আল-কুরআনের সাথে সুন্নাহর সম্পর্ক (প্রথম পর্ব)

কুরআনুল করীম আল্লাহ তা’আলার বাণী যা সরাসরি আল্লাহ তা’আলার পক্ষ হতে জিবরীলের মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ওহী হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছে। অপর পক্ষে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ আল্লাহ তা’আলার বাণী না হলেও তা ওহী হতে মুক্ত নয়, বরং তাও ওহী এর অন্তর্ভুক্ত, আল্লাহ তা’আলাই সে স্বীকৃতি দিয়েছেন, আল্লাহ তা’আলা বলেন: ﴿وَمَا يَنطِقُ عَنِ ٱلۡهَوَىٰٓ ٣ إِنۡ هُوَ إِلَّا وَحۡيٞ يُوحَىٰ ٤﴾ [النجم : ٣،  ٤]   “আর তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না বরং যা ওয়াহী করা হয় তাই বলেন[1]।”

অতএব আল কুরআন ও সুন্নাহর মাঝে তেমন কোন দূরত্ব নেই বরং ওয়াহীর সূত্রে এক অপরের সাথে সম্পৃক্ত ও পরিপূরক। তাইতো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:إِنِّيْ أُوْتِيْتُ الكِتَابَ وَمِثْلَهُ مَعَهُ “আমাকে কিতাব [কুরআন] এবং এর সাথে অনুরূপ [সুন্নাহ] দেয়া হয়েছে”।[2] সুতরাং কুরআন ও সুন্নাহর সম্পর্ক হল অতি গভীর। এ বিষয়টি আলোকপাত করতে গিয়ে ইসলামী গবেষকগণ সকলেই ঐকমত্য পোষণ করেন যে, কুরআনের সাথে সুন্নাহর সম্পর্কের তিনটি অবস্থা রয়েছে।

প্রথম অবস্থা: কুরআন ও সুন্নাহর হুবহু মিল থাকবে। যেমন- হাদিসে এসেছে,

عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بُنِيَ الإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ وَإِقَامِ الصَّلاَةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَصَوْمِ رَمَضَانَ وَحَجِّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيْلاً

সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে ওমার রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইসলামের ভিত্তি হল পাঁচটি- [১] সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া সত্যিকার কোন মা’বুদ বা উপাস্য নেই এবং সাক্ষ্য প্রদান করা যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা’আলার রাসূল। [২] সালাত কায়েম করা, [৩] যাকাত আদায় করা, [৪] রমযান মাসে সাওম পালন করা এবং [৫] সামর্থ্য বান ব্যক্তির বাইতুল্লায় হজ্জ সম্পদান করা।[3]

হাদিসের আলোচ্য বিষয়গুলি হুবহু কুরআনুল করীমেও এসেছে: আল্লাহ তা’আলা বলেন:

﴿ وَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰةَۚ ١١٠ ﴾ [البقرة: ١١٠]

“তোমরা সালাত কায়েম কর এবং যাকাত আদায় কর”।[4] তিনি আরও বলেন: ﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ ١٨٣﴾ [البقرة: ١٨٣]   “হে ঈমানদারগণ তোমাদের উপর [রমাযান মাসের] রোযা ফরয করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করা হয়েছিল”।[5] তিনি আরও বলেন, ﴿وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلۡبَيۡتِ مَنِ ٱسۡتَطَاعَ إِلَيۡهِ سَبِيلٗاۚ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٩٧﴾ [ال عمران: ٩٧]   “আল্লাহর উদ্দেশ্যে [কাবা] গৃহে হজ সম্পাদন করা সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের অপরিহার্য কর্তব্য”।[6]

সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে ওমার রাদিআল্লাহু আনহু-এর বর্ণিত হাদিসে যেমন, সালাত, যাকাত, সাওম ও হজ্জ মৌলিকভাবে আলোচিত হয়েছে ঠিক তেমনি কুরআনুল করীমের আয়াতসমূহে উক্ত বিষয়গুলি মৌলিকভাবে আলোচিত হয়েছে। সুতরাং কুরআন ও সুন্নাহর মাঝে এ ক্ষেত্রে হুবহু মিল রয়েছে। পার্থক্য শুধু এটাই কুরআনে বিষয়টি সংক্ষিপ্ত আকারে বর্ণনা করা হয়েছে আর হাদিসে আরও বিস্তারিত করে আলোচনা করা হয়েছে।

দ্বিতীয় অবস্থা: দ্বিতীয় অবস্থা হল সুন্নাহ কুরআনের মুতলাক [সাধারণ] হুকুমকে মুকাইয়াদ [সীমাবদ্ধ] হিসেবে, মুজমাল [সংক্ষিপ্ত] হুকুমকে মুফাস্সাল [বিস্তারিত] হিসেবে এবং ‘আম [ব্যাপক] হুকুমকে খাস [নির্দিষ্ট] হিসেবে বর্ণনা করে থাকে। যেমন- সালাত, যাকাত, সিয়াম, হজ্জ, পারস্পারিক আদান-প্রদান ও বেচা-কেনা ইত্যাদি বিষয়গুলি সংক্ষিপ্তভাবে কুরআনে এসেছে, কিন্তু তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদিসে বিস্তারিত আকারে আলোচিত হয়েছে। মূলত: অধিকাংশ হাদীসই হল কুরআনের সংক্ষিপ্ত বিষয়গুলি বিস্তারিত বর্ণনার ক্ষেত্র। পাঠকের কাছে এ বিষয়টি আরও পরিস্কার হওয়ার জন্য নিম্নে কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হল।

[১] কুরআনের মুজমাল [সংক্ষিপ্ত] বিষয়গুলি সুন্নাহ মুফসসাল [বিস্তারিত] ভাবে বর্ণনা দিয়েছে।

ইমাম মারওয়াযী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, ইসলামের ফরয মূলনীতিগুলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহর বিস্তারিত ব্যাখ্যা ছাড়া তা জানা ও আমল করা কখনও সম্ভব নয়, যেমন- সালাত, যাকাত, সিয়াম, হজ ও জিহাদ ইত্যাদি।

[ক] পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, وَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ  “তোমরা সালাত কায়েম কর”।[7]

এখানে শুধুমাত্র মুজমাল [সংক্ষিপ্ত]ভাবে সালাত কায়েমের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বর্ণনা করা হয়নি তার নির্দিষ্ট সময়গুলি, নির্দিষ্ট রাকাতের সংখ্যাগুলি ও আরও অন্যান্য বিষয়গুলি। কিন্তু তার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাদিসে। ফরয সালাতের সময় কখন, যোহরের সময় কখন, আসর, মাগরিব ও এশার সময় কখন? কোন সালাত কত রাকাত, সুন্নাত ও ফরয কত রাকাত? জুমার সালাত কি নিয়মে, ঈদের সালাত কি নিয়মে, পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাত কি নিয়মে? সুন্নাত সালাত কি নিয়মে? রুকু, সিজদা ও তাশাহহুদ কি নিয়মে এবং কখন কোন কিরাত ও দু’আ পাঠ করতে হবে ইত্যাদি সব বিষয়গুলি নিখুঁতভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সুন্নাহর মধ্যে, এমনকি বাস্তব চিত্র তুলে ধরে তাহা অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন, তিনি বলেন, صلوا كما رأيتموني أصلي “তোমরা ঠিক সেই নিয়ম পদ্ধতিতে সালাত সম্পাদন কর, যেভাবে আমাকে সম্পাদন করতে দেখেছ।”

[খ] আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে বলেন, وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰةَۚ  “তোমরা যাকাত আদায় কর”।[8]

