কার্যকর অধ্যনের ৫টি ফলপ্রসূ বৈশিষ্ট্য

রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-

                                       লেখক : ইয়াকুব আলী | ভাষান্তর : মোহাম্মদ সলিমুল্লাহ | সম্পাদনা : আব্‌দ আল-আহাদ

অনেকেই বই পড়েন। কিন্তু যখন জিজ্ঞেস করা হয় কী পড়েছেন, তখন মস্তিকের সাথে যুদ্ধ করতে হয়! আপনিও কি তেমন পাঠক? আপনি কি শেখার অনেক আগ্রহ নিয়ে দীন শিক্ষার ক্লাসে বসছেন কিন্তু মনে হচ্ছে কিছুই শিখতে পারেননি? ক্লাসে বসে কি মণে হয়, “থাক, এটা লিখে রাখার দরকার নেই। এটা আমি কখনোই ভুলবো না,” কিন্তু একসপ্তাহ পরে ওই ক্লসের একটি বাক্যও আপনি স্মরণ করতে পারছেন না?

আপনি যখনই কোনো ক্লাসে যাচ্ছেন, বই পড়া শুরু করছেন কিংবা এমপি-থ্রী প্লেয়ারে ইসলামী বক্তৃতা শুনতে যাচ্ছেন, আপনাকে কয়েকটি কল্যাণমুখী মনোভাব নিয়ে সেগুলো শুরু করতে হবে। নীচে এমনই কয়েকটি প্রয়োজনীয় মনোভাব তুলে ধরা হলো :

crop380w_istock_000002193842xsmall-books

. ইখ্‌লাস (আন্তরিকতা বা অন্তরের বিশুদ্ধতা)

নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে, “আমি কেন এটা শিখছি বা পড়ছি?” “এটা কি এজন্য যে, লোকে আমাকে জ্ঞানী বলে ডাকবে?” “এটা কি বিতর্কে জয়ী হওয়ার জন্য?” “এটা কি আমার প্রতি মানুষের দৃষ্টি ফেরানোর জন্য?” যদি এগুলোর কোনো একটি আপনার ক্ষেত্রে সত্য হয়, তাহলে এই পড়াশোনা দিয়ে আপনি সত্যিকার অর্থে মোটেই উপকৃত হবেন না।

ইবনু মাসুদ (রা) বলেন, “জ্ঞান কোনো ধারাবাহিক বর্ণনা নয়; বরং তা অন্তরে স্থাপিত এক আলো।”

“নিশ্চয়ই যারা জ্ঞানী তারাই আল্লাহকে ভয় করে।” [সূরা আল-ফাতির; ৩৫:২৮]

সুফিয়ান আস-সাওরী বলেন, “জ্ঞানের শ্রেষ্ঠত্ব শুধুমাত্র একারণেই যে, তা ব্যক্তিকে আল্লাহর ভয় ও আনুগত্য শেখায়, নয়তো তা (জ্ঞান নয়) অন্যকিছু।”

. নিয়্যাত (মনের উদ্দেশ্য)

প্রথমেই যে বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে তা হলো, আপনার জ্ঞানার্জন হলো একটি ইবাদত কর্ম। এটি ব্যক্তিগত তথা গোপন ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত যা আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) এবং আপনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

সুফিয়ান আস-সাওরী বলেন, “আমার নিয়্যতের (মনের ইচ্ছা) চেয়ে আমার কাছে আর কিছু বেশি কঠিন মনে হয়নি।”

নিজের প্রকাশ্য ও গোপন উভয় ধরণের ‘আমলের দিকে লক্ষ করুন। প্রকাশ্য ‘আমলের চেয়ে গোপন ‘আমলের সংখ্যা কি বেশি? গোপন ‘আমলের চেয়ে প্রকাশ্য ‘আমল করতেই কি আপনার বেশি আগ্রহ জাগে? যদি তা-ই হয়, তবে আপনাকে নিয়্যতের (মনের উদ্দেশ্য) প্রতি গভীরভাবে মনোযোগী হতে হবে। আপনি যে ‘আমল করছেন, তা কার জন্য? মানুষ নাকি আল্লাহর (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) জন্য?

