
“নামায-ন্যায়পরায়ণতার প্রোগ্রামিং” পর্ব ২
মন নিয়ন্ত্রন রাখার উপায়ঃ
আমাদের মন ঘুরে বেড়ায় কেন?এর কারণ হল আমাদের মন আসলে খালি।আর এই মন খালি থাকতে পারে না। সে জন্যে মন ঘুরে বেড়ায়।আমরা যে সূরাগুলো নামাযে পড়ে থাকি বেশিরভাগ মুসলিম তা জানেন।সূরা ফাতিহা, পবিত্র কুর’আনের কিছু আয়াত,কয়েক্টা ছোট ছোট সূরা-এগুলো আমরা নামাযে পড়ি।আমরা মুসলিমরা এগুলো এত যান্ত্রিকভাবে পড়ি যে, আপনি যদি কোন মুসলিমকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে সূরা ফাতিহা বলতে বলেন,সে এই কাজটা একশ মেইল স্পীড এ করতে পারবে।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আলহামদুলিল্লাহি রাবিইল আ’আলা–মীন।
আর–রাহমা–নীর রাহীম।
মা–লিকি ইয়াওমিদ্দি্ন।
ইয়্যা কানা বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্তাইন।
ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকিম।
সিরাতাল্লাযীনা আন আমতা আলাইহিম।
গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ্দ–ল্লিন।
আমীন।
একেবারেই যান্ত্রিকভাবে উচ্চারণ করি।আমাদের মনের খুব সামান্য একটা অংশ এখানে ব্যস্ত থাকে।আমরা বেশিরভাগ মুসলমান অনারব।আমরা আরবী ভাষার কথাবার্তা বুঝতে পারিনা।আর সেহেতু আমরা নামাযে যেটা পড়ছি সেটা বুঝতে পারছিনা।তখনই এই সম্ভাবনা দেখা দেয় যে আমাদের মন অন্য চিন্তা করবে।তাই মন যাতে এসব চিন্তা না করতে পারে সেজন্য আরবীটা পড়ব আর একইসাথে আমরা এই আরবী আয়াতগুলোর অর্থ বুঝতে চেষ্টা করব।যদি ইংরেজি জানেন তবে ইংরেজি অনুবাদটা মনে করেন।উর্দু জানলে উর্দু অনুবাদটা মনে করেন।বাংলা জানলে বাংলা অনুবাদটা মনে করেন।যে ভাষাটা আপনি সবচেয়ে বেশি ভাল বোঝেন সেই ভাষায় অনুবাদটা মনে করেন।যেমন ধরেন আমরা যখন সূরা ফাতিহা পড়ি-
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম (পরম করুনাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে)
আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আ’লামীন (সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি জগতস্মূহের প্রতিপালক)
আর রাহমানীর রাহীম (যিনি করুণাময় ও পরম দয়ালু)
মালিকি ইয়াওমিদ্দিন (তিনি বিচার দিনের মালিক)
ইয়্যা কানা বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতাইন (আমরা তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি)
ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকিম (আমাদেরকে সরল পথ দেখাও)
সিরাতাল্লাযীনা আন আমতা আলাইহিম (তাদের পথ যাদেরকে তুমি অনুগ্রহ দান করেছ)
গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ্দ-ল্লিন (তাদের পথ নয় যারা ক্রোধে নিপাতিত ও পথভ্রষ্ট)