এখানে শুধু যাকাত আদায় এর বিধান মুজমাল [সংক্ষিপ্ত]ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, কিন্তু কোন কোন সম্পদের যাকাত আদায় করতে হবে? কোন সময়ে ও কোন নিয়মে তা বিস্তারিত কোন বর্ণনা কুরআনুল করীমে আসেনি, বরং এ সমস্ত মুজমাল [সংক্ষিপ্ত] বিধান মুফাসসাল [বিস্তারিত]ভাবে এসেছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদিসে। কোন কোন সম্পদের যাকাত দিতে হবে এবং কি পরিমাণ সম্পদে, কোন সময় ও নিয়মে যাকাত দিতে হবে সবই সবিস্তারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সুন্নায় বর্ণনা করে দিয়েছেন। যেমন- তিনি বলেন:

لَيْسَ فِيْ أَقَلِّ مِنْ خَمْسِ أَوَاقٍ مِن الْوَرَقِ صَدَقَةٌ، وَلاَ فِيْ أَقَلِّ مِنْ خِمْسَةَ أَوْسَقِ صَدَقَةٌ، وَلاَ فِيْ أَقَلِّ مِنْ خَمْسِ ذُوْدٍ صَدَقَةٌ، وَلاَ فِيْ أَقَلِّ مِنْ أَرْبَعِيْنَ مِنَ الْغَنَمِ صَدَقَةٌ، وَلاَ فِيْ أَقَلِّ مِن ثَلاَثِيْنَ مِن الْبَقَرِ صَدَقَةٌ.

“পাঁচ উকিয়া তথা ৫২.১/২ তলার কম রৌপ্য হলে কোন যাকাত নেই, পাঁচ আওসুক তথা প্রায় ১৭ মনের কম ফসল হলে কোন যাকাত নেই, পাঁচটি উটের কম হলে কোন যাকাত নেই, ছাগল ৪০টির কম হলে কোন যাকাত নেই, গুরু ৩০টির কম হলে কোন যাকাত নেই”।[9] ইত্যাদি যাকাতের খুঁটিনাটি সব বিধান বিস্তৃতভাবে সুন্নাহয় বর্ণনা করা হয়েছে।

[গ] আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেন, كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ “তোমাদের উপর রমাযানের রোযা ফরয করা হয়েছে”।[10]

কিন্তু রমাযান মাস কিভাবে শুরু হবে? সাওম অবস্থায় কি কি নিষিদ্ধ? ফরয সাওমের নিয়ম কি? নফল সাওমের নিয়ম কি? ইত্যাদি বিষয়গুলি বিস্তারিত আলোচনা করা হয়নি, পক্ষান্তরে সাওম সম্পর্কীয় যাবতীয় বিধি-বিধান যেমন- চাঁদ দেখেই সাওম শুরু করতে হবে আবার চাঁদ দেখেই সাওম শেষ হবে, এবং কি করলে সাওম সুন্দর হয়, কি করলে নষ্ট হয় ইত্যাদি বিষয়গুলি সবিস্তারে সুন্নায় আলোচনা করা হয়েছে।

[ঘ] আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেন, ﴿وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلۡبَيۡتِ مَنِ ٱسۡتَطَاعَ إِلَيۡهِ سَبِيلٗاۚ ٩٧﴾ [ال عمران: ٩٧] “আল্লাহর উদ্দেশ্যে সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের কাবা গৃহে হজ সম্পাদন করা অবশ্য কর্তব্য[11]।”

হজের বিধান কুরআন মাজিদে মুজমাল [সংক্ষিপ্ত]ভাবে এসেছে, এর বিস্তারিত বর্ণনা যেমন- কোথা হতে ইহরাম বাঁধবে, কিভাবে ইহরাম বাঁধবে, হজের দিনগুলিতে মক্কায়, মিনায়, আরাফায় কি কি কাজ করতে হবে তা কুরআন মাজিদে সবিস্তারে আলোচনা করা হয়নি বরং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নায় সকল ক্ষেত্রের সকল সুন্নাত, ওয়াজিব ও ফরযসমূহ বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে। এ জন্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজের সকল কর্মক্ষেত্রে সাহাবীদের লক্ষ্য করে বলেছিলেন: لتأخُذُوْا عَنِّى مَنَاسِكَكُم “তোমরা আমার নিকট হতে তোমাদের হজের বিধি-বিধান শিখে নাও।”

