ধর্মীয় বিশ্বাস প্রশান্তি ও সৌভাগ্যের ঠিকানা

অস্ট্রিয়ার নও-মুসলিম ‘লেনসেল’ মনে করেন মানুষ প্রকৃতিগতভাবে একত্ববাদী। এমনকি মানুষ যদি এই বাস্তবতার দিকে গুরুত্ব নাও দেয় তবুও তার অন্তরের ভেতর থেকে এই সত্যের আহ্বান সে শুনতে পাবে। কিন্তু অনেকেই এই আহ্বানকেও শুনতে চায় না। পাশ্চাত্যের নানা সংকট সৃষ্টি হয়েছে এ কারণেই। বস্তুবাদী চিন্তাধারা বা মাত্রাতিরিক্ত দুনিয়া-প্রেমের কারণে তারা আধ্যাত্মিক চাহিদাগুলোর কথা ভুলে আছে।
অর্থাৎ ‘লেনসেল’ মনে করেন মানুষের জীবনে ধর্মীয় বিশ্বাস ও স্রস্টার দেয়া বিধানের বাস্তবায়ন অপরিহার্য। আধ্যাত্মিক জীবন ছাড়া মানুষের আত্মাকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। ধর্মীয় বিশ্বাস মানুষকে যোগায় প্রশান্তি ও সৌভাগ্যের ঠিকানা।

