স্বলাতে মুবাশ্‌শির (পর্ব ৪)

রচনায় : আব্দুল হামীদ ফাইযী মাদানী

পবিত্রতা অর্জন

নামায কবুল হওয়ার জন্য যেরুপ বিশুদ্ধ ঈমান এবং হৃদয়কে সিক্ত ও কুফরী ধারণা ও বিশ্বাস থেকে পবিত্র রাখা জরুরী শর্ত, তদ্রুপ নামাযীর বাহ্যিক দেহ্‌ ও পোশাক-আশাককে পবিত্র রাখাও এক জরুরী শর্ত। যেহেতু “নামাযের চাবিকাঠিই হল পবিত্র তা ।” (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, দারেমী, সুনান, মিশকাত ৩১২ নং) তাছাড়া এই পবিত্রতা হল অর্ধেক ঈমান। (মুসলিম,  মিশকাত ২৮১নং)

(বিশেষ করে পানি দ্বারা অর্জিত) পবিত্রতায় বৃদ্ধি হয় মনোযোগ, দূর হয় আলস্য, তন্দ্রা ও নিদ্রা, স্ফূর্তির সাথে ইবাদতে মন বসে অধিক।

মযী বা মলমূত্র থেকে পবিত্রতা অর্জনের জন্য পানি বা (যথেষ্ট পানি না পাওয়া গেলে) মাটির ঢেলা ব্যবহার করে তা দূর করা এবং ওযু করাই যথেষ্ট। অবশ্য কোন প্রকারের মৈথুন দ্বারা বা স্বপ্নে অথবা যৌনচিন্তায় উত্তেজনা ও তৃপ্তির সাথে বীর্যপাত করলে বা হলে গোসল ফরয। যেমন সঙ্গমে যোনীপথে লিঙ্গাগ্র প্রবেশ করিয়ে বীর্যপাত না করলেও গোসল ফরয। (বুখারী, মুসলিম,  মিশকাত ৪৩০নং) অনুরুপ মহিলাদের মাসিক ও নেফাস থেকে পবিত্র হওয়ার জন্যও গোসল ফরয।

ওযু ও গোসলের জন্য ব্যবহার্য পানিও পবিত্র তথা পবিত্রকারী হওয়া জরুরী। সাধারণত: পুকুর, নদী, নালা, সমুদ্র, প্রভৃতির পানি পবিত্র ও পবিত্রকারী। যে পানিতে পবিত্র কোন জিনিস -যেমন আটা, সাবান, জাফরান ইত্যাদি মিশ্রিত হয়, সে পানির রং, গন্ধ বা স্বাদ পরিবর্তন না হলে তাতে ওযু-গোসল চলবে।

পানিতে কোন অপবিত্র জিনিস পড়ে যাওয়ার ফলে অথবা অন্য কোন কারণে যদি তার রং, স্বাদ বা গন্ধ পরিবর্তন হয়ে যায়, তাহলে তা নাপাক গণ্য হবে। পরিবর্তন না হলেও যদি পানি ২ কুল্লাহ্‌ (প্রায় ২৭০ লিটার, মতান্তরে ১৯১ থেকে ২০০ কেজি) এর চেয়ে কম হয়, তাহলেও তা নাপাক। এর বেশী হলে সে পানি পাক। তাতে ওযু-গোসল চলবে। (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, দারেমী, সুনান, মিশকাত ৪৭৭নং)

যে পানি একবার ওযু-গোসলে ব্যবহার হয়েছে, সে পানি পাক। কিন্তু তাতে আর ওযু-গোসল হবে না।

মানুষ, গাধা, খচ্চর, পাখী,হালাল পশু, বিড়াল প্রভৃতির এঁটো পানি পাক; তাতে ওযু-গোসল চলবে। অবশ্য শূকর ও কুকুরের এঁটো পানি নাপাক। (বিস্তারিত দ্রষ্টব্য ফিকহুস সুন্নাহ্‌ উর্দু ৩৩-৩৭পৃ:)

গোসল করার নিয়ম

নাপাকীর গোসল করতে হলে গোসলের নিয়ত করে মুসলিম প্রথমে ৩ বার দুইহাত কব্জি পর্যন্ত ধুবে। অতঃপর বাম হাতের উপর পানি ঢেলে দেহের নাপাকী ধুয়ে ফেলবে। তারপর বাম হাতকে মাটি অথবা সাবান দ্বারা ধুয়ে নামাযের জন্য ওযু করার মত পূর্ণ ওযু করবে। অবশ্য গোসলের জায়গা পরিষ্কার না হলে পা দুটি গোসল শেষে ধুয়ে নেবে। ওযুর পর ৩ বার মাথায় পানি ঢেলে ভাল করে চুলগুলো ধোবে, যাতে সমস্ত চুলের গোড়ায় গোড়ায় পানি পৌঁছে যায়। তারপর সারা দেহে ৩ বার পানি ঢেলে ভালরুপে ধুয়ে নেবে। (বুখারী, মুসলিম,  মিশকাত ৪৩৫-৪৩৬ নং)

