
সলাতে মুবাশ্শির (পর্ব ১৭)
লেখক : আবদুল হামীদ ফাইযী
মসজিদে শিরক ও বিদআত
মহান আল্লাহ বলেন,
وأَنَّ الْمَسَاجِدَ للهِ فَلاَ تَدْعُوْا مَعَ اللهِ أَحَداً
অর্থাৎ, আর অবশ্যই মসজিদসমূহ আল্লাহর। সুতরাং আল্লাহর সঙ্গে আর কাউকে আহবান করো না। (সূরা জ্বিন, আয়াত নং-১৮)
তিনি আরো বলেন, “নিজেদের উপর কুফরের সাক্ষ্য দিয়ে মুশরিকদের জন্য আল্লাহর মসজিদ আবাদ করা শুদ্ধ ও শোভনীয় নয়। ওরা তো এমন, যাদের সকল আমল ব্যর্থ এবং ওরা দোযখে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে।” (সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত নং-১৭)
মসজিদে কবর থাকা শিরকের এক অসীলা। তাই তো মসজিদে কোন মাইয়্যেত দাফন করা বৈধ নয়। বৈধ নয় কবর-ওয়ালা মসজিদে নামায পড়া। এ জন্য মসজিদে কবর থাকলে তা তুলে কবরস্থানে পুনর্দাফন করা ওয়াজেব। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১০/৭৭)
কা’বার মসজিদে বিবি হা-জার (হাজেরা) বা অন্য কারো কবর নেই। এ ব্যাপারে কোন কোন ঐতিহাসিকদের কথা মান্য নয়। কারণ, তাঁদের নিকট কোন দলীল ও প্রমাণ নেই। অনুরুপ মহানবী (সাঃ) এর কবর হযরত আয়েশার হুজরায় হয়েছে, মসজিদে নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১০/৮০, ২৬/৮৬)
মৃত্যু-শয্যায় শায়িত থেকে মহানবী (সাঃ) উম্মতকে অসিয়ত করে বলেছেন, “আল্লাহ ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে অভিশাপ করুন; তারা তাদের আম্বিয়ার কবরসমূহকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছে।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৭১২নং)
তিনি আরো বলেছেন, “সাবধান! তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা তাদের আম্বিয়া ও নেক লোকেদের কবরকে মসজিদ বানিয়ে নিত। শোন! তোমরা যেন কবরসমূহকে মসজিদ বানিয়ে নিও না। আমি তোমাদেরকে এ ব্যাপারে নিষেধ করছি।” (মুসলিম, মিশকাত ৭১৩ নং)
তিনি বলেন, “তোমাদের নিজ নিজ ঘরে কিছু (নফল বা সুন্নত) নামায পড়; আর তা (ঘর) কে কবর করে নিওনা।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৭১৪নং) অর্থাৎ কবরস্থানে যেমন নামায পড়া হয় না, ঠিক তেমনি নামায না পড়ে ঘরকে কবরের মত করে রেখো না।
তিনি আরো বলেন, “তোমরা কবরের উপর বসো না এবং কবরের দিকে মুখ করে নামায পড়ো না।” (মুসলিম, সহীহ ৯২৭ নং, প্রমুখ)
ঈদগাহ বা মসজিদের সীমানার বাইরে কবর হলে এবং মাঝে দেওয়াল বা প্রাচীর থাকলে ঐ ঈদগাহ বা মসজিদে নামায দূষণীয় নয়। তবে যদি ঐ কবরবাসীর তা’যীমের উদ্দেশ্যে তার পাশে মসজিদ বানানো হয়ে থাকে, তাহলে তাতে নামায বৈধ নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৫/৭৮-৭৯)
রমযান, ঈদ, শবে কদর, শবেবরাত (?) প্রভৃতির দিবারাত্রে মসজিদকে ফুল বা অতিরিক্ত আলোকমালা দিয়ে সুসজ্বিত করা বিদআত। পরন্তু এমন কাজ কাফেরদের অনুরুপ। আর কাফেরদের অনুকরণ মুসলিমদের জন্য বৈধ নয়। (ঐ ২৫/৬৮-৬৯)
