ইসলামী ব্যবস্থা – নারী নির্যাতনের একমাত্র সমাধান

ইসলাম হচ্ছে সমগ্র মানবজাতির কল্যাণে প্রেরিত আল্লাহ প্রদত্ত এক জীবনব্যবস্থা, যার মূলভিত্তি আল্লাহ’র নিকট জবাবদিহিতা। এ জীবনব্যবস্থায় সবকিছু্‌ই পরিচালিত হয় আল্লাহর বিধান অনুযায়ী। তাই, এ জীবনব্যবস্থা স্বেচ্ছাচারীতার পরিবর্তে মানুষকে শেখায় জবাবদিহিতা ও দায়িত্বশীলতা।

আল্লাহ কুরআনে বলেছেন,
(হে মুহাম্মদ (সা)) আমি এ কিতাব তোমার উপর এজন্য নাযিল করেছি যেন তুমি সমগ্র মানবজাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসতে পারে। (সূরা ইবরাহীম : ১)।

ইসলাম নারীকে দিয়েছে তার প্রাপ্য মর্যাদা, ক্ষমতা ও অধিকার। নিশ্চিত করেছে জীবনের সকল ক্ষেত্রে তার প্রাপ্য অধিকার। তাই, হাজার বছরের ইসলামের ইতিহাসে সমঅধিকারের প্রশ্ন কখনোই আসেনি। আর ইসলাম নারী ও পুরুষের জন্য ভিন্ন ধরণের কিন্তু স্রষ্টার দৃষ্টিতে সমমর্যাদা সম্পন্ন দায়িত্ব নির্ধারণ করে প্রতিযোগিতার পরিবর্তে তৈরী করেছে সমপ্রীতি ও সৌহার্দ্যে পরিপূর্ণ এক সমাজ।

ইসলামী রাষ্ট্র (খিলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থা) ও সমাজে নারী হলো রাষ্ট্র ও সমাজের সম্মান। তাই নারীর প্রতি সম্মানজনক এই দৃষ্টিভঙ্গী থেকেই রাষ্ট্রে বসবাসকারী সকল নারীই হয় সম্মানিত। আর নারীর প্রতি সমাজের এই দৃষ্টিভঙ্গী বাস্তবায়ন করতে রাষ্ট্র প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে।

ইসলামী রাষ্ট্রে নারী নির্যাতন প্রতিরোধের মুলনীতিমালা :

প্রথমত: পুঁজিবাদী ধ্যান ধারনার আলোকে প্রতিষ্ঠিত বর্তমান সমাজের মূলভিত্তি হলো ব্যক্তি স্বার্থসিদ্ধি যে ধারণা থেকে নারী আজ পরিনত হয়েছে মুনাফা হাসিলের উপকরনে। আর ইসলামী জীবনব্যবস্থার মূলভিত্তি হলো ‘জবাবদিহিতা’ বা ‘আল্লাহভীতি’। অর্থাৎ নারী এবং পুরুষ প্রত্যেকেই তাদের প্রতিটি কাজের ব্যাপারে আলাহর হুকুম মানতে এবং তাঁর কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য। মূলতঃ জীবন সম্পর্কে এই ধারনার ভিত্তিতে শুধু নারী নয় কোন কিছুকেই সমাজ এবং সমাজের মানুষ ব্যক্তিগত মুনাফা লাভের উপকরনে পরিনত করতে পারে না।
দ্বিতীয়ত : পুঁজিবাদী এ সমাজ বিশ্বাস করে লাগামহীন ব্যক্তি স্বাধীনতায়, তাই সমাজে নারীর প্রতি কি দৃষ্টিভঙ্গী হবে তা সমাজের মানুষই নির্ধারণ করে। লাগামহীন এ স্বাধীনতা থেকেই মূলতঃ সমস্যার শুরু। কিন্তু ইসলাম এ সমস্যার মূলেই কুঠারাঘাত করে। ইসলামী জীবনব্যবস্থায় ব্যক্তি স্বাধীনতার কোনও স্থান নেই। তাই ব্যক্তি স্বাধীনতার নামে নারীকে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ব্যবহার করার কোন সুযোগও ইসলামে নেই। সমাজের মানুষ সেভাবেই নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী পোষন করতে বাধ্য যেটা আলাহ তা’আলা অনুমোদন করেছেন। তা না হলে আল্লাহ’র দৃষ্টিতে তারা হবে সীমালঙ্ঘনকারী। আলাহ্‌ কুরআনে বলেছেন যে,
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ ۗ وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِينًا [٣٣:٣٦]
আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট তায় পতিত হয়। (সূরা আল আহযাব, আয়াত নং-৩৬)।

