শামায়েলে মুহাম্মাদী (সাঃ) ( পর্ব-১)
শামায়েলে মুহাম্মাদী (সাঃ)
– মুহাম্মাদ হারূন আযীযী নদভী*
‘শামায়েলে’ বলতে ব্যক্তিগত আকার-আকৃতি, আচার-আচরণ ইত্যাদিকে বুঝানো হয়। যা মানুষের পূর্ণাঙ্গ চরিত্র বা সীরাতের একটি অংশ মাত্র।
রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) এর ‘সীরাত’ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা, সীরাত অধ্যয়ন করা, চর্চা করা এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা সকল মুসলিম নর-নারীর ঈমানী দায়িত্ব। আল্লাহ্ ত’আলা এরশাদ করেছেন,
كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا [٣٣:٢١]
‘রাসুলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে তয়ামদের জন্য উত্তম আদর্শ’ (আহযাব ২১)।
‘সীরাতে রাসুলুল্লাহ’ বিষয়টি অনেক ব্যাপক, এর অনেক দিক রয়েছে। সর্বদিক আলোচনা করে শেষ করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকে আজ পর্যন্ত সীরাত বিষয়ে অনেক লেখালেখি, বয়ান-বক্তৃতা, সভা-সমিতি, সেমিনার-সম্মেলন হয়েছে। এতে কিছুর পরেও একথা বলা যায় না যে, সীরাতের ব্যাপারে লেখা-লেখি এবং প্রকাশ-প্রচারণা শেষ হয়ে গেছে। না কখনো না, বরং যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে সীরাতের বিভিন্ন দিক তার অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রকাশ পাচ্ছে। সুন্দরের চেয়ে সুন্দর ব্যাখ্যা উপস্থাপিত হচ্ছে। আর কিয়ামত পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ। প্রসিদ্ধ সীরাত গবেষক শ্রদ্ধেয় উস্তাদ আল্লামা সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী (রঃ) স্বীয় অনন্য সীরাত গ্রন্থ ‘আস-সীরাতুন নববিয়্যাহ’-র ভূমিকায় বলেছেন, মহানবী (সাঃ) এর জীবনী অন্য নবী-রাসূল ও মহামনীষীদের জীবনীর মাঝে এক বিশাল ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও তার জীবনীর মাঝে এক বিশাল ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও তার জীবনীর এ অকল্পনীয় ব্যাপকতা, জটিলতা ও খুঁটিনাটি বিষয়ের এ সুবিস্তারিত বর্ণনায় তার আখলাক ও চরিত্রের অপূর্ব বিবরণ পাওয়া যায়। … সীরাত ও শামায়েল গ্রন্থ সমূহ যা কিছু সংকলন ও সংরক্ষণ করে আমাদের দিয়েছে (সীরাত ও শামায়েল লেখকদের যাবতীয় প্রচেষ্টায় প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বিনয়ের সাথে বলতে হয়) এটা তার সুবিশাল সীরাতের অপরূপ শোভা-সৌন্দর্যের ও সুমহান নবুওয়াতের যে পরিপূর্ণতা দিয়ে আল্লাহ্ পাক তাকে মহিমামণ্ডিত করেছিলেন, তার এক সামান্য ঝলকমাত্র।১
.