কোন মসজিদে বিদআত কর্ম হতে থাকলে তা দূর করার চেষ্টা করতে হবে। সম্ভব না হলে সে মসজিদ ত্যাগ করে বিদআতশূন্য মসজিদে নামায পড়া কর্তব্য। (ঐ ১৮/৮৯)
মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, একদা আমি ইবনে উমার (রাঃ) এর সঙ্গে ছিলাম। নামায পড়ার জন্য তিনি এক মসজিদে প্রবেশ করলেন। সেখানকার মুআযযিন যোহর বা আসরের আযানের পর পুনরায় নামাযের জন্য ডাক-হাঁক শুরু করলে তিনি বললেন, ‘এখান হতে বের হয়ে চল। কারণ এখানে বিদআত রয়েছে।’ অন্য এক বর্ণনায় তিনি বললেন, ‘(এই মসজিদ থেকে) বিদআতে আমাকে বের করে দিল।’ (আবূদাঊদ, সুনান ৫৩৮, বায়হাকী ১/৪২৪, ত্বাবারানী)
বিদআতের বিরুদ্ধে লড়ে সফল না হয়ে বিদআতশূন্য সালাফী জামাআত পৃথক মসজিদ করলে, সে মসজিদকে ‘মাসজিদে যিরার’ বলা যাবে না। বরং বিদআত কর্মে সহমত প্রকাশ না করে ফিতনা দূর করার মানসে পৃথক মসজিদ করাই যুক্তিযুক্ত। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ৩৫/৮২) যে মসজিদ সৎপথের পথিক হকপন্থী মুসলিমদের কোন ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে, জামাআতের প্রতি বিদ্রোহ করে, মুসলিমদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির ইচ্ছায় এবং আল্লাহ ও তদীয় রসূলের বিরুদ্ধে যারা সংগ্রাম করে তাদের গোপন ঘাঁটি স্বরুপ নির্মাণ করা হয়, তাই হল কুরআন মাজীদে উল্লেখিত ‘মাসজিদে যিরার।’ (সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত নং-১০৭ দ্র:)
মসজিদ বিষয়ক আরো কিছু মাসায়েল
কোন প্রকার জুলুম ও অন্যায়ভাবে দখলকৃত জায়গার উপর মসজিদ নির্মাণ এবং জেনে-শুনে তাতে নামায পড়া বৈধ নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৭/৫৩)
মসজিদের কোন সম্পত্তি বা অন্য কোন জিনিস ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার কারো জন্য বৈধ নয়। (ইসলাহুল মাসাজিদ, উর্দু ৩১১পৃ:)
কোনও বিষয় নিয়ে কারো সাথে বিরোধ ঘটলে তাকে মসজিদে আসতে বাধা দেওয়া উচিত নয়। কারণ, মহান আল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর মসজিদে তাঁর নাম স্মরণ (যিক্র) করতে বাধা দেয় ও তার ধ্বংস-সাধনে প্রয়াসী হয়, তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হতে পারে?” (সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত নং- ১১৪)
কোন অমুসলিম যদি বাহ্যিক পবিত্র অবস্থায় আদবের সাথে মসজিদ প্রবেশ করতে চায়, তবে তাতে কোন ক্ষতি হয় না। অবশ্য মক্কা (ও মদীনার) হারাম ও মসজিদে তারা প্রবেশ করতে পারে না। (সূলা আত-তাওবাহ, আয়াত নং-২৮, মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ২১/২০, ৩২/৯৪, ১০৫)
মসজিদের উপর দিয়ে রাস্তা করায় মসজিদের সম্মানহানি হয়। মহানবী (সাঃ) বলেন, “যিক্র ও নামায ছাড়া অন্য কিছুর জন্য মসজিদসমূহকে রাস্তা করে নিও না।” (ত্বাবারানী, মু’জাম, জামে ৭২১৫ নং) মসজিদকে রাস্তায় পরিণত করে তার সম্মান নষ্ট করা কিয়ামতের অন্যতম পূর্বলক্ষণ। (ত্বাবারানী, মু’জাম আউসাত্ব, জামে ৫৮৯৯ নং)
