মুসলিম পুরুষের পর্দা ১ম পর্ব
আল্লাহভীতি আর্দশ মানুষের জীবনের মূল ভিত্তি। তাকওয়াশীল মানুষই জান্নাতে যাবে। তাকওয়া বা আল্লহভীতি মুমিন জীবনের মূলভিত্তি। তাকওয়া আরবী শব্দ। আরবী ভাষায় তাকওয়া শব্দের আভিধানিক অর্থ ভয় করা, বেঁচে চলা, সতর্কতা অবলম্বন করা, বিরত থাকা… ইত্যাদি… আল্লাহর উপর দৃঢ় ঈমান রেখে জীবনের সর্বস্তরে পবিত্র ভূমিকা পালন করাকেই ইসলামী পরিভাষায় তাকওয়া বলে। যে ব্যক্তি আল্লাহকে যর্থাথভাবে ভয় করে আল্লাহ তার সকল বিষয় সমাধান করে দেন।
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন:-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যেরূপ ভয় করা উচিৎ। আর মুসলিম না হয়ে মৃত্যু বরণ কর না।” [সূরা আল-ইমরান আয়াত নাম্বার:- ১০২],
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ وَاسْمَعُوا وَأَطِيعُوا وَأَنفِقُوا خَيْرًا لِّأَنفُسِكُمْ
“তোমরা আল্লাহকে যথাসাধ্য ভয় করশুন, আনুগত্য কর এবং ব্যয় কর।” [সূরা আত-তাগাবুন আয়াত নাম্বার:- ১৬]
আরো ইরশাদ হচ্ছে,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল।” [সূরা আল-আহযাব আয়াত নাম্বার:- ৭০]
আল্লাহ তাআলা কুরআনে অবতীর্ণ করেছেন,
ذَٰلِكُمْ يُوعَظُ بِهِ مَن كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۚ وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجًا
وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ
“যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার মুক্তির পথ বের করে দেন এবং তাঁর কল্পনাতীত উৎস থেকে তিনি তাকে রিযিক দান করেন।” [সূরা আত-তালাক আয়াত নাম্বার:- ২-৩]
অপর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن تَتَّقُوا اللَّهَ يَجْعَل لَّكُمْ فُرْقَانًا وَيُكَفِّرْ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ۗ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ
“যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তাহলে তিনি তোমাদেরকে (ভাল মন্দের মধ্যে) পার্থক্যকারী (যোগ্যতা ও শক্তি) দান করবেন, তোমাদের থেকে তোমাদের গুনাহসমূহ দূর করে দেবেন এবং মাফ করে দেবেন। আল্লাহ বড়ই মহান।” [সূরা আল-আনফাল আয়াত নাম্বার:- ২৯]।
সুতরাং প্রত্যেক মুসলিমকে এটা মনে রাখতে হবে ইসলাম কোন পুথিগত বিদ্যা বা নীতিবাক্য সম্বলিত কাব্য নয়। ইসলাম একটি পূর্নাঙ্গ জীবনবিধান সেই জীবনবিধানে আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক পুরুষের উপর পর্দাকে ফরজ করে তাদেরকে পর্দা করার ব্যাপারে সুস্পষ্ট আদেশ করেছেন। এবং পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা পর্দার বিধান সম্পর্কে পরিস্কার ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। তাই এই ব্যাপারে বিন্দু পরিমান কোন ছাড় নেই। পর্দার অপর নাম তাকওয়া বা আল্লাহর ভয়। যখন কোন পুরুষ পর্দা করে তখন অবশ্যই তার অন্তরে আল্লাহর ভয় থাকে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলাকে ভয় করেই সে পর্দা করে। এছাড়াও যে পুরুষ পর্দা করে, তার পর্দা তাকে অনেক অন্যায় ও পাপচার থেকে রক্ষা করে। এই কারণেই আল্লাহ রব্বুল আলামীন পর্দাকে তাকওয়ার পোশাক বলে আখ্যায়িত করেছন।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন:-
