ভূতের গল্প থেকে সাবধান!

সংগ্রহেঃ আব্দুল্লাহ শাহেদ আল মাদানী

আলেমগণ বলেনঃ আরবরা মনে করত জনমানবহীন অঞ্চল ও মরুভপথ দিয়ে যখন মানুষ অতিক্রম করত তখন তাদের সামনে ভূত-প্রেত তথা শয়তানেরা বিভিন্ন আকার নিয়ে তাদের সামনে প্রকাশ হত। শয়তানেরা বিভিন্ন রং ধারণ করত এবং পথিককে পথ ভুলিয়ে দিত। অতঃপর মেরে ফেলত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরবদের এই ধারণাকে খন্ডন করেছেন। অন্য একদল আলেম বলেনঃ এখানে ভূত-পেত্নীর অস্থিত্বকে অস্বীকার করা হয়নি। বরং এই হাদীছে ভূত-প্রেতের বিভিন্ন রং ধারণ এবং মানুষকে রাস্তা ভুলিয়ে দেয়া ও মেরে ফেলার ধারণাকে অস্বীকার করা হয়েছে। তাই বলা হয়েছে, গাওল (ভূত-প্রেত) বলতে কিছু নেই। অর্থাৎ এগুলো কাউকে পথ ভুলাতে ও ক্ষতিগ্রস্ত পারেনা।