তৃতীয়ত: পুঁজিবাদী এ সমাজে নারীকে প্রতিনিয়ত উপস্থাপন করা হয় যৌনতার প্রতীক হিসাবে। সুতরাং পুরুষরা তাকে এ দৃষ্টিতেই দেখতে অভ্যস্ত হয়। ফলশ্রুতিতে, সমাজে শিক্ষিত অশিক্ষিত সকল নারীই হয় নির্যাতিত। আর ইসলামী রাষ্ট্র ও সমাজে নারী রাষ্ট্রের সম্মান এবং এ সম্মান রক্ষার দায়িত্ব সমাজ ও রাষ্ট্রের। সুতরাং, সমাজে কোন অবস্থাতেই নারীকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় না, যাতে তার সম্মান বা মর্যাদা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “এই পৃথিবী এবং এর মধ্যস্থিত সমস্ত কিছুই মূল্যবাদ। কিন্তু সবচাইতে মূল্যবাদ হচ্ছে একজন পরহেজগার নারী। (মুসলিম)।

চতুর্থত: ইসলাম পর পুরুষের সামনে নারীর দৈহিক সৌন্দর্য প্রকাশকে অনুমোদন করে না। এজন্য ইসলামী সমাজে নারীদের পোষাকের ব্যাপারে রয়েছে আল্লাহ প্রদত্ত সুস্পষ্ট বিধান। গৃহের বাইরে বা কর্মক্ষেত্রে নারীকে অবশ্যই এই বিধান মেনে চলতে হয় বিধায় সমাজে নারীর দৈহিক সৌন্দর্যকে পুঁজি করে ব্যবসা করার কোন সুযোগ নেই। বস্তুতঃ ইসলাম নারীকে এমন কোনও পেশায় অংশগ্রহন করার অনুমতি দেয় না, যাতে নারী তার সৌন্দর্য প্রকাশ করতে বাধ্য হয় বা সৌন্দর্যকে পুঁজি করা যায়। যেমন: মডেলিং, অ্যাডভারটাইজমেন্ট ইত্যাদি।

আল্লাহ কুরআনে বলেছেন যে, “ ………….এবং তোমরা (নারীরা) জাহেলী যুগের মতো তোমাদের সৌন্দর্য এবং অলংকারসমহকে প্রদর্শন করো না। (সূরা আল-আহযাব : ৩৩)।
পঞ্চমত : ইসলাম শুধুমাত্র এমন সব পেশাই নারীর জন্য অনুমোদন করে, যে সমস্ত ক্ষেত্রে নারীকে তার যোগ্যতা এবং মেধার ভিত্তিতে যাচাই করা হয়। একজন মুসলিম নারী ডাক্তারী, ইঞ্জিনিয়ারিং, শিক্ষকতা, বিজ্ঞান ভিত্তিক গবেষণা, ব্যবসা-বানিজ্য, সাংবাদিকতা, বিচারকার্য সহ বিভিন্ন পেশায় অংশগ্রহণ করতে পারে। নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী নারী সমাজের বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে সমাজে এবং রাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
ষষ্ঠত: পুঁজিবাদী এ সমাজের মতো ইসলাম নারী-পুরুষের লাগামহীন অবাধ মেলামেশাকে অনুমোদন করে না। মূলতঃ নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা থেকেই ধর্ষন, পরকীয়া প্রেম, বিবাহ বর্হিভূত যৌন সম্পর্ক ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যার জন্ম। ইসলামে ঘরে এবং বাইরে কাজের প্রয়োজনে নারী পুরুষের মেলামেশা সম্পর্কে সুস্পষ্ট নীতিমালা রয়েছে। এ নীতিমালার বাইরে নারী পুরুষের মেলামেশাকে ইসলাম অনুমোদন করে না। ফলে, সমাজে অহেতুক সমস্যারও জন্ম হয়না।
সপ্তমত: যৌতুকের জন্য এদেশে প্রতিবছর হাজার হাজার নারী নিহত হয় আর লক্ষ লক্ষ নারী হয় নির্যাতিত। অথচ ইসলামী সমাজ যৌতুক প্রথারই মূলোৎপাটন করে। বিয়ের সময় নারীকে পুরুষের মোহরানা আদায় করতে হয়, যা নারীর সম্মান হিসাবে আলাহ্‌ কর্তৃক নির্ধারিত। কন্যা বা কন্যার বাবার কাছ থেকে কোনও রকম সম্পদ দাবী করার কোন অধিকার ইসলাম পুরুষকে দেয়নি। এর অন্যথা হলে ইসলামী রাষ্ট্রের রয়েছে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবার অধিকার।

মূলতঃ ইসলামী রাষ্ট্র এবং সমাজ এই সমস্ত মৌলিক নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে নারীকে সমাজে এমন ভাবে উপস্থাপন করে, যা তাকে সম্মান এবং মর্যাদায় ভূষিত করে। একই সাথে সমাজের সর্বস্তরে তৈরী হয় নারীর প্রতি সম্মানজনক দৃষ্টিভঙ্গী। যা সমাজে শিক্ষিত-অশিক্ষিত, শহুরে-গ্রাম্য, ধনী-গরীব সকল নারীর নির্যাতিত এবং নিগৃহীত হবার পথ রুদ্ধ করে।

 

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
kiw kow kan