মুসলিমের রক্তের সম্মান
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। অত:পর দরুদ ও শান্তির অবিরাম ধারা বর্ষিত হোক নবীকুল শিরোমণী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর পবিত্র বংশধর ও সম্মানিত সাথীদের উপর।
হত্যা! হত্যা! হত্যা!। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কান পাতলে অথবা সংবাদপত্রের পাতায় চোখ রাখলেই নিহতের স্বজনের আহাজারী আর মাতমের দৃশ্য থাকবেই। মানুষ মানুষকে হত্যা করা যেন খেলনার বস্তু হয়ে দাড়িয়েছে!
মাত্র হাতে গোনা দশটি টাকার জন্যও একে অপরকে হত্যা করছে। সন্তানের হাতে পিতা-মাতা অথবা পিতা-মাতার হাতে আদরের সন্তান, স্বামীর হাতে স্ত্রী অথবা স্ত্রীর হাতে স্বামী, শিক্ষকের হাতে ছাত্র কিংবা ছাত্রের হাতে শিক্ষক, কর্মচারীর হাতে মালিক আর মালিকের হাতে কর্মচারী হত্যা কোনটাই যেন আর অস্বাভাবিক নয়! কিন্তু কেন এই হত্যাযজ্ঞ।
এটা কিসের আলামত? অগ্রগতি ও উন্নয়ন? নাকি পশ্চাৎপদ ও অধ্ব:পতন? তবে এটা যে কিয়ামতের আলামত তাতে কোনই সন্দেহ নাই। ঐ শুনুন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভবিষৎ বাণী: তিনি বলেনঃ
“কিয়ামত ততক্ষণ সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না বেশী বেশী “হারাজ” হবে। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! হারাজ কি? তিনি বললেন: হত্যা, হত্যা।”(মুসলিম)
অথচ পবিত্র ও সুন্নাহের অমূল্য বাণীগুলো মানব হত্যাকে হারাম ঘোষণা করেছে। অন্যায়ভাবে অপরের প্রাণ হরণকে বড় গুণাহসমূহের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ
“কবীরা গুণাহগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো আল্লাহর সাথে শিরক করা, নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা কথা বলা।”(বুখারী ও মুসলিম)
তিনি আরও ইরশাদ করেনঃ তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বিরত থাক। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, সেগুলো কী হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বলেনঃ
“১. আল্লাহর সাথে শিরক করা ২. জাদু করা ৩. অন্যায়ভাবে নিরাপরাধ লোককে হত্যা করা ৪. সুদ খাওয়া ৫. এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা ৬. রণক্ষেত্র থেকে পলায়ন করা ৭. সুরক্ষিত পবিত্রা নারীকে অপবাদ দেয়া।”(বুখারী ও মুসলিম)
সুতরাং অন্যায়ভাবে মানব হত্যা মহা পাপ। চাই সে মুসলিম, অমুসলিম যায় হোক না কেন? বৈধ কারণ ছাড়া মানব হত্যা কোন ভাবেই জায়েয নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ
আর বৈধ কারণ ছাড়া তোমরা সেই প্রাণকে হত্যা করো না, আল্লাহ যা হারাম করেছেন। (সূরা আনআমঃ১৫১)
বিশেষ করে কোন মুসলিমকে হত্যা করা আরোও জঘণ্য অপরাধ। কারণ মুসলিমের রক্তের মর্যাদা অন্যদের তুলনায় আরো বেশী সম্মানিত ও মহিমান্বিত। আর এ সম্পর্কে মহান আল্লাহর বাণী হল:
وَمَنْ يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُتَعَمِّدًا فَجَزَاؤُهُ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيهَا وَغَضِبَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّ لَهُ عَذَابًا عَظِيمًا
অর্থাৎঃ যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করবে তার শাস্তি হবে জাহান্নাম। অনন্তকাল সে সেথায় থাকবে। তার উপর আল্লাহর গজব, আল্লাহর অভিশাপ এবং তিনি সেই খুনি ব্যক্তির জন্য মহা শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।(সূরা নিসাঃ ৯৩)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুমিনের রক্তের গরুত্ব দিতেই ইরশাদ করেনঃ “সেই সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, একজন ঈমানদারকে খুন করা আল্লাহর নিকট দুনিয়া ধ্বংসের চাইতেও ভয়াবহ।” (নাসায়ীঃ ৭/৮২)
এই একটি হাদীসই মুসলমানের রক্তের দাম কত? তা অনুধাবনের জন্য যাথেষ্ট।
ঐ শুনুন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণীঃ “তিন অবস্থা ছাড়া কোন মুসলমানের রক্তপাত ঘটানো অবৈধ, যদি সে মুরতাদ হয়ে যায় তথা ইসলামধর্ম ত্যাগ করে, অথবা বিবাহিত হওয়ার পরেও যদি যিনা করে, অথবা যদি সে বিনা কারণে কাউকে হত্যা করে তথা হত্যার বদলে হত্যা ।” (আবু দাউদঃ ৪৫০২, ইবনে মাজাঃ ২৫৩৩, তিরমিযিঃ ২১৫৮, নাসায়ীঃ ৭/৯১)
এই তিনটি কারণ ছাড়া কোন মুসলিমকে হত্য করা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষেধ। আর এক্ষেত্রেও কিছু শর্ত রযেছে; যে কেউ তা কার্যকর করতে পারবে না। এটি কার্যকর করবে সরকার বা সরকারের পক্ষ হতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি। কারণ প্রত্যেক ব্যক্তির হাতে আইন প্রয়োগ বা কার্যকর করার ক্ষমতা দিলে তাতেও বিশৃংঙ্খলা হবে। যেমন অনেক সময়ই আমরা দেখেছি; গ্রাম্য কিছু মোড়ল তাদের অসৎ উদ্দেশ্য সাধিত না হলে অথবা তাদের কুপ্রস্তাবে কোন অবলা ও অসহায় নারী তার সতীত্ব হারানোর কাজে রাজি না হলে উল্টা নিজ স্বার্থের কারণে সত্বী নারীকে ব্যভিচারের অপবাদ দিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে র্দোরা মারার জঘন্য দৃশ্য। এ ভাবে আইন নিজ হাতে তুলে নেয়াও চরম অন্যায়।
কোন মুসলিমকে হত্যা করা তো বড় গুণাহ, এমনকি তাকে গালি দেয়াও ফাসেকী কাজ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
“কোম মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেকী আর তাকে হত্যা করা হল; কুফরী।” (বুখারী ও মুসলিম)
সুতারং আমরা যেন সাবধানতা অবলম্বন করি। নচেৎ ইহজগতে কোনভাবে পার পেলেও কিন্তু আখেরাতে রক্ষা পাওয়া কোন ভাবেই সম্ভব নয়। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
“কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে (বান্দার হক সংক্রান্ত) সর্বপ্রথম বিচার করা হবে রক্তপাত সম্পর্কে।” (বুখারী ও মুসলিম) আল্লাহ আমাদের সবাইকে হিফাজত করুন। আমীন!