অতএব এ সংক্ষিপ্ত আলোচনা হতে প্রতিয়মান হল যে, কুরআন ও সুন্নাহর গভীর সম্পর্ক হল- কুরআন এর বিস্তারিত রূপ দানকারী হচ্ছে সুন্নাহ্। সুন্নাহ্ ব্যতীত কুরআনকে ভালভাবে জানা ও মানা সম্ভব নয়।

[১] কুরআনের মুতলাক [সাধারণ] বিষয়গুলি সুন্নাহ্ মুকাইয়াদ [সীমাবদ্ধ] করে বর্ণনা করেছে।

অর্থাৎ কুরআনুল করীমে কতকগুলি বিধান এমন সাধারণভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যাতে কোন রকম সীমা বা নির্ধারিত পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি ফলে কার্যক্ষেত্রে তা পালন করা বা মেনে চলা কঠিন হয়ে যায়, এমন বিষয়গুলি সুন্নাহর মাধ্যমে মুকাইয়াদ বা সীমাবদ্ধ ও নির্ধারিত পরিমাণে করে দেয়া হয়েছে। যার ফলে কার্যক্ষেত্রে তা খুবই সহজসাধ্যে পরিণত হয়েছে।

[ক]  যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন,﴿فَٱمۡسَحُواْ بِوُجُوهِكُمۡ وَأَيۡدِيكُم مِّنۡهُۚ ٦﴾ [المائ‍دة: ٦]   “তোমরা তোমাদের চেহারা ও দুই হাত তা [মাটি] দ্বারা মাসাহ কর”।[12]

কুরআনে তায়াম্মুমের বিধানে দুই হাত মাসাহর বিষয়টি মুতলাক [সাধারণ]ভাবে রেখে দেয়া হয়েছে অর্থাৎ কোন সীমা বা নির্দিষ্ট পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি। সুতরাং এখানে হাত দ্বারা আঙ্গুলের মাথা হতে কাঁধ পর্যন্ত সম্পূর্ণ অংশকে বুঝাবে। পক্ষান্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ্ উক্ত অসীম ও অনির্দিষ্ট পরিমাণকে সীমাবদ্ধ [মুকাইয়াদ] করে দিয়েছে। সহীহ বুখারী ও মুসলিমের হাদিসে এসেছে, একদা এক ব্যক্তি ওমার রাদিআল্লাহু আনহু-এর নিকট আসলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন যে, আমার গোসল ফরয হয়ে গেছে কিন্তু আমি পানি পাচ্ছি না এমতাবস্থায় কি করব? তখন আম্মার বিন ইয়াসির রাদিআল্লাহু আনহু ওমারকে রাদিআল্লাহু আনহু বললেন: আপনার কি আমাদের ঐ ঘটনা স্মরণ হচ্ছে না, যখন আপনি এবং আমি এক সাথে সফরে ছিলাম [পানি না পাওয়ায়] আপনি সালাত আদায় করলেন না, আর আমি মাটিতে গড়াগড়ি দিলাম অতঃপর [এর মাধ্যমে পবিত্র হয়ে] সালাত আদায় করলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ফিরে এসে তাঁকে ঘটনা খুলে বললে তিনি বললেন: না তোমরা যেরূপ করেছ তা ঠিক হয়নি বরং এরূপ করাই তোমার জন্য যথেষ্ট ছিল বলে তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় দুই হাত মাটিতে মারলেন, তাতে ফুঁ দিলেন, অতঃপর দুই হাত দিয়ে চেহারা এবং দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসাহ্ করলেন।”

