এক বোনের কাহিনী

(১) কখন ভাবিনি আমার হুজুর টাইপের কারো সাথে বিয়ে হবে। আমার ইচ্ছা না থাকা সত্তেও পরিবারের চাপে বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়। আমি মর্ডান মেয়ে আর বিয়ে করব কিনা হুজুরকে, ভাবতেই কেমনযেন সংকোচ বোধ হচ্ছিল। এমনিতেই বিয়ে করতে ইচ্ছা করছিল না তাতে আবার এক বান্ধবি এসে বললঃ- কিরে রিয়া তুই হুজুরকে বিয়ে করলি আর পাত্র খুজে পাসনি। আর এক ভাবী এসে কানে ফিসফিস করে বললঃ- তোর বরের তো সারা মুখেই দাড়ি, কিস করবি কোথায় । খুব বিরক্ত লাগছিল । ইচ্ছা করছিল এখুনি আসন থেকে উঠে যাই। হটাৎ পায়ের ঠক ঠক আওয়াজে ঘোমটার ফাক দিয়ে আর চোখে দেখলাম একজন লোক আসতেছে।

তার বেশ ভুষা আর গঠন দেখে বুঝলাম উনি আমার স্বামী। অনিচ্ছা থাকা সত্তেও উঠে গিয়ে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলাম। থাক থাক বলে আমার ২ বাহুতে হাত দিয়ে তুলে বিছানায় বসাল আর বললঃ- তোমার নাম কি ? খুব ইচ্ছা করছিল বলতে আমার নাম না জেনেই আমাকে বিয়ে করেছেন। বললামঃ- রিয়া –সুন্দর নাম কিন্তু তুমি কি জানো রিয়া নামের অর্থ কি ? মেজাজটা খারাপ হওয়ার উপক্রম বললামঃ- না –শোন আরবিতে রিয়া শব্দের অর্থ অহংকার।
আর মানুষকে যে জিনিসগুলা ধ্বংস করে দেয় তার মধ্যে রিয়া অন্যতম । তাই আজ থেকে আমি তোমাকে মীম বলে ডাকব। নাহ আর মেজাজটা ঠিক রাখতে পারছি না বাসর রাতে আমার স্বামী আমাকে অর্থ শেখাচ্ছে কারো মাথা ঠিক থাকার কথা। একটু বারক্ত সুরে বললামঃ- আপনার যেটা ভাল লাগে সেটাই ডাকিয়েন। বুঝতে পারছে মনে হয় বলল তোমার মনে হয় খারাপ লাগছে তুমি ঘুমিয়ে পড়।

“আমার ধার্মিক স্বামী”

লেখাঃ- ব্যাথার দান

(২) ঘুমটা ভাঙ্গল গুন গুন আওয়াজে। কান খাড়া করে আওয়াজটা শুনতে চেষ্টা করলাম বুঝলাম কেউ কোরআন পড়ছে। তাকিয়ে দেখলাম আমার স্বামী। তার সমধুর কন্ঠে কোরআন তিলাওয়াত শুনতে ভালই লাগছিল। তাই একটু উঠে বসলাম। আমাকে উঠে বসতে দেখে তিলাওয়াত বন্ধ করে বললঃ- আসসালামু আলাইকুল। শুভ সকাল , ঘুমটা কেমন হলো? সালাম নিয়ে বললাম জি ভাল হয়েছে। এভাবেই কাটছিল দিনগুলা। এর মাঝে উনি আমাকে নানা ভাবে নামাজ পরার কথা বলত। এত ধৈয্য আর এত ভাল করে বুঝিয়ে বলত যে আমি নিজেই খুব অবাক হয়ে যেতাম। তার সব চেষ্টাকে সফল করে একদিন নামাজ পরা শুরু করলাম। দেখলাম তার মুখটা খুশিতে ভরে উটেছে। তার হাসি মাখা মুখটা দেখতে ভালই লাগত। নামাজ ৫ ওয়াক্ত হলেও আমি ৪ ওয়াক্ত পরতাম।

ফজরের নামাজ পরতাম না। খুব আলসেমি লাগত। উনি আমাকে ডাকতেন শুনেও জাগতাম না। এটা উনি বুঝতে পেরেছিল যে আমি ইচ্ছা করেই উঠি না। তাই আমাকে কাছে ডেকে পাশে বসিয়ে বলল:- দ্যাখো তুমি এভাবে প্রতিদিন ৮ ঘন্টা করে ঘুমাও তাহলে দিনের ৩ ভাগের ১ভাগ তুমি ঘুমিয়ে কাটাচ্ছ। যদি তোমার আয়ুকাল ৬০ বছর হয় তাহলে তুমি ৩ভাগের এক ভাগ মানে ২০ বছর ঘুমিয়ে কাটাচ্ছ। আল্লাহ তা’আলা তো তোমাকে এই দীর্ঘ সময় ঘুমীয়ে কাটাতে পৃথিবীতে পাঠাইনি। তারপর অনেকগুলা ভাল ভাল কথা আর কোরআনের বাণী শুনালেন। এত ভাল কথা শুনিয়েছিলেন যে শুনে আমার চোখে পানি এসে গিয়েছিল। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত আমি ১ ওয়াক্ত নামাজও আমি কাজা করিনি। সর্বদাই ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলি। আজ আমি অনুতপ্ত নয় গর্ববোধ করি আমার স্বামীর জন্য। সত্যিই আমি খুব ভাগ্যবতী।

সূত্র : ২য় বর্ষ প্রথম সংখ্যা, বার্তা দাঅহ ম্যাগাজীন, পশ্চিমবঙ্গ ভারত।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

১টি মন্তব্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88