কোথায় পাব তারে

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

আমি জীবনে যখন প্রথম ‘ক্রাশ খাই’, তখনও বাগধারাটার মানে জানতাম না। জানার কথাও না, কারণ বাগধারাটার মতই খাদ্যদ্রব্য হিসেবে ‘ক্রাশ’ বেশ আধুনিক। আজ থেকে পঞ্চাশ-ষাট বছর আগে মানুষ ‘ক্রাশ’ খাওয়া তো দূরের কথা ক্রাশ খাওয়ার সুযোগও পেত না। আমরা ফিরিঙ্গিদের দেখাদেখি সিনেমা-নভেল-নাটকের বরাতে সভ্য-ভব্য হয়েছি, পাৎলুন পরে শিল্প-ঐতিহ্য চর্চায় নেমেছি। শেষমেশ ঘরের কোণে এক বাক্সে বাঈজীখানা, থিয়েটার আর সিনেমা হল বন্দী করে সভ্যতার সুঁইয়ের মাথায় আরাম করে বসেছি। নব্বইয়ের দশকে আকাশ থেকে সংষ্কৃতির বর্ষণ শুরু হবার পরে সেই সূচবৃষ্টি থেকে বাঁচে কার বাবার সাধ্য! তো রাস্তাঘাট থেকে বনেদি বৈঠকখানা, সকাল-সন্ধ্যা ‘এক লাড়কি কো দেখা তো এয়সা লাগা’ শুনে বড় হওয়া আমার জন্য যা অবধারিত ছিল, তাই হয়ে গেল। আমি ক্রাশ খেলাম।

ধর্ম মানি আর না মানি, ধর্মবোধটা আমার মধ্যে সবসময়ই টনটনে ছিল। বিড়ালতপস্বীদের কিভাবে হাত করতে হয় সেটা শয়তান ভালই জানে। অধিকাংশ ক্রাশের সূতিকাগার ‘স্যার’-এর বাসায় যে মেয়েটা আমার মনে ধরল তার মাথাসহ সারা গায়ে জড়ান ছিল বিশাল এক কাল চাদর। সুন্দর চেহারার সাথে ধার্মিক চলন – আর কি লাগে? পড়ার বইয়ের চেয়ে জানালা দিয়ে আকাশের মেঘ দেখতে বেশী ভাল লাগা শুরু করল। সে সামনে দিয়ে হেটে যায় আর আমি নড়তেই পারিনা। মা লক্ষণ দেখে জিজ্ঞাসা করলেন – কাকে পছন্দ। বললাম। তিনি বললেন –

ক. তুই এখনও মেট্রিক পাশ। তোর কি এমন যোগ্যতা আছে যার কারণে মেয়েটা তোকে পছন্দ করবে? (মোটা চশমা আর গোল-গাপ্পু চেহারা নিয়ে আমি আশার কোন কারণ দেখলাম না )

খ. তোর পায়ে সমস্যা আছে। একটা মেয়ে চাইতেই পারে যে তার স্বামী খুঁড়িয়ে হাটবে না, আর দশজনের মত সুস্থ-নীরোগ হবে। (তিতা, কিন্তু সত্যি কথা। আমি লোহার পাত লাগান জুতা পরি, দৌড়াতে পারি না)

গ. যার মাধ্যমে তুই সত্যিকার যোগ্য হয়ে উঠতে পারবি সেটা হল লেখাপড়া। কিন্তু ইন্টারে প্রেমে পড়লে আর যাই হোক লেখাপড়া হয়না। (এ মর্মে মা বিবিধ পরিসংখ্যান এবং জীবন থেকে নেয়া উদাহরণ উপস্থাপন করলেন)

আমি ক্রাশ হজম করে ফেললাম, নিবিষ্টমনে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করলাম।

