কট্টর ইসলাম বিদ্বেষী গ্যারি মিলার এবং অতঃপর

“কট্টর ইসলাম বিদ্বেষী গ্যারি মিলার এবং অতঃপর”

ইসলাম মানুষের জীবনকে করে লক্ষ্যপূর্ণ। কারণ, এ ধর্মের দৃষ্টিতে মানুষের জীবনের রয়েছে অর্থ ও লক্ষ্য।কিন্তু পশ্চিমা সরকারগুলো ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করছে। তারা মুসলমানদেরকে পাশ্চাত্যের জন্য বিপজ্জনক বলে তুলে ধরছে। আর এই অজুহাত দেখিয়ে পশ্চিমা সমাজে মুসলমানদের ওপর আরোপ করা হয়েছে নানা সীমাবদ্ধতা। ইউরোপ- আমেরিকার ক্ষমতাসীন সরকার ও ইসলাম-বিদ্বেষী দল বা সংস্থাগুলো এভাবে মুসলমান ও ইসলামের ওপর আঘাত হানার পাশাপাশি নিজেদেরকে পশ্চিমা সভ্যতা এবং পশ্চিমা জনগণের সমর্থক হিসেবে জাহির করার পাশাপাশি জনগণকে বিভ্রান্ত করার মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করছেন।

পাশ্চাত্যে ইসলামের জনপ্রিয়তা ও প্রভাব ক্রমেই বাড়তে থাকায় ইসলাম বিরোধী মহলগুলোর ইসলাম-বিদ্বেষী ততপরতাও জোরদার হয়েছে। বর্তমানে মুসলমানদের নিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যম ও জনমত ব্যাপক বিতর্কে মেতে রয়েছে।পাশ্চাত্যের উগ্র লেখক ফিলিপ রনডু বলেছেন, মুসলমানরা হচ্ছে বিস্ফোরণের বোমার মত এবং ইসলাম বহু মানুষকে, বিশেষ করে ইউরোপের বহু মানুষকে আকৃষ্ট করছে।

বহুল প্রচারিত টাইম ম্যাগাজিন এক অবমাননামূলক নিবন্ধে ইউরোপের মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধিকে ‘ইউরোপের পরিচিতির সংকট’ বলে অভিহিত করেছে। ২০১০ সালের শেষের দিকে সুইজারল্যান্ডে মসজিদের মিনার নির্মাণের ওপর নিষেধাজ্ঞার আইন চালু করার লক্ষ্যে এক গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। এই পদক্ষেপের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল সুইস পিপলস পার্টি নামের একটি উগ্র খ্রিস্টানপন্থী দল। মুসলমানদের ব্যাপারে আতঙ্ক সৃষ্টি করাই ছিল এই পদক্ষেপের লক্ষ্য। শেষ পর্যন্ত এই আইন পাশ করতে সফল হয় দলটি। দলটির পক্ষ থেকে সর্ব প্রথম এই আইন চাপিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন সুইস রাজনীতিবিদ ড্যানিয়েল স্ট্রিচ। তিনি পুরো সুইজারল্যান্ডে ইসলাম-বিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে দেন এবং জনগণের মধ্যে ইসলাম-অবমাননার বীজ বপন করেন। ফলে সুইস জনগণ মসজিদের মিনার নির্মাণের বিরোধী হয়ে পড়ে এবংমিনার নির্মাণ নিষিদ্ধ করা সম্ভব হয় দেশটিতে।

কিন্তু এর পরে ইসলাম আবারও পাশ্চাত্যে আগের চেয়েও শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। সুইজারল্যান্ডে ইসলাম-বিদ্বেষী আন্দোলনের প্রধান নেতাসুইস রাজনীতিবিদ ড্যানিয়েল স্ট্রিচ নিজেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ইসলাম-বিরোধী চিন্তাধারা তাকে শেষ পর্যন্ত ইসলামের প্রেমিকে পরিণত করে। এ প্রক্রিয়ার এক পর্যায়ে তিনি ইসলামের যৌক্তিক শিক্ষাগুলো ও পবিত্র কুরআন নিয়ে পড়াশুনা শুরু করেন এবং ইসলামের আকাট্য যুক্তি ও বাস্তবতার কাছে আত্মসমর্পণ করেন।

ড্যানিয়েল স্ট্রিচ এখন একজন সামরিক প্রশিক্ষক এবং পৌরসভার সদস্য ও অঙ্গীকারবদ্ধ মুসলমান। তিনি নিয়মিত মসজিদে আসেন, কুরআন অধ্যয়ন করেন ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। ইসলাম গ্রহণের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ইসলাম জীবনের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর যৌক্তিক জবাব দেয়, যা আমি কখনও খ্রিস্ট ধর্মে খুঁজে পাইনি। আমি ইসলামের মধ্যেই খুজে পেয়েছি জীবনের বাস্তবতা।

ড্যানিয়েল স্ট্রিচ এখন তার অতীতের ততপরতাগুলোর জন্য লজ্জিত। তিনি এখন সুইজারল্যান্ডে ইউরোপের সবচেয়ে সুন্দর মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছেন। দেশটিতে এখন ৪টি মসজিদ সক্রিয় রয়েছে। ড্যানিয়েলের স্বপ্নের মসজিদটি নির্মিত হলে সুইজারল্যান্ডে মসজিদের সংখ্যা দাঁড়াবে ৫টিতে। তিনি দেশটিতে ইসলাম বিরোধী যে ততপরতা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন এভাবেই তার ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। ড্যানিয়েল এখন ধর্মীয় স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের আন্দোলন গড়ে তোলারও চেষ্টা করছেন।