অবাধ্য ও উশৃংখল শিশুদেরকে শান্ত করার জন্য প্রাচীন কালে শিশুদেরকে ভূতের গল্প শুনানো হত এবং তাদেরকে ভয় দেখানো হত। বলা হত শান্ত না হলে ভূত আসবে অথবা ভূতে ধরে নিয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ যেই গল্পটি বলা হত, তা হচ্ছে ভূত একটি অদ্ভুত জন্তু। কোন মানুষের সামনে ভূত প্রকাশিত হলে সে যদি অস্ত্র দিয়ে একটি আঘাত করতে পারে, তাহলে এক আঘাতেই ভূত মারা যায়। মুমূর্ষ অবস্থায় সেই ভূত মানুষকে আরেকবার আঘাত করতে বলে। মানুষ যদি ভূতের আবেদন অনুযায়ী দ্বিতীয়বার আঘাত করে, তাহলে ভূত দ্বিতীয়বার জীবন লাভ করে এবং সেই মানুষের নিকট হতে প্রতিশোধ নেয়।
আরও প্রচলিত আছে যে, ভূতের চোখে দীর্ঘ ছিদ্র রয়েছে। কোন মানুষের দিকে যখন সে তীক্ষè দৃষ্টি দেয়, তখন ভূতের চোখ থেকে আগুন বের হয় এবং মানুষকে জ্বালিয়ে দেয়।
কোন কোন দেশের মানুষের মাঝে আরও প্রচলিত রয়েছে যে, তারা প্রতি রাতে ঘরের বাইরে কিছু খাদ্য রেখে দেয়। তারা বিশ্বাস করে গভীর রাতে ভূত এসে তা খেয়ে যাবে। কারণ ভূতেরা খাদ্যের সন্ধানে বাড়িঘরের আশেপাশে ঘুরে বেড়ায়।
কোন কোন মানব সমাজে এমনি আরও কুসংস্কারপূর্ণ গল্প ছড়িয়ে আছে যে, ভূতের অত্যাচার থেকে নিস্কৃতি পাওয়ার সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে বাড়িঘরের বাইরে প্রচুর তিসির দানা ফেলে রাখতে হবে। কেননা ভূতেরা প্রচুর খাদ্য গ্রহণ করে। আরও প্রচলিত আছে যে, ভূতেরা বিভিন্ন আকার ধারণ করে। পুরুষ ভূত মহিলা ভূতের চেয়ে ভিন্ন আকৃতির নয়। তারা বিভিন্ন আকার-আকৃতিও ধারণ করতে সক্ষম।
কোন কোন সমাজের মানুষের মধ্যে আরও প্রচলিত আছে যে, ভূত হচ্ছে দুষ্ট জিনদেরই একটি শ্রেণী। তাদের আকৃতি ভয়াবহ এবং তারা মানুষের উপর সর্বদা আক্রমণমুখী ও রাগান্বিত থাকে। পথ চলার সময় তারা মানুষকে আটকিয়ে ফেলে এবং বিভিন্নি আকার ধারণ করে ও সুযোগ পেলেই মানুষকে গিলে ফেলে।
আরও প্রচলিত আছে যে, ভূত (রাক্ষস) মানুষ এবং জিনের গোশত খায়। প্রখ্যাত আরবী সাহিত্যিক ইবনে মুকাফফা তার ‘আলিফ লায়লা ওয়া লায়লা’ গ্রন্থে সিন্দাবাদ ও সাইফুল মুলুকের গল্পের মতই অনেক ভূতের গল্প বর্ণিত হয়েছে।
কোন কোন ঘটনায় বর্ণিত হয়েছে যে, ভূতেরা কবরস্থানের চতুর্দিকে ঘুরাফেরা করে এবং মৃতদের লাশ খায়।
ভূত, জিন, রাক্ষস ইত্যাদি সম্পর্কে আরও অনেক কাল্পনিক কিচ্ছা শুনা যায়। এগুলোকে মূর্খরা বিশ্বাসও করে থাকে। মূলত এগুলোর কোন ভিত্তি নেই।
বাংলাভাষীদের মধ্যেও ভূতের গল্প শুনা যায়। ভারতভর্ষের হিন্দুদের সংস্কৃতির বিরাট অংশ জুড়ে আছে ভূত, রাক্ষস এবং প্রেত-পেত্নীর আরও অসংখ্য কাহিনী। বাংলা সাহিত্যেও ভুত-প্রেতের অনেক গল্প রয়েছে। বাংলার কবি-সাহিত্যিকগণও ভূত-প্রেত ও প্রেতাত্মাকে উপকরণ করে কাব্য ও সাহিত্য রচনা করেছেন। যার কারণে বাংলীদের মধ্যে ভূতের গল্পের শেষ নেই।
বাংলার মুসলিমদের মধ্যেও এ জাতীয় কুসংস্কার থেকে খালী নয়। আমাদের মুসলিম-পিতামাতাগণও শিশুদেরকে ঘুম পাড়ানোর জন্য এবং দুষ্টামি থেকে শান্ত করার জন্য যখন বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করার পরও ব্যর্থ হন, তখন এক রকম বাধ্য হয়েই ভূতের গল্প শুনাতে থাকেন এবং বলে থাকেন শান্ত না হলে কিংবা না ঘুমালে ভূত আসবে এবং ধরে নিয়ে যাবে, ধরে নিয়ে ভূত এই এই ….করবে । ভূতের এই এই রূপ, এই এই গুণ ইত্যাদি আরও অনেক কথা।
এ জাতিয় সকল কিচ্ছাই কাল্পনিক ও বানোয়াট। শিশুদেরকে এ ধরণের ঘটনা শুনানো থেকে বিরত থাকা উচিৎ। শিশুদেরকে জিন, ভূত, প্রেত ইত্যাদির ভয় না দেখিয়ে আল্লাহর ভয় ও ভালবাসা এবং সাহস ও বীরত্বের ঘটনা শুনানো উচিৎ।
ইসলাম এসে এ জাতিয় কুসংস্কার ও কাল্পনিক ঘটনার মূলোৎপাটন করেছে। তবে এগুলোর অস্থিত্বকে অস্বীকার করেনি। বরং যারা আল্লাহর যিকির করবে, আয়াতুল কুরসী এবং কুরআনের অন্যান্য আয়াত ও হাদীছে বর্ণিত দুআ-কালাম পাঠ করবে, জিন-ভূত তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবেনা।
জিন, ভূত, প্রেত-পেত্নী, রাক্ষস এবং এ জাতিয় আরও যে সমস্ত গল্প শুনা যায় তার মধ্যে থেকে কেবল জিনের ব্যাপারেই কুরআন ও হাদীছে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। কুরআনে সূরা জিন নামে একটি সূরাও রয়েছে। তাতে বলা হয়েছে যে, জিনেরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট আগমণ করেছে এবং কুরআন শুনে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করেছে। তবে জিনদের মধ্যে কাফের-মুশরিকও রয়েছে। তেমনি পাপী ও অত্যাচারীও রয়েছে। অত্যাচারী, দুষ্ট এবং অবাধ্য জিনেরা মানুষের ক্ষতিও করে থাকে। তবে যারা কুরআন পাঠ করে, আল্লাহর কাছে তাদের ক্ষতি থেকে আশ্রয় চায়, সকাল-বিকাল আয়াতুল কুরসী এবং চারকুল পাঠ করে শয়তান ও জিন তাদের কোন ক্ষতি করতে পারেনা। (আল্লাহই ভাল জানেন)

Source

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
skybet88 skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 slot bonus new member skybet88 skybet88 slot gacor skybet88 skybet88