পরে বহুবার ভেবে দেখেছি মানুষ ক্রাশ খায় কেন বা প্রেমে পড়ে কেন। আল্লাহ সুরা রুমে এই প্রশ্নটার চমৎকার একটা জবাব দিয়েছেন – যেন সে ‘সুকুন’ লাভ করে। সৃষ্টিকর্তা হিসেবে আল্লাহ খুব ভাল করেই জানেন মানুষ অস্থিরতা, নিরাপত্তাহীনতা আর একাকিত্ব থেকে মুক্তি পাবে কিসে। তিনি দয়া করে আমাদের জন্য সঙ্গী সৃষ্টি করেছেন যারা আমাদের ‘সুকুন’ দেবে। সুকুন মানে শান্তিময় একটা পরিবেশে নিমজ্জিত থাকা, যেন পাহাড়ী হৃদের স্বচ্ছ জলে স্তব্ধ এক পাথর। সুকুন মানে জগতের ঝঞ্ঝাময় পরিবেশে হৃদয় জুড়ে থাকা প্রশান্তি, যেন ঝড়ো হাওয়ার তান্ডব আর মুষল বৃষ্টি থেকে পাথুরে প্রাসাদের দেয়া নিরাপত্তা। পুরুষ ও নারী এভাবেই একে অপরকে ভালবাসায় নিমগ্ন করে রাখে, নিরাপত্তা দেয়, প্রশান্তি দেয়, পৃথিবী রূঢ়তা থেকে পালিয়ে বাঁচবার একটা অভয়াশ্রম দেয়। ইসলামের দৃষ্টিতে তাই নারী-পুরুষের সম্পর্ক তাই শুধুই দৈহিক চাহিদা কিংবা বংশরক্ষার মাধ্যম নয় – এর চেয়ে অনেক গভীর কিছু। এই গভীরতা জৈবিক ডারউইনিসম বা সামাজিক ডারউইনিসম এর চশমা পড়া বস্তুবাদী মানুষ মাপতে পারবে না।

আমাদের মানুষদের খুব বড় একটা সমস্যা হল – আমরা সব ভুলে যাই। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন বাসায় এসে ‘বাড়ীর কাজের’ কথা ভুলে যেতাম। এখন যখন ছাত্র পড়াই, তখন হামেশাই ভুলে যাই সে সময়টার কথা যখন আমাদেরও একটুও পড়তে ইচ্ছে করত না। ঠিক তেমনি আমাদের বাবা-মা-বড় ভাইরা দিব্যি ভুলে যান ভাত পেট ভরায়, মন না। ‘থার্মোডাইনামিক্স’, ‘ফার্মাকোলজি’ কিংবা ‘বিজনেস ল’ – সবই মস্তিষ্কে দগদগে ঘা তৈরী করে, হৃদয়ের উপশম তো দূরের কথা। তারুণ্যের অস্থির বয়স পার হয়ে আসা আমাদের অভিভাবকরা কখন আমাদের জায়গায় নিজেকে দাঁড় করিয়ে ভাবেন না – তাদের সন্তানেরাও রক্ত-মাংশে গড়া মানুষ। তাদেরও সুকুন চাইবার অধিকার আছে, সুকুন পাবার দরকার আছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলো মনে পড়ে। কলাভবনে বসন্ত উৎসবের নাম করে ভবিষ্যৎ কপোতদম্পতি হাতে হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর আমরা ব্যাকটেরিয়ার কনজুগেশন পড়েই কাহিল। ক্লাস, পরীক্ষা, প্র্যাকটিকাল আর ল্যাবরিপোর্ট লেখার যন্ত্রণার মাঝের সময়টা বন্ধুদের সাথে কাটত। বিকেলে-সন্ধ্যায় টুইশনি। রাতে বিধস্ত অবস্থায় যখন বাসায় ঢুকি তখন মন নিয়ে ভাবনার সময় মিলত না খুব। অর্থহীন শতেক কাজে নিজেকে ব্যস্ত করে রাখা, পাছে বিশাল পৃথিবীতে একা হয়ে যাই! হঠাৎ কখনও বুকের বিশাল শুন্যতা কৃষ্ণ গহবরের মত সব কিছু গ্রাস করে নিতে আসত। একটু সুকুনের জন্য কত পাপের দরজায় কড়া নাড়া! শান্তি তো মিলতই না উলটো নিজের সামনে নিজে ধরা পড়ে গেলে বিবেকের তীব্র দংশন। চারপাশের সম্পর্কগুলো দেখে আর প্রেম করার ইচ্ছে জাগতো না। খালি আল্লাহর কাছে ভিক্ষে চাইতাম এমন একজন মানুষ সঙ্গীকে যে আমার সমস্যাগুলো বুঝবে। যে একান্তই আমার হবে; আর আমি যার কাছে নিজেকে উজাড় করে দিতে পারব। যে আমার ভাল-মন্দ সব সহই গ্রহণ করবে। যে আমার গুণগুলোর গোলাপ গাছে উৎসাহের পানি দেবে; দোষগুলোর আগাছা ভালবেসে দেখিয়ে দেবে, সেগুলো উপড়ে ফেলতে হাতে হাত রাখবে। এত বড় পৃথিবী – এত মানুষ; অথচ মনের মানুষের খোঁজ মিলল না। সব মিথ্যা প্রচেষ্টা ব্যর্থ হল।