يَا بَنِي آدَمَ قَدْ أَنزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْآتِكُمْ وَرِيشًا ۖ وَلِبَاسُ التَّقْوَىٰ ذَٰلِكَ خَيْرٌ ۚ ذَٰلِكَ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ
“হে আদম সন্তান! আমি তোমাদেরকে পোষাক-পরিচ্ছদ দিয়েছি তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করার জন্য এবং শোভা বর্ধনের জন্য। আর তাকওয়ার পোশাক হচ্ছে সর্বোত্তম পোশাক। ওটা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি যাতে তারা উপদেশ গ্রহন করে।” [সূরা আল-আরাফ আয়াত নাম্বার:- ২৬]
এই সূরার পরের আয়াতে উল্লেখ রয়েছে,
يَا بَنِي آدَمَ لَا يَفْتِنَنَّكُمُ الشَّيْطَانُ كَمَا أَخْرَجَ أَبَوَيْكُم مِّنَ الْجَنَّةِ يَنزِعُ عَنْهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوْآتِهِمَا ۗ إِنَّهُ يَرَاكُمْ هُوَ وَقَبِيلُهُ مِنْ حَيْثُ لَا تَرَوْنَهُمْ ۗ إِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِينَ أَوْلِيَاءَ لِلَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ
“হে আদম সন্তান! শয়তান যেন তোমাদেরকে কিছুতেই ফিতনায় ফেলতে না পারে যেমনভাবে তোমাদের পিতা-মাতাকে (আদম ও হাওয়াকে) জান্নাত থেকে বের করেছিল। সে তাদের পরস্পরকে লজ্জাস্থান দেখানোর জন্য তাদের দেহ হতে পোশাক খুলিয়ে ফেলেছিল। সে আর তার সাথীরা তোমাদেরকে এমনভাবে দেখতে পায় যে তোমরা তাদেরকে দেখতে পাও না। যারা ঈমান আনে না তাদের জন্য আমি শয়তানকে তাদের অভিভাবক বানিয়ে দিয়েছি।” [সূরা আল-আরাফ আয়াত নাম্বার:- ২৭]
মু’মিনদেরকে আল্লাহ তাআলা দৃষ্টি অবনত রাখার প্রতি নির্দেশ দিয়ে বলেন,
قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ
“মুমিনদেরকে বল তাদের দৃষ্টি অবনমিত করতে আর তাদের লজ্জাস্থানকে সংরক্ষন করতে এটাই তাদের জন্য বেশি পবিত্র, তারা যা কিছু করে আল্লাহ সে সম্পর্কে খুব ভালভাবে অবগত।” [সূরা আন-নুর আয়াত নাম্বার:- ৩০]
অশ্লীলতার প্রতিরোধে ইরশাদ হচ্ছে :
إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ۚ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
“যারা পছন্দ করে যে, মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার বিস্তৃত্ব ঘটুক তাদের জন্য আছে ভয়াবহ শাস্তি দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ জানেন আর তোমরা জাননা।” [সূরা আন-নুর আয়াত নাম্বার:- ১৯],
অশ্লীলতার সাথে দূরতম সম্পর্ক না রাখতে আল্লাহ নির্দেশ দিচ্ছেন :
وَلَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ ۖ وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ
“আর অশ্লীলতার ধারে কাছেও যেওনা তা প্রকাশ্যে হোক অথবা অপ্রকাশ্যে হোক না কেন।” [সূরা আল-মায়িদাহ আয়াত নাম্বার:- ১৫১]
কৃপ্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বিরত থাকতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন এই বলে,
يُرِيدُ اللَّهُ لِيُبَيِّنَ لَكُمْ وَيَهْدِيَكُمْ سُنَنَ الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ وَيَتُوبَ عَلَيْكُمْ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
“আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করতে চান, পক্ষান্তরে কুপ্রবৃত্তির অনুসারীরা চায় যে, তোমরা (আল্লাহর নিকট হতে) দূরে বহু দূরে সরে যাও।” [সূরা আন-নিসা আয়াত নাম্বার:- ২৭]
অন্যায় কাজে অসহযোগীতার নির্দেশ করা হয়েছে কুরআনে,
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ
“সৎকাজ ও তাকওয়ার ব্যাপারে তোমরা পরস্পরকে সহযোগিতা কর, পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করো না। আল্লাহকে ভয় কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা।” [সূরা আল-মায়িদাহ আয়াত নাম্বার:- ০২]
ব্যভিচারী পুরুষ ও নারীর পরষ্পরের বিবাহ হারাম করে কুরআনে অবতীর্ণ হয়েছে,
الزَّانِي لَا يَنكِحُ إِلَّا زَانِيَةً أَوْ مُشْرِكَةً وَالزَّانِيَةُ لَا يَنكِحُهَا إِلَّا زَانٍ أَوْ مُشْرِكٌ ۚ وَحُرِّمَ ذَٰلِكَ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ
“ব্যাভিচারী পুরুষ কেবল ব্যাভিচারিনী নারী অথবা মুশরিকা নারী ছাড়া বিয়ে করে না। আর ব্যাভিচারিনী নারী ব্যাভিচারী পুরুষ অথবা মুশরিক পুরুষ ছাড়া বিয়ে করে না, মুমিনদের জন্য তাদেরকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।” [সূরা আন-নুর আয়াত নাম্বার:- ০৩]
চরিত্রহীনা নারী পুরুষদের বিবাহের বিষয়ে সতর্ক করে আল্লাহ তাআলা বলেন,
الْخَبِيثَاتُ لِلْخَبِيثِينَ وَالْخَبِيثُونَ لِلْخَبِيثَاتِ ۖ وَالطَّيِّبَاتُ لِلطَّيِّبِينَ وَالطَّيِّبُونَ لِلطَّيِّبَاتِ ۚ أُولَٰئِكَ مُبَرَّءُونَ مِمَّا يَقُولُونَ ۖ لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ
“চরিত্রহীনা নারী চরিত্রহীন পুরুষের জন্য আর চরিত্রহীন পুরুষ চরিত্রহীনা নারীদের জন্য, চরিত্রবতী নারী চরিত্রবান পুরুষের জন্য আর চরিত্রবান পুরুষ চরিত্রবতী নারীর জন্য। তাদের সম্পর্কে লোকেরা যা বলে তা থেকে তারা পবিত্র। তাদের জন্য আছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা।” [সূরা আন-নুর আয়াত নাম্বার:- ২৬]
এছাড়াও মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন:-
إِنَّ كَيْدَكُنَّ عَظِيمٌ
“নারীদের (দুষ্টু) ছলনা খুবই মারাত্মক।” [সূরা ইউসূফ আয়াত নাম্বার:- ২৮]।
সুতরাং অশ্লীল পোষাকের বেপর্দা নারীদের থেকে নিজের চোখ ও লজ্জাস্থানের হেফাজত করতে হবে। কেননা আল্লাহ তাআলার আদেশ অমান্য করে পর্দাহীনতা অভিশাপ ডেকে আনে এবং আল্লাহ তাআলার রহমত থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে দেয়।
