রমাদান মাসের বিভিন্ন কাজের ফযীলত

রমাদান মাসের বিভিন্ন কাজের ফযীলত

রমাদান মাসে সিয়াম ব্যতীত আরো অনেক কাজ রয়েছে, যে গুলোতে অনেক অনেক ছরয়াব ও ফযীলত পাওয়া যায়। সেরূপ কতিপয় বিষয়ের কথা এখানে আমরা উল্লেখ করছি।
(ক) সিয়াম পালনকারীকে ইফতার করানোর ফযীলতঃ
যায়েদ ইবনু খালিদ আল্ জুহানী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ  বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সিয়াম পালনকারীকে ইফতার করাবে, সে তার সমান ছওয়াব পাবে। আর সিয়াম পালনকারীর ছওয়াবে কোন কম করা হবেনা। (তিরমিযী, হা/নং -৮০৭।)
(খ) তারাবীহের ছলাত আদায়ের ফযীলতঃ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেনঃ নবী কারীম  বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সহিত ছরয়াবের আশায় রমাদান মাসের রাত্রে তারাবীহের ছলাত আদায় করবে, তার পূর্বের সমূহ পাপ ক্ষমা হয়ে যাবে। (বুখারী, মুসলিম।)
(গ) ইমামের সহিত পূর্ণ তারাবীহ পড়ার ফযীলতঃ
আবূ যার (রাঃ) বলেনঃ নবী কারীম  বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ইমামের সহিত ইমাম ছলাত শেষ করা পর্যন্ত তারাবীহ পড়বে, তার জন্য পুরা রাত ইবাদত করার মত ছরয়াব হবে। (আহমদ, তিরমিযী, আবুদাঊদ।)
(ঘ) দ্রুত ইফতারের ফযীলতঃ
সাহাল ইবনু সাআদ (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ  বলেছেনঃ যতদিন মানুষ দ্রুত ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে। (বুখারী, মুসলিম।)
(ঙ) সাহরী খাওয়ার ফযীলতঃ
আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন, নবী কারীম  বলেছেনঃ তোমরা সাহরী খাও, কারণ তাতে অনেক বরকত রয়েছে। (বুখারী, মুসলিম।)
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ  বলেছেনঃ সাহরী খাওয়া বরকত। সুতরাং তোমরা সাহরী ছেড়ে দিও না। যদিও এক ঢোক পানি দ্বারা হয়, তারপরও সাহরী কর। কারণ যারা সাহরী করে তাদের উপর আল্লাহর রহমত হয় এবং ফেরেশতাগণ তাদের জন্য দুঅ’া করেন। (আহমদ, সহীহুল জামে’ঃ ৩৬৮৩।)
(চ) লাইলাতুল কাদরে ছলাতের ফযীলতঃ
আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেনঃ নবী কারীম  বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সহিত ছওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরে ছলাত (নামায) পড়বে, তার পূর্বের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (বুখারী, মুসলিম।)
সিয়াম পালনকারীর ফযীলত
এতক্ষণ সিয়ামের ফযীলত এবং তার সম্পর্কীয় বিষয়াদির ফযীলতের বর্ণনা হল। এবার আসুন যে এই সিয়াম পালন করবে, তার জন্য কি আছে তা একটু দেখি।
(ক) সিয়াম পালনকারীর জন্য জান্নাতে বিশেষ দরজাঃ
সাহাল ইবনে সা’আদ (রাঃ) বলেন, নবী কারীম  বলেছেনঃ জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে একটির নাম হল ‘রায়্যান’। এই দরজা দিয়ে শুধু সিয়াম সাধকরাই প্রবেশ করবেন। {সহীহ বুখারীঃ ৩/২৯০, হাঃ ৩০১৬।}
(খ) সিয়াম পালনকারী সিদ্দীক ও শহীদের মর্যাদায় ভূষিত হবেঃ
আ’মর ইবনে মুররাহ (রাঃ) বলেনঃ এক ব্যক্তি নবী কারীম  এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি আমি এ সাক্ষ্য দেই যে আল্লাহ ব্যতীত কোন (সত্য) মাবুদ নেই এবং আপনি আল্লাহর রাসূল। আর পাঁচ ওয়াক্ত ছলাত পড়ি, যাকাত দেই এবং রমাদানে সিয়াম পালন করি ও রাত্রিতে তারাবীহ পড়ি, তাহলে আমি কাদের অন্তর্ভূক্ত হব? তিনি বললেনঃ সিদ্দীক ও শহীদগণের অন্তর্ভূক্ত। {সহীহুত্ তারগীব, হাঃ ৩১৬।}
(গ) সিয়াম পালনকারীর জন্য দুটি খুশীঃ
আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেনঃ নবী কারীম  বলেছেনঃ সিয়ামপালনকারী ব্যক্তির জন্য খুশীর বিষয় দু’টি। একটি খুশী ইফতারের সময় আরেকটি খুশী তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাতের সময়। {মুসলিম, হা/ঃ ২৫৭৪।}
(ঘ) সিয়াম পালনকারীর মুখের গন্ধ মিশকের চেয়েও উৎকৃষ্টঃ
আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেনঃ নবী  বলেছেনঃ সিয়াম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের সুগন্ধির চেয়েও অধিক উৎকৃষ্ট। {মুসলিম, হা/ঃ ২৫৭৪।}

