‘ফেমিনিসম’- বর্তমান সময়ের মুসলিমদের মধ্যে ঢুকে পড়া এক ব্যাধির নাম

‘ফেমিনিসম’- বর্তমান সময়ের মুসলিমদের মধ্যে ঢুকে পড়া এক ব্যাধির নাম। মুসলিম মহিলারা ফেমিনিস্ট আইডিওলোজির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে নিজেদেরকে ‘ইসলামী ফেমিনিস্ট’/ ‘মুসলিম ফেমিনিস্ট’ নামে আইডেন্টিফাই করছে। অথচ ইসলামের সাথে ফেমিনিজমের দূরতম সম্পর্কও নেই, নেই একাত্মতা প্রকাশের কোনো উপায়।

মুসলিম ফেমিনিস্টরা অনেক সময়েই তাদের apologetic মনোভাবের কারণে বলে থাকে ইসলাম নিজেই একটি ফেমিনিস্ট ধর্ম, নাউযুবিল্লাহ।

আজ প্রথমেই আমরা কিছু পয়েণ্টের মাধ্যমে দেখাতে চাই যে ইসলাম কোন ফেমিনিস্ট ধর্ম নয়। ইসলাম ও ফেমিনিজম সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং mutually exclusive দুটি মতাদর্শ।

খুব বেশি ডিটেইলসে না গিয়ে ফেমিনিসমের একদম বেসিক সংজ্ঞার দিকে তাকালে দেখা যায় যে এই মতাদর্শের ভিত্তিই হল সবক্ষেত্রে নারী আর পুরুষের মধ্যে সমান অধিকার নিশ্চিত করা।

“The advocacy of women’s rights on the ground of the equality of the sexes.” [Oxford Dictionary]

“the belief that women should be allowed the same rights, power, and opportunities as men and be treated in the same way, or the set of activities intended to achieve this state:” [Cambridge Dictionary]

ফেমিনিসমের মতে নারী ও পুরুষ পরস্পর সমান সমান, আর সব কিছুতে তাদের অধিকারও সমান।

 

এবার একটু ইসলামের কয়েকটি জেন্ডার স্পেসিফিক রুলিং এর দিকে দৃষ্টি দিইঃ

১. সব মুসলিম নারীর জন্য গায়ের মাহরামের উপস্থিতিতে পর্দা করা ফরজ।

২. পরিবারের দায়িত্বশীল হল স্বামী

৩. একজন স্ত্রীর দায়িত্ব স্বামীর প্রতি অনুগত থাকা

৪. মাহরাম ব্যতীত একটা নির্দিষ্ট দূরত্বের পর নারীরা একা ভ্রমণ করতে পারবে না।

৫.বিচারের ক্ষেত্রে একজন পুরুষের সাক্ষ্য দুইজন নারীর সাক্ষ্যের সমান

৬. একজন নারী সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে পুরুষের অর্ধেক পরিমাণ পাবে।

৭.পুরুষের জন্য চারজন পর্যন্ত স্ত্রী থাকা জায়েজ আছে কিন্তু নারীর কেবলমাত্র একজন স্বামী থাকতে পারবে

৮. পুরুষেরা মসজিদের জামা’আতে সালাত আদায় করবে কিন্তু মেয়েদের জন্য ঘরে সালাত পড়া অধিক পছন্দনীয়

৯. বিয়েতে স্ত্রীকে স্বামী মোহরানা দিবে

ফেমিনিসমের আইডিওলজির প্রতি সৎ যে কাউকে উপরের এই কয়টি পয়েন্ট দেখালে সে স্বীকার করতে বাধ্য হবে যে ইসলাম কোনভাবেই ‘নারী-পুরুষ সমান সমান’ মতবাদের সাথে যায় না। বরং ইসলামী ফেমিনিস্ট শব্দটাই একটা Oxymoron। উল্লেখিত পয়েন্টগুলোকে পাশ কাটিয়ে কিভাবে একজন মুসলিম নিজেকে ফেমিনিস্ট হিসেবে দাবী করতে পারে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। হয় তিনি ফেমিনিসম কি সেটা বুঝেন না কিংবা নিজের দ্বীনের ব্যাপারে তিনি জানেন না।

ইসলাম কোনভাবেই ফেমিনিসমের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ইসলামী ফেমিনিস্টরা জোর করে হলেও এই দুই মতবাদকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে দেখাতে চান। তা করতে গিয়ে তারা বাধ্য হন ইসলামের জেন্ডার স্পেসিফিক রুলিং গুলোর নতুন নতুন ব্যাখ্যা আনতে। এমন সব ব্যাখ্যা যেগুলো সাহাবারা কখনো দেন নি, ক্লাসিকাল স্কলাররা কখনো দেননি এমনকি বর্তমানের কয়েকজন মডার্ন স্কলার ছাড়া আর কেউই দেন নি। ইসলামী ফেমিনিস্টরা বলতে চান যে ইসলামের এই ফিকহী বিষয়গুলি এসেছে ‘নারী অধিকারের প্রতি ইন্সেনসেটিভ’ পুরুষ আলেমদের কাছ থেকে, তাই এখন নতুন করে এগুলোর ‘নারীবাদী’ ব্যাখ্যা প্রয়োজন। (এমনকি তারা অনেকক্ষেত্রে ক্লাসিকাল আলেমদের প্রতি বিদ্বষপূর্ণ ও অসম্মানজনক ভাষাও ব্যবহার করেন।) অর্থাৎ এই নারীবাদীরা নিজেরাও বুঝেন যে আল্লাহর আদেশগুলোকে রাসূলুল্লাহ ﷺ ও সাহাবারা যেভাবে বুঝেছিলেন তা যদি এখন গ্রহন করতে হয় তাহলে তারা আর ফেমিনিস্ট হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে পারবেন না।বস্তুত দ্বীনের বিধানকে বিকৃত না করে কোনভাবেই একজন মুসলিম ‘ফেমিনিস্ট’ হতে পারে না।

এখন এই প্রশ্ন আসতে পারে যে ফেমিনিসমের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে আমরা কি নারীর অধিকারের বিপক্ষে বলতে চাইছি?

উত্তর হল, না। ইসলাম নারীর অধিকারের বিপক্ষে নয় কোনভাবেই। কিন্তু নারীর অধিকার আদায়ের জন্য কোন মুসলিমের ফেমিনিসমের মুখাপেক্ষী হবার দরকার নেই। কারণ ইসলামের মাধ্যমেই নারীর অধিকার, সম্মান আর মর্যাদা আদায়ের শ্রেষ্ঠ গাইডলাইন আছে। বরং বলতে হয় যারা আল্লাহর বেঁধে দেয়া নারী-পুরুষের কিছু ভিন্ন নীতিমালার প্রতি অজ্ঞ কিংবা অসন্তুষ্ট তারাই ফেমিনিসমের দ্বারস্থ হয়।

অথচ আল্লাহর প্রতিটি আদেশ নিষেধ ও নিয়মের প্রতি সন্তুষ্ট থাকাই একজন মুমীনের বৈশিষ্ট্য।

(আমরা কোনভাবেই এটা বলতে চাই না যে সমাজে নারীর প্রতি অন্যায়, যুলুম আর অত্যাচার হচ্ছে না। বরং আমরা মনে করি এসব সমস্যার সাথে সাথে মনস্তাত্তিকভাবে নারীর উপর চাপিয়ে দেয়া আরেকটি যুলুম হল ফেমিনিসমের মন্ত্র।)

চলবে ইন শা আল্লাহ…..

Original Source

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button