সীরাতুন্নবীর বিশেষ একটি অংশ হ’ল শামায়েলে নববী। অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর শারীরিক আকার আকৃতি, চলা-ফেরা, উঠা-বসা, শয়ন-জাগরণ, খানা-পিনা, লেন-দেন, পোশাক-পরিচ্ছদ, আচার-ব্যবহার, মানুষের সাথে মেলা-মেশা, ইবাদত-বন্দেগী, যিকর-আযকার এবং দো’আ ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রে তার আদত-অভ্যাস সম্পর্কে সম্যক আলোচনা। সীরাত ও শামায়েল সম্পর্কে জানার জন্য পবিত্র কুরআন মাজীদের বাস্তব রূপই হচ্ছে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর চরিত্র মাধুর্য তথা পবিত্র সীরাত। উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা (রাঃ) কে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর চরিত্র সম্পর্কে প্রশ্ন করা হ’লে উত্তরে তিনি বলেন, ‘তার চরিত্র-মাধুর্য ছিল পবিত্র কুরআন মাজীদ’।২ সীরাত-শামায়েলের কোন একটি অংশও কোন রকমের মনগড়া বর্ণনা বা বানোয়াট কল্প কাহিনীর মুখাপেক্ষী নয়। আল্লামা নদভী (রঃ) বলেছেন, ‘মহানবী (সাঃ) এর সীরাত রচনা করতে কোন প্রকার কিয়াস-অনুমান ও মনগড়া সব নিয়ম-নীতির অনুসরণ ও এর উপর নির্ভর করার আদৌ প্রয়োজন নেই, যার প্রয়োজন পৃথিবীর মহামনীষীদের ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই। কারণ মহানবী (সাঃ) এর জীবনী আর সব মনীষীর জীবনীর চেয়ে পরিপূর্ণ, ঐশ্বর্যময় ও অপরূপ শোভামণ্ডিত। উৎসমূল কুরআন পাকের তাবৎ সুস্পষ্ট বর্ণনা, ইতিহাসের অনস্বীকার্য সাক্ষ্য, তার আখলাক-চরিত্রের খুঁটি-নাটি বিষয়ের সুবিস্তারিত বর্ণনা বিদ্যমান, যার অধিক কল্পনা করা যায় না’।৩
তিক্ত হ’লেও সত্য যে, হাদীছে রাসুলের অন্যান্য বিষয়ে যেমন কুতললবীরা অনেক মনগড়া কল্পকাহিনী ও বানোয়াট কথা-বার্তার উন্মেষ ঘটিয়েছে, তদ্রূপ সীরাত-শামায়েলের ব্যাপারেও অনেক জাল-মওযু কথা-বার্তা লোকালয়ে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। তাই বলি যাচাই-বাছাই করে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর ছহীহ-শুদ্ধ সীরাত সংরক্ষণ করা এবং নির্ভেজালভাবে তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া সময়ের সুমহান দাবী এবং বিজ্ঞ আলেম-ওলামার গুরুদায়িত্ব। আমি এখানে সীরাতের বিশেষ একটি দিক ‘শামায়েলে নববী’ সম্পর্কে ছহীহ হাদীছের ভিত্তিতে কিছু আলোকপাত করতে চাই।
জন্ম ও বংশ পরিচয়ঃ
১. রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নিজের বংশের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘আল্লাহ্ তা’আলা ইসমাইল (আঃ) এর বংশধর থেকে কিনানা গত্রকে বাছাই করেন, কিনানা গোত্র থেকে কুরাইশকে বাছাই করেন এবং বনূ হাশিম থেকে আমাকে বাছাই করেন।৪
২. হুনাইন যদ্ধ প্রসঙ্গে বর্ণিত এক হাদীছে হযরত বারা বলেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘আমি নবী, কোন মিথ্যুক নই, আমি আব্দুল মুত্তালিবের সন্তান’।৫