যখন এই সূরা ফাতিহা পড়বেন বা আরবীতে অন্য আয়াত পড়বেন একইসাথে অর্থটাও মনে করুন।আর আপনার মন তখন ঘুরে বেড়াবে না।কারন এতে করে আপনি নামাযে যে আয়াত পড়ছেন সেটার অর্থ মনে রাখতেই আপনার মন ব্যস্ত থাকছে।কিন্তু কয়েকদিন পরে বা কয়েক মাস পরে এটাও একেবারে যান্ত্রিক হয়ে যাবে।আমাদের মন খুব শক্তিশালী।এখানেও সম্ভাবনা থাকে যে মন অন্য চিন্তা করবে।কিন্তু এই সম্ভাবনাটা কম।কারণ মনের এক অংশ তখন আরবী পড়ায় ব্যস্ত থাকবে আর আরেক অংশ তখন অর্থ মনে করবে।অন্য চিন্তা করার সম্ভাবনা কম।তারপরও মন চিন্তা করতে পারে।মনের এই চিন্তাগুলো দূর করার জন্য আপনি আরবীতে আয়াতগুলো পড়বেন আর সেগুলোর অর্থ মনে করবেন।আপনি মনোযোগ দিয়ে আয়াতগুলো পড়বেন আর অর্থ মনে করবেন।একটা মানুষ দুইটা জিনিসের উপর একসাথে ১০০ ভাগ মনোযোগ দিতে পারেনা।দুইটা জিনিসের উপর ৫০ ভাগ মনোযোগ দেয়া যায়বা ৮০ ভাগ,২০ ভাগ।কিন্তু ১০০ ভাগ দুইটা আলাদা জিনিসের উপর মনোযোগ কেউই দিতে পারবে না।তাহলে যত বেশি মনোযোগ দেবেন আপনার মন তত কম ঘুরাঘুরি করবে।অর্থাৎ,মনের এই ঘুরাঘুরি বন্ধ করতে আমরা আরবী আয়াতগুলো পড়ব এবং একইসাথে সেগুলোর অর্থ বুঝে মনে করার চেষ্টা করব।তাহলে ইনশা’আল্লাহ আমাদের মন ঘুরাঘুরি করবেনা।আমার লেকচারের প্রথমে পবিত্র কুর’আনের একটি আয়াত বলেছিলাম।সূরা আনকাবুতের ৪৫ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে-
“পড় সেই কিতাব হতে যা তোমার প্রতি নাযিল করা হয় এবং নিয়মিত নামায কায়েম কর।কারণ অবশ্যই নামায তোমাদের অশ্লীল ও মন্দ কাজ হতে বিরত রাখে।”
পবিত্র কুর’আন বলছে যে,নামায আপনাকে অশ্লীল ও মন্দ কাজ হতে বিরত রাখে।য়ামি আগেও বলেছি নামায হল এক ধরনের প্রোগ্রামিং।এই প্রোগ্রামিংটা হল ন্যায় নিষ্ঠার জন্য।আর আমরা মুসলিমরা দিনে পাঁচ বার নামাযের মাধ্যমে প্রোগ্রামড হই।আমরা আল্লাহর কাছে এই সময়ে নির্দেশনা চাই।ইহদিনাস সিরাতাল মুসতাকিম-আমাদেরকে সরল পথ দেখাও।আর আল্লাহ সুবহানা ওয়া তা’আলা এর উত্তর দেন।তিনি আমাদেরকে ন্যায়পরায়ণতার পথে প্রোগ্রামড করেন।যেমন ধরেন কোন ঈমাম সূরা ফাতিহার পরে পড়তে পারেন-
সূরা মায়িদার ৯০ নং আয়াতে বলা হয়েছে-
তর্জমাঃ “হে মুমিনগণ!নিশ্চই মদ ও জুয়া ঘৃণ্য বস্তু।মূর্তিপূজার বেদি ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর,এইগুলি সব শয়তানের কাজ।তোমরা এগুলো বর্জন কর,যাতে সফলকাম হতে পার।”
এখানে নামাযে আমাদের প্রোগ্রামিং করা হচ্ছে যে,মদপান করা,জুয়া খেলা,বিভিন্ন মূর্তির পূজা,ভাগ্য গণনা করা আমাদের বাদ দিতে হবে।কারণ এগুলো সব শয়তানের কাজ।
ঈমাম সূরা ফাতিহার পরে পড়তে পারেন সূরা মায়িদা’র ৩ নং আয়াত-
তর্জমাঃ “তোমাদের জন্য যেসব হারাম করা হয়েছে–মৃত পশু,রক্ত,শূকরের মাংস খাওয়া এবং যে পশু জবাই করার সময় আল্লাহ ব্যাতীত অন্য কারো নাম নেয়া হয়েছে।”
এ থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে,এখানে আমাদেরকে প্রোগ্রাম করা হচ্ছে খাবারের মধ্যে হারাম বিষয়গুলি সম্বন্ধে।আর এই হারাম খাবারগুলো হল মৃত জন্তু,রক্ত,শূকরের মাংস এবং যে পশু জবাই করার সময় আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নাম নেয়া হয়েছে।আমাদের প্রোগ্রামিং করা হচ্ছে ন্যায়পরায়ণতার জন্য।