এই প্রসঙ্গে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুআবিয়া ইবনু হায়দা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তিন শ্রেনীর মানুষ রয়েছে যাদের চক্ষু জাহান্নাম দেখবে না।
১. যারা আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দেয়।
২. যারা আল্লাহর ভয়ে কাঁদে।
৩. যারা বেগানা নারীকে দেখে চক্ষু নীচু করে।” [ছহীহ আত-তারগীব হাঃ ৪৭১৩],
আবূ সাঈদ আল খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “দুনিয়া অবশ্যই মিষ্ট ও আকর্ষণীয়। আল্লাহ তোমাদেরকে দুনিয়ায় তাঁর প্রতিনিধি করেছেন যাতে তিনি দেখে নেন তোমরা কেমন কাজ কর। কাজেই তোমরা দুনিয়া সম্পর্কে সতর্ক হও এবং নারীদের ফিতনা থেকেও সতর্ক থাক। কারণ বনী ইসরাঈলের প্রথম ফিতনা নারীদের মধ্যেই সৃষ্টি হয়েছিল।” [বুখারী; মুসলিম],
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমার মৃত্যুর পরে পুরুষদের জন্য নারীর চেয়ে অধিক ক্ষতিকর ফিতনা আর কিছু রেখে অথবা ছেড়ে যাচ্ছি না।” [সহীহ বুখারী হাঃ ৫০৯৬],
অপর এক বর্ণনায় রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “দুনিয়াতে পুরুষদের জন্য সবচেয়ে বড় ফিতনাহ হল দুষ্টু নারী।”
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার কাছে তার মুখ ও লজ্জাস্থানের নিশ্চয়তা দিবে, আমি তার জন্য জান্নাতের নিশ্চয়তা দেব।” [সহীহ বুখারী]
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের কারোর মাথায় লোহার সুই দিয়ে আঘাত করা তার জন্য অনেক বেশি শ্রেয় বেগানা (অর্থাৎ- গায়রে মাহারাম) কোন নারীকে স্পর্শ করার চাইতে।” [সহীহ আল-জামি হাঃ ৪৯২১],
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কোন পুরুষ যেন বেগানা (অর্থাৎ- গায়রে মাহারাম) কোন নারীর সাথে একান্তে নির্জনে অবস্থান না করে। কেননা সেখানে তখন তাদের মধ্যে তৃতীয় জন (ব্যক্তি) হিসেবে শয়তান উপস্থিত হয়।” [সুনান আত-তিরমিযী হাঃ ১১৭১],
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদের বেশ ধারণাকারী পুরুষদের এবং পুরুষদের বেশ ধারণাকারী নারীদের অভিসম্পাত (লা’নাত) করেছেন।”
অপর এক বর্ণনায় আছে, “রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদের অনুকরণকারী পুরুষদের এবং পুরুষদের অনুকরণকারী নারীদেরকে অভিসম্পাত (লা’নাত) করেছেন।” [বুখারী হাঃ ৫৮৮৫, ৫৮৮৬],
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “নারীর পোশাক পরিধানকারী পুরুষকে এবং পুরুষের পোশাক পরিধানকারী নারীকে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত (লা’নাত) করেছেন।” [সহীহ আবূ দাঊদ তাহক্বীক্ব- আলবানী হাঃ ৩৪৫৪, ৪০৮৯],