৩. আল-মুত্তালিব ইবনে আবু ওয়াদাআহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘আমি আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র আব্দুল্লাহ এর সন্তান। আল্লাহ্ তা’আলা সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমাকে তাদের মধ্যে উত্তমদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। অতঃপর তিনি তার সৃষ্টিকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন এবং আমাকে তাদের মধ্যকার উত্তম দল থেকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি তাদেরকে কতক গোত্রে বিভক্ত করেছেন এবং আমাকে তাদের মধ্যকার উত্তম গোত্র থেকে পয়দা করেছেন। অতঃপর তিনি তাদেরকে কতক পরিবারে বিভক্ত করেছেন এবং আমাকে তাদের মধ্যকার সবচেয়ে উত্তম পরিবারে পয়দা করেছেন। অতএব আমি ব্যক্তি সত্তায় তোমাদের চেয়ে উত্তম এবং বংশ মরযাদায় সবার চাইতে উত্তম’।৬
৪. মুহাম্মাদ ইবনু আলী থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ্ পাক আমাকে বিবাহ থেকে সৃষ্টি করেছেন, যেনা-ব্যভিচার থেকে নয়’।৭
৫. হযরত আলী (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘আমি… বিবাহের মাধ্যমে পয়দা হয়েছি, যেনা-ব্যভিচারের মাধ্যমে নয়। জাহেলী যুগের ব্যভিচার আমাকে কোন সম্পর্ক করেনি’।৮
৬. হযরত আবু মাসউদ বদরী ও জাবীর ইবনু আব্দিল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে এসে কথা বলছিল, তখন সে ভয়ে কাপছিল, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘তুমি স্থির হও (ভয় কর না) আমি কোন সম্রাট নই, আমি কুরাইশ বংশীয় এক মহিলার ছেলে, যে শুকনা গোসত খেত’।৯
৭. কুতাইবা ইবনু সাঈদ (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সাঃ) এর তিনটি দাদী ছিলেন, সবার নাম ছিল ‘আতেকা’। যখন গর্ব করে কিছু বলতেন তখন বলতেন, আমি ‘আতেকা’ সমূহের সন্তান।১০
৮. হযরত খালেদ ইবনে মা’দান বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘আমি আমার পিতা ইবরাহীম (আঃ) এর দো’আ, ঈসা (আঃ) এর সুসংবাদ এবং আমার মায়ের স্বপ্ন। যখন সে আমাকে গর্ভে ধারণ করেছিল, তখন সে দেখেছে যে তার থেকে একটি আল বের হ’ল, যা সিরিয়া দেশের প্রাসাদগুলিকে আলোকিত করেছে’। ১১ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ছহীহ বর্ণনা মতে রবী’উল আউয়াল মাসের ৮ তারিখ সোমবার হস্তিবাহিনীর হামলার বছর জন্মগ্রহণ করেন। এ প্রসঙ্গে তার কয়েকটি বক্তব্য পেশ করা হলঃ
৯. আবু কাতাদা (রাঃ) বলেন, এক বেদুইন এসে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ)! সোমবার ছিয়াম সম্পর্কে আপনার কি মত? উত্তরে তিনি বললেন, ‘সোমবার হ’ল সেই দিন, যে দিনে আমি পয়দা হয়েছি এবং আমার উপর কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে’।১২
১০. আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সাঃ) হস্তিবাহিনীর হামলার বছর জন্মগ্রহণ করেছেন’।১৩