. তাকওয়া

যে বক্তি তার প্রতিপালককে স্মরণ করে এবং যিনি তা করেন না, তাদের প্রথম জন জীবিত আর পরের জন মৃতের ন্যায়।

জ্ঞান শিক্ষার্থী আল্লাহর নামে জ্ঞানার্জন করবেন এবং খেয়াল রাখবেন, আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) তাকে দেখছেন। যদি আল্লাহ চান তো, এতেই আপনার পড়াশোনায় বরকত নেমে আসবে।

“যিনি জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে সফল হতে চান আবার একই সাথে অতিমাত্রায় পানাহার ও নিদ্রাকে সমান গুরুত্ব দেন, তিনি আসলে অসম্ভব সাধনের চেষ্টা করছেন।” [ ‘The Manners of the Knowledge Seeker’ বই থেকে নেওয়া]

. নীরবতা

অনেক কিছু জানার পর সেগুলো মুখে প্রকাশ করে নিজের জ্ঞান জাহির করার ইচ্ছা জাগবে। অনেক সময় শোনার চেয়ে বলতেই বেশি ভালো লাগবে। এমন মানুষের জন্য সতর্কবাণী:

“যে কিয়ামতে বিশ্বাস করে, সে ভালো কথা বলুক অথবা নিশ্চুপ থাকুক।” [আল-বুখারি; খণ্ড ৮, অধ্যায় ৭৬, হাদীস নং ৪৮২]

ইমাম শাফে‘ঈ বলেন, “আপনি যদি কিছু বলতে চান, তবে  [আগে] চিন্তা করুন। যদি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, এতে কোনো ক্ষতি নেই, তবে বলুন। যদি সিদ্ধান্তে পৌঁছেন যে, আপনার কথায় ক্ষতি হবে, তবে বলবেন না।

লোকমানকে (রা) জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, “আপনি কীভাবে এত জ্ঞানী হলেন?” তিনি উত্তরে বলেছিলেন: “ আমার যা প্রয়োজন নেই, আমি তা চাই না, আর যা আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, আমি তা বলি না।” [‘The Manners of the Knowledge Seeker’ বই থেকে নেওয়া]

৫. বিনম্রতা

আমাদের থাকতে হবে এমন আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো শিক্ষকদের শ্রদ্ধা করা এবং মনে রাখা যে, এমন অনেকেই আছেন যিনি আমার থেকে বেশি জ্ঞানের অধিকারী।

ইমাম শাফে‘ঈ বলেছেন: “আমি ইমাম মালিকের (র) উপস্থিতিতে বইয়ের পাতা খুবই আস্তে করে, নিঃশব্দে উল্টাতাম যাতে তিনি শব্দে বিরক্ত না হন; এটা করতাম তাঁর প্রতি শ্রদ্ধার কারণে।”

ইবনু ‘আব্বাস বলেন: “ছাত্র হিসেবে আমি নিজেকে বিনয়ী রেখেছিলাম। তাই শিক্ষক হিসেবে আমি সম্মানিত হয়েছি।”

শেষ কথা

কেউ জ্ঞানার্জন করলে, তার জ্ঞান তাকে বনয়ী করবে। আপনি যদি এমন কোনো জ্ঞানী ব্যক্তিকে দেখে থাকেন যার আচরণ মন্দ, তাহলে তার ক্ষেত্রে বলা যায়, ওই জ্ঞানী ব্যক্তি মুখ দিয়ে যা বলে অন্তরে তা প্রত্যাখ্যান করে। যে জ্ঞান তার জীবনে এসেছে, তা আসলে আন্তরিক, উপকারী জ্ঞান নয়।

নিজেকে কল্যাণমুখী, চৌকস করে গড়তে হলে শিষ্টাচার শিখতে হবে যা হবে জ্ঞানভিত্তিক শিষ্টাচার।

আব্দুল্লাহ ইবনু মুবারাক বলেন : “আমি শিষ্টাচার শিখতে ত্রিশ বছর ব্যয় করেছি আর জ্ঞানার্জনে ব্যয় করেছি বিশ বছর।”

উৎসঃ কুরআনের আলো

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
slot online skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 rtp slot slot bonus new member skybet88 mix parlay slot gacor slot shopeepay mix parlay skybet88 slot bonus new member