এছাড়াও রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা অভিসম্পাত (লা’নাত) করেছেন ঐ সব পুরুষ লোকদের প্রতি যারা মেয়েদের আকৃতি-প্রকৃতি, পোশাক-পরিচ্ছদ গ্রহণ করে, অপরদিকে ঐ সকল মেয়ে লোকদের প্রতিও অভিসম্পাত (লা’নাত) করেছেন যারা পুরুষদের আকৃতি-প্রকৃতি ও পোশাক-পরিচ্ছদ গ্রহণ করে।” [বুখারী],
ইবনু হুছাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “লজ্জাশীলতা পূণ্য ও কল্যাণ ব্যতীত আর কিছুই আনয়ন করে না।”
অন্য বর্ণনায় আছে, “লজ্জার সর্বাংশই উত্তম।” [বুখারী; মুসলিম; মিশকাত হাঃ ৫০৭১],
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নির্লজ্জতা কোন জিনিসের মধ্যে থাকলে তাকে ত্রুটিপূর্ন করে আর লাজুকতা কোন জিনিসের মধ্যে থাকলে তার শ্রী বৃদ্ধি করে।” [ছহীহ আত তারগীব হাঃ ২৬৩৫],
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “হে আয়েশা! লজ্জা যদি কোন লোক হয় তাহলে সে হবে সৎ ব্যক্তি। আর অশ্লীলতা লজ্জাহীনতা কোন লোক হলে নিশ্চয়ই সে হবে নিকৃষ্ট লোক।” [ছহীহ আত তারগীব হাঃ ২৬৩১],
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “লজ্জা ঈমানের অঙ্গ। আর ঈমানের স্থান জান্নাত। পক্ষান্তরে নির্লজ্জতা দুশ্চরিত্রের অঙ্গ। দুশ্চরিত্রের স্থান জাহান্নাম।” [আহমাদ; তিরমিযি; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হাঃ ৪৮৫৬],
যায়েদ ইবনু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “প্রত্যেক দ্বীনের একটি বিশেষ স্বভাব আছে। আর দ্বীন ইসলামের বিশেষ স্বভাব হল লজ্জাশীলতা।” [মুত্তাফাক্ব আলাইহ; ছহীহ আত তারগীব হাঃ ২৬৩২; মিশকাত হাঃ ৫০৯০],
আবূ উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, “লজ্জা ও অল্প কথা বলা ঈমানের দুটি শাখা। আর অশ্লীলতা ও বাকপটুতা বাচালতা মুনাফিকীর দুটি শাখা।” [তিরমিযি হাঃ ২০২৭; মিশকাত হাঃ ৪৭৯৬],
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “লজ্জা হচ্ছে ঈমান। আর ঈমান হচ্ছে জান্নাত লাভের মাধ্যম।” [মিশকাত হাঃ ৫০৭৭],
এছাড়াও রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে হিদায়াত, তাকওয়া, পবিত্রতা ও স্বয়ংসম্পূর্ণতা চাই।” [মুসলিম]।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসাঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, আমি হাজার সম্পদ আমানত রাখার দায়িত্ব নিতে পারি, কিন্তু একজন গায়রে মাহারাম নারী সে যদি সুন্দরী নাও হয় তাকে আমানত রাখার দায়িত্ব নিতে পারবো না।
হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, এই দুনিয়াটা সাপের মত। একে ধরতে অনেক নরম কিন্তু এর কামড় খুবই মারাত্নক।
সুতরাং উপরোক্ত আয়াত ও হাদীস দ্বারা এটা সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, পর্দা প্রগতির পথ অবরোধ করতে চায় না; চায় অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, ব্যভিচার, অসভ্যতা ও নির্লজ্জতার পথ রুদ্ধ করতে। পক্ষান্তরে পর্দাহীনতা; আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অবাধ্যতা।