১১. কায়স ইবনে মাখরামা (রাঃ) বলেন, ‘আমি এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃ) হস্তিবাহিনীর হামলার বছর জন্মগ্রহণ করেছি’।১৪
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নাম সমূহঃ
কুরআন-হাদীছ পর্যালোচনা করলে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর অনেক নামের সন্ধান পাওয়া যায়। তবে এগুলির নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা কোন ছহীহ হাদীছে পাওয়া যায় না। একটি ছহীহ হাদীছে পাঁচ নামের কথা বর্ণিত থাকলেও অন্য এক বর্ণনায় পাঁচের অধিক নামের সন্ধান পাওয়া যায়। ইমাম নববী (রঃ) আবূবকর ইবনুল আরাবী আল-মালেকীয় বরাত দিয়ে বলেন যে, ‘আল্লাহ্ এক হাজার নাম রয়েছে এমনিভাবে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এরও এক হাজার নাম আছে। ইবনুল আরাবী অন্তত ৬৩টি নামে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন’।১৫
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী (রঃ) বলেন, ‘মুহাদ্দিছ ইবনে দেহয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নাম সমূহ সম্পর্কে রচিত তার কিতাবে বলেছেন, কেউ কেউ মনে করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নামও আল্লাহ্ পাকের আসমায়ে হুসনার ন্যায় ৯৯টি। কেউ রিসার্চ করলে তা তিন শত পর্যন্ত পৌঁছাবে’।১৬ কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নাম সমূহ সম্পর্কে ৯৯ অথবা তিনশত অথবা এক হাজার সংখ্যার উল্লেখ কোন ছহীহ হাদীছে দেখিনি। এ জন্যই মনে হয় কোন কোন আলেম নবীর ৯৯ নামের কথাটি কে বিদ’আতী উক্তি আখ্যা দিয়েছেন। ইয়েমেনের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিছ আল্লামা মুকবিল ইবনে হাদী আল-ওয়াদেয়ী বলেন, ‘কুরআন মাজীদের বিভিন্ন কপিতে যে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নামে সংখ্যা গণনা করে ৯৯ পর্যন্ত পৌঁছানো হয়েছে তা বিদ’আতী উক্তি’।১৭ তবে এটা সত্য যে, সব নাম না হলেও বেশ কিছু নামে উৎস কুরআন মাজীদের আয়াত এবং কোন কোন ছহীহ হাদীছে ইশারা-ইঙ্গিতে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। বিস্তারিত গবেষণা করে এগুলি বের করতে হলে, এই বিষয়ে বড় ধরনের একটি বই রচনা করতে হবে। এখানে ছহীহ-শুদ্ধ হাদীছের আলোকে কয়েকটি নামের উল্লেখ করা হল।
১. হযরত যুবাইর ইবনে মুতঈম (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘আমার পাঁচটি নাম রয়েছে। আমি মুহাম্মাদ ও আহমাদ। আমি আলমাহী, আমার দ্বারা আল্লাহ্ পাক কুফরকে নিশ্চিহ্ন করেন। আমি আল-হাশির, কিয়ামতের দিন আমার পশ্চাতে মানব জাতিকে সমবেত করা হবে এবং আমি আল-আকিব (শেষ আগমনকারী), আমার পর আর কোন নবী আসবে না’।১৮
২. হযরত যুবাইর ইবনে মুতঈম (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘আমি মুহাম্মাদ, আহমাদ, হাশির, আকিব, মাহী এবং খাতম’।১৯