মহিলাদের গোসলও পুরুষদের অনুরুপ। অবশ্য মহিলার মাথার চুলে বেণী  বাঁধা (চুটি গাঁথা) থাকলে তা খোলা জরুরী নয়। তবে ৩ বার পানি নিয়ে চুলের গোড়া অবশ্যই ধুয়ে নিতে হবে। (বুখারী, মিশকাত ৪৩৮নং) নখে নখপালিশ বা কোন প্রকার পুরু পেন্ট্‌ থাকলে তা তুলে না ফেলা পর্যন্ত গোসল হবে না। পক্ষান্তরে মেহেদী বা আলতা লেগে থাকা অবস্থায় গোসল হয়ে যাবে। কপালে টিপ (?) থাকলে ছাড়িয়ে ফেলে (কপাল) ধুতে হবে। নচেৎ গোসল হবে না।

বীর্যপাত বা সঙ্গম-জনিত নাপাকী ও মাসিকের গোসল, অথবা মাসিক ও ঈদ, অথবা বীর্যপাত বা সঙ্গম-জনিত নাপাকী ও জুমআ বা ঈদের গোসল নিয়ত হলে একবারই যথেষ্ট। পৃথক পৃথক গোসলের দরকার নেই। (ফিকহুস সুন্নাহ্‌ উর্দু ৬০পৃ: দ্র:)

গোসলের পর নামাযের জন্য আর পৃথক ওযুর প্রয়োজন নেই। গোসলের পর ওযু ভাঙ্গার কোন কাজ না করলে গোসলের ওযুতেই নামায হয়ে যাবে। (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান, মিশকাত ৪৪৫নং)

রোগ-জনিত কারণে যদি কারো লাগাতার বীর্য, মযী, স্রাব বা ইস্তিহাযার খুন ঝরে তবে তার জন্য গোসল ফরয নয়; প্রত্যেক নামাযের জন্য ওযুই যথেষ্ট। এই সকল অবস্থায় নামায মাফ নয়। (আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, মিশকাত ৫৬০-৫৬১ নং)

প্রকাশ যে, গোসল, ওযু বা অন্যান্য কর্মের সময় নিয়ত আরবীতে বা নিজ ভাষায় মুখে উচ্চারণ করা বিদআত।

সতর্কতার বিষয় যে, নাপাকী দূর করার জন্য কেবল গা-ধোয়া বা গা ডুবিয়ে নেওয়া যথেষ্ট নয়। পূর্বে ওযু করে যথানিয়মে গোসল করলে তবেই পূর্ণ গোসল হয়। নচেৎ অনেকের মতে কুল্লি না করলে এবং নাকে পানি না নিলে গোসলই শুদ্ধ হবে না। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ১/৩০৪)

ওযু ও তার গুরুত্ব

মহান আল্লাহ বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلاَةِ فَاغْسِلُوْا وُجُوْهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوْا بِرُؤُوْسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ
অর্থাৎ, হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা নামাযের জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে এবং তোমাদের মাথা মাসাহ্‌ করবে। আর পা দু’টিকে গাঁট পর্যন্ত ধৌত করবে। (সূরা মায়িদাহ, আয়াত নং-৬)

সুতরাং বড় নাপাকী না থাকার ফলে গোসলের দরকার না হলেও নামাযের জন্য ছোট নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জনের উদ্দেশ্যে ওযু ফরয। এ ব্যাপারে মহানবী (সাঃ) ও বলেন, “ওযু নষ্ট হয়ে গেলে পুনরায় ওযু না করা পর্যন্ত আল্লাহ কারো নামায কবুল করেন না।” (বুখারী, মুসলিম, সহীহ মিশকাত ৩০০নং)

ওযুর মাহাত্ম ও ফযীলত প্রসঙ্গে একাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এক হাদীসে তিনি বলেন, “কিয়ামতের দিন আমার উম্মতকে আহ্বান করা হবে; আর সেই সময় ওযুর ফলে তাদের মুখমন্ডল ও হাত-পা দীপ্তিময় থাকবে।” (বুখারী ১৩৬, মুসলিম, সহীহ ২৪৬নং)

অন্য এক হাদীসে তিনি বলেন, “ওযুর পানি যদ্দূর পৌঁছবে তদ্দূর মু’মিনের অঙ্গে অলঙ্কার (জ্যোতি) শোভমান হবে।” (মুসলিম, সহীহ ২৫০নং)

তিনি আরো বলেন, “মুসলিম বা মুমিন বান্দা যখন ওযুর উদ্দেশ্যে তার মুখমন্ডল ধৌত করে  তখন ওযুর পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে প্রত্যেক সেই গুনাহ বের হয়ে যায় যা সে দুই চক্ষুর দৃষ্টির মাধ্যমে করে ফেলেছিল। অতঃপর যখন সে তারহাত দুটিকে ধৌত করে তখন পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে প্রত্যেক সেই গুনাহ বের হয়ে যায় যা সে উভয় হাতে ধারণ করার মাধ্যমে করে ফেলেছিল। অতঃপর যখন সে তার পা দুটিকে ধৌত করে তখন পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে প্রত্যেক সেই গুনাহ বের হয়ে  যায় যা সে তার দুপায়ে চলার মাধ্যমে করে ফেলেছিল। শেষ অবধি সমস্ত গুনাহ থেকে সে পবিত্র হয়ে বের হয়ে আসে।” (মালেক, মুসলিম ২৪৪নং, তিরমিযী)

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
slot online skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 rtp slot slot bonus new member skybet88 mix parlay slot gacor slot shopeepay mix parlay skybet88 slot bonus new member