প্রকাশ যে, মসজিদের প্রতি তা’যীম প্রদর্শনের অর্থ এই নয় যে, মসজিদকে সালাম (প্রণাম) করতে হবে বা তার ধুলো খেতে হবে অথবা তার মেঝে ধুয়ে পানি খেতে হবে। কারণ এসব কাজ শির্কের পর্যায়ভুক্ত।
মসজিদে কোন প্রকার খেলাও বৈধ নয়। অবশ্য যে খেলা জিহাদ বিষয়ক অথবা জিহাদের সহায়ক (অস্ত্রচালনার খেলা) তা বৈধ। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘একদা হাবশী দল মসজিদে তাদের যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে খেলা করছিল। আর আমি আল্লাহর রসূল (সাঃ) এর পশ্চাতে আড়ালে হুজরার দরজায় দাঁড়িয়ে থেকে তাদের খেলা দেখছিলাম।’ (বুখারী ৪৫৪, ৪৫৫নং, প্রমুখ)
প্রয়োজনে কোন রোগীর জন্য মসজিদে তাঁবু লাগিয়ে বা অন্য স্থানে স্থান দেওয়া দূষণীয় নয়। এতে রক্ত পড়লেও ক্ষতি নেই, যা পরে ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। খন্দকের যুদ্ধে হযরত সা’দ (রাঃ) আহত হলে তাঁকে মসজিদে নববীতে রাখা হয়েছিল এবং সেখানেই তাঁর ইন্তেকাল হয়েছিল। (বুখারী ৪৬৩নং, প্রমুখ)
যে পত্র-পত্রিকায় মানুষ বা পশু-পক্ষীর ছবি থাকে, তা মসজিদে পড়া বা রাখা বৈধ নয়। প্রয়োজনে কালি দ্বারা প্রাণীর মাথা নষ্ট করে রাখা যায়। অশ্লীল ছবি ও পত্রিকা তো কোন স্থানেই দেখা ও পড়া বৈধ নয়। মসজিদে আরো বেশী নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ২২/১০১)
বাড়ির কোন একটা কামরা বা নির্দিষ্ট জায়গাকে মসজিদ বানানো চলে। যাতে নফল নামায এবং মসজিদে যেতে না পারলে ফরয নামাযও পড়া যাবে। ইতবান বিন মালেক (রাঃ) এই রকমই একটি আবেদন আল্লাহর রসূল (সাঃ)কে জানালেন। তিনি তাঁর আবেদন মঞ্জুর করে তাঁর ঘরে গিয়ে তাঁর পছন্দমত এক স্থানে ২ রাকআত নামায পড়লেন। অনুরুপ বারা’ বিন আযেব (রাঃ) নিজ বাড়িতে (বাড়ির লোকদের নিয়ে) জামাআত করে নামায পড়তেন। (বুখারী ৪২৫নং)
নূতন মসজিদ অপেক্ষা পুরাতন মসজিদের অধিক কোন ফযীলত ও বৈশিষ্ট্য বা অধিক সওয়াব আছে -এর কোন দলীল নেই। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৪/২১৬, ফাতাওয়া নাযীরিয়্যাহ্ ১/৩৫৯) তবে অপ্রয়োজনে যেহেতু একই মহ্ল্লায় একাধিক মসজিদ বিদআত, সেহেতু এর ফলে যেখানে ‘যিরার’ হওয়ার আশঙ্কা থাকে সেখানে নূতন ছেড়ে পুরাতন মসজিদে নামায পড়া উত্তম। কিছু সাহাবা ও সলফ এই আশঙ্কাতেই কোন কোন স্থানে পুরাতন মসজিদে নামায পড়েছেন। অবশ্য সেই মসজিদে নামায পড়া উত্তম, যে মসজিদ বিদআতশূন্য, যার জামাআত সংখ্যা অধিক (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৪/২১৩) এবং যার ইমাম ফাসেক বা বিদআতী বলে আশঙ্কা নেই।
আল্লাহর রসূল (সাঃ) ও তাঁর সাহাবাবর্গের যুগে কোন মসজিদকে তালাবদ্ধ করা হ্তো না। তবে সে যুগে মসজিদের ভিতর এমন কোন মূল্যবান আসবাব-পত্র থাকত না, যা চুরি বা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করা যেত। পরন্তু সে যুগের লোকেরাও এমন হৃদয়বিশিষ্ট ছিলেন যে, তাঁদের দ্বারা মসজিদের কোন প্রকার ক্ষতি হবে, সে আশঙ্কাই ছিল না। কিন্তু বর্তমান যুগের অবস্থা তার বিপরীত। সুতরাং আসবাব-পত্র ও সম্মান রক্ষার্থে মসজিদকে তালাবদ্ধ করা দূষণীয় নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৩/৭৯, ১৭/৭০)
