আল্লাহর হাসি (সুবহানআল্লাহ)
একটা গল্প বলি। তবে গল্পটা নিজের বানানো নয়। গল্পটা ইমাম বুখারী (র.) বর্ণনা করেছেন। ইমাম বুখারী নিজে থেকে বানিয়ে বলনে নি, তাঁকে আবুল ইয়ামান (র.) বলেছেন। আবুল ইয়ামান আবার শুয়াইব (র.) থেকে শুনেছেন। শুয়াইব শুনেছেন যুহরী (র.) থেকে। তবে এটা যুহরীর নিজের কোন গল্প নয়, তিনি শুনেছেন সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র.) থেকে। সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব শুনেছেন ইবনু ইয়াজিদ (র.) থেকে। ইবনু ইয়াজিদ শুনেছেন আবু হোরায়রা (রা.) থেকে। অবশ্যি আবু হোয়াররাও নিজে থেকে বলেন নি। তিনি শুনেছেন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছ থেকে।
গল্পটা সে সময়ের, যখন বিচারের মাঠ কায়েম হবে। একে একে সব বান্দাদের বিচার হবে। আর বিচারক হবেন স্বয়ং আহকামুল হাকিমীন। এক সময় সব বান্দাদের বিচারকাজ সম্পন্ন হবে। জান্নাতীরা জান্নাতে চলে যাবে। আর জাহান্নামীরা জাহান্নামে। এরপর আর কাউকে জান্নাত থেকে বের করে দেয়া হবে না। জাহান্নাম থেকেও কাউকে মুক্তি দেয়া হবে না। কিন্তু একজন লোক জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যখানে থেকে যাবে। তাঁর মুখমন্ডল থাকবে জাহান্নামের দিকে, আর পেছন দিক থাকবে জান্নাতের দিকে।
জাহান্নামের আগুন তাঁর চেহারাকে ঝলসে দিতে থাকবে। আগুনের উত্তাপ না সইতে পেরে সে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে বসবে। সে বলবে, ‘হে আমার রব! জাহান্নাম হতে আমার চেহারা ফিরিয়ে দিন। এর দূষিত হাওয়া আমাকে বিষিয়ে তুলছে। এর লেলিহান শিখা আমাকে যন্ত্রণা দিচ্ছে।’
এভাবে সে চাইতেই থাকবে।
দয়াময় আল্লাহ তার ফরিয়াদ শুনে বলবেন, ‘তোমার নিবেদন গ্রহণ করা হলো। এছাড়া আর কিছু চাইবে না তো?’
সে বলবে, ‘না, আপনার ইযযতের শপথ! আমি আর কিছুই চাইবো না।’
এই কথা বলার পর তাঁর চেহারা জান্নাতের দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে। লোকটি যখন জান্নাতের দিকে মুখ ফেরাবে, তখন জান্নাতের অপার সৌন্দর্য সে দেখতে পাবে। জান্নাতের নিয়ামত তাঁকে আকৃষ্ট করবে। তাঁর মন জান্নাতের দিকে ঝুঁকে যাবে। সে চাইবে মহামহিম আল্লাহকে কিছু বলতে। কিন্তু তাঁর ওয়াদা তাঁকে বলতে বাঁধা দেবে।
এমন কিছু চাহিদা আছে, যা চাইলেও অবদমিত রাখা যায় না। জান্নাতের চাহিদা কি সে ধরণের চাহিদার চাইতেও বেশি নয়? তাইতো লোকটি আর চুপ থাকতে পারবে না। সে বলে উঠবে, ‘হে আমার রব! আপনি আমাকে জান্নাতের দরজার নিকট পৌঁছে দিন।’
আল্লাহ তায়ালা তাঁকে পূর্ব প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে বলবেন, ‘তুমি পূর্বে যা চেয়েছিলে, তা ছাড়া আর কিছু চাইবে না – এই বলে কি অঙ্গীর আর প্রতিশ্রুতি দাও নি?’
লোকটি বলবে, ‘হে আমার রব! আমাকে আপনার সবথেকে হতভাগা সৃষ্টি বানাবেন না।’
মহান আল্লাহ তাৎক্ষণিক বললবে, ‘তোমার এই ইচ্ছা পূর্ণ করা হলে আর কিছু চাইবে না তো?’
সে বলবে, ‘না, আপনার ইযযতের শপথ! আমি আর কিছুই চাইবো না।’
এভাবে সে বলতেই থাকবে। এরপর দয়াময় আল্লাহ তাঁকে জান্নাতের দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দেবেন।
জান্নাতকে বাইরে থেকে দেখেই যে ব্যক্তির অন্তর সইতে পারে নি, সে জান্নাতের অভ্যন্তরীণ নিয়ামত দেখে কীভাবে চুপ করে থাকবে? জান্নাতের অনাবিল সৌন্দর্য ও নির্মল পরিবেশ দেখে লোকটির অন্তরে ঝড় বয়ে যাবে। জান্নাতে প্রবেশের ইচ্ছা তাঁর মধ্যে আরও প্রবল হবে। কিন্তু পূর্বের ওয়াদার কথা মনে করে চুপ থাকবে।
একটা সময় সে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারবে না। চিৎকার দিয়ে বলে উঠবে, ‘হে আমার রব! আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিন।’
লোকটির কথা শুনে মহামহিম আল্লাহ বলবেন, ‘হে আদম সন্তান! কি আশ্চর্য! তুমি কতটা ওয়াদা ভঙ্গকারী! তুমি পূর্বে যা চেয়েছিলে, তা ছাড়া আর কিছুই চাইবে না – এই বলে কি অঙ্গীর আর প্রতিশ্রুতি দাও নি?’
তখন সে বলবে, ‘হে আমার রব! আমাকে আপনার সবথেকে হতভাগা সৃষ্টি বানাবেন না।’
সে এভাবে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করতে থাকবে। তাঁর কথা শুনে মহান আল্লাহ হেসে উঠবেন। সুবহান্নাল্লাহ! যে রব হাসেন তাঁর থেকে বান্দা কল্যাণ ছাড়া আর কী আশা করতে পারে?
অতঃপর আল্লাহ তাঁকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেবেন। এরপর বলবেন, ‘চাও।’
সে চাইতে থাকবে। চাইতে চাইতে তাঁর আকাঙ্ক্ষা ফুরিয়ে যাবে। আর চাওয়ার মত কিছু খুঁজে পাবে না। তখন কি হবে জানেন? স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তাঁকে বিভিন্ন জিনিসের কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। আর বলবেন, ‘এটা চাও, ওটা চাও।’
এভাবে আল্লাহ তাঁকে স্মরণ করাতে থাকবেন, আর লোকটি চাইতে থাকবে। অবশেষে আর চাওয়ার মত কিছু থাকবে না। তখন আল্লাহ তায়ালা বলবেন, ‘তোমার সব ইচ্ছা পূর্ণ করা হলো। তার সাথে আরও দশগুণ (তোমাকে দেয়া হলো)’।
[বুখারী, মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল, আস-সহীহ, আযান অধ্যায়, ১/৭৬৯; (ইসলামিক ফাউণ্ডেশন)]।