আয়াতে মুতলাকভাবে বর্ণিত হাত মাসাহের বিধানকে সুন্নাতুর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুকাইয়াদ [সীমিত] করে বর্ণনা দিয়েছে। অর্থাৎ তায়াম্মুমে হাত মাসাহের পরিমাণ হল কব্জি পর্যন্ত যা কুরআনের বর্ণনায় উল্লেখ নেই।

[খ] কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন,﴿وَٱلسَّارِقُ وَٱلسَّارِقَةُ فَٱقۡطَعُوٓاْ أَيۡدِيَهُمَا ٣٨﴾ [المائ‍دة: ٣٨] “পুরুষ ও নারী যারা চুরি করে তোমরা তাদের হাত কেটে ফেল[13]।”

কুরআন মাজীদে হাত কাটার বিধানটি মুতলাক [সাধারণ] বা অনির্দিষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। হাত দ্বারা কোনটি উদ্দেশ্য ডান না বাম? কতটুকু পরিমাণ কব্জি পর্যন্ত, না কনুই পর্যন্ত, না কাঁধ পর্যন্ত? তা সীমাবদ্ধ করে দেয়া হয়নি, বরং সুন্নাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চোরের হাত কাটার বিধানটিকে মুকাইয়্যাদ [সীমাবদ্ধ] ও নির্দিষ্ট করে বর্ণনা দিয়েছে।

সুতরাং কুরআনের মুতলাক বিষয়সমূহ যা পালন করা কঠিন হয়ে যায় সেগুলি সুন্নাতুর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুকাইয়্যাদ [সীমাবদ্ধ]ভাবে বর্ণনা দিয়ে মানুষের জন্য পালনে সহজ সাধ্য করে দিয়েছে।

[২] কুরআনের ‘আম [ব্যাপক] বিধানগুলি সুন্নাহ্ খাস [নির্দিষ্ট] করে বর্ণনা দিয়েছে। অর্থাৎ কুরআনুল করীমে অনেক বিধি-বিধান ‘আম [ব্যাপক]ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যা কার্যক্ষেত্রে পালন করা দুষ্কর হয়ে যায় ঐ সব ‘আম বিধানগুলিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ্ খাস অর্থাৎ আমলের পরিধিকে নির্দিষ্ট করে বর্ণনা দিয়েছে, যা মানুষের জন্য পালনে খুবই সহজসাধ্য হয়ে গেছে। কুরআনের এরূপ বিধানকে মুতাওয়াতির হাদিস দ্বারা খাস বা নির্দিষ্টকরণে সকল আলিম সমাজ একমত। আর খবরে ওয়াহিদ হাদিস দ্বারাও কুরআনের আম হুকুমকে খাস করা যায় এটাই প্রসিদ্ধ চার ইমামের মত বলে উল্লেখ করেছেন ইমাম সাইফুদ্দীন আল আমেদী স্বীয় আল ইহ্কাম গ্রন্থে।

[1] সূরা আন্-নজম: ৩-৪

[2] আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৬০৪

[3] বুখারি: ৮ মুসলিম: ১৬

[4] সূরা আল-বাকারাহ: ৮৩

[5] আল-বাকারাহ: ১৮৩

[6] আল-ইমরান: ৯৭

[7] সূরা আল-বাকারাহ: ৮৩

[8] সূরা আল-বাকারাহ্: ৮৩

[9] (বুখারী, ১৪৮৪ মুসলিম, ৯৭৯ নাসাঈ]।

[10] সূরা আল-বাকারাহ্: ১৮৩

[11] সূরা আল-ঈমরান: ৯৭

[12] সূরা আল-মায়িদা: ৬

[13] সূরা আল-মায়িদাহ্: ৩৮

বইঃ সুন্নাহের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা 

লেখকঃ জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
slot online skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 rtp slot slot bonus new member skybet88 mix parlay slot gacor slot shopeepay mix parlay skybet88 slot bonus new member