তিনি আরো মনে করেন মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই সৌভাগ্যের সন্ধানী। তারা এক অশুভ ভবিষ্যৎ ও বঞ্চনার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। কিন্তু ঈমান বা বিশ্বাস মানুষকে এই উদ্বেগ থেকে মুক্তি দেয়। ধর্মের ওপর বিশ্বাসের কারণে মানুষ বুঝতে পারে যে, এই বিশ্ব-সৃষ্টির রয়েছে লক্ষ্য। উদ্দেশ্যহীনভাবে সৃষ্টি করা হয়নি সৃষ্টি জগত। মানুষ ইহজগতে যা কিছু করে তার রয়েছে প্রতিফল। আর মহান আল্লাহ সৎকর্মশীলদের প্রতিফল নষ্ট করেন না।
অস্ট্রিয়ার নও-মুসলিম ‘লেনসেল’-এর মতে, সৎকাজের পুরস্কার বা প্রতিদানের বিশ্বাস ধর্মের ছায়াতলেই গড়ে ওঠে এবং এই বিশ্বাসের আলোকেই মানুষ অস্তিত্ব জগতের সুন্দর ভবিষ্যতের আশা করছে। কিন্তু বর্তমান যুগের জড়বাদী সংস্কৃতি এই মহৎ দৃষ্টিভঙ্গীকে বিপুল সংখ্যক মানুষের অন্তর থেকে বিতাড়িত করেছে। জড়বাদী বা বস্তুবাদী মানুষেরা লাগামহীন মাত্রায় বস্তুগত চাহিদা পূরণ ও ভোগ-বিলাসকেই মনে করেন চরম সুখ বা সৌভাগ্য এবং তাদের মতে মৃত্যুর পরই ঘটবে সমস্ত সুখের অবসান। এ ধরনের ধারণা বা মতবাদে ধর্মের কোনো স্থান নেই। আর লাগামহীন মাত্রায় বস্তুগত বা ইন্দ্রিয় সুখ অনুভব করা সত্ত্বেও এমন জীবন-ব্যবস্থায় বিশ্বাসীরা ভুগছেন নানা অতৃপ্তিতে। বিচিত্র সংকট তাদের রসনাকে করেছে তিক্ত।
অস্ট্রিয়ার নও-মুসলিম ‘লেনসেল’ এ প্রসঙ্গে বলেছেন: ‘মানুষের সমস্যা হল বস্তুগত সব কিছু থাকা সত্ত্বেও তারা শূন্যতা অনুভব করে। অর্থনৈতিক দিক থেকে তারা ভালো অবস্থানে থাকলেও আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে তারা ব্যাপক শূন্যতার শিকার। আমার মতে এইসব সমস্যার মূল শেকড় হল এটা যে, আমরা আমাদের প্রকৃতির আহ্বানকে গুরুত্ব দেই না।’
কেবলই বস্তুগত জীবন অস্ট্রিয়ার নাগরিক ‘লেনসেল’-কে সুখ দিচ্ছিল না। আধ্যাত্মিক শূন্যতা অনুভব করতেন তিনি। আর এই মানসিক-আত্মিক অভাব মেটানোর জন্য তিনি সত্যের সন্ধান করতেন তৃষ্ণার্ত চাতক পাখির মত। এই তৃষ্ণা তাকে পরিচিত করে ইসলামের সঙ্গে ।
অস্ট্রিয়ার নও-মুসলিম ‘লেনসেল’-এর মতে বস্তুবাদ বা জড়বাদে আকণ্ঠ নিমজ্জিত পশ্চিমা জীবন-যাপন পদ্ধতি কখনও মানুষের আত্মাকে সন্তুষ্ট করতে পারবে না। পশ্চিমারা আজ যান্ত্রিক জীবনে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। একমাত্র ঈমান বা ইসলামের প্রতি বিশ্বাসই তাদের এই রোগ সারাতে পারবে। জড়বাদের পরিণতি সম্পর্কে বহু বছর আগেই কোনো কোনো পশ্চিমা চিন্তাবিদের হুঁশিয়ারি সত্ত্বে তাদের কেউ সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করেনি। ফলে পশ্চিমা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আজ ছড়িয়ে পড়েছে লাগামহীনতা ও অনাচার এবং সেখানকার সব কিছুই পঁচে গেছে ভেতর থেকে। একমাত্র ঐশী ধর্ম ইসলামী বিশ্বাসই মানুষকে মুক্ত করতে পারে এই বন্দী-দশা থেকে। এ ধর্ম এসেছে মানুষকে মুক্তি দেয়ার জন্য। নবী-রাসূলদের মাধ্যমে আল্লাহ এভাবেই মানুষকে পথ দেখিয়েছেন। ধর্ম মানুষকে উন্নত নানা গুণের অধিকারী হতে ও দায়িত্বশীল হতে বলে। ধর্ম অন্যের কল্যাণকামী হতে ও নিজের অধিকার রক্ষা করতে বলে। ধর্ম অন্যের সম্পদ ও জীবনের ওপর জুলুম করতে নিষেধ করে। প্রকৃত ধর্ম বা ইসলাম আমাদের সেইসব কাজ করতে বলে যা সমাজের জন্য ও আমাদের জন্য কল্যাণকর। এ ধর্ম অনাচার ও ধ্বংস সৃষ্টিকারী কাজগুলো হতে দূরে থাকতে বলে। নামাজ ও রোজার মত ইবাদতগুলো হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্যের প্রতীক।
অস্ট্রিয়ার নও-মুসলিম ‘লেনসেল’-এর মতে, ধর্ম ব্যক্তি ও সমাজ-জীবনে মানুষের সুস্থতা চায়। কিন্তু গত এক শতকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ব্যাপক উন্নতি ঘটা সত্ত্বেও মানুষ আধ্যাত্মিকতা বা ধর্মের ক্ষেত্রে সেভাবে অগ্রসর হয়নি। ফলে যে ক্ষতি হয়ে গেছে মানবজাতির তা অপূরণীয়। পশ্চিমা সভ্যতা ভোগ-বিলাসের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়লেও আত্মিক প্রশান্তির জন্য ধর্মের ওপর নির্ভরতার পরিবর্তে কৃত্রিম কিছু বেদনানাশক বা প্রশান্তিদায়ক ওষুধ তৈরি করেছে। কিন্তু এইসব ওষুধ মানুষকে রক্ষা করতে পারছে না। দেখা গেছে যাদের জীবনে ধর্মের প্রভাব নেই তারাই বেশি মানসিক অশান্তি, অস্থিরতা, হতাশা ও আত্মহত্যার শিকার হচ্ছে। ফলে পশ্চিমারা আবারও ঝুঁকছে ধর্মের দিকে।
অস্ট্রিয়ার নও-মুসলিম ‘লেনসেল’ মনে করেন, ইসলাম মানুষের জীবনের সব বিভাগের চাহিদা পূরণে সক্ষম। তিনি বলেছেন, ‘ইসলামের বিশ্বদৃষ্টি ও আদর্শ মানুষের বিবেক আর প্রকৃতির সঙ্গে মানানসই। জীবন সম্পর্কে এ ধর্মের দৃষ্টিভঙ্গি নির্ভুল এবং তা স্রস্টা ও সৃষ্টির মধ্যে সবচয়ে সুন্দরভাবে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক গড়ে তুলে মানুষের তৃষ্ণার্ত আত্মাকে করে সজীব। একমাত্র ইসলামই পাশ্চাত্যের মানুষকে মুক্তি দিতে পারে।’
অস্ট্রিয়ার নও-মুসলিম ‘লেনসেল’-এর মতে, বর্তমান যুগে যুব সমাজের জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ হচ্ছে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। নানা ধরনের প্রচার মাধ্যম ব্যবহার করে পাশ্চাত্য যুব সমাজকে পশ্চিমা সংস্কৃতি তথা বস্তুবাদে ডুবিয়ে রাখছে। তিনি মনে করেন ইসলামও সুস্থ সংস্কৃতির মাধ্যমে যুব সমাজের ওপর সর্বোচ্চ প্রভাব রাখতে পারে।
অস্ট্রিয়ার নও-মুসলিম ‘লেনসেল’ তার বক্তব্য শেষ করেছেন প্রখ্যাত আইরিশ চিন্তাবিদ, রাজনীতিজ্ঞ ও সাহিত্যিক বার্নার্ড শ’র ভবিষ্যদ্বাণীর কথা তুলে ধরে। তিনি বলেছিলেন, ইসলাম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। ইউরোপ আমেরিকায় তথা পাশ্চাত্যে ইসলামের প্রতি মানুষের বর্তমান ঝোঁক সেই ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যতাই তুলে ধরছে। বার্নার্ড শ’ আরো বলেছিলেন, আগামী দিনের ইউরোপ মুহাম্মাদের বিশ্বাসকে গ্রহণ করবে।
লিখেছেনঃ নও-মুসলিম ‘লেনসেল’
উৎসঃ ফেসবুক

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
slot online skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 rtp slot slot bonus new member skybet88 mix parlay slot gacor slot shopeepay mix parlay skybet88 slot bonus new member