এমনই একটা সময়ে ইসলাম সম্পর্কে জানার, পড়াশোনার আগ্রহ বাড়তে থাকল। জানার সাথে সাথে আবিষ্কার করলাম এতদিন যেসব দিয়ে পরকালের আসল জীবনটাকে ভুলে ছিলাম সেগুলোর অন্তসারহীনতা। তখন হঠাৎ বুঝতে পারলাম এই বিশাল পৃথিবীরই একটা ছোট কোণে আল্লাহ ঠিক এইভাবেই আরেকজনকে মানুষকে অপেক্ষা করাচ্ছেন। আমাকে যেমন তিনি তৈরী করছেন তাকেও তিনি প্রস্তুত করছেন সেই বিশেষ ক্ষণটির জন্য। যে দিন তিনি আমাকে আমার ‘লিবাস’, আমার সারা জীবনের পরিচ্ছদের সাথে একত্রিত করবেন। যে মুহূর্তে দু’টো মানুষ কেবল আল্লাহকে ভালবেসে, তাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে একসাথে জীবনের বাকি পথ পাড়ি দেবার সংকল্প করবে।

একজন মুসলিম তাই যখন আল্লাহর দরবারে হাত তুলে কেঁদে বলে, আল্লাহ এই পৃথিবীতে পবিত্র থাকতে চাই বলেই তোমার কাছে একজন পবিত্র জীবনসঙ্গী চাইছি – আল্লাহ সে হাত ঘুরিয়ে দেন না। কিন্তু তার আগে তিনি পরীক্ষা নেন, আসলেই এই চাওয়াতে কতটা আকুলতা মিশে আছে। যে জিনিসটা খুব সহজে পাওয়া যায়, তার মূল্য মানুষ বোঝে না। যা অনেক চাওয়ার পর, অনেক ধৈর্য ধরার পর মেলে তার কদর থাকে বেশী। একজন মুসলিমের জন্য তার জীবনসঙ্গীর চেয়ে মূল্যবান আর কিছুই নেই এই পৃথিবীতে। তাই আল্লাহ প্রকৃত মুসলিমদের অনেক ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়ে তবেই তাকে সেটা দেন। এই পরীক্ষা যারা দেয় না, তাদের প্রাপ্তিটার মূল্যও তারা বোঝে না। আমাদের চারপাশে মিথ্যা ভালবাসার বন্যায় যারা ভেসে যায় তাদের সম্পর্কটা তাই খুব ঠুনকো হয়। সামান্য সন্দেহ, ছোট্ট ভুল বোঝাবুঝি কিংবা চাওয়া-পাওয়ার কষে আসা অংকের উত্তরে একটু গরমিল দেখলেই এ সম্পর্কের অস্তিত্ব নিয়ে টানাটানি পড়ে। যে সম্পর্ক সুকুন দেয়ার কথা ছিল, সেই সম্পর্ক নরকযন্ত্রনা নিয়ে হাজির হয়। কত মানুষ সেই যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে পৃথিবী ছেড়েই চলে যায়।