৩. আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের কাছে অনেক নাম উল্লেখ করেছেন, বলেছেন, ‘আমি মুহাম্মাদ, আহমাদ, মুকাফফী, হাশির, নবীয়্যুত তওবা এবং নবীয়্যুর রহমাহ’। অন্য বর্ণনায় আছে ‘নবীয়্যুল মালহামাহ’।২০
৪. হযরত হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, আমি মদীনার রাস্তা অতিক্রম করছিলাম হঠাৎ শুনতে পেলাম যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলছেন, ‘আমি মুহাম্মাদ, আমি আহমাদ, নবীয়্যুর রহমাহ, নবীয়্যুত তওবাহ, হাশির, মুকাফফী, নবীয়্যুল মালাহিম’।২১
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর উপনামঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রসিদ্ধ উপনাম হ’ল আবুল কাসিম। কোন কোন বর্ণনা থেকে বুঝা যায় যে, পড়ে তাকে আবূ ইবরাহীমও বলা হ’ত।
১. আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বাজারে ছিলেন। এক ব্যক্তি বলল, হে আবুল কাসেম! নবী (সাঃ) সেদিকে তাকালেন (এবং বুঝতে পারলেন লোকটি অন্য কাউকে ডাকছে), অতঃপর তিনি বললেন, তোমরা আমার নামে নাম রাখো, উপনাম ধরে আমাকে ডেকো না।২২
২. আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘আমি আবুল কাসেম। আল্লাহ্ দান করেন আর আমি বণ্টন করে থাকি’।২৩
৩. আনাস (রাঃ) বলেন, যখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর পুত্র ইবরাহীম জন্মগ্রনণ করলেন, তখন জিবরাঈল (আঃ) এসে বললেন, আসসালামু আলাইকা ইয়া আবা ইবরাহীম’।২৪
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর শারীরিক গঠন ও আকৃতিঃ
১. হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সাঃ) স্পষ্ট দীর্ঘকায়ও ছিলেন না, আর খর্বকায়ও ছিলেন না। ধবধবে শুভ্র বর্ণও ছিলেন না, আর বাদামীও ছিলেন না। অত্যধিক কুঞ্চিত কেশবিশিষ্টও ছিলেন না। তার বয়স যখন চল্লিশ বছর হয়, তখন আল্লাহ্ পাক তাকে নবুওয়াত প্রদান করেন, অতঃপর মক্কায় দশ বছর এবং মদীনাতে দশ বছর অবস্থান করেন। তার বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হ’লে আল্লাহ্ তা’আলা তাকে ওফাৎ দেন। ওফাৎকালে তার মাথায় এবং দাড়িতে বিশটি চুলও সাদা হয়নি’।২৫
২. হযরত আনাস (রাঃ) আরও বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ছিলেন মধ্যম উচ্চতা-বিশিষ্ট, না দীর্ঘ আর না বেঁটে। সুন্দর ছিল তার শারীরিক গঠন। আর তার চুল অত্যধিক কুঞ্চিতও ছিল না এবং একেবারে সটান সোজাও ছিল না। তিনি গৌরবর্ণ ছিলেন। পথে হাঁটার সময় তিনি সম্মুখে ঝুঁকে দ্রুত চলতেন’।২৬
৩. হযরত বারা ইবনে আযেব (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সাঃ) মধ্যম আকৃতির লম্বা ছিলেন। তার দুই কাঁধের মধ্যবর্তী স্থান বেশ প্রশস্থ ছিল।২৭
