি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

ইসলাম আমাকে শক্তিশালী করেছে। ইসলাম আমাকে অনেক বেশি শক্তিশালী করেছে এবং হঠাৎ করেই আমি আরো বেশি পড়াশুনা শুরু করলাম কারণ সবাই মনে করে যে আমি শুধুমাত্র শাহাদাহই ঘোষণা করেছি। আমাকে বলা হতো, ‘আপনি একটুও কোরআন পড়েন না, এটি ইসলামের পথ নয়, ইত্যাদি।’

এটি আমাকে অনেক বেশি পড়াশুনা করতে উৎসাহ দিয়েছে এবং ইসলাম সম্পর্কে অনেক বেশি জ্ঞান লাভ করতে সহায়তা করেছে। এটা আসলেই আমার জন্য কঠিন একটা বছর ছিল। কারণ হঠাৎ করেই আমার সব বন্ধুরা শত্রুতে পরিণত হলো।

সেই সময়ে কেট নামে আমার এক মেয়ে বন্ধু আমাকে তার সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। তিনি সত্যিই আমাকে অনেক সমর্থন করেছেন। আমি মনে করি সেই ছিল একমাত্র ব্যক্তি যিনি আমার ইসলামে ধর্মান্তরের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছিল। অধিকাংশ লোকই আমার ধর্মান্তরে অত্যন্ত হতাশ ছিল এবং আমাকে নিয়ে তাদের অনেক ভয় ও উদ্বেগ ছিল।

আমি জানতাম, কেট সবসময়ই আমার পাশে রয়েছে এবং তার মতো ভাল বন্ধু পাইয়ে দেয়ার জন্য প্রতিদিনই আল্লাহকে ধন্যবাদ দিতাম। কিন্তু কেট সেই সময় মুসলমান ছিলেন না। তিনি আসলে কিছুটা বিভ্রান্ত ছিল। আমার মনে আছে, আমি আমার প্রাক্তন স্বামীর সঙ্গে কেটকে নিয়ে একদিন লাঞ্চে গিয়েছিলাম এবং এটি এখনো আমার মনে নাড়া দেয়। আমার স্মরণ আছে, আমরা একত্রে গাড়িতে বসে ছিলাম এবং এটি ছিল শুক্রবার।

আমরা ‘রাশ আল-খুর’ এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলাম। শুক্রবারের নামাজ আদায়ের জন্য অনেক লোক খোলা গাড়ি নিয়ে মসজিদের দিকে যাচ্ছিল। আমরা এই দৃশ্য দেখে অনেক হেসেছি কারণ এটি ছিল কনভয়ের মতো এবং আমরা ভাবলাম প্রার্থনার জন্য এটি খুবই বিপজ্জনক যাত্রা।

আমাদের মনে প্রশ্ন জেগেছিল, শুধুমাত্র প্রার্থনার জন্য কেন তারা তাদের নিজেদের নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলছে?

এবং হঠাৎ করেই গাড়িতে আমাদের সব কথা-বার্তায় ধর্মের বিষয়টি চলে আসে এবং আমার মনে আছে তখন কেট বলেছিল, ‘আমি ধার্মিক নই। কিন্তু আমাকে যদি ধর্ম বেছে নিতে হয়, তবে আমি ইসলামকেই বেছে নেব।’

তার এই কথায় আমরা সবাই হেসেছিলাম এবং আমরা তাকে বললাম, ‘কেন আপনি ইসলামকে বেছে নিবেন? এটি ভণ্ড ধর্ম।

আসলে এটা ছিল একটি বড় বিষয় টার্নিং পয়েন্ট এবং সেদিন থেকেই কেট ও আমি ধর্ম সম্পর্কে অনুসন্ধান শুরু করেছিলাম…

Credit: Revert Stories : Journey To Islam – ইসলামে আসার গল্প

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
kiw kow kan