
দাসত্ব ছেড়ে জীবনে-০১
আমি যখন পর্নে প্রবেশ করি তখন আমার বয়স ২৪ বছর। আমি ছিলাম একজন স্ট্রিপার, পর্নস্টার, একজন মা (divorced)। ছিলাম একজন অ্যালকোহল ও ড্রাগ অ্যাডিক্ট। পর্ন ইন্ডাস্ট্রির মানুষেরা যে বাজে অভ্যাসগুলোর কারণে কাউকে প্রশংসা করে তার সবই আমার মধ্যে ছিল। পর্ন ইন্ডাস্ট্রি হতাশাগ্রস্ত মানুষদের প্রশংসা করে, যাতে তাদের আরও বেশী হতাশ করা যায়। আমি ছিলাম সেই মেয়েটি যাকে তারা যশ, খ্যাতি, ধনসম্পদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তারা বলেছিল আমি অনেক বড় পর্নস্টার হবো এবং আমাকে তারা নিরাপদ রাখার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। শুধু প্রতি মাসে একবার HIV টেস্ট করালেই হবে, এতেই নাকি আমি নিরাপদ থাকব।
সিওর হবার জন্য তাদের জিজ্ঞাস করলাম, আমি কি আসলেই নিরাপদ থাকব?
তারা বলল,- অবশ্যই সুইট হার্ট! তুমি পুরোপুরি HIV ফ্রি থাকবে।
কিন্তু, ৩০টি মুভি করার পর আমি ২টি STD (Sexually Transmitted Disease) এ আক্রান্ত হই। তার মধ্যে একটি ছিল HPV (Human Papiloma Virus), যে রোগের কথা আমি জীবনেও শুনিনি এবং আরেকটি ছিল হার্পিস (Harpies)। ৯০ এর দশকে হার্পিস ছিল AIDS এর মতই অনারোগ্য একটি ব্যাধি। ভেবেছিলাম আমার মৃত্যু বোধহয় ঘনিয়ে এসেছে। এ রোগেই হয়তো আমার মৃত্যু হবে। আমি অনেক হতাশ হয়ে গেলাম। আত্মহত্যা করার প্রচেষ্টা চালিয়েছিলাম। হার্পিস এ এমন অবস্থা হয়েছিল যে এটা আমার মুখ, ঠোট, গলা, যৌনাঙ্গ সবজায়গায় ছড়িয়ে গিয়েছিলো। নিজেকে একটা মনস্টার মনে হতো।
আমি কতোটা নীচে নেমেছিলাম! পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে যোগ দিয়েছিলাম যশ, খ্যাতির ইন্দ্রজালে পড়ে। অথচ শেষ পর্যন্ত আমি নিজেকে আয়নার সামনে সবচেয়ে অসহায় এবং বিশ্রী একটা মানুষ হিসেবে আবিষ্কার করেছিলাম। সত্যিই তখন খুব মরে যেতে যেতে ইচ্ছা করতো। জীবনের আর কোনো আশাই রইল না আমার। এমনটা অন্যান্য পর্নস্টারদের ক্ষেত্রেও অহরহ ঘটতো। পর্ন ইন্ডাস্ট্রির বেশিরভাগ মানুষই STD তে আক্রান্ত। সবচেয়ে মারাত্মক ব্যাপার হচ্ছে এদের কারো কারো একটা ইনফ্যাকশনের উপর আরেকটা ইনফ্যাকশন হতো, পুরো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই নষ্ট হয়ে যেতো। এভাবে একটার পর একটা STD তে আক্রান্ত হয়ে তারা জীবনের বেশীরভাগ সময়ই কষ্টে ভুগত।
আমারও একই অবস্থা। আমার বয়স এখন ৪৩ বছর। অথচ এখনো আমার পিরিয়ড থেকে শুরু করে সার্ভিক্স (cervix) এ সমস্যা রয়ে গেছে। ইনফ্যাকশনের কারণে আমার সার্ভিক্স এর অর্ধেকই কেটে ফেলতে হয়েছে। এছাড়াও আমার বাচ্চা হতে অনেক সমস্যা হচ্ছিল। But God blessed me, আমার শেষ পর্যন্ত বাচ্চা হয়েছে। তবে সেক্সচুয়াল অরগ্যান ডেমেইজড হওয়ায় আমার ৪টা বাচ্চা নষ্ট হয়েছিল।
পর্ন ইন্ডাস্ট্রি মানুষের জীবনে শুধু ক্ষতি সাধন করে। এটা সেক্স ওয়ার্কার থেকে শুরু করে যারা পর্ন দেখে সবার জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। যে মানুষগুলো পর্ন অ্যাডিক্টেড তাদের জন্যই এতো এতো মেয়েদের সুন্দর ছবি দিয়ে আইটেম আকারে সাজিয়ে রাখা হয়। চিন্তা করুন, পর্ন সাইটের এই মেয়েরা তো আর আকাশ থেকে আসে না। এদের পাচার করা হয় এই ইন্ডাস্ট্রির কাছে। কাজে যুক্ত করার ১-২ বছর পরেই তারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে শুরু করে। যারা পর্ন আসক্ত তারাও রোগী। তাদের চাহিদা মেটাবার জন্যই চাইল্ড পর্ন থেকে শুরু করে এতো অসুস্থ ক্যাটেগরির সমাহার এই সাইটগুলোতে। এভাবেই তারা মানুষকে আসক্ত করার মাধ্যমে ব্যবসা করে।
যে মেয়েগুলো এই ইন্ডাস্ট্রিতে বন্দি তাদেরই বা কি আর করার আছে। পুতুলের মতো যেভাবে চায় তারা সেভাবে ব্যবহার করে। এদের নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। সবাই শুধু মজা নিচ্ছে।
কিন্তু আমরা এদের ব্যাপারে চিন্তা করি। পর্ন ইন্ডাস্ট্রির এই মেয়েদের সাহায্য করার জন্য পৃথিবীতে প্রথম যে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করা হয় তা হল ‘পিঙ্ক ক্রস ফাউন্ডেশন’। পাচার হওয়া থেকে শুরু করে পর্ন ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে থাকা মেয়েদের মুক্ত করতে আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। আমরা এই কাজে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করি। আশা করি আপনারা পর্ন ব্যবহার বন্ধ করার মাধ্যমে আমাদের সহযোগিতা করবেন। ধন্যবাদ।
(এমন আরও পর্নস্টারের অন্ধকার জগতের দাসত্ব থেকে মুক্তির সত্যিকারের কাহিনী নিয়ে থাকছে আমাদের “দাসত্ব ছেড়ে জীবনে” সিরিজ।)
পর্ন আমাদের তরুণ সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। অথচ মানুষ এ ব্যাপারে কথা বলতে লজ্জা পায়। কিন্তু আমরা যদি এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি না করি তাহলে তো এ ব্যাধি আরও মারাত্মক আকার ধারণ করবে।
তাই আপনারা যা করবেন- বেশী বেশী এ কথাগুলো শেয়ার করুন এবং তরুণ সমাজকে বাঁচান।
অনুবাদঃ #teamFAD