যে সব স্থানে নামায পড়া মাকরুহ ও অবৈধ
১। গোরস্থানে নামায পড়া বৈধ নয়। মহানবী (সাঃ) বলেন, “সাবধান! তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা তাদের আম্বিয়া ও আউলিয়াদের কবরসমূহকে মসজিদ বানিয়ে নিত। শোন! তোমরা যেন কবরসমূহকে মসজিদ (নামাযের স্থান) বানিয়ে নিও না। আমি তোমাদের উপর এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারী করে যাচ্ছি।” (মুসলিম, মিশকাত ৭১৩নং)
তিনি বলেন, “তোমাদের নিজ নিজ ঘরে কিছু (নফল বা সুন্নত) নামায পড়; আর তা (ঘর)কে কবর করে নিওনা।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৭১৪নং) কারণ, কবরস্থানে নামায পড়া হয় না।
“তোমরা কবরের উপর বসো না এবং কবরের দিকে মুখ করে নামায পড়ো না।” (মুসলিম, সহীহ ৯৭২ নং, প্রমুখ)
২। উট বাঁ ধার জায়গায় নামায নিষিদ্ধ। মহানবী (সাঃ) বলেন, “তোমরা ছাগল-ভেঁড়া বাঁধার জায়গায় নামায পড়, আর উট বাঁধার জায়গায় নামায পড়ো না।” (মুসলিম, তিরমিযী, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ প্রমুখ, মিশকাত ৭৩৯নং)
৩। গোসলখানায় নামায মাকরুহ। যেহেতু এ স্থান সাধারণত: নাপাকী ধোওয়ার জন্য ব্যবহৃত। মহানবী (সাঃ) বলেন, “কবরস্থান ও গোসলখানা ছাড়া সারা পৃথিবীর সকল জায়গা মসজিদ (নামায পড়ার জায়গা)।” (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, দারেমী, সুনান, মিশকাত ৭৩৭নং)
৪। কসাইখানা পবিত্র হলে তাতে নামায শুদ্ধ।
৫। রাস্তার মাঝে গাড়ি বা লোকজনের আসা-যাওয়া না থাকলে নামায নিষিদ্ধ নয়। অনুরুপ মসজিদ ভরে গেলে লাগালাগি রাস্তাতেও নামায শুদ্ধ। তবে কেউ যেন ইমামের সামনের দিকে রাস্তায় না দাঁড়ায়। কারণ, ইমামের সামনে দাঁড়ালে নামায শুদ্ধ হয় না। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৫/৬৪)
৬। ময়লা ফেলার জায়গাতে যেহেতু নাপাকীই থাকার কথা, তাই সেখানে নামায শুদ্ধ নয়।
৭। কা’বা শরীফের ভিতরে এবং হাতীম বা হিজরে ইসমাঈল (কা’বা শরীফের পার্শ্বে যে জায়গাটা গোলাকার ঘেরা আছে সেই জায়গা) এর সীমার ভিতরেও নামায শুদ্ধ। আল্লাহর রসূল (সাঃ) একদা কা’বা-ঘরের ভিতরে ২ রাকআত নামায পড়েছেন। (বুখারী, মুসলিম, আহমাদ, মুসনাদ, মিশকাত ৬৯১ নং)
প্রকাশ যে, সাত জায়গায় নামায পড়া নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে যে হাদীস উল্লেখ করা হয়, তা খুবই দুর্বল। (মিশকাত ৭৩৭ নং হাদীসের টীকা, আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ২/২৫২ দ্র:)
৮। অমুসলিমদের উপাসনালয়ে কোন মূর্তি বা ছবি না থাকলে তাতে নামায পড়া বৈধ। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) মূর্তি না থাকলে গির্জায় নামায পড়েছেন। (বুখারী বিনা সনদে, ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ১/৬৩২)