সিয়াম পালনের উপকারিতা

সিয়াম সাধনায় নৈতিক, দৈহিক, সামজিক, ইহকালীন ও পরকালীন অনেক উপকারিতা রয়েছে। এখানে বিশেষ ক’টি দিক তুলে ধরা হ’ল।
১) সিয়াম মানব অন্তঃকরণে আল্লাহ ভীতির বীজ বপন এবং দেহের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে অন্যায়, অশ্লীল ও পাপ কার্য থেকে রক্ষায় এক অনন্য ও উৎকৃষ্ট পন্থা।
২) সিয়াম মুসলিম বান্দাকে প্রকৃত ধৈর্য্য, সহনশীলতা এবং ত্যাগের শিক্ষায় অভ্যস্থ করে তুলে। কারণ সিয়ামের ফলেই সে দিনের বেলায় বিভিন্ন প্রকার ভোগ্য সামগ্রী পরিত্যাগে অভ্যস্থ হয়। উল্লোখ্য, তিন প্রকারের ধৈর্য্য সিয়াম পালনে বিদ্যমান রয়েছে। যথাঃ (ক) আল্লাহর আনুগত্যে ধ্যৈর্য্য ধারণ, (খ) তাঁর হারামকৃত বস্তু থেকে নিজকে সম্বরণে ধের্য্য ধারণ, (গ) আল্লাহর ফয়সালা মেনে নেয়া তথা তাকদীরের কল্যাণ-অকল্যাণে ধৈর্য্য ধারণ। আর এ তিন প্রকার ধৈর্য্যরে সমন্বয় কারো মাঝে ঘটলে সে আল্লাহর হুকুমে জান্নাতে প্রবেশ করবে। হাদীসে বর্ণিত আছে যে রমাদান ধৈর্য্যরে মাস আর ধৈর্য্যরে প্রতিদান হল জান্নাত।
৩) সিয়াম মুসলিম বান্দার ‘নাফসে আম্মারা’ কে দমন ও পরাভুত করতে এক অপ্রতিদ্বন্দি সহায়ক। সিয়ামের ফলে নাফসের কুপ্রবৃত্তি দুর্বল ও নিস্তেজ হয় এবং মানব দেহে শয়তান চলাচলের রাস্তা সমূহ অকর্মন্য হয়ে পড়ে।
৪) সিয়াম এমন একটি ইবাদত, যা রাজা-প্রজা, ধনী-দরিদ্র, ছোট-বড়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই পালন করে থাকে, এতে করে তাদের মাঝে সাম্য ও ঐক্য সৃষ্টি হয়।
৫) আধুনিক চিকিৎসা বিদ্যার স্বীকারোক্তি মতে সিয়াম মানব দেহে সূক্ষ কোষ গঠন করে থাকে। পাকস্থলি ও পরিপাক যন্ত্রকে বিশ্রাম দিয়ে থাকে। স্থুলতা হ্রাসে চমকপ্রদ। কতিপয় ডায়াবেটিক্স নিরাময়ে অনুপম সহায়ক ও গ্যাস্ট্রিক রোগের ফলদায়ক চিকিৎসা।
৬) সিয়াম সাধনার ফলে মুসলিম জাতি এক ও অবিভাজ্য জাতিতে পরিণত হওয়ার শিক্ষা গ্রহন করতে পারে।
৭) সিয়াম পালনের ফলে ধনবান মুসলিম ব্যক্তি দরিদ্র, অসহায় ও অনাহারীদের ক্ষুধার যন্ত্রনা সাময়িক ভাবে অনুভব করতে পারে। যদ্দরুণ ধনীরা দরিদ্রের প্রতি সাহায্য ও সহানুভুতির হস্ত প্রসারে অভ্যস্থ হয়ে উঠেন।
৮) সিয়াম সাধনার ফলে মুমিনদের মাঝে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ, শ্রদ্ধা, স্নেহ ও মায়া বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।

–  হারুন আযিযী নদভী।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
slot online skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 rtp slot slot bonus new member skybet88 mix parlay slot gacor slot shopeepay mix parlay skybet88 slot bonus new member