৪. হযরত আলী (রাঃ) বলেন, ‘নবী (সাঃ) লম্বাও ছিলেন না, আবার একেবারে বেঁটেও ছিলেন না। হাতের তালুদ্বয় ও পদতলদ্বয় এবং আঙ্গুলগুলি মাংসল ছিল। মস্তক বৃহৎ এবং অস্থিগ্রস্থগুলি মোটা ছিল। লোমের একটি সরু রেখা বক্ষ থেকে নাভি পর্যন্ত দীর্ঘ ছিল। পথ চলা কালে এমনভাবে সম্মুখে ঝুঁকে দ্রুত হাঁটতেন যেন কোন নিম্নস্থানে নামছেন। তার অনুরূপ কাউকেও আমি তার পূর্বে দেখিনি, তার পরেও দেখেনি, আল্লাহ্ পাক তার উপর রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন’।২৮
(চলবে)
——————————————————————-
তথ্যসূত্র:
* খতীব, আলী মসজিদ, বাহরাইন।
১. আস-সীরাতুন নববিয়্যাহ-র ভূমিকা, পৃঃ ১৬,১৭; নবীয়ে রহমত, পৃঃ ২৩ ।
২. ছহীহ আল-জামিউছ ছাগীর হা/৪৮১১ ।
৩. আস-সীরাতুন নববিয়্যাহ, পৃঃ ১৬; নবীয়ে রহমত, পৃঃ ২৩ ।
৪. মুসলিম হা/২২৭৬; তিরমিযী হা/৩৬০৬; মুসনাদ আহমাদ ৪/১০৭ পৃঃ, হা/১৭১১১ ।
৫. বুখারী হা/২৯৩০; মুসলিম হা/১৭৭৬ ।
৬. ছহীহ আল-জামিউছ ছাগীর হা/১৪৭২; মিশকাত, তাহকীক আলবানী হা/৫৭৫৭ ।
৭. ছহীহ আল-জামিউছ ছাগীর হা/১৭০৩; আল-সুনানুল কুবরা ৭/১৯০ পৃঃ হা/১৪০৭৬ ।
৮. ছহীহ আল-জামিউছ ছাগীর, হা/৩২২৫; আস-সীরাতুন নববিয়্যাহ, ইবনে কাছীর, তাহকীকঃ আলবানী পৃঃ ১০; ইরওয়াউল গালীল হা/১৯১৪ ।
৯. সুনান ইবনু মাজাহ হা/৩৩১২; মুস্তাদরাক হাকেম ২/৫৪৮ পৃঃ হা/৩৭৯০; সিলসিলা ছহীহা হা/১৮৭৬ ।
১০. বায়হাকী তাবরানী, ইবনু আসাকির, সিলসিলাহ ছহীহা, হা/১৫৬৯, ছহীহ আল-জামিউছ ছাগীর, হা/১৪৪৬ ।
১১. সিলসিলা ছহীহা, হা/১৫৪৫; মুস্তাদরাক ২/৭০৫ পৃঃ, হা/৪২৩৩ ।
১২. মুসলিম হা/১১৬২, মুস্তাদরাক হাকেম ২/৭০৭ পৃঃ, হা/৪২৩৮ ।
১৩. মুস্তাদরাক ২/৭০৭ পৃঃ হা/৪২৩৯, ইবনে কাছীর, আস-সীরাতুন নববিয়্যাহ, পৃঃ ১৩।
১৪. মুস্তাদরাক ২/৭০৮ পৃঃ, হা/৪২৪২, আস-সীরাতুন নববিয়্যাহ পৃঃ ১৩।
১৫. শরহ মুসলিম ১৫/১০৪ পৃঃ ।
১৬. হাফেয ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী ৬/৬৮২ পৃঃ ।
১৭.আল-জামিউছ ছাহীহ ৩/৩৭১ পৃঃ ।
১৮. বুখারী, কিতাবুল মানাক্বিব হা/৩৫৩২; কিতাবুত তাফসীর হা/৪৮৯৬; মুসলিম, কিতাবুল ফাযায়েল হা/২৩৫৪; তিরমিযী, কিতাবুল আদব হা/২৮৪০; সহীহ আল-বুখারী আরবী-বাংলা; ৩/৪৩৬ পৃ:, হা/৩২৬৮।
১৯. মুসনাদে আহমাদ ৪/৮১. ৮৪ পৃ:, হা/১৬৮৬৯, ১৬৮৯২।
২০. মুসলিম হা/২৩৫৫; মুসনাদে আহমাদ ৪/৪০৪ পৃ:, হা/১৯৮৫০, ৪/৩৯৫ পৃ:, হা/১৯৭৫৪; মুস্তাদরাক-হাকেম ২/৭০৯ পৃ: হা/৪২৪৪।
২১. মুসনাদে আহমাদ ৫/৪০৫ পৃ: হা/২৩৮৩৮, আল-জামিউস সহীহ, শায়খ মুকবিল ইবনে হাদী আর-ওয়াদেয়ী ৩/৩৭১ পৃ: ইবনু হিব্বান, হা/৬৩২৪।
২২. বুখারী হা/৩৫৩৭; মুসলিম হা/২১৩১।
২৩. মুস্তাদরাক ২/৭০৯ পৃ: হা/৪২৪৬, সহীহুল জামিউস সাগীর হা/১৪৪৭।
২৪. মুস্তাদরাক হাকেম ২/৭১০ পৃ:, হা/৪২৪৭।
২৫. বুখারী হা/৩৫৪৮; মুসলিম হা/২৩৩৭; শামায়েলে তিরমিযী, তাহক্বীক: শায়খ আলবানী, পৃ: ১৩, হা/১।
২৬. বুখারী, হা/৩৫৪৭, মুসলিম হা/২৩৪৭, শামায়েলে তিরমিযী, পৃ: ১৪।
২৭. বুখারী, হা/৩৫৫১, মুসলিম, হা/২৩৩৭।
২৮. তিরমিযী, হা/৩৬৪১; মুস্তাদরাক ২/৬০৬ পৃ: মুসনাদে আহমাদ ১/৯৬ পৃ: হা/৭৪৬; শামায়েলে তিরমিযী, পৃ: ১৫, হা/৪।