এবং হিমু যখন প্র্যাকটিসিং মুসলমান (পর্ব – ৪)

বদরুল সাহেব আমাকে দেখে চেঁচিয়ে উঠলেন, কোথায় ছিলেন এতো দিন?
তার গলা মোটা শরীর মোটা বুদ্ধিও মোটা। আমি আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি প্রশস্ত মানুষের অন্তরও প্রশস্ত হয়। বদরুল সাহেবের অন্তর প্রশস্ত, মনে মায়া ভাব প্রবল। আমি ছ-সাত দিন ধরে মেসে আসছি না। কেউ হয়ত ব্যপারটা লক্ষ্যই করেনি । তিনি ঠিকই লক্ষ্য করেছেন। আমাকে দেখে তিনি যে উল্লাসের ভঙ্গি করলেন সেই উল্লাসে কোন খাঁদ নেই।
‘কোথায় ছিলেন রে ভাই?’
আমি হাসলাম। অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তর আমি ইদানীং হেসে দেবার চেষ্টা করছি। হালকা করে হাসা ভালো । এটা সুন্নাহ।
হাসি দিয়ে কিন্তু মনের ভাবও প্রকাশ করা যায়। যেমন আমি এখন যেই হাসি টি দিলাম এটার অর্থ হল আসে পাশেই ছিলাম।
বদরুল সাহেব বললেনঃ গত বৃহস্পতিবার মেসে ফিস্ট হল। বিরাট খাওয়া দাওয়া। পোলাও , খাসির রেজালা সালাদ। খাসির গোশত আমি নিজে কিনে এনেছিলাম। একটা আস্ত খাসি দেখিয়ে বললাম, হাফ আমাকে দাও, নো হাংকি পাংকি।
হাফ দিয়েছিলো?
দিবে না মানে?গোশত কেটে আমার সামনে পিস করতে চায়। আমি বললাম , খবর্দার, আগে ওজন করে তারপর পিস করবে।
আগে পিস করলে অসুবিধা কি?
আগে পিস করতে দিলে উপায় আছে ? ফস করে বাজে গোশত মিক্স করে ফেলবে। কিছু বুঝতেই পারবেন না। ম্যাজিক দেখিয়ে দেবে। খাসির গোশত কিনে নিয়ে রান্না করার পর খেতে গিয়ে বুঝবেন পাঠার গোশত। মিস্টার পাঠা।
বদরুল সাহেবের সঙ্গে আমার দেখা ম্যাসের সিঁড়িতে, তিনি বেরুচ্ছিলেন। আমাকে দেখে আমার পেছনে পেছনে ঘরে এসে ঢুকলেন। ফিস্টের ব্যপারটা না বলে তিনি শান্তি পাবেন না। গোশত কেনা থেকে যে গল্প শুরু হয়েছে সেই গল্প শেষ হবে খাওয়া কিভাবে হল সেখানে। আমি ধৈর্য নিয়ে গল্প শোনার প্রস্তুতি নিচ্ছি। খাওয়া দাওয়ার যে কোন গল্পে ভদ্র লোকের অসীম আগ্রহ। এতো আনন্দের সঙ্গে তিনি খাওয়ার গল্প করেন যেনো আল্লাহর ইবাদাতের পর এই পৃথিবীতে একটাই কাজ আছে , আর সেটা হল খাওয়া। খাওয়া ছাড়াও যে গল্প করার অন্য বিষয় থাকতে পারে ভদ্রলোক বোধ হয় সেটা জানেন না।
খুব চর্বি হয়েছিলও। গোশতের ভাজে ভাজে চর্বি।
বাহ ভালো তো।
চর্বিদার গোশত রান্না করা কিন্তু খুব ডিফিকালট। বাবুর্চি করে কি যেহেতু চর্বি বেশি তেল দেয় কম । এটা খুব ভুল। চর্বিদার গোশতো তেল লাগে বেশি ।
জানতাম না তো।
অনেক ভাল ভাল বাবুর্চিই ব্যপারটা জানে না । রান্না তো খুব সহজ ব্যপার না। আমি নিজে বাবুর্চির পাশে বসে রান্না দেখিয়ে দিলাম।
খেতে কেমন হয়েছিলো?