ওপিআই নামের একটি ইসলামী সংস্থার প্রধান আবদুল মজিদ আদলি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “ইউরোপের জনগণ ইসলাম সম্পর্কে জানতে ব্যাপকভাবে আগ্রহী। তাদের অনেকেই সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে ইসলামের সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করতে চান। ঠিক যেভাবে সুইজারল্যান্ডের ড্যানিয়েল এ পথে সচেষ্ট হয়েছিলেন। তিনি ইসলামের মোকাবেলা করতে গিয়ে পবিত্র কুরআনের সঙ্গে পরিচিত হন এবং ইসলাম সম্পর্কে ব্যাপক পড়াশুনা শুরু করেন। তিনি চেয়েছিলেন ইসলামের সঙ্গে খুব কঠোর আচরণ করবেন। কিন্তু এর ফল হয়েছে সম্পূর্ণ বিপরীত।”

মহান ধর্ম ইসলামের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হল যারাই এর মোকাবেলা করতে চায় তাদেরকে এই পবিত্র ধর্ম চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণার মাধ্যমে এ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়ার আহ্বান জানায়। ফলে ইসলামের খুঁত বের করার চেষ্টা করতে গিয়ে তারা এ ধর্মের সৌন্দর্যের সন্ধান পায় ও এ যে খাঁটি খোদায়ী ধর্ম -এই বাস্তবতা বুঝতে পারে। কারণ, ইসলাম মানুষের প্রকৃতির চাহিদার আলোকে প্রণীত হয়েছে। সত্য অনুসন্ধানের ইচ্ছা নিয়ে যারাই ইসলাম সম্পর্কে গবেষণা করেন তারা এই খোদায়ী ধর্মের সত্যতা অস্বীকার করতে পারেন না।

কানাডীয় নও-মুসলিম ডক্টর “গ্যারি মিলার”ছিলেন দেশটির সবচেয়ে খ্যাতনামা খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারক। তিনি পবিত্র কুরআনের ভুল খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন যাতে ইসলাম ও কুরআনের বিরোধী প্রচারণা চালানো সহজ হয়। কিন্তু এর ফল হয়েছিল বিপরীত। ডক্টর মিলার বলেছেন,

” কোনো একদিন কুরআন সংগ্রহ করে তা পড়া শুরু করলাম। প্রথমে ভেবেছিলাম কুরআন নাজেল হয়েছিল আরবের মরুচারীদের মধ্যে, তাই এতে নিশ্চয়ই মরুভূমি সম্পর্কে কথা থাকবে। কুরআন নাজিল হয়েছিল ১৪০০ বছর আগে। তাই খুব সহজেই এতে অনেক ভুল খুঁজে পাব ও এইসব ভুল মুসলমানদের সামনে তুলে ধরব বলে সংকল্প করেছিলাম। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা ধরে কুরআন পড়ার পরে বুঝলাম আমার এসব ধারণা ঠিক নয়, বরং এ মহাগ্রন্থে অনেক আকর্ষণীয় তথ্য পেলাম। বিশেষ করে সুরা নিসার ৮২ নম্বর এ আয়াতটি আমাকে গভীর ভাবনায় নিমজ্জিত করে,

‘এরা কি লক্ষ্য করে না কুরআনের প্রতি? এটা যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও পক্ষ থেকে নাজিল হত, তবে এতে অবশ্যই বহু বৈপরিত্য দেখতে পেতে।’ ”

খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারক গ্যারি মিলার এভাবে ইসলামের দোষ খুঁজতে গিয়ে মুসলমান হয়ে যান। তিনি বলেছেন,

“আমি খুব বিস্মিত হয়েছি যে, কুরআনে হযরত মরিয়ম (সা.)’র নামে একটি বড় পরিপূর্ণ সূরা রয়েছে। আর এ সুরায় তাঁর এত ব্যাপক প্রশংসা ও সম্মান করা হয়েছে যে, এত প্রশংসা বাইবেলেও দেখা যায় না। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’র নাম মাত্র ৫ বার এসেছে, কিন্তু হযরত ঈসা (আ.)’র নাম এসেছে ২৫ বার। আর এ বিষয়টি ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ক্ষেত্রে আমার ওপর ব্যাপক প্রভাবে রেখেছে।”

বিশিষ্ট ইংরেজ গবেষক জন ডেভেনপোর্ট বলেছেন,

“কুরআন ভুল-ত্রুটিমুক্ত হওয়ায় এতে কোনো ছোটখাট সংশোধনেরও দরকার নেই। তাই প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কুরআন পড়ার পরও সামান্যতম বিরক্তিও সৃষ্টি হবে না কারো মধ্যে। বছরের পর বছর ধরে পাদ্রিরা আমাদেরকে পবিত্র কুরআনের বাস্তবতা ও মহত্ত্ব থেকে দূরে রেখেছেন। কিন্তু আমরা যতই জ্ঞানের পথে এগুচ্ছি ততই অজ্ঞতা ও অযৌক্তিক গোঁড়ামির পর্দা মুছে যাচ্ছে। শিগগিরই এ মহাগ্রন্থ- যার প্রশংসা ভাষায় প্রকাশ করার সাধ্য কারো নেই-বিশ্বকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করবে এবং বিশ্বের ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে ও শেষ পর্যন্ত বিশ্বের মানুষের চিন্তা-চেতনার প্রধান অক্ষে পরিণত হবে।”

( সূত্র )

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button