হযরত আবূ মূসা আশআরী, উমার বিন আব্দুল আযীয কর্তৃকও গির্জায় নামায পড়ার ব্যাপারে বর্ণনা এসেছে। (ইআশা: ১/৪২৩, নাইলুল আউতার, শাওকানী, ফিকহুস সুন্নাহ্ উর্দু ১৩৫ পৃ:)
প্রকাশ যে, নিরুপায় অবস্থা বা দাওয়াতী উদ্দেশ্য ছাড়া অমুসলিমদের কোন ভজনালয়ে যাওয়া বৈধ নয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ৩২/১০৪)
অমুসলিমদের সমাজে এবং তাদের মালিকানাভুক্ত জায়গা-জমিতেও নামায শুদ্ধ। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৫/৬৮) বরং তাদের বাড়ির ভিতরেও (মূর্তি না থাকলে) নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। (ঐ ৩২/১০৪) তবে পবিত্রতা ইত্যাদি অন্যান্য শর্তাবলী সর্বক্ষেত্রে অবশ্য পালনীয়।
৯। নক্সাদার মুসাল্লায় নামায শুদ্ধ হলেও তাতে নামায পড়া মাকরুহ (অপছন্দনীয়)। যেহেতু এতে নামাযীর মনে কেড়ে নিয়ে উদাসীন করে ফেলে। এই জন্যই বিশ্বনবী (সাঃ) নক্সাদার কাপড়ে নামায পড়াকে অপছন্দ করেছেন। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৭৫৭ নং দ্র:)
একদা হযরত আয়েশা (রাঃ) এর হুজরার দেওয়ালে ছবিযুক্ত পর্দা টাঙ্গা থাকতে দেখলে তিনি তাঁকে বললেন, “তোমার এই পর্দা আমাদের নিকট থেকে সরিয়ে নাও। কারণ, ওর ছবিগুলো আমার নামাযে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে।” (বুখারী ৩৭৪ নং, মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ৫/২৯৩, ১৫/৭৪, ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/২৭৮)
তদনুরুপ সামনে ছবিযুক্ত ক্যালেন্ডার ইত্যাদি রেখে নামায পড়া মাকরুহ। (ইআশা: ১/৩৯৯ দ্র:)
বলা বাহুল্য, এ জন্যই মসজিদের সামনের দেওয়ালে কোন প্রকার দৃষ্টি-আকর্ষক নক্সা, বস্তু বা বিজ্ঞপ্তি, সময়সূচী ইত্যাদি রাখাও মাকরুহ।
১০। বিছানা পবিত্র হলে তাতে নামায পড়া দূষণীয় নয়। হযরত আনাস (রাঃ) নিজ বিছানায় নামায পড়েছেন। (ইবনে আবী শায়বাহ ২৮১০ নং, ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ১/৫৮৬)
১১। পেশাব-পায়খানা ঘরের ছাদে বা পিছনে (পেশাব-পায়খানা ঘরকে সামনে করে নামায শুদ্ধ। ছাত বা সামনের দেওয়াল পবিত্র হলে নামায মাকরুহ নয়। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/২৭০, দারেমী, সুনান ৯৫ পৃ:) আড়াল থাকলে প্রস্রাব-পায়খানার নালা বা পাইপ সামনে করে, অথবা তার উপর ব্রিজে, অথবা মলমূত্রের পাইপের নিচে নামায শুদ্ধ। (বুখারী ৮২পৃ দ্র:)
১২। যে রুমে মাদকদ্রব্য থাকে সে রুমে নামায পড়তে হলে নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ১/৪২৬)
১৩। ভাড়া দেওয়া বাড়ির মালিক ভাড়া গ্রহণকারীকে ঐ ঘরে থাকতে না দিতে চাইলে এবং সে সেখান হতে বের হতে না চাইলে তথা জোরপূর্বক বাস করলেও সে ঘরে নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। তবে এ কাজে সে নিরুপায় না হলে গুনাহগার হতে পারে। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৯/১৫৫)