আমি নিজের মুখে কি বলব– আপনার জন্য রেখে দিয়েছি চেখে দেখবেন।
রেখে দিয়েছেন মানে? বৃহস্পতিবার ফিস্ট হয়েছে আজ হল শনিবার।
দুই বেলা গরম করেছি । নিজের হাতেই করেছি। অন্যের কাছে এইসব দিয়ে ভরসা পাওয়া যায় না। ঠিক মত জ্বাল দেবে না। গোশত টক হয়ে যাবে। বসুন আমি নিয়ে আসছি।
তিনি আনন্দিত মুখে গোশত আনতে গেলেন। আজ দিনটা মনে হয় ভালই যাবে। সকালে ভরপেট খেয়ে নিলে, সারাদিন আর খাওয়া নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। আজ সোমবার হলে রোজা রেখে দিতাম, তবে আল্লাহ যখন খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন, আজকে আর রোযা রাখবো না।
বড় ফুপার বাসা থেকে ভোর বেলা বাদল কে নিয়ে বের হয়েছি ফজরের সময়। সবাই তখনও ঘুমে। কাজের মেয়েটা জেগে ছিল। আমি হুজুর টাইপ বলে এই মেয়ে আমার সামনে পর্দা করে চলে। আমি বের হবো দেখে মাথায় কাপড় টেনে এসে দরজা খুলে দিয়ে পর্দার আড়ালে গিয়ে সজোরে একটা সালাম দিলো। আমি বেড় হওয়ার সময় এই ধরনের সালাম সে দেয় না।
আমি সালামের উত্তর দিয়ে বললামঃ ব্যপার কি?
সে নিচু স্বরে বলল খাস দিলে আফনে একটু দোয়া করবেন ভাইজান। আমার মাইয়াটা বহুত দিন হইছে নিখোঁজ।
বল কি ? ইন্নালিল্লাহ । কতদিন হয়েছে নিখোঁজ।
তা ধরেন গিয়া দুই বছর হইছে। এক বাড়িত কাম করত। এরা মাইর ধৈর করতো। একদিন বাড়ি থাইক্যা পালাইয়া গেছে। আর কোন খুইজ নাই।
সমাজের সর্বনিম্ন স্তরে যাদের বাস তাদের আবেগ টাবেগ বোধ হয় কম থাকে দু বছর ধরে মেয়ে নিখোঁজ এই সংবাদ সে দিচ্ছে কত সহজ গলায়। যেন তেমন কোন ব্যপার না।
নাম কি তোমার মেয়ের ?
লুতফুন্নেসা। লুতফা ডাকি।
বয়স কতো?
ছোট মাইয়া সাত আট বছর । ভাইজান আফনে একটু আল্লাহর কাছে দুয়া করলে মেয়েটারে ফেরত পাই; মেয়েটা ঢাকা শহরেই আছে।
জান কি করে ঢাকা শহরে আছে ?
আয়না পড়া দিয়া জানছি। আপনের ফুপা যেই পিড়ের মুরিদ তার এক খাদেম আয়না পরা দিয়া পাইছে। এখন আপনে একটু দুয়া করলেই পাইয়া যামু।
তোমার মেয়ের জন্যে যার দোয়া সবচেয়ে বেশি কাজে লাগবে সেটা হল তোমার আর তোমার স্বামীর।নামায পড় ?
জ্বি না ভাইজান, কাম কাইজ কইরা নামাযের সময় থাকে না ।
নামায পড়া শুরু করে দাও । এখন থেকেই নিয়ত করে ফেলো । সঠিকভাবে নিয়ত করবে। হাদিসে আসছে , ইন্না মাল আমালু বিন নিয়াত। সকল কাজ নিয়াতের উপর নির্ভরশীল। তাই নিয়ত ঠিক ঠিক করতে হবে।
নিয়ত কিভাবে করমু ভাইজান । নাওয়াইতুয়ান …
নিয়ত করা মানে মুখে মুখে কোন কিছু পড়া না। নিয়ত করার মানে হল কোন কাজ করার জন্য মনে মনে স্থির করা এবং বদ্ধ পরিকর হওয়া।বুঝতে পারছ ।
জ্বি ভাইজান।
আল্লাহর রাস্তায় চলার সঠিক নিয়ত করে ফেলো। মেয়েকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্যে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করতে থাকো । আমি অবশ্যই আল্লাহর কাছে তোমার মেয়ের জন্য দুয়া করব। এবং তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা নিবো। তবে আমি বা ঐ আয়না পড়া পীরসাব কিন্তু কিছুই করার ক্ষমতা রাখি না । সব কিছু কিন্তু আল্লাহর ওপরই নির্ভর করে ।
জ্বি ভাইজান।
আয়না পড়া বা এই ধরনের তদবির নেয়া ইসলামে জায়েজ নাই । এরপর থেকে এই ধরনের কাজ আর কখনও করবা না, ঠিক আছে ।
জ্বি আচ্ছা ভাইজান।
সে আবার একটা লম্বা সালাম দিলো।
সকালের শুরুটা হল সালামের মাধ্যমে। শুরু হিসেবে মন্দ না।
( চলবে ইন শ আল্লাহ …)

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button
slot online skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 rtp slot slot bonus new member skybet88 mix parlay slot gacor slot shopeepay mix parlay skybet88 slot bonus new member