পর্দাহীনতা; আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের পরিবর্তে আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অভিশাপ।
পর্দাহীনতা; অসভ্যতা, অশ্লীলতা, লজ্জাহীনতা, ঈর্ষাহীনতা ও ধৃষ্টতা।
পর্দাহীনতা; সাংসারিক অশান্তি, ধর্ষণ, অপহরণ, ব্যভিচার, বেহায়াপনা প্রভৃতির ছিদ্রপথ।
পর্দাহীনতা; যৌন উত্তেজনার সহায়ক। মানবরূপী শয়তানদের চক্ষুশীতলকারী।
পর্দাহীনতা; দুষ্কৃতীদের নয়নাভিরাম।
পর্দাহীনতা; অশ্লীল পোশাকের নারী-পুরুষ, জেনা-ব্যভিচারের গল্প, বিকৃত রুচির দৃশ্য।
পর্দাহীনতা; কিয়ামতের কালিমা ও অন্ধকার।
পর্দাহীনতা; বিজাতীয় ইবলীসী ও জাহেলিয়াতি প্রথা।
বরং সভ্য যুগের এই অসভ্যতা, নির্লজ্জতা, বেহায়াপনা দেখে জাহেলিয়াতের পর্দাহীনারাও লজ্জা পাবে।
বেপর্দার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে কোনো পর্দা নেই। কেননা পর্দাহীনতা কিয়ামতের দিনের গাঢ় অন্ধকার।
অতএব পর্দা করতে হবে প্রত্যেক মুসলিমকে সে নারী হোক অথবা পুরুষ। কারণ পর্দা করা তাদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও কিছু নামধারী মুসলিম বলে পর্দা হচ্ছে মধ্যযুগীয় (অন্ধকার যুগের) রীতি এবং ১৪০০ বছর আগের সংস্কৃতি বর্তমান যুগের সাথে ১৪০০ বছরের আগের সংস্কৃতি পুরোপুরি বেমানান এবং আধুনিক যুগের সাথে এটা একদমই খাপ খায়না। যারা পর্দা করে কিন্তু জীবনকে উপভোগ করার জন্য মেয়েদের সাথে সম্পর্ক গড়ে না, মেয়েদের কাছে যায়না, মেয়েদের কাছ থেকে দূরে থাকে, এমনকি মেয়েদের দেখলে দৃষ্টি নিচু করে রাখে তারা আর যাই হোক আধুনিক নয়।
যারা বলতেছেন পর্দা করলে আধুনিকতা প্রকাশ পায় না। পর্দা ১৪০০ বছরের আগের সংস্কৃতি আধুনিক যুগে এটা পুরোপুরি বেমানান।
আমি তাদের কাছে জানতে চাই আধুনিকতা কি শিক্ষা, ভদ্রতা, নম্রতা, আচার-আচরন ও শালীনতার চর্চার মাধ্যমে মানুষের সাথে উত্তম ব্যাবহারের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায় নাকি হাফ প্যান্ট পড়ে অর্ধউলঙ্গ হয়ে চোখ-কান ছিদ্র করে অলংকার পড়ে, হাতে চুড়ি পড়ে, নারীদের সাথে অবৈধ সম্পর্ক রেখে অসভ্যের মত, নির্লজ্জের মত চলাফেরা করলেই শুধু আধুনিকতা প্রকাশ পায়?
আমি তাদের কাছে আধুনিকতার সংজ্ঞা জানতে চাই, সত্যিকার অর্থে আধুনিকতা কাকে বলে যারা এই ধরনের উদ্ভট, ভিত্তিহীন মন্তব্য করছেন মূর্খের মত। পর্দা হচ্ছে মধ্যযুগীয় (অন্ধকার যুগের) রীতি এবং ১৪০০ বছর আগের সংস্কৃতি বর্তমান যুগের সাথে ১৪০০ বছরের আগের সংস্কৃতি পুরোপুরি বেমানান ও আধুনিক যুগের সাথে এটা একদমই খাপ খায়না। এবং যারা পর্দা করে তারা আর যাই হোক আধুনিক নয়।
আচ্ছা পর্দা করে অর্ধউলঙ্গ হয়ে অসভ্যের মত, নির্লজ্জের মত চলাফেরা না করলে যদি কেউ আধুনিক না হয় তাহলে সেই আধুনিকতার কি দরকার। সারাজীবন তো সেই আধুনিক না হয়ে থাকাটাই অনেক বেশি উত্তম। আমার বুঝে আসেনা পর্দা না করে পাওয়া অশ্লীলতার, বেহায়াপনার, ব্যভিচারের, অসভ্যতার, নির্লজ্জতার আধুনিকতার সার্টিফিকেটের কি মূল্য আছে?