বিয়েকে রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বীনের অর্ধেক বলে সাব্যস্ত করেছেন১ এবং কিসের ভিত্তিতে এই সম্পর্কটা হবে তাও তিনি বলে দিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশের তথাকথিত মুসলিম সমাজ ইসলামের থোড়াই কেয়ার করে। যেখানে রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিভাবকদের স্পষ্ট নির্দেশ দিলেন যদি কোন মুসলিম যুবকের দ্বীন এবং ব্যবহার তোমাকে সন্তুষ্ট করে তাহলে তোমার অধীনস্থ নারীর সাথে তার বিয়ে দাও। এর অনথ্যা হলে পৃথিবীতে ফিতনা ও দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়বে বলেও তিনি ভয় দেখিয়েছেন।২ অথচ আমাদের দেশে ছেলে দেখা বলতে বোঝান হয় ছেলের অর্থসম্পদের পরিমাণ দেখা। চরিত্রও যে একটা সম্পদ এবং একজন মুসলিম তরুণ তার সচ্চরিত্র দিয়ে একটা মেয়েকে কতটা সুখী রাখতে পারে সেটা অভিভাবকেরা ভেবে দেখেননা। একটা লম্পট বিয়ের আগে পাঁচটা প্রেম করলেও লাখ টাকা বেতন পায় বিধায় ভাল পাত্র হিসেবে বিবেচিত হয়। টাকার গুণে তার শত লুইচ্চামিও মোল্লা ছেলের দাড়ির চেয়ে অনেক বেশী সহনশীল মনে হয়। অথচ স্বয়ং আল্লাহ রব্বুল আলামিন ওয়াদা করেছেন কোন অভাবী যদি বিয়ে করে তবে তিনি আপন ঐশ্বর্যের দ্বার তার জন্য খুলে দেবেন, তাকে অভাবমুক্ত করে দেবেন।৩ মাথায় টুপি পড়া, পাঁচ ওয়াক্ত সলাত পড়া বাবারাও যখন আল্লাহর আয়াতের চেয়ে ব্যাংকের স্টেটমেন্টকে বেশী বিশ্বাস করে, তখন  দুঃখে বুক ভারী হয়ে আসে। আল্লাহর প্রতিশ্রুতি কি মসজিদের তাকে ধূলার আস্তরণে বন্দী হয়ে থাকবার জন্য নাযিল হয়েছিল? অথচ আজ পাশ্চাত্যের বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন শুধুমাত্র বিবাহিত হবার কারণে প্রতিবছর মানুষের সম্পদ ৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেতে পারে।৪

কিন্তু দিনশেষে আমাদের স্বীকার করে নিতে হয় বিয়ে একটা সামাজিক ইবাদাত। আমাদের বাবা-মার উপরেই আমাদের জোর চলে না, মেয়ের বাবা-মা তো দূরের কথা। তাই আমরা ফিরে যাই আমাদের শিক্ষক রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে যিনি বিবাহযোগ্য অথচ অবিবাহিত তরুণদের শিক্ষা দিয়েছেন বিয়ে না করতে পারলে সিয়াম পালন করতে, কারণ এই সিয়াম তার জন্য ঢাল হয়ে পাপের রাশিকে প্রতিহত করবে।৫ আমি এমন মুসলিম ভাইকে চিনি যিনি বিয়ের আগে নিয়মিত একদিন অন্তর একদিন সিয়াম পালন করতেন। আলহামদুলিল্লাহ, এর ফলে আল্লাহ তাকে খুব চমৎকার একজন স্ত্রী উপহার দিয়েছেন। আমরা ফিরে যাই আমাদের প্রকৃত অভিভাবক, আমাদের রব্ব – আল্লাহর কাছে, তাকে কাতর কন্ঠে বলি –

   رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ

হে আমার রব্ব, তুমি আমার প্রতি যেই অনুগ্রহ নাযিল করবে, আমি তারই মুখাপেক্ষী৬

হয়ত আল্লাহ মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লামের মত স্ত্রী এবং রিযিক – দুইয়েরই ব্যবস্থা করে দেবেন। আমরা আত্মার শান্তির জন্য আল্লাহর কাছে আকুলভাবে বলি –

   رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا

হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান করুন এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ করুন৭

আল্লাহ যেন আমাদের মুসলিম তরুণ ভাই/বোনদের জন্য ইসলাম মেনে জীবন ধারণ করা সহজ করে দেন। তিনি যেন আমাদের ‘লিবাস’, আমাদের প্রাণসখা-দের সাথে আমাদের শীঘ্রই মিলিয়ে অস্থির একাকিত্ব থেকে মুক্তি দেন। আমিন।

———————————————————————————–

১ আল হাকিম তার আল মুসতাদরাকে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।

২ আল তিরমিযি তে আবু হুরাইরা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। আলবানি হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।

৩ সুরা আন নূর, ২৪:৩২

৪ ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর হিউম্যান রিসোর্স রিসার্চ এর গবেষক জ্য জাগরস্কি এর গবেষণা সূত্রে

৫ সহীহ বুখারি ১৯০৫, সহীহ মুসলিম ১৪০০

৬ সূরা আল কাসাস, ২৮:২৪

৭ সূরা আল-ফুরকান, ২৫:৭৪

উৎসঃ ফেসবুক

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button
slot online skybet88 skybet88 skybet88 mix parlay skybet88 rtp slot slot bonus new member skybet88 mix parlay slot gacor slot shopeepay mix parlay skybet88 slot bonus new member