আমার কাছে তো মনে হয় পর্দা না করে অর্জিত অশ্লীলতার, বেহায়াপনার, ব্যভিচারের, অসভ্যতার, নির্লজ্জতার আধুনিকতার সার্টিফিকেটের মূল্য মুসলিমদের কাছে টয়লেট টিস্যুর থেকেও কোটি কোটি গুন কম গুরুত্বহীন।
সুতরাং যারা পর্দা করে কিন্তু মেয়েদের সাথে অবৈধ সম্পর্ক না রাখার কারণে ও হাফ প্যান্ট পড়ে অর্ধউলঙ্গ হয়ে চোখ-কানে অলংকার, হাতে চুড়ি না পড়ার কারণে তারা যদি আনস্মার্ট হয় এবং যারা পর্দা না করে মেয়েদের সাথে অবৈধ সম্পর্ক রাখার কারণে ও হাফ প্যান্ট পড়ে অর্ধউলঙ্গ হয়ে চোখ-কানে অলংকার হাতে চুড়ি পড়ার কারণে তারা যদি স্মার্ট হয়। যদি এটাকেই আধুনিকতা বলে তাহলে বলতে বাধ্য হচ্ছি বনের পশু-পাখিরাও আমাদের থেকে অনেক বেশি আধুনিক কারণ তারা পুরোপুরি ভাবেই উলঙ্গ।
অতএব যারা আজ পর্দা করতেছেন না এই ভয়ে যে আপনি পর্দা করলে আপনার আশেপাশে যেসব মানুষ নিজেদেরকে আধুনিক বলে দাবি করছে তারা আপনাকে আনস্মার্ট, গেও, ক্ষেত বলবে। ভাইয়া যারা আপনাকে পর্দা করার কারণে আনস্মার্ট, গেও, ক্ষেত বলবে তারাই কিন্তু আপনার মৃত্যুর পরে আপনাকে পরিপূর্নভাবে পর্দা করিয়ে কবরে রাখবে। কই তখন তো তারা আপনাকে আধুনিক ছেলে বলে হাফ প্যান্ট পড়িয়ে, চোখ-কানে অলংকার, হাতে চুড়ি পড়িয়ে পর্দা না করিয়ে অর্ধউলঙ্গ করে কবরে রাখবে না। এমনকি যদি কেউ বলে একে পর্দা ছাড়া অর্ধউলঙ্গ করে চোখ-কানে অলংকার, হাতে চুড়ি পড়িয়ে কবরে রাখ। যেভাবে সে বেঁচে থাকা অবস্থায় দুনিয়ায় চলাফেরা করেছে মর্ডান সোসাইটিতে নিজেকে আধুনিক ছেলে হিসাবে পরিচয় দেয়ার জন্য। সুতরাং একে পর্দা ছাড়াই অর্ধউলঙ্গ করে কবরে রাখতে হবে কারণ একে পর্দা সহকারে হাফ প্যান্ট, চোখ-কানে অলংকার, হাতে চুড়ি না পড়িয়ে কবরে রাখলে একে আনস্মার্ট, গেও, ক্ষেত মনে হবে। ভাইয়া তখন তো আপনাকে পর্দা না করার উৎসাহ প্রদানকারীরা ঐ লোকটার কথা শুনবে না যে আপনার এত উপকার করে আপনাকে আধুনিক ছেলে হিসাবে সবার কাছে পরিচয় করিয়ে দিতে চাচ্ছে। বরং আপনার আশেপাশের তারাই আপনার পরম মিত্রকে চরমভাবে লাঞ্চনা, বঞ্চনা, অপমান, করে ঐ জায়াগা থেকে তাড়িয়ে দিবে। তাই যাদের আনস্মার্ট, গেও, ক্ষেত বলা কথার কারণে আপনি পর্দা করছেন না নিজেকে স্মার্ট রুপে তাদের কাছে প্রকাশ করার জন্য। তারাই কিন্তু একদিন আপনাকে আপনার মৃত্যুর পরে পরিপূর্নভাবে পর্দা সহকারে কবরে রেখে আপনার নিজের হাতে বানানো অশ্লীলতার, নির্লজ্জতার, ব্যভিচারের, অসভ্যতার, বেহায়াপনার অধুনিক সমাজে আপনাকে আনস্মার্ট, গেও, ক্ষেত বানিয়ে দিবে। যারা আপনাকে উৎসাহ প্রদান করেছিল পর্দা না করার জন্য।
So respect your Parda for your ALLAH, not for people. Be A good Muslim.
(চলবে)………………………